এই সময়ের গল্প




চলতি সময়ের কথা। তখনো হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করার নির্দেশ আসেনি। দু'একজন হয়ত করোনাক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত হয়েছে দেশে। টিভিতে, খবরের পাতায় চীনাদের দূর্বোধ্য দূর্দশার অবস্থা প্রতিদিনই নিউজ হচ্ছে। তারপরও বোধ জাগেনি বাঙালিদের মধ্যে। প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক জীবন-যাপন চলছে। সবাই বিরামহীন ব্যস্ততায় সরব। পরোয়া নেই এই প্রাণঘাতী মহামারীর ।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বেহাল পরিস্থিতি দেখে প্রবাসী আদনান সাহেব দেশে ফেরার ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু কলেজ পড়ুয়া আদনান সাহেবের ছোট ভাই সাদমান সংক্রমণ ব্যধির ধারণা থেকে বড় ভাইকে দেশে ফেরা থেকে বারণ করেছে। পরিশেষে প্রবাসী বড় ভাই আদনান ছোট ভাইয়ের সচেতনতামূলক পরামর্শ মানতে বাধ্য হলো।
আদনান সাহেব আর দেশে ফিরল না।

অপরদিকে করোনাক্রান্ত সনাক্ত হবার পর পরই স্বদেশ কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছে যে, ''আপনারা জনসমাগম কমান, আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন,অপরকে সচেতন করুন, নিজে ভালো থাকুন অপরকেও ভালো রাখুন"। 

ইতোমধ্যে সরকারও বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কলেজ পড়ুয়া সাদমান ও তার বন্ধু সাদিক
উভয়ের বাড়ি খুব কাছাকাছি।  দু'জনই খুব ভালো বন্ধু। পড়াশোনার পাশাপাশি সর্বত্রই যৌথ পরিকল্পনায় সমাজ বান্ধব কাজ ও জনগণের সেবা করে যায়।

একদিন আসরের নামাজের পর সাদমান ও সাদিক পড়ন্ত বিকেলের শান্তমৃদু হাওয়ায় হাঁটতে বেরুল। উভয়ের মধ্যে কেমন যেন বিষণ্ণ বিষণ্ণ ভাব।
সাদিক,
-কিরে দোস্ত! তুই আজ অতটা দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছিস ক্যান? রেগে মেগে আছিস নাকি?
সাদমান,
-দুনিয়ার খবর নেই তোর কাছে, আছিস শুধু পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে, বুঝিস! দেশের দশের খবরও রাখতে হয়। যত্তসব, সারাদিন পড়া আর পড়া! 
সাদিক,
-দেশের খবরের সাথে দূরত্বে থাকার কি সম্পর্ক?
পাগল হয়ছিস?  কী সব বকিস মাথামুটা!
সাদমান,
-কান পেতে শোন, তবে কাছে আসবি না ছয় ফুট দূরে থাক।
সাদিক,
-আচ্ছা বল,
সাদমান,
-শোনস নি চীনাদের প্রাণঘাতী নোভেল করোনা ভাইরাসের কথা! ওটা এখন বাংলাদেশেও আক্রমণ করেছে, আক্রান্ত তিনজন প্রবাসীকে ইতিমধ্যে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। যাতে করে ওদের সংস্পর্শে ও নৈকট্যে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত ব্যাধিটি অন্যত্র ছড়িয়ে না পড়ে। এই প্রাণঘাতী করোনার আক্রমণ ঠেকাতে ডাক্তারদের সচেতনতামূলক নির্দেশনা মানতে হবে।
সাদিক,
-বুঝেছি, আমিও টিভিতে দেখেছি অনেক চীনারা প্রাণ হারিয়েছে এতে। খুব প্রয়োজনীয় কথা বললি।
সাদমান,
-দোস্ত চল, এই সুযোগে কিছুটা সেবামূলক কাজ করি। তোর মতামত কি?
সাদিক,
-সেবার কাজে আমার কোনোদিন দ্বিমত ছিল না, আশাকরি থাকবেও না, সর্বদা সবসাথে প্রস্তুত। আমার জমানো নাস্তার টাকা সহ মোট প্রায় পাঁচ হাজার টাকা আছে, বাড়ি ফিরে টাকাগুলো নিয়ে নিস।
সাদমান,
-আমিও দিতে পারব পাঁচ হাজার খানেক। আলহামদুলিল্লাহ, দশ হাজার হয়ে গেল।

এসব প্ল্যান করতে না করতে সরকার কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলো হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার জন্যে। শহর-বন্দরের ব্যস্ততা ফেলে সবাই আপন আপন বাড়ি অভিমুখে যাত্র শুরু করল। কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে সক্ষম হলেও বর্তমান স্থানে অবস্থান করছে অনেকেই। দেশজুড়ে বিরাজ করছে ভয়ানক আশঙ্কা। করোনাক্রান্ত রোগী মারা যাওয়ার খবর ও প্রায় দেশবাসীর কানে কানে গিয়ে পৌঁছালো।

সাদমান ও সাদিক মাস্ক, সেভরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী কিনে নিয়ে আসল বাজার থেকে। মুদি দোকানদার নিয়মিত দামের উর্ধ্ব-মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। এসব তথ্য ততক্ষনাৎ জেলা প্রশাসককে জানানো হলে কিছুক্ষণের মধ্যে তা সুরাহ হয়। অপরদিকে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো দু'তিনদিন যাবৎ রুজি রোজগারে বের হতে না পেরে পেরেশান হয়ে বসে আছে, ওদের তো প্রতিদিন দিনের আয়ে দিন কাটে, বাড়তি কোনো আয় তাদের নেই বললে চলে। এর মধ্যে আর, লোন, মহাজনের ঋণ, কিস্তির টাকা পরিশোধের চিন্তাও মাথায়। কি করবে,  কি হবে!  পাড়ার এমন হত দরিদ্র লোকদের দেখে দেখে চাল,ডাল ও নিত্যপণ্য সামগ্রী পৌঁছিয়ে দেয় সাদমান- সাদিক। আর পথযাত্রী যাদের বিশেষ প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছেই, কিন্তু মুখে মাস্ক নেই, তাদের একটা করে মাস্ক ও সেভরন দিয়ে হাত ধোয়ে দেয়, এবং সর্বত্র আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার আহ্বান করে সবাইকে। এভাবেই চলছে সাদামান আর সাদিকের মানবিক জীবনযাত্রা।

আজকের এই পরিস্তিতে সাদমান-সাদিকদের মতো যুবক বন্ধুদের বেশ প্রয়োজন। শিখুক সবাই নিজেকে ভালোবাসতে এবং অপরকেও ভালোবাসতে। স্লোগান উঠুক নিজেও ভালো থাকুন, অপরকেও ভালো রাখুন। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট