এখনো অনেক ক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে : ওলগা তোকারচুকের [সাক্ষাৎকার]



এখনো অনেক ক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে !
 ....ওলগা তোকারচুকের

ওলগা তোকারচুক ও পিটার হ্যান্ডকে সম্প্রতি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের জন্য ওলগা তোকারচুক আর ২০১৯ সালের জন্য পিটার হ্যান্ডকে মনোনীত হয়েছেন। চলতি বছরের প্রারম্ভে লিটারেরি হাব'র জন ফ্রিম্যান লেখিকার সাথে তার উপন্যাস ফ্লাইটস নিয়ে কথা বলেছিলেন, মঞ্চে যেখানে অনুবাদক জেনিফার ক্রফট উপত ছিলেন। সাক্ষাৎকারটি বাঙলায়ন করেছেন মীম মিজান ।
জন ফ্রিম্যান: ফ্লাইটস মহাশূন্যে ও সময়ে বুদ্ধিদীপ্ত এবং রহস্যজনক ভাবে ঘুরছে। আপনি আটটি উপন্যাস, দু’টো ছোটগল্প সংকলন লিখেছেন। এগুলো কি শুধুমাত্র সেধরণের বই যা আপনি লিখতে পারেন? এটাকে সুযোগ দিয়েছেন; এবং কত ভ্রমণ এখানে সম্পৃক্ত; একবার ভ্রমণের সময় কি আপনি অদৃশ্য হওয়ার অভিজ্ঞতাটি পেয়েছিলেন? আমি উদগ্রীব, আপনি যদি সে বিষয়ে কিছু বলতেন?
ওলগা তোকারচুক: আমি যতক্ষণ না বুঝলাম যে ভীতিপ্রদ থাকা ভালো ততক্ষণ পর্যন্ত অদৃশ্য ছিলাম। হাসি অতঃপর সকলেই আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো এবং জিগ্যেস করলো, কী হয়েছে?, অতঃপর আমি বর্ণনা দিলাম যে, এটা অনেক পুরাতন, পোলিশ চুলের স্টাইল। এটা এরকম যে, খুবই দেশীয় এবং সেরকমই। কিন্তু চোখ, আমি মনে করি নারীরা তাদের চল্লিশ পার করেছে, তারা অদৃশ্য জগতের একটি অংশ হয়ে গেছে। আর এরকমটিই আমি আমার বইয়ে বর্ণনা করেছি, এই অস্তিত্বের অবস্তার খুবই ভালো এবং আঁধার দিক ছিলো। ভালোটি হয়েছে যে, আপনাকে একজন উত্তম বর্ণনাকারী হতে হবে কেননা কেউই খেয়াল করবে না যে আপনি তাকে দেখছেন। তাই তুমি মুক্ত চোখের মতো, কোনো সম্মতি ছাড়াই গোটা পৃথিবীতেই ভ্রমণ করছেন বা সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছেন। এমনকি কোনো সতর্কতার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। তাই এটা খুবই ভালো একটা অবস্তান।
জ ফ্রি: এই বইটি রূপকথায় পূর্ণ যা অনুভূত হয় সামগ্রিক ও প্যাঁচানো মতো। যেমন নবতর আবিষ্কার ও বলা যা আমাকে বিস্মিত করেছে। আপনি যদি কোনো একটা সুত্র দেন। কেননা বিভিন্ন বিষয়ে গল্পকথক একটি অপরিচিত বিদেশী শহর আর একজন পর্যটকের সাথে কথাবলা বন্ধ করে দিয়েছে। আপনি কি সেই প্রকৃত অবস্তার সত্যাসত্য আবিষ্কার করেছেন অথবা এবইয়ের অনেক ঘটনা বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর?
ও তো: একজন পর্যটক হিশেবে আমার প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার উপর অধিকাংশই। কিন্ত শেষান্তে নয় কেননা এবইয়ের গল্পকথক কল্পিত, সাজানো। তাৎক্ষণিকভাবে, প্রথম জিনিশটি হয়েছে একটি নক্ষত্রপুঞ্জের উপন্যাস লেখা। উপন্যাসটি ক্ষুদ্র বিষয়ের উপর নির্মিত। আপনার এমন কিছু বিষয় থাকতে হবে যা স্থায়ী। এই বইয়ের একটি স্থায়ী দিক। প্রথম থেকেই আমি অনুভব করেছি যে, এটাকে একজন পোক্ত গল্পকার হতে হবে। আর অবশ্যই আমি আমার নিজের ভিতর থেকেই এই গল্পকারকে সৃষ্টি করেছি, আমার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার যোগ্যতা ও অনুরূপ বিষয় থেকে।

কিন্ত আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এই গল্পকথককে অবশ্যই এমন কিছু উপাদানের হতে হবে যা এই বইয়ের প্রারম্ভের অনুচ্ছেদে আমি এই গল্পকথকের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে উপস্থাপন করেছিলাম। তাই পাঠকেরা গল্পকথকের অবয়ব, উপাদান, শারীরিক অঙ্গের বিস্তারিত জানতে পারবে। এটা নিশ্চিত হতে যে, গল্পকথক বাস্তব। হ্যা, এসব আমার নিজস্ব ঢং ছিলো। তবে মাঝে মাঝে আমার নিজেকে বাইরে রেখে অন্য একজনকে উপস্থাপন করার চেষ্টায় ব্রতি হয়েছিলাম। আর এটা লেখকের এক ধরণের স্বাধীনতা, যা সত্যিই আমি ভালোবাসি। এটা খুউব সম্ভবত এজন্য যে, আমি নিজেকে একজন মনোবিজ্ঞানী নয় লেখক হিশেবে উপস্থাপন করতে চাই।
জ ফ্র্রি: আমি জানতে আগ্রহী। ওলগা, আপনি যদি আপনার জীবনের সর্বপ্রথম ভ্রমণটির কথা বলতেন!
ও তো: যখন আমি শিশু ছিলাম আর যেসময় আমি বেড়ে উঠছিলাম যা বর্তমান সময় থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। শিশুরা যেমন মুক্ত থাকতো। তারা উঠোনে যেতে পারতো, পার্ক থেকে বেশ দূরে যেখানে আমাদের চারপাশে কোনো অভিভাবকভীতি ছিলো না। আমি জানি না, এটা সম্পূর্ণই এক ভিন্নজগত ছিলো। একজন ছোট্ট বালিকা হিশেবে আমার নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার করতে খুউব ভালো লাগতো। আমি ছোট্টবড় অনেক শিক্ষাসফর করেছি। সেগুলির মধ্যে অন্যতম একটি ছিল ওডার নদীতে গমন। যেটা আমাদের এলাকার দু’কিলোর ভিতরেই ছিলো। তাই আমার বাড়ি থেকে প্রায় একমাইল।
আর আমার জীবনে প্রথম একটা অনুভূতি জাগলো যে আমি একজন বিজয়া। যা খুবই সাহসী কোনো ব্যক্তি বা নতুন কিছু কেউই আমার জন্য পূর্বে করেনি। একজন শিশু হিশেবে আমার সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিলো। এভাবেই বিশ্বকে আবিষ্কার করা এবং নিরাপদ করা আর বিশ্বাসযোগ্য করা।
তাই আমি মনেকরি, এখনকার শিশুদের তাদের চারপাশের বিষয়াদি আবিষ্কারের অভিজ্ঞতা নেই। আমার স্পষ্ট এখনো মনে আছে, যখন আমি নদীতে পৌঁছলাম নদীতে প্রচুর অয়ন আর কুহক ছিলো। এটা কিছু ছিলো। নিজেকে বললাম, আমি এটা করেছি। এটা মাত্র একমাইল ছিলো কিন্ত মানবিকতার জন্য ছিলো বিশাল ধাপ হাসি।
জ ফ্র্রি: এই বইটিতে এমন কিছু উপাদান সম্পর্কে বলা হয়েছে, জল যেগুলিকে আগমনী করে রেখেছে আর তিমি যারা সমুদয় বইয়ে সাঁতার কেটেছে। এটা আদপেই একটা বাস্তব ভ্রমণের অনুভূতি দেয়। ক্লাসিকাল ধারণায় পানিতে ভ্রমণ করে অথবা সমাপ্ত হয়। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, এখানে কিছু মিথ্যা আছে? যেগুলি আমরা নানাভাবে বিশ্বাস করি?
ও তো: হ্যা, অবশ্যই এটা। এটাই আমদের অবচেতনতার রূপক। এটা তুচ্ছ কিন্ত আমি মনেকরি এটা কাজ করছে: জল একটি সীমানা, একটি সীমানার চিহ্ন যা আমরা অতিক্রম করতে পারি। জাহাজ, নৌকো এগুলো আরেকধরণের চিহ্ন। তাই আমি মনেকরি জল অতিক্রম করা এখনো সাধারণ সচেতনতা, মার্কিনীদের উপলব্ধি।
আপনি আমাদের ইউরোপিয়ান প্রেক্ষিত থেকে জলের পিছনে। কিন্ত এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর পানিও সমান্তরাল, খানিক ভয়ানক, কিন্ত কিছুটা ফলপ্রসুও, আমাদেরকে সেই শক্তি দেয় যার দ্বারা চারাগাছ জন্মে।
তাই এটা একটা অন্তহীন অর্থের পাত্র। আর আমার ক্ষেত্রে, আমি মনেকরি যখন আমার শৈশবের মানচিত্রে আবিষ্কার করেছিলাম, অনেক ছোটবেলায় নদীর আকৃতি আর মানব দেহের স্নায়ুর আকৃতি হুবহু পেয়েছিলাম। এই বইটি ফ্রাক্টালিটির অনেক গহীনে চলেছে। আর এটাই বৃহৎ কিছু যা সবথেকে ক্ষুদ্রটির সমতুল্য। তাই আমরা ক্ষুদ্র বিশ্বে বসবাস করছি, যা আপনি জানেন যে অনেক কিছুর সাথে সম্পৃক্ত, অনেক পয়েন্টে তাই এটা ফ্রাক্টালিটির ধারণায় কিছুটা অধিবিদ্যাজাত।
জ ফ্রি: আমি জানতে চাই, এই বইটির গভীরে যাওয়ার পূর্বে আপনি মনোবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছেন, আর তাই গল্পকথকের জীবনকে আবিষ্কার করেছেন। আর জাঙ, যাকে আমি পড়েছি তিনি কি আপনার জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেটা কোন পন্তায় আপনার গল্পবলার উপর প্রভাব ফেলেছে?
ও তো: আমার মা পোলিশ সাহিত্যের একজন শিক্ষিকা ছিলেন। আমিও ছিলাম সাহিত্যের পাঠ নিতে আগ্রহী এবং সাহিত্যকেন্দ্রীক জীবন গড়তে একপায়ে খাড়া যেমনটি তিনি ছিলেন। কিন্ত হঠাতই তার সাথে আমার বয়ঃসন্ধিকালীন একটা ঝগড়া হয়। আমি পিতা-মাতার বিরুদ্ধাচরণ করলাম। প্রকৃতই মন তাতে শান্তি অনুভব করল। সিদ্ধান্ত নিলাম সাহিত্য পড়বো না। আর সাহিত্য নিয়ে কোনো কাজও করবো না। মনোবিজ্ঞান আমার ছিল, সত্যিই গভীরতর। আর আমিও সম্মত হলাম মনোবিজ্ঞান পড়তে। কিন্ত আপনার মনে রাখতে হবে যে এটা ছিল পোল্যান্ডে আঠারোর প্রারম্ভ। সত্যই এটা গভীর আঁধারের কাল ছিল। সেনা শাসন, দোকানে পণ্য নেই আর সাধারণভাবে গোটা পোল্যান্ড দুশ্চিন্তায় মুষড়ে পড়া। তাই মনোবিজ্ঞান ছিল বাস্তবতা থেকে খানিক পালিয়ে বেড়ানো। মাধ্যমিকে অবশ্য আমি সিগমান্ড ফ্রোড পড়েছিলাম যা আমার উপর প্রভাব ফেলেছিল সেখান থেকেই মনোবিজ্ঞান।
আমি খুবই সাধারণভাবে চিন্তা করতাম যে, আমার সমগ্র পড়াশুনোই হবে সিগমান্ড ফ্রোড।
অবশ্যই না, কেননা এটা ছিল কমিউনিস্ট এবং প্রতিষ্ঠানের অধীনে, বিশ্ববিদ্যালয় জগৎ এমনকি মানুষের ব্যবহারিক বিষয়াদির উপর মনযোগী হলাম, মানুষকে বুঝতে বা উপলদ্ধি করতে শিখলাম। কিন্ত মনোবিজ্ঞান পড়ে আমি অতি দ্রুতই গ্রাহক এবং রোগীদের সাথে কাজ করা শুরু করলাম। আমি অনেক আগে থেকেই স্বেচ্ছাসেবক ছিলাম। আর সেখানেই ঢের আবিষ্কার করলাম: বাস্তবতাকে অনেক দৃষ্টিকোণ থেকেই হৃদয়াঙ্গম করা যায়।
সম্ভবত এই একবিংশ শতাব্দীতে এটাকে মামুলি জ্ঞান করবে। কিন্ত অনেকবছর আগে এটা আমার জন্য একটা বিপ্লব ছিল। তাই এখানে কোনো নৈর্ব্যত্তিক কিছু নেই। কিন্ত আমরা এসকল দৃষ্টিকোণ থেকে অনুভূত হতে পারি। আর আমার মনে আছে, আমার প্রথম গ্রাহক- সেটা একটা পরিবার ছিলো। সেখানে দু’জন ভাই পেয়েছিলাম। তারা আমাকে তাদের পরিবারের গল্প বলতো। তারা তাদের গল্পবলা দিয়ে ওরকম পরিবারগুলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারনা আমার ভিতর জন্মিয়েছিলো। অতঃপর আমি বলেছিলাম, আচ্ছা? এটা বলতে কী বুঝায়? আমি মনেকরি, সেটাই ছিলো আমার লেখার প্রথম ধাপ। আমাকে এখনো লেখা জোরাজুরি করে সমাজের বিভিন্ন লোকের বাস্তবিক জীবনথেকে নেয়া উপাদান ও দৃষ্টিকোণ নিয়ে লিখতে যা প্রকৃতই অসংখ্য মানুষের কথা। আর লেখক হিশেবে আমাদের খুঁজে নিতে হবে নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ যা পরিপেক্ষিত বদলে দিবে, যা দেখাবে সেখানে নতুন কিছু আছে যা আমরা অনুভব করছি। বুঝতে পেরেছেন- বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলছি?

জ ফ্রি: প্রকৃতই স্পষ্ট। এই বইয়ের ব্যাপারে কী উল্লেখযোগ্য? এই কণ্ঠ কি আপনাকে পথনির্দেশ করে? অতঃপর তারা চতুর্দিক ঘিরে নেয়। প্রত্যেকজন পাঁচজনের জন্য ভ্রমণ করে। মাঝেমধ্যে কিছু পৃষ্ঠা, মাঝেমধ্যে অনেক...
ওলগা, এই বইয়ে মানবজাতির বিভিন্ন প্রকার নিয়ে অনেক নমুনা আছে। এটা কি ফরমালডিহাইড অন্তর্ভূক্ত অথবা কলায় নকল? যদিও তারা বিচ্ছিন্ন। আমি জিজ্ঞাসু যে- আপনি স্পষ্টতই আন্তরিকভাবে শরীরবিষয়ে আগ্রহী।
যখন আপনি এইগুলিকে রূপকশোভিত ও অধিবিদ্যার সাথে সংযোগ স্তাপন করতে চান উড্ডয়ন ও নড়াচড়ার প্রশ্নে, এবং এর জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করেন। কেননা আমার কাছে মনে হয় ঐ সংযোগ কখনওই তৈরিকরা সম্ভব নয়। মহাশূন্য ও সময়ে আমাদের জীবনকালে দৈহিক বৃত্তের, আর এটাকে নমুনা করে মৃত্যুহীন করার আমাদের যে প্রত্যাশা, আর পৃথিবীতে আমাদের নড়াচড়া এবং উপায়টি আমাদেরকে অন্তহীন অনুভূতি দেয়।
ও তো
আমি আশা করছি, এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারবো। কিন্ত সত্যি কথা বলছি, কখন এটা ঘটেছে আমি ভুলে গেছি, যখন আমি এই দুটো জিনিশকে একত্র করছিলাম। আমি মনেকরি, বইটি বারো বা তেরোবছর পূর্বে লিখিত। আমার মধ্যজীবনের সংকট থেকেই এই চিন্তার উদ্ভব বলে ভাবছি। আমার মনে হচ্ছে বিশ্রামকক্ষে আমি অপেক্ষারত। ডাক্তারের কাছে আমি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবো। যেমন, রক্ত পরীক্ষা ও তৎসংশ্লিষ্ট। সেখানেই আমি ভাবলাম যে আমিতো মহাবিশ্বের অনেককিছুই জানি। জানি আমাজনের ভিতরে কী কী আছে। এরকম আরো অনেক। কিন্ত আমার ভিতরে যকৃত কিভাবে কাজ করছে তাই জানি না। আমার পাকস্তলীর বর্ণ ক্যামন? আমার ত্বকের নিচেই শিরা-উপশিরাগুলি কিভাবে যাচ্ছে। আমি অনুভব করলাম যে, এটা জানার এক জঘন্য ঘাটতি। এবং অবশ্যই কিছু ভয়ানক ব্যধি হবে যা আমরা আমাদের শরীর থেকে জ্ঞাত হই না। অতঃপর ভ্রমণ করলাম আর এই বইয়ের জন্য গবেষণা করলাম। অবশ্য আমি এই ঘোরলাগানোগুলি সমস্ত নেদারল্যান্ডসথেকে সংগ্রহ করেছি যা বইটিতে প্রথিত। তারা তিনশো বছর আগের অনুভূত হতে লাগলো একই রকম অনুভূতি আমি এই বিশ্রামকক্ষে পেতে লাগলাম। তাই কী হচ্ছে আমাদের শরীরে? ক্যানো এটা আমাদের কাছে এধরণের রহস্যময়। অতঃপর আমি শরীরবিজ্ঞানের ইতিহাস পড়তে লাগলাম। প্রভুর নিকট কৃতজ্ঞতা যে আমি সেসময় আমস্টারডামে স্কলারশিপ নিয়ে গবেষণা করছিলাম। আর এবিষয়ে একবছর গবেষণা করলাম। আর এ বইটির খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট আমার দুর্ঘটনার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হলো যে, একই সময়ে ১৫৭৪ সালে দুটো বড় বই আবির্ভূত হয়েছিলো, প্রকাশ হয়েছিলো। প্রথমটি হচ্ছে অন্যতম বিখ্যাত বই যাতে আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে মহাবিশ্বেরগঠন আর কিভাবে কাজ করছে। সামসময়িক কালে প্রকাশ হলো ভেসালিয়াস’র এটলাস অব হিউম্যান বডি। তাই পৃথক দুটো পয়েন্ট আর বছর সেই দুটো অনুবিশ্ব ছিলো সম্পৃক্ত।
আর অবশ্যই এই বইটি স্বজ্ঞার উপর ভিত্তি করে। তাই মাঝেমধ্যে আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে কিভাবে এটা সাজানো হয়েছে বা কী বুঝাতে চেয়েছি। কিন্ত হ্যা, এটাই এধরণের বই লেখার রহস্য যাতে আপনাকে আপনার স্বজ্ঞাকে বিশ্বাস করতে হয়। আর মাঝেমাঝে এই স্বজ্ঞা খুবই নিঠুর হয়। আর কিছুসময় আপনার মনে হবে আপনার ঘোরলেগেছে অথবা খুউব সম্ভবত আপনি রোগাক্রান্ত। যাহোক, আপনি এগিয়ে যাবেন।
জ ফ্র্রি: বইয়ের ভিতরের একজন শরীরবিজ্ঞানী শরীরব্যবচ্ছেদের পর, আমি ভুলে গেছি যে এটা মানুষ না পশু ছিলো- এটা এরকম যে পুনঃনিশ্চিত হওয়া আসলেই সে শরীরটি মাত্র একটি কলকব্জা। আর আমি আশ্চর্য যদি আপনি সেটার সাথে ঐক্যমত্য হন। আমি দেখেছিলাম একজন মারা গেলো আর আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিলো, আহ! এটা একটা পবিত্র মেশিনের মত, আর সেটাই ছিল শীতলতার ধরণ। কিন্ত আপনি সম্মত নন?
ও তো: না, আমি সম্মত নই। আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, এটা সম্পূর্ণ কক্ষপথীয় দৃষ্টিকোণ। যেমন আলোকিত হওয়ার প্রারম্ভিক কাল। যখন লোকেরা পৃথিবীকে কলকব্জা, খেলনা আর আচরণিক রীতির সমষ্টি হিশেবে ভাবতে শুরু করলো। কিন্ত আমি মনেকরি, এটা এখনো রহস্যময়। আমরা জানি না, যদিও আমাদের বিজ্ঞান আছে এবং আমরা কমবেশি জানি কিভাবে মস্তিষ্ক কাজ করছে। এখনো অনেক ক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। আমরা এখনো জানি না আমাদের সমকালের বড় বড় প্রশ্নগুলি। ক্যামন সতর্কতা কাজ করছে, এটা ক্যামন করে কাজ করছে? ক্যানো আমাদের এই অনুভূতি যে, আমরা অবশিষ্টাংশ বাস্তবতা থেকে মুক্ত? ক্যানো আমাদের এই অনুভূতি যে, আমরা একে অপরের থেকে পৃথক? হ্যা, আমি বলবো বোধ এখনো কিছু কিছু অস্পষ্ট।
জ ফ্র্রি: সেখানে প্লেনে একজন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী নিয়ে একটি দৃশ্য আছে যিনি অন্ধকার বিষয়ে পড়াশুনো করছেন। এই বইটি অনেক সতর্কমূলক তথ্যদ্বারা পূর্ণ। আর সেই কথোপকথনে একটি অংশ হচ্ছে যে, এই মহাজগতে দৃশ্যমান বিষয়াবলীর থেকে অনেক অন্ধকার বিষয় আছে। আর তারপর পদার্থবিদ বাতায়ন দিয়ে বাইরে তাকায় এবং বলে, আমরা এটাও জানি না যে, কেনো এটা এখানে? অথচ উড়োজাহাজটি তখনো সেটির মধ্যদিয়ে অতিক্রম করছিল। আর আমি আশ্চর্য হলাম- ওরকম তথ্য প্রশ্নের উত্থান করে যে, আমাদের এই চাঁদ ও অন্যান্য জ্যোতিষ্কদের আপাত ভ্রমণপথ মহাবিশ্বজুড়ে? এটা কি রহস্যের উপর স্থাপিত যা কিছুটা বিশ্বাস্য? মহাবিশ্বের প্রসন্নতার উপর বিশ্বাস অথবা এটা খুবই শিশুসুলভ?
ও তো: আমি জানি না। একজন লেখক হিশেবে আমার সাহসিকতা আছে প্রশ্ন করার, উত্তর খোঁজার নয়। কেননা তখন আমাকে আমার পেশা বদলাতে হবে আর একজন বিজ্ঞানী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর এটাই সবথেকে উত্তম স্বাধীনতা লেখক হবার। শুধু জিগ্যেস করো আর বিস্ময়কর জিনিস দেখাও। হ্যা, অনুগ্রহ করে এই বইটি পড়ার চিন্তা করবেন। কেবল নিজেকে জিগ্যেস করবেন, কী হচ্ছে?
জ ফ্র্রি: আমি আরো একটি অথবা দু'টি প্রশ্ন করতে যাচ্ছি, আর আমি ভাবছি আপনিও এরকমটি ভাবছেন। ফ্লাইটস সম্পর্কে একটি অবিশ্বাস্য বিষয় যে, কীভাবে খুব দ্রুতই এটি কতটি ভিন্নতর অস্তিত্ব তৈরি করছে। আর তাই বিশ্বাস্য। অতঃপর এমনভাবে এটিকে তুলে ধরে যে এটা খুবই সহজ বিষয়। এটা এমন একধরণের চলে যাওয়ার সময়কার এক পলকের চোখাচোখি যেখানে প্রকৃত আগ্রহী লোকদের সাথে মিথস্ক্রিয়া হয় যখন কোনো বিমানে উড্ডয়ন বা ট্রেনে গমনের সময় বিশ্রামাগারে তাদেরকে শুভ বিদায় বলতে হয়। তাদের কয়েকজনের বিষয়ে চিন্তা, একজন ব্যক্তি ছুটির দিনে ক্রোয়েশিয়ার কাছে একটি দ্বীপে তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে গেছেন। স্ত্রী ও শিশুটি নিখোঁজ হয়েছে।
সেখানে একজন ব্যক্তি যার পা কাটা। অধিকন্ত তার আছে আবছায়া পায়ের চিহ্ন। আরেকজন ব্যক্তি যার ঘোর আছে যোনিমুখের বিষয়ে আর সে ছবি তুলছে। আমি মনে করি, অপ্রাপ্ত বয়সী বালিকা। আবার একইসঙ্গে শরীরবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করছে। এটা এরকম যে সে অনুসন্ধানী। আর এ বইয়ে অনেক ব্যক্তিই নিখোঁজ বিষয়াদির খোঁজ করছে। আর আমি বিস্ময়াভিভূত হব যদি আমাদের কল্পনার অনুপ¯ি’তি সম্পর্কে বলেন। আর কখন সেই কল্পনা ভেঙে পড়ে এবং তাক লাগায়? কেননা আমি মনেকরি, ঘোরলাগানো কল্পনার বিপরীত। তাকলাগানো একটি বাক্যকে বারংবার ব্যবহার করা। যেখানে কল্পনার কিছু বর্ণনা আছে।
ও তো: আমি আপনার সাথে সহমত নই। আমি মনেকরি তাকলাগানো একটি কল্পনা। কেননা সহানুভূতি পুনরাবৃত্তি। কিন্ত তাকলাগানো- আমি না, তাকলাগানো ছাড়া এই বইটি লেখা একবারেই অসম্ভব।
জ ফ্রি: আমিও তাই মনে করি! হাসি
ও তো: হ্যা, এমনকি আমার ভিতরে অনেকগুলো ধর্মানুষ্ঠান আছে যা আমাকে ঘোরলাগানোয় রেখেছে। আপনি জানেন যে, পথে এটা একধরণের সম্মোহন। আমার জীবনের সবথেকে বড় ঘোরলাগানো বিষয়টি আমি জ্যাকব'স বুক'এ লাগিয়েছি। দীর্ঘ আটবছর মেয়াদি ঘোর। আপনি কি ভাবতে পারেন? শুধুমাত্র আঠারো শতক সম্পৃক্ত বিষয়াদি পাঠে, শুধুমাত্র ইহুদি এবং ইহুদি সম্পর্কিত সংস্কৃতির আর ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা এবং মধ্য ইউরোপের আলোকিত হওয়ার প্রারম্ভ। কিন্তু এটা খুবই খুবই ঘোরলাগানো ছিল। প্রভুকে ধন্যবাদ যে আমি এটাকে জীবিত করেছি আর ঘোরলাগানোটির ফলই ছিল বইটি। তাই আমি প্রকৃতই ঘোরলাগানোতে বিশ্বাসী। এটা খুবই ইতিবাচক কিছু। আমরা জানি যে, ঘোরলাগানো এমনকিছু যে আমাদের নাশ করতে পারে। কিন্ত আমার দৃষ্টিতে ঘোরলাগানো হচ্ছে একটি বিন্দুতে শক্তি রাখা। আর এটা ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে কিন্ত এটা খুবই ফলদায়কও।
জ ফ্র্রি: ওটা অবশ্য প্রার্থনার এক ভালো বর্ণনা, একটি পয়েন্টে শক্তি ধরে রাখা। যখন আমি এই বইটি পড়েছি দেখেছি যে, সেখানে অনেক লোক আপাতত আধ্যাতিœক খোঁজে। একজন ব্যক্তি ভারতে যেতে চান, কেননা সে সেই বৃক্ষটি খুঁজে পেতে চায় যেটির নিচে বুদ্ধ তার নির্বাণ পেয়েছিলো। আর সেখানে এমন কিছু লোক আছে যারা কথা বলছে অথবা জিগ্যেস করছে- আমি মনেকরি, প্রার্থনা প্রভু সম্পর্কে একটি প্রশ্ন করা আর কুবচন প্রভুর সাথে কথাবলা। আর এই বইটি পড়ে আমার মনের ভিতর একধরণের অদম্য ইচ্ছা জেগেছে আপনাকে জিগ্যেস করতে যে, আপনি কি প্রভুতে বিশ্বাস করেন?
ও তো: থেমে কোন ধরনের প্রভু? হাসি
জ ফ্র্রি: দেখুন, এটা এই বইটির প্রদর্শন! হাসি না, আমি বিশ্বাস করি না আমি বড় কিছু জানতে চেয়েছি, গাদিগাদি পুস্তকের সাথে লম্বা শ্মশ্রু আর বিদ্যুতের ঝলকানি, শাস্তি আর লজ্জা। কিছু শৃঙ্খলিত দৃষ্টিশীল শক্তি ধরনের-?
ও তো: হ্যা, নিশ্চয়তার জন্য। অবশ্যই আমি একজন বিশ্বাসী। কিন্ত নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে, আমি মানবজাতির মতো একইরকম কিছুতে বিশ্বাসী নই। নিশ্চয়তার জন্য, না। সম্ভবত সে অথবা তিনি বা এটা বুঝেই না যে তার বা ওটার সম্পর্কে আমরা কী বলছি।
জ ফ্র্রি: একটা শেষ প্রশ্ন। যখন থেকে এই বইটিকে ফ্লাইটস বলা হচ্ছে, এটা আমাকে ভ্রমণে আগ্রহী করেছে কেননা এটি পবিত্র স্থানের যাত্রী হিশেবে ভ্রমণ নিয়ে অনেক কিছু বলেছে। আর যখন আপনি আপনার নিত্যদিনের গতায়াতে দেখবেন যে, একজন পবিত্র স্থানের ভ্রমণকারী হিশেবে সহসা ভিন্নভাবে পথের মধ্যে আবর্জনা। আর যদি আমরা উভয়েই বিশাল বড় শহরের বহির্গমন বোর্ডের সামনে দাঁড়াই, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন একটি প্রায়ই অন্তহীন বোর্ড, সেই শহরটির নাম কী? কোনটি আপনাকে উড্ডয়নে সবথেকে বেশি টানবে?
ও তো: আমাকে খানিক ভাবতে হবে। প্রকৃতই আমি জানি না। এই দশ-বারো বছরে আমার অনেক হয়েছে। আর এখন পোল্যান্ডের দক্ষিণাংশে আমার একটি বাড়ি আছে যা ইউরোপের মানচিত্রে একটি ক্ষুদ্র লেজ। আর ইতিহাসে পোল্যান্ডের এই অংশটি কখনওই পোল্যান্ডের ছিল না। আমরা এই অংশটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইয়াল্টা চুক্তি থেকে উপহার হিশেবে পেয়েছি। কেননা আমরা অনেক হারিয়েছি। পূর্বের জমি, আপনি জানেন। তাই আমি সেখানে বাসকরি আর সেখানে আমার একটি পুরনো বাড়ি আছে। আর সেই বাড়িটি এখন সংস্কারাধীন। আর প্রত্যহ আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমার স্বামীকে ফোন করে ছাদ, পাইপ, বাতায়ন আর এরকম কিছু সম্পর্কে জানতে চাই। তাই, আমি মনে করি আমি যদি- আমি স্বপ্ন দেখি সেখানে ফিরে যাওয়ার আর এসকল সংস্কারের দেখভাল করার। (হাসি) এক সম্পূর্ণ ভিন্নতর নির্দেশনা!

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট