ব্লকলিস্টের রাণীরা



 ব্লকলিস্টের রাণীরা
হাসনাত আসিফ কুশল

প্রতিদিন কতজনই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। ক’জনের আর খোঁজ রাখা যায়। তবে এমনই একটি মেয়েকে দেখে ভালো লেগেছিলো অনিকের। বাস্তবে নয়, ফেসবুকে। অনিক একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ছে। যে মেয়েটার প্রেমে পড়েছে অনিক, সেই মেয়েটাও একই বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ে।
একদিন প্রেমের প্রস্তাবও দেয়। লাভ হয়না। এই যন্ত্রণা কেউ বোঝে না। সাথে সাথে মেসেঞ্জারকল। হ্যালো।
হ্যালো।
তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো।
হ্যা। সত্যিই ভালোবাসি।
কিন্তু আমারপক্ষে তোমাকে অ্যাকসেপ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।
কিন্তু কেন ?
আমি জানি তুমি খুব ভালো ছেলে। সৎএবং ভদ্রও বটে। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসার জন্য প্রস্তুত নই।
আচ্ছা। ঠিক আছে।
সাথে সাথেই ফোন রেখে দেয় অনিক। ভালো লাগছিলো না কিছুই তার। প্রচ- রকম অস্থিও লাগছিলো তার মনের মধ্যে। বারবার ভেঙে পড়ছিলো সে।

অন্য একদিনের কথা।
মেয়েটির প্রত্যাখানের কথা সে ভুলতে পারছিলো না। তাই একদিন ক্রাশ এন্ড কনফেশনের পেজে গিয়ে নিজেই ইংরেজিতে একটি পোস্ট দেয়- আমি তোমাকে ভালোবাসি শিরোনামে। সাথে ওই মেয়েটার ছবিও ছিলো। কিন্তু মেয়েটা ফেসবুকে সেই ছবি দেখেই রেগে যায়। তখন সে নক দেয় অনিককে। বলে- তুমি একটা ফাউল ছেলে। তোমাকে বিশ^াস করে আমি ভুল করেছি। আমি তোমাদেও বিভাগীয় প্রধানের কাছে অভিযোগ করবো। বলেই ‘ঠাস’ করে ব্লক করে দেয়।

অনিক এখন কি করবে ?

ভালো লাগছেনা কিছুই তার। মনে হচ্ছে সবকিছু এলোমেলো হয়ে আসছে তার। সারা পৃথিবী একদিকে, আর নিজেকে আরেক দিকে ভাবতে শুরু করেছে। ভালো লাগছেনা কিছুই। সিগারেট খাওয়া শুরু করে। ড্রাগস নেয়া শুরু করে। কিন্তু সুখ পায় না।

সুখ যে কোথায় তা খোঁজার জন্য পৃথিবীর এমন কোনো স্থান নেই যে সে যায়নি। সুখের সন্ধানে সব জায়গায় বেড়িয়েছে সে। তবুও সুখ পায়নি। সুখ আসলে আপেক্ষিক বিষয়। একেক জনের কাছে সুখের সংজ্ঞা একেক রকম। কেউ ডিম ভাজি দিয়ে রুটি খেতে ভালোবাসে, কেউ কবিতা লিখতে ভালোবাসে, কেউ ডকুমেন্টারিফিল্ম বানায়।

কিন্তু অনিক সুখ পায়না।

ভেঙে পড়েছে খুব। তবুও জীবন থেমে থাকার নয়। এভাবে কয়েকটা দিন চলে গেলে ওই মেয়েকে আপনা আপনিই ভুলে গেল অনিক। অথচ একদিন এই মেয়েটিই তার কাছে প্রিয় ছিলো।

একদিন অনিক আরেকটি মেয়েকে ইনবক্সে নক দিয়েছিলো। বলেছিলো- ভালোবাসি।
সাথে সাথেই উত্তর- ডু ইউ ইভেন নোমি ? লল।
সে বললো, চিনিনা তো কি হয়েছে ? নতুন করে চিনবো। প্রেম করবো তো সাহস নিয়েই করবো।

এরপর আর কোনো কথা বলেনি সেই মেয়েটা।


অনেক  দিন পর সেই মেয়ে আবার তাকে মন্তব্য করলে, সে ‘দিদি’বলে সম্বোধন করে তাকে। এতে ওই মেয়ে অবাক হলেও কিছু বলেনি। পরে ইনবক্সে গিয়ে ‘দিদি’ বললে ‘ঠাস’করে ব্লক করে দেয় সে। এরপর আবার মন খারাপ হয়ে যায় তার। এভাবে কিছুদিন গেলে পরে অনিক আপনা আপনিই ভুলে যায় তাকে।

অনিক তার বন্ধুদের এড়িয়ে চলা শুরু করে। আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে। এভাবে কয়েক দিন যেতে যেতেই তাদের মিডিয়াল্যাবের সিনিয়র ইন্সট্রাক্টরের নজরে আসে অনিক। ইন্সট্রাক্টর এই বিশ^বিদ্যালয়েই চাকরি করছে। এক সময় এখানেই পড়াশুনা শেষ করেছে।
তিনি একদিন চা খেতে অনিককে ডাকলেন। তারপর বললেন- কি হয়েছে ?
তখন সে বলতে চাইছিলোনা। ইন্সট্রাক্টরের ধমকে সে বলে ওঠে, তাকে কেউ পছন্দ করেনা। কোনো মেয়েই পাত্তা দেয় না।
ইন্সট্রাক্টও তখন বললেন, আমাকেও তো কেউ পাত্তা দেয় নি যখন এখানে পড়তাম।
তখন অনিক কিছু বলছেনা।
বল।
কিবলবো ?
এই যে তোরসিদ্ধান্তকি ?
কিসেরসিদ্ধান্ত ?
লাইফের।
এখনো নেইনি।
নেসনাই কেন ?
ভালোলাগেনা।
তখন ওর আরও বন্ধু যোগ হয়েছে। তারাও একই ভাবে সান্ত¡না দিতে থাকলো। কি হয়েছে জানতে চাইলো।
এক বন্ধু বললো, কিছু হয়ে থাকলে আমাদেরকে বল।
তখন অনিক বললো, আমাকে কেউ পাত্তা দেয় না। ভালো লাগেনা। আমাকে কেউ পছন্দ করে না।
সেই বন্ধু বললো, দেখ একেকজন একেক ভাবে এই পৃথিবীতে জন্মেছে। তাই বলে এভাবে নিরাসক্তভাবে থাকতে হবে ?

অনিককে অনেকে অনেক মোটিভেট করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মোটিভেশন মিলছেনা তার মনে। অনেক কথাই সে দাবিয়ে রেখেছে। কেন ?





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট