ত্রিশ বছর পরে

 

     অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ

 

ত্রিশ বছর পরে

 সৈয়দ নুরুল আলম


আগামী কাল কোর্টে  মিউচুয়াল  ডিভোর্সের জন্য আবেদন করা হবে। ত্রিশ বছর বিবাহিত জীবনের ইতি টানা হবে। এতে করে রমিজ সাহেব বা ফরিদা বেগম কারোই আপত্তি নেই।

ঘটক ফরিদ এসে বলে, বাচ্চু সাহেবের দুটো মেয়ে আছে, যাকে আপনাদের পছন্দ তাকে ছেলের বউ করে আনতে পারবেন। এতে করে ওদের কোনো আপত্তি নেই। 

রমিজ সাহেব এ প্রস্তাবে রাজি না। কিন্তু ফরিদা বেগম এ প্রস্তাবটা লুফে নেয়।  বলে,ভালোই  তো,  যাকে পছন্দ হবে তাকে  আমাদের এক মাত্র ছেলে রিয়াদের বউ করে আনব। 

‘এই হয়? বড় মেয়ে রেখে কেউ কি ছোট মেয়ে মেয়ে দেয়?’

‘না দিলে নাই। আর বড় মেয়ে পছন্দ হলে তো কথা নেই। তাই, দুজনকে দেখতে অসুবিধা কী?’

‘ শোন, এটা হয় না। তুমি ফরিদকে বলো, আমরা বাচ্চু সাহেবের বড় মেয়ে দেখব।’

‘তুমি না জীবনে নিজের ভালো বোঝ নাই। এখন ছেলের ভালোও বুঝতে চাচ্ছো না।’

 রমিজ সাহেবের কাছে, বড় মেয়ে রেখে, ছোট মেয়েকে চাওয়া অমানবিক, অসামাজিক। অভদ্রতা।

আর ফরিদা বেগমের কাছে লাভ-লোকসান। পন্য কেনার মতো।

বাচ্চু মাষ্টারের  দু’মেয়ে। বড় মেয়ে রিতা। একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে, এখন একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করে। ছোট মেয়ে রিয়া। এন্টারমিডিয়েট কোনো রকম টেনেটুনে পাশ করে, এখন হোম ইকোনমিক্সে পড়ে। দু’জনই বিয়ের উপযুক্ত।

ফরিদ ঘোটক একদিন বাচ্চু মাষ্টারকে মেয়েদের  বিয়ের কথা বললে, বাচ্চু মাষ্টার বলেছিলেন, দেখো ভালো  কোনো ছেলে থাকলে। মেয়ে তো দুটোই বিবাহ উপযুক্ত।

এ কথার ওপর ভর করে, ফরিদ ঘটক নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে, নিজের থেকে  রমিজ সাহেবকে বলেছে, দু’জনের মধ্যে যাকে আপনাদের পছন্দ হয়।

রিয়াদ ইরানে থাকে। ওখানে সরকারী চাকরি করে। এক মাসের ছুটিতে বিয়ে করতে আসবে। আসার পর হাতে কম সময় থাকবে। তাই ফরিদার ইচ্ছে, ছেলের জন্য মেয়ে ঠিক করে রাখবে। যাতে করে রিয়াদ আসার দু’চার দিনের মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারে।

রমিজ সাহেব নিজে একজন সরকারি কলেজের শিক্ষক। তাই তিনি একজন শিক্ষকের মেয়ে খুঁজছিলেন ছেলের জন্য। ফরিদ, রমিজ সাহেবের মনের মতো একটা প্রস্তাব এনেছে। বাচ্চু মিয়া নবারুন  স্কুলের হেড মাষ্টার । খুব নাম করা স্কুল। এ নামের পেছনে বাচ্চু মিয়ার অবদান অনেক। তিনি প্রায় একাই স্কুলটাকে এ পর্যায়ে টেনে এনেছেন। এখন স্কুলের আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ বাচ্চু মিয়াকে চেনে। সবাই তাঁকে বাচ্চু মাষ্টার বলে ডাকে। সব মিলিয়ে রমিজ সাহেবের খুব ইচ্ছে বাচ্চু মাষ্টারের ঘরের একটা মেয়ে নেয়ার।  

নির্দিষ্ট দিনে রমিজ সাহেব মেয়ে দেখতে যান। যাওয়ার আগে ফরিদার সাথে কথা হয়, ও বাসায় যেয়ে পছন্দ-অপছন্দের  বিষয়ে কোনো আলপ হবে না। বাসায় এসে সিন্ধান্ত নেবে পছন্দের বিষয়ে।

ফরিদও  বেশ চতুর। মেয়ের পক্ষকে খোলোসা করে বলেনি, কোন মেয়ে দেখতে যাচ্ছে। শুধু বলেছে, রমিজ সাহেব  আপনার বাসায় এক কাপ চা খেতে আসবেন। কোনো  আয়োজন টায়েজনের দরকার নেই।

এতটুকু বলাতেই বাচ্চু মাষ্টার বুঝতে পেরেছেন, ঘরে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে থাকলে, কেন  স্বামী-স্ত্রী দু’জনে একত্রে বাসায় চা খেতে আসতে চান।

ঘটকের এ কথায় বাচ্চু মাষ্টার মনে মনে খুশি হয়েছেন। আড়ম্বর করে মেয়েকে দেখাতে হবে না। এর আগে বেশ কয়েকবার রিতাকে সেজেগুজে  ডলপুতুলের মত করে, ছেলে পক্ষের সামনে যেতে হয়েছে। প্রতিবারই ছেলে পক্ষের কাছ থেকে কখনও সরাসরি, কখনও ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে ‘না’ শব্দ শুনতে হয়েছে। এতেকরে  রিতার মন ভেঙে গেছে। এখন আর কেউর সামনে আসতে চায় না।

 মেয়ের একটা মাত্র নেগেটিভ দিক, মেয়ে লম্বায় একটু খাটো। টেনেটুনে একইঞ্চি কম পাঁচ ফিট। এছাড়া দেখতে স্বাস্থ্যবতি। শ্যামলা হলেও মিষ্টি চেহারা। পড়া লেখায়, আচার ব্যবহারে, কথাবার্তায়, খুব ভালো।

রিতা ভেবে পায় না, এই খাটো হওয়ার জন্য কি ও নিজে  দায়ী?

রিয়ার বেলায় এ সমস্য নেই। মোটামুটি ওকে টলই বলা যায়। এখনই ও রিতার মাথা ছাড়িয়ে গিয়েছে। হঠাৎ কেউ দেখলে, রিয়াকেই বড় মনে করবে। রিয়া পেয়েছে ওর মার গড়ন। আর রিতা পেয়েছে বাবার গড়ন।

চা খেতে খেতে রমিজ সাহেব রিতাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। বেশ শান্তশিষ্ট মেয়ে। কথা কম বলে। চেহারায় একটা লাবন্য আছে।

ওদিকে ফরিদা বেগম একবার রিতার দিকে , একবার রিয়ার দিকে তাকায়। যেন গাবতলি হাটে গরু বাছছে। কোনটা সংকর। কোনটা দেশি। কোনটার চোখ গোল, বড় বড়, আর কোনটার ছোট।

‘আন্টি আপনি তো কিছুই নিলেন না।’ 

রিয়ার একথায় ফরিদা বেগম বলেন, নিলাম তো মা। তাছাড়া আমি বেশি খাই না । ডায়েট করি।

‘আন্টি , আপনি এ বয়সে ডায়েট করেন? ডায়েট করবে তো  আমার বয়সি মেয়েরা, যাতে মুটিয়ে না যায়। মুটিয়ে গেলেÑ

রিতা , রিয়ার কথা শেষ করতে দেয় না। বলে, তুই চুপ কর। আমি আন্টিকে সামান্য নুডুলস তুলে দিই। অল্প খেলে  অসুবিধা হবে না।

 রিতা একটা পেলায় নুডুলস তুলে ফরিদার সামনে দেয়। ফরিদা না করে না।

রমিজ সাহেব রিতার দিকে চেয়ে বলেন, মা, আমাকে আরেকটু দাও। খুব মজা হয়েছে। কে রান্না করেছে?

মজা হয়েছে একথা শুনে রিতার চোখেমুখে  আনন্দের ঢেউ খেলে যায়।

 রিতা একটু বেশি করে রমিজ সাহেবের প্লেটে তুলে দিয়ে বলে, আমি রান্না করেছি।

এ সময় রিয়া বলে, আংকেল আমি রান্না ঘরে যাই না। কালো হয়ে যাব, এ ভয়ে।

ফরিদা বলে, কালো হয়ে যাবে কেন মা, তুমি তো অনেক সুন্দর। মাঝে মাঝে মায়ের সাথে, কাজে একটু হাত লাগাবে। এতে মায়ের একটু সাহায্য হবে।

‘করি তো।  চা বানাতে পারি। তাছাড়া কখন সাহায্য করব? আমি তো ক্লাবে লং টেনিস খেলতে যাই।’

‘হ্যাঁ আন্টি, ও ভালো চা বানাতে পারে।’ রিতা কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলে।

রমিজ সাহেব বলেন, আজকের চা টা কে বানিয়েছে?

‘বড় আপা বানিয়েছে। আমাকে কিছু করতে দিলে তো।’  রিয়া মুখ গম্ভির  করে বলে।

এসময় রিতার মা মরিয়ম বলেন, দুই মেয়ের  মধ্যে খুনসুটি লেগেই থাকে। আবার দু’জন দু’জনকে ভালোও বাসে।

ফরিদা বেগম দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলেন, মেয়েরা ঘরের লক্ষ্মী। আল্লাহ আমাকে একটা মেয়ে  দিলেন  না।

মরিয়ম বলেন, দুঃখ করেন কেন আপা, ছেলে বিয়ে দিলেই তো ঘরে মেয়ে চলে আসবে।

এভাবে কথার পর কথা চলে। রমিজ সাহেব আর ফরিদা বেগম সবার অগোচরে মেয়ে দুটোকে মেপে নিচ্ছিলেন, কে কতটা যোগ্য। 

এতসময় বাচ্চু মাষ্টার হু-হা ছাড়া কিছুই বলেননি। তাঁর মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে, এবারও কি রিতার জন্য বড় একটা ‘না’ ঝুলে থাকবে?

বাসায় আসার আগেই রমিজ সাহেব বুঝতে পারেন, ফরিদা ছোট মেয়েকে পছন্দ করে বসে আছে। তা না হলে, আসার সময রিয়ার থুতনি ছুঁইয়ে চুমু খাবে কেন?  আর বলবেই বা কেন, লক্ষ্মী মেয়ে, আমাদের বাসায় বেড়াতে এসো?

 ওদিকে রিতাকে কিছুই বলেনি। এটাও রমিজ সাহেব লক্ষ করেন।

বাসায় এসে স্বামী-স্ত্রী  দুজন মুখোমুখি বসে।

‘তোমার কোন মেয়ে পছন্দ হল?’ ফরিদা বেগম উৎসুক হয়ে জানতে চায়।

‘আমি তোমায় আগেও বলেছি। এখনও বলছি, ছোট মেয়ের  প্রস্তাব আমি দিতে পারব না। তাই ছোট মেয়েকে পছন্দ হওয়ার প্র¤œই ওঠে না।’

‘ সেই পুরনো কথায় রয়ে গেলে? আগে বলো কোনটা কেমন দেখলে।’

‘ ছোট মেয়েকে আমি দেখিনি।’

‘মানে? তুমি কি চোখ বন্ধ করে ছিলে?’

‘ ছেলের বউ করে আনার চোখ দিয়ে দেখিনি।’

‘ দেখনি ঠিক আছে। কার কী গুন সেটা বলো।’

‘রিতা বেশ ভদ্র। নরম স্বভাবের মনে হলো। তোমার ঘরে বউ হয়ে এলে, সংসার ধরে রাখতে  পারবে।’

‘আর ছোট মেয়ে?’

‘একটু ছটফট। অগোছালো মনে হলো। তা ছাড়া বহিঃমুখী মনে হলো।’

‘মানে?’

‘দেখলে না, বলল, টেনিস খেলতে ক্লাবে যায়। ঘরের মেয়ে বাইরে খেলতে যেতে পারে?’

‘আমার মতামতটা জানতে চাও না?’

‘চাইব কী। তুমি তো ছোট মেয়েকে পছন্দ করে বসে আছ।’

‘কী ভাবে বুঝলে?’

‘এতবছর মাষ্টারি করেছি, মানুষের অভিব্যক্তি বুঝি না, ভেবেছ?’

‘ কী অভিব্যক্তি দেখলে  আমার মধ্যে?’

‘আসার আগে তুমি যে ভাবে ছোট মেয়েটাকে আদর করে চুমু খেলে, অথচ বড় মেয়েটাকে কিছুই বললে না।’

‘তোমার তো অনেক বুদ্ধি। এতদিন তো জানতাম না।’

‘তুমি তো আমার কিছুই দেখতে পাও না।’

‘ঠিকই ধরেছ। ছোট মেয়েটাকে আমার মনে ধরেছে। খুব মিষ্টি মেয়ে। যেমন লম্বা, তেমন গায়ের রং। চোখ দুটো কতো বড় বড়। আমাদের রিয়াদের সাথে বেশ মানাবে।’

‘আর বড় মেয়েটার কোনো গুণ তোমার চোখে  পড়ল না?’

‘ওতো বাট্টু। তাই আমি ভালো করে তাকাইনি।’

‘ভদ্র ভাবে কথা বলো। বাট্টু কী শব্দ?’

‘যেন তোমার নিজের মেয়ে, গায়ে জ্বালা ধরছে।’

‘নিজের মেয়ে আর পরের মেয়ে কী, সব আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে, তুমি কাউকে  অপমান করতে পার?’

‘অপমান করলাম কোথায়?  অন্ধকে অন্ধ বলা যাবে না?’

‘ভদ্র ভাবে বলতে পারতে। মেয়েটা একটু হাইটে কম। রিয়াদের সাথে মানাবে?’

‘তুমি আমাকে ভদ্রতা শেখাবে?’

‘প্রয়োজন হলে শিখবে।’

‘মাষ্টার মানুষ, সবাইকে ছাত্র ভাব? সারা জীবন নীতির কথা, আদর্শের কথা বলে, নিজে ঠকেছ, আমাকেও ঠকিয়েছ। এখন ছেলের বেলায়Ñ

ফরিদার কথা শেষ হতে পারে না। রমিজ সাহেব ধমকিয়ে ওঠেন, ঠকিয়েছি মানে কী? খেতে পড়তে দেইনি। শাড়ি কাপড় দেয়নি? 

‘শাড়ি গওনা আর খাওয়া পড়াই সব? মেয়েদের আর কোনো চাহিদা থাকে না? সারা জীবন ছাত্রছাত্রি নিয়ে  মেতে থেকেছ। আমার মন বোঝার চেষ্টা করেছ?’

‘এতদিন, এতব্যথা নিয়ে তুমি আমার কাছে থেকেছ? তা হলে চলে যাও, দেখো কোথায় বেশি সুখ আছে।’

‘আমাকে চলে যেতে বলছ? এত বড় কথা। এই থাকল তোমার সংসার। তোমার মতো তুমি থাক। আমার মতো আমি।’

‘ভয় দেখাচ্ছ? কোথায় যাবে যাও।’

‘ কোথায় যাব মানে? এই ফ্লাট তো আমার। আমার বাবা কিনে দিয়েছে।’

‘শুধু তোমার বাবা দিয়েছে, আমার কোনো অবদান নেই?’

‘যতটুকু তোমার  আছে নাও। আমাকে মুক্তি দাও।’ এই বলে ফরিদা বেগম রাগে, ক্ষোপে , দাপাতে দাপাতে নিজের রুমে যেয়ে, দরজা আটকিয়ে দেয়।

রমিজ সাহেব কিছু বলেন  না। নিজের রাগ কমাতে, জোড়ে  নিশ্বাস নিয়ে, দশ সেকেন্ড নিশ্বাস ধরে রেখে, আস্তে আস্তে ছাড়তে থাকেন। 


দু’দিন পর বাচ্চু মাষ্টার  মরিয়ককে ডেকে বলে, রমিজ সাহেব ফোন করেছিলেন, বললেন, আমাদের রিতাকে ওনার পছন্দ হয়েছে।

মরিয়ম এতসময় রান্না ঘরে ছিল। স্বামীর ডাকে রান্না ঘর থেকে এসে, ভিজা হাত শাড়িতে মুছতে মুছতে বলে, একটু আগে ফরিদা আপা আমাকেও  ফোন করেছিলেন। উনি যে বললেন, আমাদের ছোট মেয়েকে উনার পছন্দ হয়েছে।

‘ রিয়ার কথা এখানে আসল কী করে?’

‘তাতো জানি না। আমাকে তো তাই বলল।’

‘কী বলো!  আমাকে তো বললেন, রিতামাকে পছন্দ হয়েছে। তা হলে দু’জন দু’জনকে পছন্দ করেছে। কিন্তু আমরা তো রিয়ার কথা বলিনি। বড় মেয়ে রেখে , ছোট মেয়ের কথা কেন বলব? না, এটা হতে পারে না।’

‘এটা ফরিদ ঘটকের কার সাজি। ও নাকি বলেছে, যাকে পছন্দ, তাকেই আমরা দেব।’

‘ফরিদ এটা ঠিক করেনি। বড় মেয়েকে রেখে, ছোট মেয়েকে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

বাচ্চু মাষ্টারের মুখের মানচিত্র পালটে যায়।

মরিয়াম বেগম খুশি খুশি মনে বলে, এক কাজ করি, ছেলের মা রিয়াকে পছন্দ করেছে, রিয়াকেই বিয়ে দিয়ে দেই। ও একটু কম পড়াশুনা করেছে, ওকে বিয়ে দিতে আমাদের কষ্ট হবে।

‘তুমি কী বলো। বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়েকে বিয়ে দেব? ওর মনের অবস্থা কী হবে বুঝতে পেরেছ?’

‘রিয়াকে যখন ওরা পছন্দ করেছে, তখন রিয়ার কথাই ভাব।’

‘কখনও  না। এ কথা তুমি আর মুখে আনবে না।’

‘বরাবর পুরুষ মানুষের ঘটে বুদ্ধি একটু কম থাকে। তুমি যদি চালাক হতে, তা হলে রিয়ার কথাই আগে ভাবতে।’

‘চালাক হওয়ার দরকার নেই। আগে রিতার বিয়ে হোক, তার পর রিয়ার কথা ভাবা যাবে।’

‘সব সিদ¦ান্ত তুমি একা নেবে?’

‘তুমি বুঝতে পারছ না কেন?  রিতার বয়স হয়ে যাচ্ছে। রমিজ সাহেব ওকে পছন্দ করেছে, ওর কথাই আমাদের আগে ভাবা উচিত। রিয়ার কথা আমরা পরেও ভাবতে পাবর। ওর বিয়ে দু’এক বছর পরে হলেও অসুবিধা নেই।’

‘তুমি তো গোয়ারতুমি করবেই। তোমাকে তো আজ থেকে চিনি না।’

‘এখানে গোয়ারতুমির কী দেখলে? তোমার কথায় সায় দিলেই, আমি ভালো, তাই না?’

‘আমার কোন  কথা থাকতে পারে না?’

‘আমার মেয়ে, আমি যা বলব, তাই হবে। তুমি নাগ গলাবে না।’

‘তোমার মেয়ে, মানে কী? তোমার মেয়ে, আমার মেয়ে না?’

‘চিৎকার করবে না। ওঘরে মেয়েরা আছে, শুনতে পাবে।’ 

‘চিৎকার আমি করছি, না তুমি করছ। এখন মেয়ে ফলাচ্ছো। ওদের মানুষ করেছে কে? তুমি তো সব সময় স্কুল নিয়ে ব্যস্থ থেকেছ। অন্যের ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে, সব সময় খরচ করেছ।’

‘ওরা কলা গাছ। জল হাওয়া ছাড়া এমনি এমনি বড় হয়েছে। ডাক্তার হয়েছে।’

‘ শোন, আমার এক কথা। আমি যা বলেছি, তাই হবে। ওই ছেলের সাথে রিয়ার বিয়ে দেব।’

‘তুমি যদি জেদ ধরো, তা হলে আমারও এক কথা। আমি যা বলেছি, তাই হবে।’

দুজন সমানে সমানে জেদ ধরে, রাতে না খেয়ে, মশারি না টানিয়ে, দু’জন দু’দিকে মুখ করে শুযে থাকে।

একই সময়, রমিজ সাহেবের বাসায়ও দু’জন, দু’রুমে। গত দু’দিনে আবহাওয়া আরও তিক্ত হয়েছে। আগামী কাল  দু’জন কোর্টে  যাবে। 

   



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট