পদাবলি : ০১




একজন লোক
তমসুর হোসেন

একজন লোক প্রতি রাতে শহরের রাস্তাঘাট অলি গলি ঘুরে বেড়ায়
একান্ত মনোযোগে মনের অনবরত অজান্তে খোঁজে সে আপনাকে
দ্রুতবর্ধিষ্ণু ইটপাথরের চাপায় আবাল্যের সব স্বপ্ন হারিয়ে
এখন সে নিঃস্ব জড়মানবে পরিণত হয়ে গেছে।

এখন যেখানে মানুষে ঠাসা চৌরাস্তার বাতি ঝলমল মনুমেন্ট রেস্তোরা
সেখানে ছিল দীঘল পাতার সুপুরি আর রসভরা আমলকি বাগান
আরও পশ্চিমে উচু পাচিলের চকচকে আলিশান সার্কিট হাউসের ¯œানে
শ্যাওলা জড়ানো অতল পুকুরে রুই কাতলা শাল বোয়াল চিতলের ঘাঁই।

শহর তাকে ঠেলতে ঠেলতে নিন্দাযোগ্য দূর্গন্ধময় বস্তিতে ফেলে দিয়েছে
আদরের মেয়েরা বুকের রেহেলে ধরে রাখতে পারেনি ওস্তাদের তালিম
একমুঠো অন্ন আর বয়সের দাবি মেঠাতে তারা পথ ছেড়ে বিপথে চলে গেছে
ধর্মভীরু বাবার কবরটাও হারিয়ে গেছে আকাশছোঁয়া ইমারতের তলদেশে।

লোকাটা পা দিয়ে গোটা শহরটাকে মেপে মেপে নিজ ভিটে উদ্ধার করতে চায়
স্বপ্ন নয় জীবনের জাগ্রত ভ্রমে খ-িতস্বত্তা জরা নিয়ে আবারও সে জন্ম নেয়
আবারও শুরু থেকে শেষের দিকে প্রাপ্তি থেকে বঞ্চনায় ঘুরপাক খায় চেতনা
মনুমেন্টের পিচ্ছিল দেয়ালে মুখ ঘষে প্রয়াত জনকের সাহচর্য আঁচ করতে চায়।

রাত শেষ হয়ে যায় দূরগামী হাওয়ার সুগন্ধে অবশ হয়ে আসে রুগ্ন অস্তিত্ব
নেড়ি কুকুরের অতৃপ্ত শব্দে দিবসের ফ্যাকাসে আলোয় সে হারিয়ে যায়
জীবনের অসংখ্য অতৃপ্তির যন্ত্রণা কাঁধে করে অনাহার আর ক্রন্দনের দেশে
এ শহরে কিছু মানুষের লোভ আর পাপিষ্ট ইচ্ছের পদভারে পিষ্ট হয় স্বপ্ন।


ভিন্ন প্রেমিক
কিশলয় গুপ্ত

চোখের দৃষ্টি সাজিয়ে রাখো ফুলদানিতে
কদরবাজী ? জানলে তুমি ভুল জানিতে

মনমানিতে কাটছে আমার অনন্ত কাল
তর্জমাতে লটকে থাকুক ফালতু সওয়াল

কাল কি হবে ভাবতে গেলে নিদ্রা-গত
আজকেই তাই শব্দ সাজাই সাধ্য মতো

পদ্য গুলো সদ্যজাত- বিস্ময়ী চোখ
অভ্যাগত প্রেম বানানের তর্জমা হোক

আসন কেমন শাসন করে প্রেম বাবাজী
মনটা কোথায়- সবটাই তো কদরবাজী!

                           


মেয়েটা ভালোবাসতে পারে না
মিসির হাছনাইন

এবং আমি বুঝতে পরেছি মেয়েটা গন্ধে ভালোবাসে। পোড়া শরীর খুলে দিলে ঝাপটে ধরে গন্ধ শুঁকতে থাকে, চুমু খায়, যেমন করে রক্ত চোষে ছাড়পোকার দল; মনে হচ্ছিল পুরো শরীরটা খেয়ে ফেলতে পারবে এক চুমুকে।

হ্যাঁ, মেয়েটার গায়ে বেলীফুলের গন্ধ ছিল। মেয়েটা নাকি পুরুষের গন্ধ খেয়ে বাঁচে। জ্যোৎস্না রাতে মেয়েটা ফুল হয়ে ফোটে হিজল বিজলের বনে।
তারপর!!!
পুরুষ’রা মাতাল হয়ে জ্যোৎস্না দেখে, দেখে চাঁদের গায়ে কত শত ক্ষত। কত লক্ষ কোটি তারা ফুটে আছে ফুলের মতন।

হ্যাঁ, খোলা আকাশের নিচে মেয়েটার কাঁচা দেহখানি যখন জ্যোৎস্নার আলোয় লাফাতে থাকে; চাঁদের ক্ষত মুছে দিতে নেমে আসে হায়েনার মতন একদল মেঘ।
আহ্....!
মেয়েটা পুরুষের শরীর ভালোবাসে। গন্ধ খেয়ে বাঁচে।
শুধু ভালোবাসতে পারে না।
শুধু, ভালোবাসতে পারে না ।


রমাগত বিভ্রান্তি
জেলী আক্তার

ঐ যে চোখ আর,
ঐ চোখের কাজলের কোলাহল-
বয়সের সঙ্গে বেড়ে চলে।

নিস্তব্ধ লকলকে যন্ত্রনা,
কপালে শূন্যতার রেখায়-
ভাঁজ একে কথা বলে।

সবাই ইশারায় বলে ঐ যে ভাঁটফুল,
আমি বলি সব ভুল আর ভুল।





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট