পদাবলি



লেট মর্নিং বেল
আরিফুর রহমান


আহা, এমনই রোদের হৃদয়ে ঘুণপোকা মেঘ জমলে শস্যবতী ক্ষেতের বুকে ছায়াদের স্মতি জমা হয়। নেচে ওঠে ধানফড়িং। ঘুড়ি ওড়া হাওয়ায় একটা সকাল পাখি দেয় বহুদূর পথ।

শরতের ঘাসে জমে উঠা শিশির উড়ে গেলে পথ ফুরিয়ে যায়। তখনই পাঁজর খামচে ধরে বয়সী বেলার খিদে।

দূর বসতি বৃক্ষে আসমানি রঙ ডানা ঝাপটালে একঝাঁক পাখি উড়ে আসে। জানিয়ে যায়, ও পাড়ার গির্জায় ঘণ্টা বাজল গুনে গুনে  দশবার।


ঠিকানা
সাইয়্যিদ মঞ্জু

অস্তমূখী পথ গন্তব্য বটতলী বাজার
ডানে ফিরেলে অন্তিম ঠিকানা
উত্তর-দক্ষিনে শুয়ে পূর্বপুরুষ
মুয়াজ্জিনের সুরেলা সুর করে শ্রবন।

প্রার্থনার স্বরে খুঁজি এই ঠিকানা
আর্তনাদের ভাষায় অন্তিম কোনো মুহুর্তের কাছে
আবারো সেই কোলাহলের ভেতরে রেখে গেছি আমাকে।


মানুষ হতে পারিনি
নাফছি জাহান

আমি মানুষ হতে পারিনি-
অবেলার স্মৃতি আঁকড়িয়ে পুনরায় তাকে
ফিরে পাবার অন্বেষণে ব্যস্ত থেকে
মানুষ হবার নিয়মাবলী হারিয়েছি বছর খানিক আগে,
আমি মানুষ হতে পারিনি আদৌ।
মানুষ হবার মন্ত্ররা সব নির্বাসনে গিয়েছে সেই কবেই
ঘূর্ণায়মান জীবনে নিজের প্রকৃত অস্তিত্বকে খুঁজে দেখিনি
তাই মানুষ হওয়ার নকশাকে আপন করতে পারিনি,
দুশ্চিন্তাগ্রস্থ এ মন- আঘাতে আঘাতে
নিরুপায় হয়ে পড়েছিল ধ্বংসস্তুপে
সামান্য জলের ছোঁয়া পেয়ে-
জীবন পেয়েছি কোনো এক উপায়ে
কিন্তু মানুষ আমি হতে পারিনি।
মানুষ হতে হলে অপরকে আঘাত করার কলাকৌশল আয়ত্বে নিতে হয়
মনুষ্যের হৃদয় টুকরো টুকরো করার বাসনা থাকতে হয়,
আমিতো এ সবের কিছুই আয়ত্ব করতে পারিনি
তাহলে মানুষ হবার দ্বিতীয় কোনো পথ কি খোলা আছে?
এ নিষ্ঠুর ভূবনে আজো মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি।




ভালোবাসা ভুলে গেছি
বাবুল চৌধুরী

শিকেয় তুলেছি ভালোবাসা।
একদিন নদীর দুই কূলে কলার ভেলার মতো
ভাসিয়েছিলাম তাকে –ভেসে যাক দোল খেয়ে।
চড়ায় মুখ গুঁজে দিয়েছিল সে।

শেকলে বেঁধেছি ভালোবাসা।
একদিন তাকে পাহাড় টিলা দেখাতে নিয়ে গেছি,
ফ্রক-পড়া কিশোরী আনাড়ি হেলদোল খায়
ঘাস ফড়িঙের নেশায় পাহাড়ে গড়িয়ে যায়।
স্মৃতিতে রেখেছি ভালোবাসা।
একদিন নদীকে সমুদ্র ভেবে মেতেছিল ডুবসাঁতারে
নদী ও সাগর দু’জন হলেও শেষে এক হয়ে যায়
এ কথা বোঝেনি ডাগর, হেঁয়ালি ভেবেছিল সে।

ভুলে গেছি ভালোবাসা।
একদিন ঝড়ের গল্প শুনিয়েছিলাম তাকে ভেজা সন্ধ্যায়
অপটু সে কপট ঝড়ের ঝাপট বোঝেনি
আঁচল উড়িয়ে ঝরা পাতার সাথে হারিয়ে গেছে।


বাহাদুরি খতম
মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

উদিত শক্তি;
ক্রমে ক্রমে ক্ষয়ের সম্ভাবনা রাখে
সূর্যের আলো সর্বদা তীক্ষè হয় না
ক্ষনিকের জীবন স্বল্পমেয়াদী।

এতেই এত ভাব;
গায়ের জোরে চাঁদ ধরা যায় না
আজ গায়ে জোর আছে
কাল তো না ও থাকতে পারে।

নির্লজ্জ মানব;
সামনে মানুষ রূপীর বেশ ধরে
আড়ালে ছাইপাঁশ ইচ্ছা মতো গিলে
পাগল ছাগল ও রেহাই পায় না।

বিবেক আজ সুপ্ত;
চোখের পর্দায় মরীচিকা ধরেছে 
তাইতো ঝাপসা লাগে সব কিছু
জং ছাড়ানোর উপায় জানা নেই।

কিসের বাহাদুরি;
রঙ্গমঞ্চ বন্ধ হলেই খেল খতম
একই পথের পথিক মোরা সবে
তাহলে এতো বৈষম্যের মানে কী?


নাম
নূরনবী সোহাগ

তোমাকে দেয়া নামটা চুরি হয়ে গেছে
এই ভয়ে তোমাকে এড়িয়ে চলছি কতযুগ

সচেতন চোখ রাখি হাওয়ার বলাবলিতে
সেখানে তোমার নাম নেই
খুলে দেখি আকাশের নীলকৌটা
ছুঁতে না, ধরতে না— এমন কোথাও নয়
অথচ কোথাও হদিস নেই নামের
খেয়াল হলোÑ তবে তুমি দিব্যি সাড়া দিচ্ছো কোন ডাকে!

তোমাকে আমার যেন কোনো নামেই ডাকা হয়না
শুনছি, তোমাকে দেয়া নামটি
সাবলীল ছুটে যাচ্ছে তোমাকে ছুঁতে



জীবনী

নীলেশ গায়েন

কী হবে জীবনী লিখে ?
কেইবা লিখবে।
তার চেয়ে হারানো সময় আর স্মৃতি গুলোকে গুঁজে রাখি
অনেক গানের খাঁজে খাঁজে
মিশেই দিই প্রিয় কিছু গন্ধের কাছে।
অবসর পেলে
শুনে নিই গান অথবা শুকে নিই গন্ধ
স্মৃতিরা হয়ে ওঠে জীবন্ত ।

কী হবে জীবনী লিখে!


কে ?
মিলন মাহমুদ

কে আসে-
এভাবে পথ করে দিয়ে যায় মনিকোঠায়, চঞ্চলতায়,
শতাব্দীর মাথা খুলে নির্বাচিত করে পোকার একশো
একটি হাত, আর অজস্র বাদপ্রতিবাদ।

জানালার আলবেয়ে উঠে আসে পর্দার ছাপে ত্রিভুজ মুখ
প্রিন্ট করে দিয়ে যায় নিঃশব্দ বিষের পেয়ালা, সাজানো
পাতার ডালে,

যেখানে চাঁদের পেলবতা মাটি হয়ে নামে আর অঙ্কিত হয়
চোখের কোণে, ঐরকম শিরোনামহীন যুদ্ধ চলে আগুনে আর জলে।

কে বলে যায়-
অসময়ে বৃক্ষ ফোঁটার সংগ্রাম, নদী মরে যায়-
যায় কি তার ঢেউ?

অসুখের নামগুলো আছড়ে পড়ে আমাদের পায়ের প্যাঁচে,
যেনো আমরা জবুথবু কচ্ছপের পিরামিড
দারুণ হেসে মরতে প্রস্তুত রৌদ্র পোহাতে।

কে দিয়ে যায় গোপন মন্ত্র-
প্রেমিককে কাছে টেনে নেয় অর্ধেক মানবী
বাকিটা ঈশ্বর, তখন খুলে পড়ে বই ঘরের কপাট,

জপে জপে সাদা পৃষ্ঠার অক্ষর ধূসর হয়ে যায়
সভ্যতার যোনী থেকে শেষ পেন্ডুলাম ছিঁড়ে পড়ে।


অপেক্ষা
অতনু নন্দী

চারিদিকে নাক্ষত্রিক রোদ!  রোদ পেরিয়ে হেঁটে চলে রোদ্দুর।
বুকের বাঁদিকে দগদগে স্মৃতি;
রক্ত উঠে আসে চোখে।
সময়ের ক্ষরণে উদরে নৃত্য করে চলে একটা ইঁদুর;
পানকৌড়ি গন্ধটুকু মেখে অপেক্ষায় মৃত্যুর পলক, অমৃতের হাতছানি।

আমার নদীটি খরস্রোতা;
বৃষ্টি নেমেছে তার শরীরে।
মুদ্রনের গন্ধে মাতোয়ারা বাগিচায় ধ্রুপদী ঘরণার গজল
গেয়ে চলেছে সে ।

ফিরে আসবে বলেছিল অমাবস্যা তিথি ফুরালে,
এখনও নৌকা বাঁধা পড়ে আছে ঘাটে
স্নেহময় মাঝি উপবাসী কান্না নিয়ে গুনে চলেছে প্রতীক্ষার প্রহর !

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট