পদাবলি

 



বিপর্যয়

হাফিজুর রহমান


ভালোর থেকে বেশি এখন মন্দের কদর

মানুষকে নয়, টাকাকে করতে আদর!

বাড়াতে সম্মান, যার যতোটা বেশি জোর

এ দায়িত্বে রয়েছে কিছু হারামখোর।


এতোটাই বেড়েছে বেশি মানুষের লোভ

শুধুমাত্র স্বার্থে কারণেই বর্ষে ক্ষোভ!

মিথ্যার আশ্রয়ে- হলেও গেলাতে টোপ

ন্যায়ে নয়, অন্যায়েরই গুরুত্বারোপ।


দয়া-মায়া ওসব এখন খেলনার মতোন

বিশ্বাসের নয় প্রীতিকর কথপোকথন;

দ্রুততম সময়ে স্বভাব-চরিত্রের পরিবর্তন

দিচ্ছে এনে, মনুষ্যত্ববোধে অধঃপতন।




রঙহীন মানুষ 

রুদ্র সাহাদাৎ 


রঙহীন মানুষ তবুও সারাটাদিন রঙে থাকি, শূণ্যতায় ঘেরা জীবন হাওয়ায় ভাসি 

নীল ঢেউ ভাজ ভাঙে জলে ও মনে, শাদা গাঙচিলের মতো উড়ে উড়ে ঘুরছি 

অতীত মনে নেই কিছু,জানা নেই ভবিষ্যৎ, ফ্যাকাসে বর্তমান, বেঁচে আছি এটাই শুকরিয়া। 

ফিলিস্তিন কাঁদে কালো ধোঁয়া উড়ে বাতাসে, বিধ্বস্ত নগরী

আমদমুখ সমুহ নিঃস্তব্ধতায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, হারিয়ে প্রিয় স্বজন কাঁদে আবালবৃদ্ধবনিতা। 

’’ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ¦ালিমিন’’।

ঠিকানাহীন উদ্বাস্তু পথে পথে জীবন্মৃত শিশুর চিৎকার, ছয় ওয়াক্ত সালাত আদায় পাড়া মহল্লা অলিগলি..


রঙমশাল

স্বপন গায়েন


রংচটা শরীর

রংচটা হৃদয় উপকূল

তবুও আতসবাজি জ্বালাতে ইচ্ছে করে।


সব্বার ঘর আলোময়

শুধু আমাদের ঘর বড্ড আঁধার

মোমবাতি রঙমশাল কতো রকম বাজি ...


বিবর্ণ কবিতার পাতায় রক্তপাত হয়

চারিদিকে মাইকে বাজছে শ্যামা মায়ের গান

অদ্ভুত আঁধারকে গিলে খাচ্ছে বিপন্ন জীবনের কাব্য।


সব পুজো শেষ

আতসবাজির সব রঙ ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে যায়

জীবনটা রঙমশাল হল না কখনও ...



যদি জন্মান্ধ হতাম 

এস আই শিমুল


যদি জন্মান্ধ হতাম, 

আজ থাকতোনা কোন অভিযোগ- 

আলোর এই পৃথিবীতে পরিচয় হতো না কখনোই। 


তুমি নামক সোনালী রোদের সাথে;

কখনোই খোঁজতে হতো না আলো-আঁধারের সুখ

এই পৃথিবীর পথে। 

তোমাকে দেখার তীব্র ব্যাকুলতায়

চোখের ক্ষুধায় চিত্ত চাঞ্চল্য হতে হতো না আমায়।

উদাস প্রদোষ, বিষাদের রাত্রি 

পৃথিবীর অবসাদ কুড়ে কুড়ে খেতো না রোজ।



ছায়া হয়ে যায় ছুঁয়ে

সাইফুল ইসলাম


দুপুর কিংবা গোধূলি 

খুঁজে ফিরি 

পাইনি আমার প্রিয় শব্দগুলোর ঠিকানা

ঘাপটি মেরে কোথায় যেন চুপিসারে বাজায় 

শুধুই বেহালাখানা।


খুঁজে গেলাম রাত নিশি অবধি

নীরব পথের পথিক হয়ে

জোছনায় ভিজে শরীর 

মনের ভিটোয় ছায়া হয়ে যায় ছুঁয়ে

এক ছবি, করে বড়’ই অস্থির লাল হয় চোখ আমার।


একটা কবিতা নির্মাণ করবো বলে

দিবারাত খুঁজে ফিরি

আমার প্রিয় শব্দাবলী 

অলিগলি পাহাড় পথ গিরি।


আমার মনের জানালা রক্তাক্ত হয়

প্রতিনিয়ত, ভুগি শুধুই জানা অজানা

কঠিন কাঁটার আঘাত বিষময়

বেড়ে যায় মনের কোণে দীর্ঘশ্বাসের আলপনা।




অনধিকার

হোসেইন দিলওয়ার


বখেড়া বলয়ে পলি- জমেছে প্রাণরসে

অবৈধ খেলায় দখল হয়েছে সা¤্রাজ্য,

উত্তাপ দেখি জলজ মাটির কলসে!

তৈলাক্ত দহনে আজ সুখ পরিত্যাজ্য।

মুক্তির ত্রিশূল যেন অসুরের হাতে-

সপ্রতিভ মহিমায় আশ্চর্য সফেন,

সব খায় ছিঁড়ে খুঁড়ে ধারালো ইস্পাতে-

চুপসে যায় জীবনের বিশুদ্ধ লেনদেন!


সমস্ত শান্তির দূত ঘুমায় কবরে-

অনধিকার প্রবেশে চলে বলাৎকার,

নেতৃত্বের হাহাকার অবনি চত্বরে-

পথে প্রান্তরে লক্ষিত- বেসুরো চিৎকার।


সমস্বরে দানবেরা গেয়ে যায় গান-

বাঁচার তাগিদে কাঁদে মানবিক প্রাণ।



বদলায়নি ভালোবাসা

এ এম তোফায়েল 


তার বাড়ির দিকে এখনো ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় আমি! দেখি ফুলের বিয়ে হচ্ছে- হলুদ ফুলের বিয়ে! জানি সে নেই! এক চিলে ডানায় করে নিয়ে গেছে তাঁরে! তবুও কেনো যেনো তাকায় আমি এক অজানা পুরনো প্রণয়ের টানে! 

বাওড়ের ঢেউ এখন আর আগের মতো কয় না কথা! কপোতাক্ষের বুকে হয় না আগের মতো জোয়ার ভাটা! শুল্কপক্ষের পঞ্চদশী চাঁদ এখন আর হাসে না! সময বদলেছে- বদলেছে মানুষ! অথচ আমি নিজেকে বদলাতে পারলাম না! বদলায়নি ভালোবাসা!


প্রমিত সাহস

মুস্তফা হাবীব


অকারণ সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়ার দুরন্ত সাহসে

 না আছে নিজের কল্যাণ না আছে দেশের। 

অন্যায়ের প্রতিবাদে রুখে দঁড়ানো সাহসের কাজ

তবে তা যেনো হয় প্রমিত সাহসের মাইলফলক। 


প্রগাড় অভিমানে মৃত্যুমৃণাল পান করা 

কোনো সাহসের কাজ নয়, চরম আত্মঘাত

এমন কাজটি করে যারা স্বজনকে কাঁদায়

পাতাঝরা বৃক্ষের মতো শুধু নিজেকে হারায় । 


আমি এমন সাহসের কথা কথা বলছি

যে সাহস প্রস্তুত করে সত্য- সৌন্দর্যের রূপকল্প 

শিল্পবোধে মানুষকে কাছে টানে অনির্বাণ 

মানুষের কল্যাণে নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটায়।



জন্মান্তর যাত্রা 

রবীন বসু 


আসল মৃত্যুর মতো ঘণ্টা বাজে দূরে

কালভার্ট পেরিয়ে, খালপাড়ের উঁচু ঢিবি পেরিয়ে

রেললাইন পেরিয়ে ওই যে পরিত্যক্ত কারখানা

ওখানে অপেক্ষা করে আছে মৃত্যু, ঘন অন্ধকার;

সংক্রান্তির রাত শেষ হলেই বেজে উঠবে খোল

সংকীর্তন শুরু হবে অষ্টপ্রহর

নিরবচ্ছিন্ন সেই মৃত্যু হাহাকার অনির্দেশ পথ 

অতিক্রম করবে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে!

হাওয়াকল আর চালমিলের পাশ দিয়ে 

যে সরু রাস্তা নির্মোহ পড়ে আছে

গত জন্মের ফেলে আসা স্মৃতির গুঁড়ো

নাকে নোলক পরে এবার জন্মান্তর যাত্রায় যাবে



হতাশার মিছিল

এম সোলায়মান জয় 


জরাজীর্ণ পৃথিবীতে আমি এক বৃদ্ধ ক্যাকটাস

মিথ্যার সাম্রাজ্যে অস্থায়ী মরণ যাপন করছি

প্রাচীন দুর্ভিক্ষে শেষবারের মতো সেই যে সত্যকে দেখেছিলাম।

সেদিনের মুখের সেই করুণ চাহনি

পৃথিবী আর দেখেনি কোনদিন।

হতাশার মিছিলে হারিয়ে গেছে সুবিচার

নিষ্ঠার কাটা গর্দান হাতে নিয়ে মিছিল করেছে দুর্বৃত্তরা।

অন্যায়ের পা চেটে বেঁচে আছে পৃথিবীর যত প্রাণ

যাদের ভেতরে কোন জীবন নেই

আছে মহাদুর্ভিক্ষের ক্ষুধা।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট