পদাবলি : ০২

 



শ্বেত পাথরের  কান্না

সবুজ আহমেদ 


তোমাকে পাবো না প্রতীক্ষার পবিত্র প্রভাতে

তা আমি সম্পর্কের শুরুতেই জানি

তোমার চলন-বলন ধৈর্য-নেই বললেই চলে

নিমপাতা মুখে তবুও এতদূর এগিয়েছি

বুকের স্ফীত স্তন আর ইচ্ছে শক্তির বলে 


কত কবিতার রং ঢেলে দিয়েছি নতুন বইয়ে

হৃদান্তরের ঝরা রক্ত অবিরত গায়ের ঘাম দেখে

কেমন করে তুমি দেখেও নিশ্চুপ না দেখার ভানে।



দেখা না দেখা 

মীযান তাসনীম


তোমাকে প্রথম দেখি শিল্পকলায়। বারান্দায় হাঁটছিলে। একবার এদিকে এসে আবার ফিরে যাচ্ছো। সম্ভবত কারো জন্য অপেক্ষা করছিলে। কার জন্য অপেক্ষা করছিলে? 


তোমার চোখের দিকে একবার তাকিয়েছিলাম। এরপর আর সাহস হয় নি। আমি এমনিতেই মানুষের চোখের দিকে তাকাতে পারি না। তোমার চোখে কীভাবে চোখ রাখি?


ইচ্ছে করছিলো তোমাকে গিয়ে কিছু বলি। অনেক কথা মন থেকে জবান পর্যন্ত এসেছিলো। তোমার কাছে বলতে গিয়ে কথা জড়িয়ে যেতে পারে। এই ভয়েই কি বলি নি?


এরপর আবার দেখলাম তোমাকে। হ্যাঁ, আবার। শিল্পকলার বাইরে। কেউ একজন তোমার সঙ্গে ছিলো। যার কারণে তুমি স্বাচ্ছন্দ ছিলে। সে কে ছিলো? 


আমাদের আর কখনো দেখা হবে না। এবং দেখা যে হয়েছিলো তুমি জানোও না। নাকি দেখা হবে আবার?  নাকি তুমি জানো দেখা যে হয়েছিলো? 



একটু অপেক্ষা করো মোহিনী

জায়্যিদ জিদ্দান


সহস্র বছর ধরে আমার পথচলা- পৃথিবীর নরম গায়ে একে দিচ্ছে প্রগাঢ় নিষ্ঠুর চিহ্ন।

তোমাকে দেখার এক সুতীব্র ইচ্ছা-

বেড়ে বেড়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে আকাশ-বিভা।

একটু অপেক্ষা করো মোহিনী! আরেকটু।

কিছুক্ষণ আগেই রেখে এলাম আমাদের মিলনকেন্দ্র।

পাশেই ছিল ছাতিমগাছ টা।

আধপাকা পুকুর, টলটলে জল, বৃদ্ধ মেহগনি সব আগের মতোই আছে।

তবে জানো! সেই টিউবওয়েল টা এখন আর নেই।

এই তো আমার পদরেখা মেরে ফেলছে তোমার পদচিহ্ন - যা তুমি রেখে গিয়েছিলে অর্ধশত বছর আগে।


তোমার পূর্বপুরুষ ঢেলে গিয়েছিল যে রক্ত, মুক্ত করেছিল যে দলা দলা নিশ্বাস-


জানো! আজ দেখলাম - সে রক্ত শুষে নিচ্ছে ক্ষুধার্ত মৃত্তিকা। দলা দলা সে নিশ্বাস উড়ে যাচ্ছে আকাশপথে।

ওই তো! ওই তো সামনেই আরশি নগর।

তারপরেই পদ্মফুলের ঘাট। নদীটা পেরোলেই

ভেসে উঠবে-

আমার মায়ের ভানুমতী সুন্দর মুখ।

মেঘ ফুল, রোদ্দুর, নির্বাসিত লাউয়ের সুকান্ত মৃণাল-

মৃদু উত্তাপ, বিস্তৃত ধানক্ষেত, শিশু সূর্যে আলোয় তোমার চকচকে সোনামুখ।

আমি আবার দেখবো।

দেখবো- মক্তবি শিশুর মুখে সুপ্রসন্ন হাসি।

চরম উচ্ছ্বাসে সকালের পিছু নিয়েছে উদাস দুপুর।

মাগরেবের আযান। অতঃপর সন্ধ্যাকূপির আলোয় দাদির ভূতুড়ে গল্প - আমি আবার দেখবো।

একটু অপেক্ষা করো মোহিনী! আরেকটু..!



উল্টো পথের ইতিকথা

দীপঙ্কর ইমন


সেই কবে, 

হিজলের বনে দেখেছিলাম তোমার ছায়া


তারপর,

ছায়াপথ ঘুরে এসে

আমার দেহে যখন যান্ত্রিক রক্তে সয়লাব 

তবুও 

তোমার সেই চোখেই করতে চাই কবিতার মুগ্ধপাঠ।


সেইসব গুচ্ছ গুচ্ছ গ্রাম গুলো

সোডিয়ামের কি অদ্ভুত মেকাপ করছে আজ 

অথচ

পানকৌড়ির ডানায় চেপে

আজও আমি

তোমার যুবতী শরীর স্পর্শ করতে চাই।


শিমুলের বনে 

এখনও কি কোনো কিশোর, যুবক হয়ে উঠে

অথবা প্রেমিক?


সোডিয়ামের পেটে

আমাদের সবগুলো জ্যোৎস্না রাত। 

শিয়ালের উৎসব নেই

কবি হাঁটছে

তীর্থ যাত্রার উল্টো পথে।


নিঃসঙ্গ দোয়েল 

জিয়া হক


তোমাকে একনজর দেখবো বলে 

আশিটা বছর অপেক্ষা করেছি

বকের মতো এক ধ্যানের অপেক্ষা

এক এক করে কেটে গেছে যৌবন বার্ধক্য জ্বলজ্যান্ত জীবন


তোমাকে দেখার সুযোগ হয়নি

সমস্ত হৃদয় জুড়ে তোমার উপস্থিতি থাকলেও 

গোলাপ ঝরে গেছে

বকুল শুকিয়ে গেছে

হিজল ফুলও আর আগের মতো নেই

আমার নদী খুন হয়ে গেছে 

আমার গ্রাম গিলে ফেলেছে খাইখাই শকুন

তবুও না তোমার সাথে দেখা না


একদিন একটা দোয়েল জানালায় লেজ দোলাচ্ছিল

দোয়েলের একটা পা নেই

কী বিরহ-মধুর গান তার

মুহূর্তেই পুরোটা খেয়াল কেড়ে নেয়

কোথাও হারিয়ে গেলাম

অবশেষে নিজেকে আবিষ্কার করলাম

একপায়ের দোয়েল নিঃসঙ্গ দোয়েল হিসেবেই।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট