বিজয়ের পদাবলি





বিজয়বোধ
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম

বিজয়ের বুক জুড়ে সুর আছে তাই,
অবিরত প্রেমমোহে গান গেয়ে যাই।
হাওয়ার শরীরে আঁকা কুহু কলতান,
ফুটে থাকে বুকে বুকে চেতনার গান।

প্রাণের বুলিতে আছে স্বচ্ছতা তাই,
বিজয় শিশিরে সব গতি খুঁজে পাই।
আজো ঘাস বুকে রাখে রক্তের ঘ্রাণ,
শহিদের খুন- তার রেখেছে প্রমাণ।

অতপর পলাশ আর শিমুলের বনে,
জেগে আছে- শহিদান দেশ স্মরণে।
কোকিলের গানে রবে বাংলা বহাল,
চিরচেনা কুহু সুর বাজে- চিরকাল।

বিজয়ের পোস্টার
শাহীন মাহমুদ

আজ বৃষ্টিতে ভিজে গেলো বিজয়ের পোস্টার
ভিজে গেলো বিজয় দিবসের একটি অনন্য কবিতা
যেখানে লিখা ছিল বীর শ্রেষ্ঠ সাত জনের নাম
লিখা ছিল নুর হোসেনের পিঠ থেকে ঝরে পড়া রক্তের কথা
লিখা ছিল অনাহারী মুক্তিযুদ্ধা সন্তানের কথা
লিখা ছিল রাশিয়ান সোলজারের কথা
লিখা ছিল তিব্বতি সোলজারের কথা
যারা প্রাণ দিয়েছিল এ দেশে এসে ।
মহান বিজয় ,স্বৈরাচার,অতঃপর আমার গণতন্ত্র
সাপুড়ে বীণ নর্তকীর নৃত্য; অতঃপর বাতের বড়ি
হাটুরে পথিক ঠেলে দাও সব ;যা আছে পকেটে
আজ অসময়ে বৃষ্টি কেন ?ভিজে গেলো আমার দেশ
ভিজে গেলো আমার বিজয়ের পোস্টার । 


ভিক্ষা মাগছো অরিন্দম হাতে
আকিব শিকদার

তুমি বাপু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, স্বজনহারা
তুমি আমাদের গর্ব, স্বাধীনতার প্রতীক।

পরিজনদের মরতে দেখেছো চাক্ষুষ। হানাদারের দল
ধরলো তোমার বোনকে, বারান্দাতেই কাপড় ছিঁড়ে করলো তাকে ধর্ষণ।
পাশবিকতার চূড়ান্ততায় জ্ঞান হারালো সে যে। বোনের সে জ্ঞান
ফিরলো না আর একটি ক্ষণের তরেও।
তোমার বাবা সে কি বোকা, পাগল হয়েই গিয়েছিলেন...!
(মেয়ের আর্তচিৎকার) রুধতে গিয়ে পশুর ছোবল
বুলেট বোমার ফাঁদে নিজেই দিলেন প্রাণটি।
জন্মাবধি তোমার মা তো প্রবল স্বামীসেবক, রক্ত¯œাত
পতির ছিদ্র বুকে ঝাপটি দিলেন তিনি। তিনটে তাজা বুলেট-
সহমরণের নব নমুনা।

বউটি তোমার ধূর্ত বটে, এবং স্বার্থপর।
জানতে পেলো সতীত্ব তার নষ্ট হবে নিশ্চিত, আগেভাগেই
ঘরে ঢুকে দ্বারে দিলো ছিটকিনি।
ভাঙলো যখন দুয়ারখানা হানাদারের পদাঘাতেÑ
দেখলো তারা শিকার তাদের ঝুলে আছে ছাদে, গলায় দড়ি
প্রাণ দিয়েছে মানটি তবু দেয়নি।
তোমার যোগ্য ছেলে, সাহস আছে বলতে হবে। জুতো ছুঁড়ে মেরেছিলো
পাকসেনাদের পিঠে, ফলাফলে মরতে হলো
বেয়নেটের খোঁচায়।
তোমার একটা ভাই ছিলো না একটু হাবাগোবা ...?
হানাদারের খায়েশ, আয়েশ করে মারবে তাকে। গাড়ি চাপিয়ে
ক্যাম্পে নিলো বাঁধতে বকুল ডালে। লাত্থি ঘুষি, লাঠিপেটা-
মজাই অন্যরকম...!
যাবার বেলায় বাড়ির ভিটায়
উসকে দিলো আগুন। সেই আগুনে ঘটলো একটা বিস্ময়কর কা-।
তোমার খুকি মায়ের মতোই বেজায় রকম চালাক-
ভীতির তোড়ে লুকিয়ে ছিলো আলমারিটার পাশে। আগুন তাকে
দেখিয়ে দিলো চিরঅজানার পথ।

নিজের হাতে দেশকে করলে স্বাধীন, শত্রু মুক্ত।
যদিও আচম্বিতে যুদ্ধকালে
খুইলে একটা পা, বাহুর পেশি গুলির চিহ্ন
করছে বহন আজও। বন্দুক চালানো আঙুলগুচ্ছ
ধরলো আকড়ে লাঠি।
ল্যাংড়া মানুষ, কে-ই বা দেবে কাজ, কে-ই বা দেবে খাদ্য-
বাধ্য হয়েই ভিক্ষা মাগছো অরিন্দম হাতে। যে দেশ তুমি করলে রক্ষা
সেই দেশেরই বাসিন্দাদের অট্টালিকার ফটক পাশে-
অবজ্ঞা আর করুণা কুড়ানো, এই কি তুমি চেয়েছিলে ...?

তুমি বাপু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, জেনেছো স্পষ্ট-
তুমি আমাদের গর্ব, স্বাধীনতার প্রতীক।


আমি খেটে খাওয়া মানুষের দল থেকে উঠে এসেছি
দেলোয়ার হোসাইন

দাঁড়িয়ে আছি বলে ভেবনা থেমে আছি
কৃষকের ছেলে আমি, খেটে খাওয়া
মানুষের দল থেকে উঠে এসেছি...

আমার চরিত্রে নগ্নতার কোন কলঙ্ক নেই
যদিও উরুর উপরে লুঙ্গি কাছা মেরে
নাভি অবধি কাদায় ডুবে আমি তুলে
এনেছি সোনালী শস্যের দিন, ঘামে
ভেজা শরীরে সহজাত বোঝা কাঁধে
নিয়ে আমিও ছুটেছি ফেরাতে সুদিন...

নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতে আমার
কোন লজ্জা নেই, যদিও ভোরের
কোলাহলে কৃষক বাবার সাথে নিজেকে
সপে দিয়েছি কামনার ভিতর, কড়া
রোদের দুপুরে ক্লান্ত অবয়বে আমিও
ঘুমিয়ে পড়েছি আলের উপর...

আমার বিশ্বাসে কোন সন্দেহ নেই
যদিও তোমাদের মুখের আদলে আমার
আর কোন মুখ নেই, তোমাদের লম্বা
হাতের মতো আমার কোন হাত নেই,
তোমাদের চোখের মতো আমার কোন
চোখ নেই, তোমাদের ঘরের মতো
আমার কোন ঘর নেই, তোমাদের
গল্পের মতো আমার কোন গল্প নেই...

কৃষকের ছেলে আমি, খেটে খাওয়া
মানুষের দল থেকে উঠে এসেছি...

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট