স্বাধীনচেতা কবি
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী
মীম মিজান
যে জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য সোনার অক্ষরে লিপিবদ্ধ। কেন সেই জাতি আজ নিগৃহীত-লাঞ্চিত? যারা ছিল শাসক ও উত্তম রাষ্ট্রনেতা, কেন তারা আজ শোষিত, পরাজিত ও করুণার পাত্র প্রজা? সেই নিগৃহীত জনগোষ্ঠীটি হলো দিবানিদ্রারত আয়েশী জীবনের পাবন্দ অলস-অকর্মণ্য মুসলিম সমাজ। সেই চোখখুলে দিবানিদ্রারত মুসলিম সমাজকে ডেকে যাচ্ছেন একজন স্বাধীনচেতা মানুষ ও কবি তার নাম হলো সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন শিরাজী। তার আহ্বানটি ছিল,
‘আর ঘুমিও না নয়ন মেলিয়া,
উঠরে মোসলেম উঠরে জাগিয়া,
আলস্য জড়তা পায়েতে ঠেলিয়া,
পূত বিভূ নাম স্মরণ করি।’
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সেই ঐতিহ্যবোধের কবি ইসমাঈল হোসেন শিরাজী ১৮৮০ সালের ১৩ জুলাই তারিখে তৎকালীন পাবনা জেলার অন্তর্গত সিরাজগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার সম্পূর্ণ নাম ছিল গাজী - এ- বলকান মওলানা আবু মোহাম্মদ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী। ( কবি পৈৗত্র পীরজাদা সৈয়দ মুনীর উদ্দৌলা শামীম শিরাজী)। এখানে উল্লেখ্য যে, তার পরিবারের সদস্যগণ শিরাজী বানানে তার পদবি উল্লেখ করেছেন। তাই আমি শিরাজী বানান সিরাজী লিখিনি। উৎস হিসেবে তার পৌত্রের লেখা তাকে নিয়ে অনেকগুলো প্রবন্ধ দেখা যেতে পারে। তার বাবার নাম সৈয়দ আবদুল করীম এবং মাতার নাম নুরজাহান বেগম। তারা উভয়েই ছিলেন অত্যন্ত দ্বীনদার ও পরহেজগার মানুষ।
শিশু ইসমাইল হোসেনের লেখাপড়ার প্রথম সবক দেন তার মা নূরজাহান খানম। নূরজাহান খানম তার শিশুপুত্রকে প্রথমেই কোরআন শিক্ষা দেন। কোরআন শিক্ষা শেষ হলে তাকে মধ্য ইংরেজী স্কুলে ভর্তি করা হয়। মেধাবী ইসমাইল হোসেন অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে সিরাজগঞ্জের বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও দারিদ্র্যের কারণে এ সম্ভাবনাময় তরুণ লেখাপড়ার ক্ষেত্রে আর অগ্রসর হতে পারেন নি। তাছাড়া স্বদেশের পরাধীনতা, সমগ্র মুসলিম জাহানের দুর্দশার জন্য বেদনাবোধ হতে সৃষ্টি উৎকন্ঠাও তাঁকে স্কুলের চার দেয়ালের মধ্যে বসে থাকতে দেয় নি।
তিনি এ সময়ে নির্যাতিত অবহেলিত, লাঞ্চিত ও পদদলিত মুসলিম জাতির জন্য বেদনাবিধুর, এতই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন যে, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এ যাত্রায় তিনি তুরস্কে যেতে পারেন নি ঠিক কিন্তু সেই যে মুসলিম জাহানের কল্যাণের মানসে ঘর হতে বের হলেন আর কখনই সুবোধ বালকের মত ঘরে বসে থাকেননি। অবশ্য তিনি পরবর্তীকালের তার বাল্যকালের স্বপ্নের তুরস্কে গিয়েছিলেন তা অনেক পরের কথা।
ইসমাইল হোসেন শিরাজীর সবচেয়ে পরিচিত কাব্যগ্রন্থ হল ‘অনল প্রবাহ’। এটি ১৮৯৯ সনে মুনসী মেহেরউল্লা প্রথম প্রকাশ করেন। পুস্তিকাটি এত জনপ্রিয় ছিল যে ১৯০০ সালে আরো কিছু কবিতা নিয়ে কাব্যগ্রন্থটি আবার প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯০৮ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হয়। আর এ সময়ই ‘অনল প্রবাহ’ ও লেখক বৃটিশ রাজশক্তির আক্রমণের শিকার হন। ‘অনল প্রবাহ' বাজেয়াপ্ত হয় এবং লেখকের দু’বছর কারাদন্ড হয়। তিনিই প্রথম কবি যার কাব্যগ্রন্থ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয় এবং তিনিই বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে কারাদন্ড ভোগকারী উপমহাদেশের প্রথম সাহিত্যিক।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও মিথ্যা অপপ্রচার করতো তখন হিন্দু কবি সাহিত্যিকরা। বিশেষ করে চরম মুসলিম বিদ্বেষী ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার লেখায় সুপরিকল্পিতভাবে মুসলমানদের হেয় করার চেষ্টা করতেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী এ সমস্ত কুৎসিৎ লেখার জবাব দিতে গিয়ে উপন্যাসও রচনা করেন। তার উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে তারাবাই, ফিরোজা বেগম, নুরুদ্দীন, রায়নন্দিনী ও বংকিম দুহিতা। না, জবাব দিতে গিয়ে শিরাজী প্রতিআক্রমণ বা সাম্প্রদায়িক উস্কানি বেছে নেননি। সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ ভাষায় উপন্যাসে তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে জবাব দিয়েছেন। ইসমাইল হোসেন শিরাজীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘রায় নন্দিনী’।
শিরাজী রচিত কাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী ও সঙ্গীত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের সংখ্যা ৩২টি।
এগুলোর হচ্ছে, কাব্যগ্রন্থ: উচ্ছ্বাস (১৯০৭), নব উদ্দীপনা (১৯০৭), উদ্বোধন (১৯০৮), স্পেন বিজয় কাব্য (১৯৮৪), মহাশিক্ষা কাব্য প্রথম খন্ড (১৯৬৯), মহাশিক্ষা কাব্য দ্বিতীয় খন্ড (১৯৭১)।
উপন্যাস: রায়নন্দিনী (১৯১৫), তারাবাঈ (১৯১৬), নূরউদ্দীন (১৯১৯)।
প্রবন্ধ গ্রন্থ: মহানগরী কর্ডোভা (১৯০৭), স্ত্রীশিক্ষা (১৯০৭), আদব কায়দা শিক্ষা (১৯১৪), সুচিন্তা প্রথম খন্ড (১৯১৬), তুর্কি নারী জীবন (১৯১৩)।
ভ্রমণ কাহিনী: তুরস্ক ভ্রমণ (১৯১৩)। সঙ্গীত গ্রন্থ- সঙ্গীত সঞ্জীবনী (১৯১৬), প্রেমাঞ্জলী (১৯১৬) প্রভৃতি।
অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: সুধাঞ্জলী, গৌরব কাহিনী, কুসুমাঞ্জলী, আবে হায়াৎ, কাব্য কুসুমোদ্যান, পুস্পাঞ্জলী।
অসমাপ্ত উপন্যাস: বঙ্গ ও বিহার বিজয় এবং জাহানারা।
গোটা বিশ্বের মধ্যে প্রথম মুসলিম কবি কে? যিনি কবিতা লেখার অভিযোগে দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করেছিলেন, দেশের কোন কবি বাগ্মীশ্রেষ্ঠের মৃত্যুর পর তুরস্কের জাতির জনক মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক প্রথম শোক বার্তা পাঠিয়েছিলেন। কোন বিদ্রোহী কবির বই বাজেয়াপ্ত করার পর ব্রিটিশ ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ লয়ের তার পারিবারিক লাইব্রেরী পরিদর্শন করে নির্দ্বিধায় নিঃসঙ্কোচে দৃঢ় কন্ঠে বলেছিলেন, গজ. ঝঐওজঅতঊঊ ঘঙঞ ঙঘখণ অ ঘঅঞওঙঘঅখ চঙঊঞ অঘউ এজঊঅঞ ঙজঅঞঙজ ইটঞ অখঝঙ অ এজঊঅঞ ঝঈঐঙখঅজ (শিরাজী শুধুমাত্র একজন জাতীয় কবি এবং উচ্চস্তরের বাগ্মীই নয় একজন বিরাট পন্ডিতও বটে)। হ্যাঁ! তিনিই আমাদের শিরাজী।
১৯৪০ সালের ২২ মার্চ কলিকাতা ২/১ ইউরোপিয়ান অ্যাসাইলাম লেনে, সিরাজী পাবলিক লাইব্রেরী ও ফ্রি রিডিং রুম- এর উদ্বোধন করা হয়। উক্ত দ্বারোঘাটন অনুষ্ঠানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রদত্ত সভাপতির ভাষণে বলেন, ‘সিরাজী সাহেব ছিলেন আমার পিতৃতুল্য। তিনি আমাকে ভাবিতেন জ্যেষ্ঠ পুত্র-তুল্য। তাঁহার নিকট যে স্নেহ আমি জীবনে পাইয়াছি তাহা আমার জীবনের পরম সঞ্চয়। ফরিদপুর কনফারেন্সে তাঁহার সহিত আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। তাঁহার সমগ্রজীবনই ছিল অনল প্রবাহ এবং আমার রচনায় সেই অগ্নি স্ফুলিঙ্গের প্রকাশ আছে। সাহিত্যিক ও রাজনীতিক ছাড়াও আমার চোখে তিনি প্রতিভাত হয়েছিলেন এক শক্তিমান দরবেশ রূপে। মৃত্যুকে তিনি ভয় করেন নাই, তুরস্কের রণক্ষেত্রে তিনি সেই মৃত্যুর সঙ্গে করিয়াছিলেন মুখোমুখি। তাই অস্তিমে মৃত্যু তাঁহার জন্য আনিয়া দিয়াছিল মহাজীবনের আস্বাদ।’
পল্লীকবি জসিমউদ্দিন শিরাজী স্মরণে লেখেন (হোসেন মোহাম্মদ সম্পাদিত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর সংকলন ১৯ পৃষ্ঠা) ‘সকালবেলা শিরাজী সাহেবের নিকট হইতে বিদায় লইয়া বাড়ি ফিরিবার সময় তিনি আমার হাত ধরিয়া বলিলেন, ‘জসীম! তুমি ত কবি! কবিরা নাকি দেশের দূর-ভবিষ্যৎ দেখতে পায়। বলতে পার আমার এই আজন্ম সাধনা কি একদিন সফল হবে? আমি নিজের জন্যে সম্মান চাইনে, অর্থ সম্পদ চাইনে, আমি চাই এই ঘুমন্ত জাত আবার মাথা নাড়া দিয়ে জেগে উঠুক- সিংহ গর্জনে হুঙ্কার দিয়ে উঠুক। আমি চাই এমনই একটি মুসলিম-সমাজ, যারা বিদ্যায়, সাহিত্যে, সাহসে, আত্মত্যাগে কারুর চাইতে পিছপা হবে না। যা কিছু মিথ্যা, যা কিছু অন্ধ কুসংস্কার তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। দেশের মেয়েদের পরদায় আবদ্ধ রেখে তাদের কাছ থেকে দুনিয়ার আলো-বাতাস বন্ধ করে রাখবে না স্বাধীন সজীব একটি মুসলিম জাতি। বলত জসীম! একি আমি দেখে যেতে পারব?
আমি বলিলাম, ‘আপনি আজীবন সাধনা করেছেন আমাদের জন্যে। আমাদের অনাগত জীবনের সাধনায় আপনার সেই স্বপ্নকে আমরা রূপ দেব। নিশ্চয় আপনার স্বপ্ন সার্থক হবে।’
কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বড় দুর্ভাগ্য যে আমাদের রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা মহান পুরুষ শিরাজীকে হীনমন্যতার কারণে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ। দেশের মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পাঠ্যসূচিতে শিরাজী রচনাবলী উপেক্ষিত। শিরাজীর লেখা থেকে বঞ্চিত এদেশের শিক্ষার্থীরা। শিরাজী সম্পর্কে তরুণ সমাজকে জানতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ শিরাজীর অনলবর্ষী বক্তৃতায় প্রকম্পিত হয়েছিলো ব্রিটিশ সিংহাসন। তার কণ্ঠ ও লেখা থেকে বারুদের গন্ধ বের হতো। তার বক্তৃতায় জেগে ওঠেছিলো লাখো লাখো তরুণ। সেখানে মুসলিম বা হিন্দু বলে কোনো প্রশ্নের সৃষ্টি হয় নাই। ব্রিটিশ রাজ শুধু তাকে কারাবন্দীই করেনি, তার কবিতাও নিষিদ্ধ করেছিলো। সেই স্বাধীনচেতা মহাকবিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের কর্ণধাররা অবমূল্যায়ন করছেন।
যারা মুসলমানদেরকে লাইভস্টক বা গৃহপালিত পশু বলে আখ্যায়িত করছে, যারা আমাদেরকে কাক পক্ষী, দস্যু, তস্কর, দানব, অসুর, অনার্য, ইতর, নরপশু, ডাকাত বলে গালি দিয়েছে তাদের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী ঘটা করে পালন করা হয়। তাদের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের। অথচ শিরাজীর মত মহানায়কের রচনাবলী পাঠ্য বহির্ভূতই থেকে যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশের ক্রান্তিকালীন দুর্বিষহ অবস্থার প্রেক্ষিতে শিরাজীর মতো বিপ্লবী পুরুষের প্রসঙ্গ টেনে আনা অতীব জরুরী।
ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এস. এম. লুৎফর রহমান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশী জাতি সৃষ্টির এই গঠনকালে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর উদারতা, দৃঢ়তা, অসাম্প্রদায়িকতা, স্বাতন্ত্র্যবাদ, ঐতিহ্য চেতনা, সংস্কৃতি চেতনা, বিজ্ঞান-ইতিহাস ও সাহিত্য-চেতনা প্রভৃতি থেকে প্রেরণা আহরণ একান্ত কর্তব্য। ঊনবিংশ শতাব্দির প্রথম দশক থেকে চল্লিশের দশক পর্যন্ত সারা উপমহাদেশের মুসলমানদের মনে যে জাতীয় ঐক্যবোধ, জাগরণ স্পৃহা আপন জাতীয় সত্ত্বার পরিচয় ফুটিয়ে তোলার আকাক্সক্ষা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতিতে যে প্রতিষ্ঠা অর্জনের প্রয়াস তীব্র আবেগে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিল, আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবোধের প্রেক্ষিতে সেই উদ্যম নিষ্ঠা ও কর্ম-চাঞ্চল্য একান্ত আবশ্যক হয়ে উঠেছে। আবশ্যক হয়ে উঠেছে আজ আবার নতুন করে ঘনিয়ে ওঠা বিভ্রান্তির, দিশাহীনতার দিগন্তের কালো আবরণ ভেদ করে আলোকবন্যা আবাহনের জন্য নতুন করে গর্জে ওঠা হাজার হাজার সিরাজীর।’
‘কবি গাজী শিরাজী যার লেখনী ও বাগ্মিতায় আগুন ঝরতো' শীর্ষক প্রবন্ধে কবি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘দেশের অন্যতম দ্বীপপাল ধর্ম, সাহিত্য, রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক মহাকবি, মহাবাগ্মী, অকুতোভয় সাংবাদিক, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত, মুসলিম রেনেসার কবি, ঔপন্যাসিক, যোদ্ধা, সমাজসংস্কারক, নারী জাগরণের অগ্রদূত, কৃষক নেতা, শিক্ষা ব্রতী, দেশপ্রেমিক, ধর্মীয় নেতা, আধ্যাত্মিক সাধক অনল প্রবাহের কারা লাঞ্ছিত অমর কবি গাজী - এ- বলকান মরহুম মওলানা আবু মোহাম্মদ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী। তিনি দেশের প্রথম বিদ্রোহী কবি, যার লেখায় ঝরতো আগুন। নানা বিশেষণের তিনি ভূষিত হয়েছিলেন- বাগ্মী শ্রেষ্ঠ, কবিকুল- সূর্য; সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তাশীল লেখক, অগ্নি পুরুষ, পন্ডিত প্রবর, অনল বর্ষী বাগ্মী, বঙ্গকেশরী, সিংহ সাবক, বাগ্মী প্রবর, বাণী সাগর, জাতিবন্ধু, ইসলাম জগতের নেতা, আধ্যাত্ম সাধক ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত ছিলেন সিরাজগঞ্জের সিংহ সাবক বাংলার শিরাজী। গাজী ইসমাইল হোসেন শিরাজী সারা বিশ্বের অন্যায় শাসন শোষণের বিরোধিতা করেছেন, সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। উপর্যুক্ত আলোচনা ও তার সমসাময়িক গবেষক, কবি- সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সম্পাদকগণের তাকে নিয়ে মূল্যায়ন থেকে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে শিরাজী একজন স্বাধীনচেতা কবি ও পরাধীনতার শৃঙ্খলকে ভাঙ্গার বিদ্রোহী কবি।
মাত্র ৫২ বছর বয়সে ১৯৩১ সালের ১৭ জুলাই দুরারোগ্য পৃষ্ঠব্রণ রোগে আক্রান্ত হয়ে মুসলিম বিশ্বের এই মহান পুরুষ ইন্তিকাল করেন। জীবনের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত তিনি সর্বপ্রকার অনাচার, কদাচার, কুসংস্কার, অন্যায় ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সিংহের মত লড়ে গেছেন। না কোথাও কোন কারণে তিনি মাথা নত করেন নি। আজ সেই স্বাধীনচেতা কবির ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিক। আসুন তার এই প্রয়াণ দিবসে আমরা শপথ নেই দেশপ্রেমিক হওয়ার! তার অমূল্যবান সাহিত্যকর্মসমূহের ব্যপক পঠণ ও গবেষণার দাবি রাখে।
'হোসেন মোহাম্মদ সম্পাদিত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর সংকলন'
Replyবইটা আমি পড়েছি। কিন্তু এখন কোথায়ও খুঁজে পাচ্ছি না।
আপনি কি সন্ধান দিতে পারবেন?