রাষ্ট্র যা চায় ...

 


রাষ্ট্র যা চায়...

সাদিকুর রহমান


রাষ্ট্র কি কিংবা তার পরিচয় কি এসবের আলোচনায় না গিয়ে বরং সে কি চায় তার আলোচনাই এখানে মুখ্য। আমরা যাকে বাংলায় রাষ্ট্র বলি ইংরেজিতে তাকে স্টেট বলে। আর এই স্টেট শব্দটির উৎস হলো ল্যাটিন শব্দ স্ট্যাটাস বা অবস্থা। অর্থাৎ আজকে আমাদের দেশের যে অবস্থা, তাই হলো এই স্টেট। আর এই স্টেটের শাসক যেই হোক না কেন, তারা যা চায় তার মাঝে খুব একটা পার্থক্য নেই। বরং তারা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বা দলে বিভক্ত হয়ে একই স্বার্থ হাসিলের জন্য একই পদে আরোহন করতে চায়। আর ওই পদটিই হলো মূলত আমাদের রাষ্ট্র। তিনি সর্বদা ভীতি ছড়াতে ও শক্তিমান কিন্তু তার বিপরীত তাকে কর্দমাক্ত করে নুইয়ে দিতে চান। তিনি চান, গোলাপের সৌরভ কেবল তারই হোক। সেই সৌরভ গোলাপ ছড়ালেও আমরা যে ঘ্রাণ পাচ্ছি, তা কেবল তার বদান্যতা ও কৃপায়। তিনি চাইলে এই গোলাপের গাছকে শিখরসহ উপড়ে ফেলতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ তিনি দয়ালু, কৃপাময় ও পরোপকারী এবং বড় মনের উদার মানুষ। আমরা যে সৌরভ পাচ্ছি এজন্য তার গুণগান গাওয়ার পাশাপাশি স্বয়ং গোলাপেরই উচিত তার জন্য অধিক কাল বেঁচে থাকার প্রার্থনা করা। এই রাষ্ট্র এমন গোলাপের চারা বর্তমানে রোপণ করছে,  যেখান থেকে কোন সৌরভ চড়াবার কোন সম্ভাবনা নেই। বরং এই গোলাপের পেছনে অর্থ ব্যয় কোন ইনভেস্ট নয় বরং ওয়েস্ট (অপচয়)। আর এমন অপচয় রাষ্ট্র বারবার করতে প্রস্তুত। কারণ যে তাকে কাপুনি ধরিয়ে দিতে পারে কিংবা তার নড়বড়ে ভিক্তিকে সমূলে উৎপাটিত করে দিতে পারে এমন বৃক্ষের চাষাবাদ তিনি কেন করবেন? না তার কখনো এমন বৃক্ষের চাষাবাদ কিংবা রোপন করা উচিত নয়! বরং এই ধরায় বৃক্ষ যদি তার সত্তাকে ভুলে গিয়ে অন্যের মতো হয়ে বাঁচতে চাওয়ার আবেদন কে মেনে নেয়, তবেই তার চাষাবাদ উর্বর হবে। আর তাইতো এখন সব দেশেই চলছে এমন যুবকের উর্বর চাষাবাদ। যে সকালের রোদকে ঘরে প্রবেশ করতে না দিয়ে বরং কপাটকে শক্ত করে আটকে দিয়ে কম্বল মুড়িয়ে উষ্ণতা খুঁজে। অথচ তার চেয়ে আরো আরামের উষ্ণতা এই সুন্দর প্রাকৃতিক রৌদ্রময়ী সকাল তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। সে স্বাগতম পছন্দ করবে কেন? সে পছন্দ করবে কোন উর্বশী তরুণীর তাড়না। যে তাকে দুঃখ বা যন্ত্রণা দিলেও সে এই জ্বালাকে সাদরে গ্রহণ করে নিবে। যে চাওয়া তাকে বেদনা দেয়; সে এমন চাওয়া বারবার চাইবে তাতে আপত্তি নেই বরং আপত্তি যে তাকে স্বাগতম জানাবে তাকে গ্রহণ না করার। সে উর্বশী কোন তরুণীকে না পাওয়ার বেদনায় আক্ষেপ করতে প্রস্তুত, কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কিংবা বৃহৎ উদ্দেশ্য সাধনে ঘর থেকে বের হতে রাজি নয়। বরং আমি না গেলেও চলবে; অন্য আরো অনেকে তো আছে। তারা এসে করে ফেলবে, এমন মানসিকতায় ভরপুর আজ এই দেশ। বৃহদাকার যৌবন ধারণ করা এই তরুণ যুদ্ধে যাওয়ার সকল সম্ভাবনাকে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, এখন পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে যে, সামান্য কায়িক শ্রম করতেও দিতে রাজি নন আমাদের পিতামাতারা। ফলে আমরা উৎপন্ন হয়েছি শোপিচ বৃক্ষে। যে দেখতে সুন্দর, পরিপুষ্ট ও নড়বড়ে। আর রাষ্ট্র সর্বদা রোপণ করে দেখতে সুন্দর, পরিপুষ্ট ও ক্ষয়িষ্ণু এমন  বৃক্ষের। যে ভয় পাবে ঝড়কে এবং ঝড়ের সময় সে যেন প্রয়োজনে রাবারের মত হেলে পরতে ও নিজেকে বাঁচাতে পারে এমন কৌশল তাকে শিখিয়ে দিবে। সে এমন বৃক্ষের চাষাবাদ কিংবা রোপন করে না, যে ঝড়ের সময় সিনা টান করে দাঁড়িয়ে ঝড়কে হুংকার দিয়ে উঠতে পারে! রাষ্ট্র এখন যে তরুণের রোপণ ও চাষাবাদ করছে তাকে দিয়ে বিপ্লবের ফুল আর ফুটবে না বরং প্রেম নামক স্থুল অনুভূতি তসরুফ করে দিয়েছে যুবকের সব! 



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট