পদাবলি : ০২




তুমিও বড্ড অবিশ্বাস করতে থাকো
রায়হান কিবরিয়া রাজু

বড্ড মৃত্যু মৃত্যু পায়...
কেমন যেন তেঁতো নিমপাতার মতো মনে হয় বেঁচে থাকা
কখনও বা মশকীর মতোই রক্তচোষা পিচাশ ভেবে ভীষণ কষ্ট হয় নিজের
আবার কখনও ভীষণ অন্যরকম মনে হয় এই বেঁচে থাকাটা
ঠিক যেন কাবাডি কাবাডি না বলে মৃত্যু মৃত্যু বলে দম ফেলা; কখনও জ্বলা নয়তো মারা পরা !

হ্যা, প্রিয়-
আজকাল প্রশ্বাসে প্রশ্বাসে পঁচা ফুসফুসের গন্ধ বেড়িয়ে আসে
প্রতিটি হৃদস্পন্দনই যেন মনে হয় মৃত আত্মার বোবাকান্না
চারপাশটাও যেন রূপকথায় শোনা ঐ মৃত্যুপুরী
অচেনা অজানা সব চেনা মুখ, সব প্রিয় কথা।

 আজকাল প্রিয় রজনীগন্ধার গন্ধে ভেসে আসে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি
বকুলের মালাটাকে ফাঁসির দঁড়ি মনে হয় আমার
মনে হয় সবকিছুই আমার সমাপ্তি রেখা
ভালবাসা, ভাললাগা, প্রেম, অপ্রেম, ঘেণœা সব কিছু

নিয়তির নিয়মেই পা রেখেছি প্রিয়,
আজ আর নিজেকে  চিনতে পারি না একচুল
বড্ড অবিশ্বাস করি নিজেকে
তুমিও বড্ড অবিশ্বাস করতে থাকো-
ভীষণ অবিশ্বাস !


 
এই হেমন্তে তোমাকে চাই
মোজাম্মেল সুমন

তুমি যেনো ছোটগল্পের মতো করে
হঠাৎ এসেছিলে আমায় কাছে টানতে!
ডেকেছিলে ভালোবাসায় দরদ ভরে-
আমি তোমার হবো- এটা বোধয় জানতে!

তোমায় কাছে পাবার স্বপ্ন মনে রোয়া-
জানি নাকো হবে কিনা তোমায় পাওয়া!
ভালোবাসা ঐ কাশফুলের নরম ছোঁয়া-
বুঝে ওঠার আগে তোমার চলে যাওয়া!

আশায় আছি এই হেমন্তে তুমি আসবে-
আমনধানের পাশে আমার সাথে হাঁটবে,
আমার বধূ হবার রঙিন স্বপ্নে ভাসবে-
বলবে ‘ভালোবেসে সুখের জীবন কাটবে’ ।

তোমায় নিয়ে ঘর সাজাবো সবুজ গাঁয়ে-
ফসলঘ্রাণ ডাকবে সন্ধ্যার আলো শেষে,
রোজ সকালে শিশির ছোঁবো অবুঝ পায়ে—
রাত্রি নামলে জ্যোৎস্না দেখবো ভালোবেসে ।

তোমার সুখের ঘরকন্না আর মায়ার পরশ-
আমি কিষাণ নাগর তোমার গরম ভাতে,
মনের গভীর ভালোবাসায় রাখবো সরস-
আমায় আগলে রেখো তোমার নরম হাতে ।

তোমায় নিয়ে কবিতা নয় মরুমায়া-
যে রয়েছে মনে, মনেই তো তাকে পাই!
ভালোবাসার আদরসোহাগ তরুছায়া
ধানশালিকের এই হেমন্তে তোমাকে চাই ।


আমার প্রার্থনা শেষে
কাজী রুপাই

আমার প্রার্থনা শেষে- প্রকৃতির এমনি দুঃর্স্বপ্নে
একটি বিষন্ন পাখি মৃত্যু থেকে ফিরুক অরণ্যে
আধারের হ্নদপিন্ডে আলো জ্বেলে একটি বিদ্ধস্ত
জাহাজ আধার কেটে ছুটুক আলোর করোটিতে

পৃথিবীর খইরঙা হাঁসগুলি জীবনের পথে
সুগন্ধি নুপুর পড়ে সাতার কাটুক জলাশয়ে

আমার প্রার্থনা শেষে প্রান্তরের সবুজ ডানায়
অৎস্র রৌদ্রের রেনু মেলুক সোনালি ডালপালা
একটি পথশিশুর নির্জন কুটিরে ঘাসফুল
স্বপ্নের রুপালি তারা ফুটুক ঝিঝির ঐক্যতানে

আমার প্রার্থনা শেষে কাঁচভাঙা মৃত্তিকার বুকে
উড়াল মারুক সব শূন্যতার পোড়া গুল্মলতা
সমুদ্রের সাথে সব লেনদেন শেষে পৃথিবীর
মানুষেরা মহাশূন্যে উড়াক শব্দের পায়রা


ছেঁড়া ফুল
নবাব আব্দুর রহিম

সেদিন তার জানালায় মুখ বাড়িয়ে দেখলাম
মেয়েটা আপন হাতে লাগানো ফুলবনে
জবার নগ্ন রুগ্ন গাছটিতে পরম যতেœ-
তার তৃষার্ত প্রেমিকের গায়ে অমীয় ঢেলে যেভাবে উষ্ণ করে তাকে,
তেমন করে ঢালছে পানি।

আর তার প্রেমিকের মতই সুধা পানে
একদম তরুণ, শৌর্যে-বীর্যে বলবান তার প্রেমিকের মত
তরতরিয়ে জীবিত হয়ে উঠল জবার গাছটি।
অথবা বিয়ের পানি গড়াতেই যেভাবে
লিকলিকে গৃহবধূ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে।

তারপর দেখলাম, একটি জবা
প্রস্ফুটিত একটি জবা
সুবাস বিলাচ্ছে ফুলবাগানে।

আরেকদিন জানালায় মুখ বাড়িয়ে দেখি
নিষ্ঠুর কিশোরী, কখনও প্রেমিকের সাথে এমনটা করেনি
একদম গলা টিপে টেনে আনল ফুলটিকে মায়ের বুক থেকে।
আপন কানে গুঁজে আবার শুয়ে গেল প্রেমিকের সাথে।

আর সেদিন!
কেউ দেখেনি, আমিও না
মেয়েটিরও অগোচরে, তার প্রেমিক দেখেছে!
বিছানায় শুকনো, জীর্ণ জবাটি আর্তনাদও করল না।
জবাটি তখন মৃত।






শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট