যৈবতীনাভি
নীহার মোশারফ
আগামীতে কেমন হবে কবিতার ভাষা?
ফাগুন, আগুন, বর্ষা বাতাস, শরতের কাশ
ঢেকে দিবে ছাইচাপা কথা? থাকবে না পাখির গান?
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণীর অপেক্ষা খুব...
এখন আর আগের মতো খোলামেলা যাবে না চলা
নারীদের পরতে হবে বোরকা, শাড়ির সুতো ভেদ করে
দেখা গেলে যৈবতীনাভি, শূলে চড়বে কেউ কেউ;
চোখের দৃষ্টি বেহায়া হলে পুরুষ বেওয়ারিশ হবে।
মুফতির ফতোয়ায় দ- ভয়ানক।
কার কথায় নারী ঘরের বের হয়? চাকরির নামে
অফিসে গেলে হাওয়া লাগে বুকে বারবার, ধুঁকে ধুঁকে মরে কত
কাপুরুষ হৃদয়। পালটে দাও কবিতা বিষয়। ছন্দ, মাত্র, লয়
বিদ্যালয়ে প্রতীকী সংসদ অধিবেশন বসলে দূর হবে অবক্ষয়
এসো নতুন করে গানের কবিতা লিখি। নতুন পঙ্ক্তিতে সাজাই দেশ
শরতের শুভ্র আকাশে গ্রাফিতিতে গ্রাফিতিতে ভাঙি নীরবতা
সময় এসেছে নতুনদের হাল ধরার, পেছনে ফেউ আছে জানি
তবুও পথ দেখাতে হবে ওদের। আমার মাথার ওপর ছায়া সুশীতল।
প্রাচীন হরিকেল জনপদ ধরে হেঁটে যাওয়া মানুষ
রুদ্র সাহাদাৎ
প্রাচীন হরিকেল জনপদ ধরে হেঁটে যাওয়া মানুষ
কিসের ভয় দ্যাখাতে চাও
বুঝি মুখ ও মুখোশের তফাৎ
বুঝি ঘৃণা আর ভালোবাসার খেলা
বুঝি বৈশাখী হাওয়া- বৈশাখীঝড়-
আমাকে কিসের বাণী শোনাতে চাও
জিততে জিততে হেরে যাওয়া আমি আর আমার চোখ
অনেক দ্যাখেছি একজীবনে
প্রাচীন হরিকেল জনপদ ধরে হেঁটে যাওয়া মানুষ
চেয়ে দ্যাখি উড়ে যাওয়া লালনীল রঙিন ফানুস...
ভীষণ দুঃসময়ের পদধ্বনি
হিলারী হিটলার আভী
সামনের শতাব্দীগুলো শতবর্ষী ভীষণ ক্রুসেডের
সামনের বছরগুলো ভীষণ খরা ও ঝরা’র
সামনের মাসগুলো ভীষণ কষ্টের ও নষ্টের
সামনের পক্ষগুলো ভীষণ অর্ধাহার ও অনাহারের
সামনের সপ্তাহগুলো জীবনক্ষয়ী বুলেট ও বোমা’র!
সামনের দিনগুলো ভীষণ দূর্দিনের
সামনে সময়গুলো ভীষণ দুঃসময়ের
সামনের ঘণ্টাগুলো ভীষণ শব্দময়ের
সামনের মিনিটগুলো ভীষণ নাভিশ্বাসের!
সামনের সেকেন্ডগুলো ষাট ভাগে বিভক্ত হবে
এক-একটি ভাগ এক-একটি ডিনামাইট হবে
অর্থাৎ বিশ্বে এক সেকেন্ডে ষাটটি করে স্থাপনা নিশ্চিহ্ন হবে!
সুদিন
হাফিজুর রহমান
তুমি এসো
আমার জন্যেই আসবে,
আসতেই হবে একসময়- একদিন;
না-হলেও ভালোবেসে!
আশাহত, হতে দিও না আমাকে।
ছোট হতে দিও না
হতে দিও- না কখনও অপমান,
বাঁচতে দিও সম্মানটুকুই নিয়ে-
মানুষ হিসেবে ধরে রাখতে মর্যাদা;
উপভোগ করাতে এ জীবনটাকে।
মায়ের হাসি
সোহান মেহরান
কেউ পারে দিতে? মায়ের হাসিতে থাকে যতটুকু সুখ!
ও হাসিতে তার সুখ সমাহার দেখলেই ভরে বুক।
রোজ ভোরে হাসে মেঘেদের পাশে সোনালী রবির আলো,
উঠি তাই গেয়ে সে হাসির চেয়ে মায়ের হাসিটা ভালো।
ও হাসিতে তাই মনটা ভরায় সুবাস ছড়ায় ভারি,
ভেসে ওঠে মনে ঘুম জাগরণে ভুলতে না কভু পারি।
ও হাসি রঙিন চির অমলিন থাকে হৃদয়ের পাতা,
মায়ের ও হাসি কত ভালোবাসি রূপোলী মলাটে গাঁথা।
যাই যত দূর ও হাসি মধুর কানে রিনিঝিনি বাজে,
পূর্ণ কোমল নেই কোনো ছল মায়ের হাসির মাঝে।
ঐ হাসি খাঁটি খুব পরিপাটি সেরার চেয়েও সেরা,
মায়ের হাসিতে এই পৃথিবীতে থাকি মমতায় ঘেরা।
মুগ্ধতা সারা হাসির ফোয়ারা অপলক দেখি আমি,
সোনা বা রূপার দাম নেই তার, মা’র হাসি যত দামি।
ও হাসি সরল নিবিড় তরল দুঃখ লুকিয়ে হাসে,
হাসি তার শোভা কীযে মনোলোভা হৃদয় গহীনে ভাসে।
বেদনাবলয়
আজিজ বিন নুর
অমন গহীন বেদনাবলয় এঁকে দিয়েছো দুই চোখে
পৃথিবী- প্রবাসে আমি নোনাজল নোনামুখে
আবৃত্তি করি অমিয় মৃত্যুর সুধা
বিষাদের পিঠে চড়ে নিষেধের দ্বিধা নিয়ে
ভাসায়-ডোবায় আমায় করুণার বসুধা।
ধোঁয়াশার দিগন্তে টানিয়েছো নিষেধের নিয়ন
পথের ভীড়ে আমি হারিয়েছি পথ
সুখের ভীড়ে আমি সুখ
হারিয়েছি আমাকেই- বেদনার বাথানে
আমি এক চির হাঁড়িমুখ...
যুদ্ধের ভেতর আমায় আরেক যুদ্ধ ডাকে
বরণ করে নিতে পরাজয়-
দৈন্যতার প্রেয়শ খদ্দের আমি
ডেকে ডেকে দিয়েছে শূন্যতার প্রলয়
কষ্টের হিমালয় কাঁধে চেপে বলে
‘নুয়ে পড়ো, হেরে যাওয়ার হয়েছে সময়’
অমন গহীন বেদনাবলয় এঁকে দিয়েছো দুই চোখে
পৃথিবী- প্রবাসে আমি নোনাজল নোনামুখে
আবৃত্তি করি অমিয় মৃত্যুর সুধা
বিষাদের পিঠে চড়ে নিষেধের দ্বিধা নিয়ে
ভাসায়- ডোবায় আমায় করুণার বসুধা।
গভীর রাতের প্রেম
মিজান ফারাবী
শিশিরের টুপটাপ শব্দে নেমে আসা ভোর। এই রাত থেকে ভোর অব্দি কেবলই তোমার ভাবনা। হৃদয়ের সমস্ত আকুলতা নিয়ে প্রার্থনায় হাজির হই গভীর রাতের প্রেমে। এ যেন তোমাকে আরো কাছে পাবার, আরো কাছ থেকে দেখার অস্থিরতা বুক জুড়ে। জোছনার এই তারাসুদ্ধ রাতের আকাশ জানে আমার আকুলতা, আমার প্রেম ও আবেদন। আমি দরদ নিয়ে আওড়াতে থাকি- এই একটা রাতই তো তোমার হতে চেয়েছি। তুমি শান্তি পাও, আমায় একান্তে ভালোবাসো।
সন্তুষ্ট
মিনহাজ উদ্দিন শপথ
আজ আমার কুকুরটার কী যে হলো। কিছুই বুঝি না। খায় না ঘুমায় না। ঘেউ ঘেউ করে মাতিয়ে তোলে না সারা ঘর। কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে- চোখে। সকাল-দুপুর-সন্ধে যে হয়ে এলো। এখন কী করি কোথায় যাই। রিতা এলো চুল ছড়িয়ে গন্ধ বিলিয়ে দেখালো নাচ হিজিবিজি- উলঙ্গ জোছার ঢেউ। মুগ্ধমুখ। ওফ! কুকুরটা এবার শান্ত হলো ঘুমাল সারারাত।