পদাবলি : ০১




একটি ভিনদেশী ভাবনা ও তুমি
ফজলুর  রহমান


তোমার চুলে বিলি কাটি বলে আমি বন্য এমন যারা ভাবে তারা ভুল ভাবে।
আমি আলো নেভা অন্ধকারে তোমার মন হাতড়ে ঝিনুক খুঁজি,
প্রেমের হারানো মুক্তো সে ঝিনুকে পাবো ভেবে কতবার ডুবি আর ভাসি।
তখন তো কেউ আমাকে মন ডুবুরি বলে না,
প্রেমে নিন্দার জলে ডোবে সবাই,
আমি কেবল ভাসি;
কই আমাকে তো কেউ ভালোবাসার ভেলা বলে না।
তোমার চোখ ছোব এমন আকুলি-বিকুলি দেখে যারা আমাকে বেহায়া ভাবে তারা ভুল ভাবে।
তুমি তাদের বলে দাও মদ, সিগারেটের নেশা আমার নেই,
আমি তাদের মতো মাতালও নই,
দিনে- দুপুরে পড়ায়, মহল্লায় চিৎকারে আমি ঢি ঢি ফেলে দিই না।
ভিন্ন নারীর শরীরের মানচিত্রের খোঁজে রাত-দুপুরে অচেনা দরজায় কড়া নাড়ি না।
তোমার চোখে যে জাদু-টোনা তার আছর ছাড়াতে;
আমার এক পুরুষের কাল কেটে যায়,
যত বড় গুনিনই ধরি না কেন আমার ঘোর কাটাতে পারে না।
যারা বলে তোমার রূপে আমি বেহুঁশ, মৃতের মতো পড়ে থাকি তারা ভুল ভাবে।
তোমার, কেবলই তোমার রূপে বুঁদ হয়ে;
তোমার নির্মাণ কারিগরকে খুঁজে ফিরি,
কী ভীষণ আকুলতায়!
কী প্রগাঢ় ব্যাকুলতায়!
কী নিবিড় আরাধনায়!
আমি ঘুমে ঘুমে জেগে রয়,
তোমাকে আবিষ্কারের নেশায়।
তোমার খড় বিছানো মনের পথ ধরে;
ওলি-গলি হাতড়ে তোমাকে ভুলতে গিয়ে,
তোমাকে নিঃশ্বাসের মতোন কেমন যেনো জাপটে ধরি।


নামাগলির নদীরা
রনি বর্মন

নগর ব্যস্ততার এ জীবনে সন্ধ্যা নেমে এলে-
নাসাগলির নদীরা আরও রূপসী হয়ে ওঠে। রূপবতী সে নদীর পা ক্রমে লম্বা হতে থাকেÑ লম্বা হতে-হতে ভ্রমন পরিক্রমায় বহু দূর বিস্তারের পর, ফিরে আসে পত্রে ।

ঘুরে ঘুরে পাঁকা হাতের সহচর্যে বেড়ে ওঠে
স্বপ্নবাস্তবতার সব রাতগুলো।
যে রাত মেহেদী রাঙানো হাত-
পিপিলিকার ডানা হয়ে উড়েছিলো আকাশে-আকাশে ইচ্ছে ঘুড়ির মতো। সেই হাতের ইশারায় কতো যে মেঘের মৃত্যু লেখা হয়েছিলো, সে হিসাব ধরে রাখে নি কেউই।

২.
ঘোর লাগা ভোরের আগেই চাঙা হয় নামাগলির শেয়ার বাজার। অনুভূতির অংশ ভাগের ব্যস্ততায় রঙিন নদীরা খুঁজে নেয় জীবনের বিকল্প স্বাদ।
সভ্যতার দোকানে তারা, সোনার দামে সাবল বেচে পানির দরে ঘুম কিনে খায়।

সাবল চলতি বাজারের নতুন মূদ্রার নাম।


সারি সারি সাজানো গল্প
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

ট্রেন কোনো স্টেশনে থামলেই গল্পের গন্ধ ছাড়ে
জল গড়িয়ে পড়ার মতো কিছু লোক গল্প কিনতে নামে
যেখানে আলো ভাগ ভাগ হয়ে যায়
ঠাণ্ডাও কেনা থাকে কয়েকজনের
সেখানে তো পায়ে পায়ে গল্প

গল্পেরও আবার কতরকমের ছিরি
এক একটা বাড়ি তো উঁচু হয়েই যায়
ডাকলেও ফিরে তাকায় না
ছাদে উঠে চারপাশে পিঁপড়ে দেখেও শান্তি নেই

কেউ কেউ তো গল্পে বাড়িই পায় না
বাড়ির সংজ্ঞা জেনে উদাহরণ খুঁজে পাওয়াই দায়
ছড়ানো আলোতেই তারা আসন পেতে বসে

কিন্তু এ ট্রেন তো থামতেই চায় না
ভেতরের আলমারিতেই সারি সারি
সাজানো থাকে যাবতীয় গল্প
বাইরে থেকে দেখাও যায় না তাদের
গল্প তো আর সবাই চায় না
যারা চায় আলমারি খুলে দেখে নিতে বাধা নেই

চোখ আকাশে উঠে যায়
আমরা থেমে থেমে লোক দেখে দেখে গল্প বানাই

আর
গল্প শুনি
কত কাল আগে গল্প তৈরি করে
সাজিয়ে রাখা আছে
প্রয়োজনে যে কেউ পেড়ে নিয়ে
পড়ে নেবে গল্প ।


বিষাদের অনুবাদ
আরিফুর রহমান  

বিষাদের অনুবাদে পুষ্প ফোটাতে পারতেন আব্বা!
তখন, দাম্পত্যে
পা দিয়েই বুঝ্ছিলেন পিছল পাথর!
ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন।

সেলাই যন্ত্রের চাকা ঘুরাইয়া নতুন সংসার
আগাইয়া নেয়া শিখ্ছিলেন একদিন।
সেই থেকে শত বিষাদও
হা হা! হাসিতে উড়াইয়া দিতেন
ছড়াতেন কড়া রঙের পুষ্প হাসি!
মঞ্চের জাঁদরেল অভিনেতা যে!   

প্রত্যেক শীতে প্রাইমারির মাঠে নামতো নাটক
অন্তত দশটা গ্রাম বিষ্ময় ভরে দেখতো
আব্বার মঞ্চ কাঁপানো অভিনয় 'হা হা হা!
জীবন, তুমি যতোই রঙ পাল্টাও
পথে নাও মোড়, কষ্ট দাও, দাও শত যন্ত্রণা!
আমিই জিতবো শেষে।
প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে গেড়ে দেবো
বিজয় রঙের পতাকা। ...হা হা হা!'

আমি এখনও
পুব পাড়ার কাদের পাগলার কাছে
হো হো হা হা-র ছেলে!       


অলৌকিক রাজহাঁস                                                                                                                               কাজী রুপাই

চিরুনীর চিবোক থেকে ঘ্রাণ নিচ্ছি তোমার
চুলের দুর্বোধ্যতার।পরিত্যক্ত রুমালের নগ্নতা থেকে নিচ্ছি কুদরতিময় আধ্যাত্মিক নুন;

তোমার অগ্রন্থিত ঠোঁটের মহড়া থেকে নিচ্ছি
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার পরিপূর্ণ রণ-কৌশল আর স্তনের একাগ্রতায় উনোনের খড়কুটো পুড়া শব্দের জাগতিক বুদবুদ অথবা বিশ্ব পেক্ষাপট

তোমার ঐশ্বরিক যোনিগৃহ থেকে নিচ্ছি এক লক্ষ চৌরাশি হাজার প্রজাপতির মায়াবী রহস্য নাভিশ্বাসের স্ফীত ডানার আত্মাবিশ্বাস আর
সুদীর্ঘ জিরাফের স্বম্ভাবনাময় দার্শনিক রক্তবীজ

পৃথিবীর ভিতরে আটকে আছে মানুষ;মানুষের ভিতরে পৃথিবী। আর ধ্বনি প্রতিধ্বনির গতির ভিতরেই ডুবে থাকে একটি অলৌকিক রাজহাঁস



অতৃপ্তি দেখিবার বেদনা
রেজাউল রেজা

তৃতীয় নয়নে তোমাকে দেখিবার চেষ্টা করিয়া যাই কিন্তু আবছা দেখিতে পাই।
দেখিব কেমনে-কখনও যে নয়নে নয়ন রাখিয়া দেখা হয় নাই।
হৃদয়ের দেওয়ালে কল্পনার রং তুলিতে তোমাকে আঁকিতে চাই
আঁকিতে গিয়া বার বার আটকিয়া যাই
কোথায় লাল কোথায় হলুদ কিংবা কোথায় কৃষ্ণবর্ণ লাগাইতে হইবে তাহা ঠাহর করিতে নাহি পাই।
কখনও কখনও তোমার চুলের গন্ধ অনুভব করিবার চেষ্টা করিয়াও ব্যর্থ হইয়া যাই।
কারণ একটাই-আজ অবধি তোমায় আ-তৃপ্তি দেখিবার সৌভাগ্য হয় নাই।


তুমি লেটার বক্সে
সজল কুমার টিকাদার

তুমি লেটার বক্সে
গোটা গোটা অক্ষরে লেখা
আমি চিঠিটি রেখে দিলাম।

বাইরে এবার ডানার মত রোদ
কিংবা পাথুরে মেঘ যা-ই আসুক
আমার কিছু যায় আসে না।

এখন চাষির মত অপেক্ষা, দেখি
কবে ডাক দেয়
কাক্সিক্ষত ফসল-সোনা!

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট