ভিখারি
নাসরিন জাহান মাধুরী
ভেতরের অবদমিত প্রতিজ্ঞা
শপথের বাক্য
যাও যাও যাও, এই বেলা তুমি যাও
তারপর যেতে থাকি যত দূরে যাওয়া যায়
যত দূরেই যাই
তোমার বৃত্তের পরিধি, ব্যাস, ব্যাসার্ধ
কিছুই ডিঙাতে পারি না
সাত রঙা পাহাড় ডিঙাই
ময়ূরাক্ষী নদীতে ভাসি
সাত সমুদ্র তেরো নদী
অনন্ত নক্ষত্র বহুকাল আগে যার আলো
কৃষ্ণ গহ্বরে বদলে গেছে তার আলো ডিঙাই..
যাও যাও যাও, এই বেলা তুমি যাও
তারপরও যেতেই থাকি
ব্যথার রাগিণী বেজেই চলে
যাও যাও যাও এই বেলা তুমি যাও
যেতেই হবে! যেতে হবেই!
চোখে বিস্ময় মনে বিস্ময় নিয়ে
চলে যাই চলে যাই অজানায়
সব অগ্রাহ্য করে
আর কোন মোহ নেই
নেই মায়া পাখি
নেই পিছু ডাক
কোন সীমা রেখা আর আটকাতে পারে না...
ভুলে যেয়ো আমাকে
ম্স্তুফা হাবীব
মানবিকা, আমাকে ভুলে যেয়ো।
তুমি চেয়েছিলে স্বপ্নের গাছটিতে ফুল ফুটুক,
সুবাস ছড়াক বসন্তের সুহাসিনী বাতাসে।
আড়িয়াল খাঁর উন্মত্ত ঢেউয়ে
স্বপ্নগাছটির শেকড় থেকে মাটি সরে গেছে
আজও ফেরারি আসামির মতো সেই দুর্ভাগা স্বপ্ন
অচেনা প্রান্তরে পালিয়ে বেড়ায়।
তোমার রূপনগর আর দেখা হল না আমার
তিল শোভিত পাতাবাহার গালে হল না চুমু খাওয়া
জংধরা আরশিতে চোখ রেখে শুধু স্মৃতির আবাদ।
মানবিকা, চার দশকেরও অধিক সময়
বেয়ে যাচ্ছি কালের বৈঠা
আগুনমুখা নদীর উপাখ্যান লিখেও
আজও ভিড়তে পারিনি তোমার ঘাটে।
মানবিকা, ভুলে যেয়ো আমাকে
হৃদয়ের বিলবোর্ডে কেনো লিখে রাখো মুস্তফা হাবীব !
অস্তিত্ব
মুহম্মদ মহসিন হাবিব
একদিন তরতাজা কলমিলতা হয়ে
খাদকে রূপান্তরিত হবো
আর আমার স্বজাতিরা পোকা মাকড়ের কামড়ে জর্জরিত হবে
ফিরেও তাকাবে না কেউ
জীবন খিদে মেটাতে আমাকেও
রান্নার রেসিপি হতে হবে কোনো এক পছন্দের থালিতে
কিম্বা পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ধুলি মাখা দেহে শিউলি পচা হয়ে
ঠাই মিলবে আস্তাকুড়ের লুকানো ঠিকানায়
ফুল মালার সমারোহ থাকবেনা;
থাকবেনা মাটি উৎসবের সমারোহ
শুধু থাকবে অন্ধকার আকাশে এক ফালি চাঁদের বিরাজমানতা।
কীর্তিনাশা নদীটি
নাঈমুর রহমান
কীর্তিনাশা নদীটি তারে আমি চিনি
চিনি আমি আগন্তুকের নাম।
চোখ জুড়ে তাঁর বনলতার কালিমা
কীর্তিনাশার ঢেউয়ে বহে কাজলরেখা।
সন্ধ্যা এলে আবার ফিরে শিরীষ গাছের বনে
হলুদ রঙের ডানা মেলে
কীর্তিনাশার বিস্তীর্ণ বুক জুড়ে।
আমি চিনি তাই,
চিনি আমি আগন্তুকের এলোচুলের হিজল-কমল।
কীর্তিনাশা গাহে, বহে অপরাহ্ণের সমুষ্ণ বাতাস,
খুব কাছাকাছি কলমির ফুলের দলে
সে আগন্তুক শাশ্বত নদীর মেয়েটি।
চিনি আমি কীর্তিনাশা
চিনি আমি আগন্তুকের নাম।
মুক্ত করে দিলাম
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
স্বপ্ন তোকে আর পারছি না
চোখের সামনে ধরে রাখতে ...
ভাবনা তোকেও পারবো না
মনের ভেতরে দু হাতে ধরে রাখতে
খুব বেশী দিন...
আলো গিলে খাওয়া
অন্ধকারছন্ন মেঘের টুকরোটা
ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে-
সামনে
পেছনে
আমার চারপাশে ......
যাহ্ মন
তোকে পাখি করে উড়িয়ে দিলাম আজ
খুঁজে নিস
উড়ে গিয়ে
তোর বাসা বাঁধার মতো
নোতুন কোনও
সবুজ উন্মক্ত মাঠ
শালিকের মতো গুটি গুটি পায়ে
খুঁটে তুলে নিস
ঘাসের নীচে লুকিয়ে থাকা
জীবনের যথার্থ বর্ণমালা...
সময়গুলো বড় নিষ্ঠুর
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
সময়গুলো বড় নিষ্ঠুর মমতায় হাত বাড়ায়
কখনো প্রচ- খরা হয়ে, কখনো ঘন কুয়াশা হয়ে।
দৃষ্টি নত হয়, দুর্ভেদ্য মনে হয় দূরের পারাপার
পথ হারায় কুহক চাদরে একঝাঁক শুভ্রকপোত।
বসুধায় কে আছে, যে বুক পেতে রাখে?
খুঁজি তারে, দেখি না তারে,
সে হারায় পথে-ঘাটে-প্রান্তরে, দূরের আবছা আলোয়
নিঃসঙ্গ খুঁজে যায় স্বর্গের অনন্ত সৌরভ,
চাতক পিপাসায় চেয়ে থাকে আকাশপানে
হায়! চোখের জলে কী স্বপ্নভাঙ্গার তৃষ্ণা মেটে?
স্বার্থের সূচকে বিশ্বে ভালোবাসার দরপতন
অসংখ্য কবিতারা দিয়ে যায় আত্মাহুতি;
শেষ ভগ্নাংশগুলো আর্তনাদ করে ওঠে বেদনায়
কবে ফুটবে ফুল কোন বসন্তে, শুদ্ধ মানবচেতনায়?
ঘৃণাগুলো আরো ঘৃণিত হয়ে উঠছে
বিষাদের কালোরঙে লেপ্টে গেছে পৃথিবীর মানচিত্র।
বর্ণবৈষম্যে আজো জ্বলে পুড়ে মরে মানুষ
জাতিগত ভেদে সাম্প্রদায়িক নীল-নকশা আঁকে;
স্বাস্থ্য নিয়ে স্বার্থ খোঁজে অসুস্থ পুঁজিবাদিরা
মেতে ওঠে বিধ্বংসী অনুজীবের উত্থান-পতনে;
হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে অচেনা অনুক্ষণ
কে তারে চিনতে পারে বিক্ষুব্ধ নগরে?
বিশ্বাস বিশ্বাস খেলা
ইয়াসিন আরাফাত
ক্যারম খেলায় অনেকের ভয় হতো আমার সাথে দাঁড়াতে।
বিস্তৃত হাওরের কিনারে ফুটবল খেলেছি বহু
গোল করিনি কখনও তবুও জিতেছি সতীর্থের গোলে।
আর অপ্রিয় খেলা ক্রিকেটে আমি পাকাপোক্ত নই।
এমন আরও অনেক খেলা খেলেছি আমি
গোল্লাছুট, চোর পুলিশ, বউচি, লাই, কপালটুকি আরও কত কী!
প্রচলিত বিধান অনুসারে কখনও হেরেছি কখনোবা জিতেছি।
সেইসব ভুলে গেছি শৈশবমূখর রাত পোহানোর আগে।
কেবল ভুলতে পারি না সহস্র রাত ধরে, বিশ্বাস বিশ্বাস খেলায়
মানুষকে বিশ্বাস করে জিততে পারিনি আজও!
মধ্যবিত্তনামা
মাজহারুল ইসলাম
তোমাকে লিখবো লিখবো করে
কত দিন কেটে যায় আমার!
সকাল দুপুর বিকেল গড়িয়ে
রাতের আঁধার সবকিছু কেমন গ্রাস করে নেয়
মোটা ভাত মোটা কাপড়ের অধিকারটুকু ও।
বেঁচে থাকার জন্য এই যা-
একমাত্র ‘মধ্যবিত্ত’ তকমাটা ছাড়া
আর কিছুই যে থাকে না !
তাইতো আগ-পিছ ভেবে-চিন্তে
তোমাকে আর লেখা হয় না!
জানো তো-
মধ্যবিত্তের জমি-জিরাত ঘর-দোর সবই থাকে
বাড়ির দক্ষিণকোণে শান বাঁধানো পুকুর থাকে
সুখ দুঃখ হাসি-কান্নার রক্ষণশীল গল্প থাকে
উন্মুখ প্রাপক থাকে শুধু প্রেরক থাকে মধ্যবিত্ত মননের !
নীরব নামতা
জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
ফুরিয়ে যাওয়া একটা দুপুরের মত
ফুরিয়েই যাচ্ছি, কোনো রকম আছি;
এটাকে বেঁচে থাকা বলে; ভালো থাকা নয়।
কিছু খুঁচরো আলো ছুঁতে গিয়ে
একশ জোনাকির মৃত্যু হয়েছিল; কেউ জানেনা-
সকালের ইতিহাস মনে রাখিনা; এভাবেও যে
পাঠ করে নিতে হয় নীরব নামতা; জানা ছিল না।
তুমি হয়ে গেলে আমার ভালো থাকা; বিরহ-
আমার নির্বাক কবিতার নির্মহ ঘ্রাণ;
তুমি ভাবো না কষ্মিন সময়ে-
অথচ কেউ না হওয়া এই আমি তোমার কেউ একজন।