পদাবলি



মাটি হয়ে গেলি
আহেদুল ইসলাম আদেল
[ স্নেহপ্রিয় ভাই আলিফ আল ইমরানের স্বরণে]

মানুষের দৌড় মৃত্যু অবধি শোকার্ত ভ্রাতার বাণী
অপ্রত্যাশীত ছুটির পত্র লেখালে ভাই তুমি
কৈশোর পদার্পণেই মাটি হয়ে গেলি
চোখ বুঝলেই ইমরানের প্রতিচ্ছবি।
স্মৃতির সাগরে ভাসছি বন্ধু স্বজন ভ্রাতা
মায়া বন্দী ফ্রেন্ডলিস্টের টাইম লাইনে তোর শোকার্ত বার্তা!
আজ চব্বিশে ডিসেম্বর
তোর জেএসসির রেজাল্ট প্রকাশিত হইল সবেমাত্র
চারিদিক হইচই আনন্দিত পাড়া মহল!
কেউ রসগোল্লা কিনছে মন মন
কেউবা আবার দিচ্ছে ডিনার নেমত্রন্ন
তোর মা’ই কেবল তোর বেডরুমের মেজেতে কাঁদছে গড়িয়ে গড়িয়ে
তোর পরনের পোশাক, বইপত্র বুকে জড়িয়ে
এমন একটা সুদীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিল তোর মা
যেন প্রাণ পাখি তার গেল উইড়া।
হায় রে নিয়তি, মুকুলেই ঝরে গেলি
পাশের বাড়ির ভাবি বলল তুই জিপিএ ফোর পেয়েছিস,
শুনে নির্বাক হয়ে গেল মা যেন রু সাহারা
এদিকে বাদশাহ ভাইয়ের হৃদয় জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি।
তোর স্বরণেই লিখেছে তিনি সূর্যবন্দনা
আহা আর সইতে পারছি না, যেন প্রভাতেই সূর্যগ্রহন
রোজ ফজরের নামাজের পর দেখি
তোর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বাবা করে মোনাজাত
সরাসরি কবুল কর আল্লাহ্ পিতার মাগফিরাত
রোজ হাশর করিও পার মাবুদ সেই অছিলায়
সকল পাপ মার্জন করে আলিফকে নসিব কর জান্নাত।


ইচ্ছেডানা
আদ্যনাথ ঘোষ

বৈশাখের রোদ্রের দহন পুড়িয়ে করেছিল খাক।
শুকিয়ে গিয়েছিল যৌবনাবতী ধান, তৃষ্ণার পরিশ্রুত জল
সব নদী কুলকুল ভেসে গেলে
সব পাখি গগনবিহারী হয়েছিল
সব তারা খসে পড়েছিল পৃথিবীর দিগন্তে
পঞ্চমীর চাঁদ লাল গালিচার নগ্নতায় ডুবেছিল দাহে
রক্তের প্রণয়লীলা অবিরত খেলে যায় বানে ভাসা নদীর মতো
প্রজাপতিগুলো দুপুরের আলোর জোয়ারে নাচে
আমোদিত সম্মোহনী শীৎকারে
ঈর্ষার বিহ্বলে পরানের উড়াল ডানা তার পড়েছিল খসে
গায়ে মেখে রোদ্রের প্রণয় ফেনা।



হকার
আসিফ আলমগীর

বিলবোর্ডটা আজো দাঁড়িয়ে
পাশেই পড়ে আছে, যুবকের লাশ।
দু’ধারে হকারের মাইকে দৃঢ় স্লোগান-
‘ভাইসব...
এ মলম লাগালেই ফিরে যাবে প্রাণ।’

নষ্ট
খায়রুল আলম রাজু

‘নষ্ট বলো’ এই আমাকে!
‘নষ্ট’ আমার অঙ্গ না;
নষ্ট  মাটির নষ্ট গাছের
সঙ্গে আমার সঙ্গ না!
‘নদী কি আর নষ্ট হয়?’
নষ্ট নদীর জল;
মাটিও নয়, গাছটিও নয়,
নষ্ট হয় গাছের ফল...

ফুল কি কভু সন্ধি করে?
সন্ধি ঘটায় মনে;
ঘাসের যেমন সন্ধি ঘটে
মিষ্টি রোদের সনে!
নষ্ট শরীর, নষ্ট মগজ,
নষ্ট দেহের ছায়া,
নষ্ট আমি, নষ্ট দেহ
স্বচ্ছ মনের কায়)...


তুমি ডাকছো
মারুফ আহম্মেদ নয়ন

তুমি আমাকে ডাকছো, পাশের বাড়ির সদ্য মাধ্যমিক পেরুনো মেয়েটি সুরেলা কন্ঠে গাইছে রবীন্দ্র সংগীত, আমি যাবো, আকাশে কালো মেঘ, ঝুম ঝুম বৃষ্টি টাপুর টুপুর শব্দে, মনে হয়- তুমি ডাকছো, খুব করে ডাকছো, একটি কালো পর্দার আড়ালে তুমি গাইছো, তুমি পড়ছো, তুমি আয়নার সামনে বার বার দাড়াচ্ছ, চুল ঠিক করছো, কপালে লাল টিপ পড়ছো, বহুকাল ধরে যেনো এইরকম প্রতীক্ষা, তুমি ডাকছো আমি যাবো, আমার ভ্রান্তিতে, আমার ঘোরের ভেতর  !


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট