গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতা


একটি কবিতা লিখবো
শরীফ সাথী

একটি কবিতা লিখবো বলে নিরবে নির্জনে একা
অম্লান নয়নে চেয়ে থেকেছি বহুক্ষন, বহুবার, বহুদিন, বহুমাস, বহু বছর।
বাড়ির পাশেই সবুজ পেখম মেলে বাতাসের ঢেউয়ে দোল খাওয়া
মিষ্টি মিষ্টি ডালের কচিকচি পাতার সমাহারে ছাওয়া আম্র গাছটির দিকে...
যে গাছটি জুড়ে বসত করে পাখিদের দল।
সেখানে দোয়েল কোয়েল ঘুঘু টিয়া, কুলঝুটি-পেঁচা শালিক-চড়–ইসহ
লাল-নীল হলুদ সাদার পালক বিছানো বৈচিত্রতায় ভরা নিদারুনভাবে
সৌন্দর্যে গড়া পাখিদের বিচিত্র জীবন-যাপনের মায়াবী চিত্র ফুঁটে থাকে।
তাকে ঘিরে যেন উঠে থাকে গগনের রবী নিশিতে রূপালী চাঁদ
আলোক বাতি দিয়ে সাথী করে মিশে আছে এই পরিবেশে।
শুধু একটি কবিতা লিখবো বলে আমার সুনয়না সুদৃষ্টি
অপলক থেকেছে সারাবেলা,পাখিদের মিলনমেলা চেয়ে বেয়ে গেছে
চোখের মায়াবী সমুজ্বল ঢেউ। কাঠবিড়ালী পাশের পাট খড়ি গাদা হতে
পাটের ফেঁসো সংগ্রহ করে হরদম দৌঁড় পাড়াপাড়িতে ব্যাস্ত সময়ের
চাওয়াটুকু যেন আমার নজর কেড়েছে। মগডালে বাসা বুনানো 
আপন হাতে আপন কারিগর চিত্রশিল্পীর কারুকার্য জীবন্ত ছবি ফুঁটে
ওঠে গাছটি ঘিরে।
শুধু একটি কবিতা লিখবো বলে গাছটির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে
দেখেছি দু’নয়নের বহুছবি আঁকতে। মনের ফ্রেমে বন্দিকরে সন্ধি করে
রাখতে দেখেছি অতিথি পাখিদের আসা যাওয়া থাকা খাওয়ার
আত্মীয়তার বন্ধণ। ভালবাসার স্পন্দন আমরণ...।
দেখেছি মিষ্টি সুরে প্রাণ খুলে আনন্দে সানন্দে গায়তে গান।
শিশির ভেজা লগ্নে মৌমাছিদের আম্র মুকুলের ঘ্রাণ ছড়াতে দেখেছি।
মায়াবী সুরের ছন্দে বাতাসে সুমিষ্টি গন্ধ ভাসতে দেখেছি।
শুধু একটি কবিতা লিখবো বলে চেয়ে চেয়ে থাকতে থাকতে
হঠাৎ কাল-বৈশাখীর উড়ন্ত দূরন্ত দমকা ঝড় এসে মড়াৎ করে ভেঙে
ছড়িয়ে দিলো চতুর্পার্শ্বে আম্র-গাছটির তরতাজা ডালপালা।
নিমিষেই ম্লান হলো প্রতিক্ষীত এতো চাওয়ার অবসান ঘটাতে।
আজ আর সেখানে নেই পাখিদের কোলাহল। ফাঁকা শুধুই ফাঁকা চারিপাশ।
সেই অপেক্ষামান চাওয়া ফিরে পেতে পরিপূর্ণ একটি কবিতা লিখতে
আবার সবার নজর কাড়তেই নিজ হাতে প্রীতি সাথে রোপণ করেছি
আর একটি নতুন  আম্র গাছের চারা...। শুধু একটি কবিতা লিখবো বলে
অপেক্ষার পথ  পাড়ি দিয়ে যাচ্ছি আজ ও জানি না এ অপেক্ষার
শেষ কোথায়...?


ভোরের মুখ
অসীম মালিক

মৃত শালিকের পাশে শুয়ে আছে
         একটি মৃত ভোর ।
যার নিথর ডানায় নেই ,
                 আজ মুক্তির আনন্দ !

রক্ত হিম হয়ে যাওয়া দুটি ডানায় ,
এক ঝাঁক লাল পিঁপড়ের প্রত্যাশিত দখলদারি ।
স্পন্দনহীন মুক্তির শরীর,
                তারা মহানন্দে ভাগ করে খায়

এ রাস্তায় এখনও কুকুর আসেনি,
এ রাস্তায় এখনও বিড়াল আসেনি ।
           এলেও আজ পাখির চোখে ফিরে তাকাবেনা-
                              ডানার স্বাধীনতা...

কতশত শুঁয়োপোকা ,
প্রজাপতি হয়ে ফিরে আসে ।
কিন্তু মৃত শালিকের ডানায় ভর করে
                   রাত্রি দ্যাখেনা ভোরের মুখ ।


তোমাকেই ভালোবাসি
মাহবুবা নাছরিন শিশির

দূরে সরে যাই তবু কেন যেন বারবার ফিরে আসি
হয়তো আমার আমি আজো শুধু তোমাকেই ভালোবাসি
ছিলে তুমি, আজো আছো জানি, জানি থাকবে হৃদয় জুড়ে
ছায়ার মতই মিশে রবে তুমি এ আমার পাশাপাশি।

অভিমান-রাগ-ক্ষোভ সব কিছু তোমার বচনে হারে
তুমি ডাক দিলে অশান্ত দিলে শান্তি আসতে পারে
সুখ তো সয় না কপালে রয় না অস্থির মতিগতি
তাই অভিমানে দুঃখ পালনে ছুঁড়ে ফেলি কারাগারে।

বিরহ-দহনে অনুভব করি ভালোবাসি ভালোবাসি
আধেক দিনের বাকসংযমী, দিন শেষে ছুটে আসি
সহস্র কথা অব্যক্ত ব্যথা জল হয়ে ঝরে পড়ে
তোমার চোখের হাসিটি দেখলে ফোটে দুই চোখে হাসি।

একলা তুমি খুব অভিমানী? আমারও অভিমান আছে
শোধ নিতে চেয়ে  চলে যাবে তুমি অন্য কারোর কাছে?
পরাধীন নও, মুক্তি দিলাম; যত দূরে চাও, যাও
স্মৃতির জানালা খিল আঁটা রেখে কতদিন প্রাণ বাঁচে?
 
ফেরা না ফেরার মন্ত্র তোমার তুমি চলো নিজ মতে!
শত ব্যস্ততা তার অবসরে চেয়ে রব চেনা পথে
চোখের পাতায় পুরনো দিনের খুনসুটি কল্পনা
মুখে না বলেও ‘ভালোবাসি’ বীজ বাড়বে হৃদয়-ক্ষতে।


রাস্তা
আশিক বিন রহিম

সকালের প্রথম রোদে প্রায়ই আমি বড় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকি।
দেখি; দূর থেকে আসা যন্ত্রদানবগুলো কি করে বড় হতে হতে
আমার সামনে আসে।
তারপর পায়ের কাছের মাটিকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ছোট হতে হতে
ছোটোয় মিলিয়ে যায়; হরিয়ে যায়।

সকালে সোনা রোদ বিছানো ধানিজমিতে প্রায়ই আমি বাবাকে খুঁজি।
দেখি; কাঁধের গামছা দিয়ে তিনি ঘাম-ক্লান্তি মুছে মুছে কি করে
কাদা মাটিতে স্বপ্ন আঁকেন।
তার পর চাকার মতো ঘুরে আমাদের-বড় করতে করতে
নিজেই শুণ্যে মিলিয়ে যান; হারিয়ে যান।

এই যে চৌকাঠে ঘর, সান বাঁধানো ঘাট, বাড়ির উঠোনে পেয়ারা গাছ
এ সব কিছুই তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন।
পুকুরের বড় মাছ, মুরগির প্রথম ডিম আমরা খেলেই বাবা সুখি হতেন;
হয়তো হাসতেন।

অথচ কি আশ্চর্য; একদিন বাবাও নাকি জুতা কিনছেন।
নতুন জামা কিনতে মাটির ব্যাংক-বাঁশের খোঁড়লে পয়সা জমাতেন।
একটা ফুলতোলা রুমালের অপেক্ষায় মামাদের আম বাগানে-
রাতভর মশা তাড়াতেন।

আজ বাবা নেই; আমাদের পোয়াতি জমি, মাচের পুকুর আর
আমের মুকুল-শোভা বিশাল বাগান-সব এখন ইট আর কংক্রীটের দখলে।
যন্ত্রদানবের নিষিদ্ধ মিছিল আমাদের বড় রাস্তাটাগুলো খেয়ে ছোট
থেকে- আরোও ছোট করছে দিনি দিনে।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট