সাময়িক ব্লক



সাময়িক ব্লক
ইয়াকুব শাহরিয়ার

নীলা আজকেসহ আমাকে ফেসবুকে পাঁচশ বার হবে ব্লক করলো। খুব সামান্য ব্যাপারে এমনটা হয়। পরে নিজে থেকেই আবার ব্লক খুলে দেয়। এবার আর সেটা হবে বলে মনে হচ্ছেনা। অন্যান্যবার আমি কল দিয়ে বুঝিয়ে বলি তারপর ব্লক খুলে। এবার তার উল্টোটা করেছি। তার ফোন নাম্বারটাই আমার ফোনবুক থেকে ডিলিট করে দিয়েছি। নীলা আমার তিন বছরের জুনিয়র। অনার্স ২য় বর্ষে ইকোনোমিক্সে পড়ে। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে। ইন্টারমিডিয়েটের ২য় বর্ষে পড়ার সময় আচমকা পরিচয় হয়ে প্রেম। তাই হয়তো ইমোশান খুব একটা কাজ করে না। সম্ভবত হঠাৎ করে হয়ে যাওয়া প্রেমে ইমোশান কমই থাকে।

সুনামগঞ্জের পথঘাট আমার চেয়ে ভালোই চিনে নীলা। কলেজ রোডে তাদের বাসা হওয়ায় ওদিকটায় তার সাথে খুব একটা সময় কাটানো হয়নি। ইদানিং দেখা করবার জন্য খুব চাপ দিচ্ছিলো। আমি যাবো যাবো করে অনেকটা সময় পার করে দিয়েছি। আর না যেয়ে পারছিই না। যেতেই হবে। না হলে ব্যাকআপ। ব্যাকআপ শব্দটা তার কাছে পান্তাভাতের মতো। যখন তখন বলে ফেলে। যেনো কিছুই না ব্যাপারটা। আমাকে মেনটেন করে চলতে হয়। যখন মাথা ঠান্ডা হয় তখন বলে- ‘আমু, আমি তোমার সোনাবউ না? আমাকে বিয়ে করবানা? বিয়ের পরেও এসব করবো, তোমাকে কিন্তু মেনটেন করে চলতে হবে। আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলছি, তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।’ অনেকবার এসব বলে কেঁদেছে। আমিও খুব ভালবাসি নীলাকে। সুন্দরী বলতে যা যা গুণ থাকা দরকার সবটাই ওর আছে। আমার কালো চেহারায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থাকবে সেটাই পছন্দ ওর। একটু লম্বা হলেও চলবে। দেখতে কবি সাহিত্যিকদের মতো লাগবে। তবে লেখালেখি করি একদমই চায় না। কবিতা নীলার কাছে সতীনের মতো। এর কারণ জানিনা।

ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজের জন্য আগের দিন রেডি করা একটা আর্টিক্যাল লিখে শেষ করেই বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য হালুয়ারঘাটের সুরমাভ্যালিতে। নীলা সেখানেই আসবে। হাছননগরের বাসা থেকে বেরিয়ে আমাকে কল দিয়ে জানিয়েছে। একটা ছেলে বন্ধুও যাবে ওর সাথে। সাহেদ। দু’জন একসাথে দেখা করে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে বলল ‘ডব ধৎব ৎবধপযবফ যবৎব.’ আমিও গতি বাড়াই। নিজের কালো রঙের বাইকে করে দ্রুত পৌঁছে যাই সুরমাভ্যালিতে।

ইচ্ছে করেই গেইটের বাইরে বাইক লক করে রেখে দ্রুত চলে যাই ভিতরে। সেখানে গিয়ে চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছি না যে এটা কেমন করে হয়। চোখ কচলাতে শুরু করলাম। ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে দেখলাম। না, যা দেখছি তা সত্যিই। নীলা সাহেদের হাত ধরে হাটছে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের মতো। সমস্ত শরীর ঘামতে থাকে। দ্রুত ছোটে যাওয়াতে যে এমনটা দেখতে হবে তা কোনো ভাবেই মানতে পারছিলাম না। ভীষণ ভালোবাসি নীলাকে। তাকে কখনোই হারাতে না চাওয়ার ভয়টাই আমার সমস্ত শরীরে কাঁপুনী ধরিয়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা ভীষণ দুর্বিষহ ছিলো। শরীর ভীষণভাবে কাঁপছে। মানতে পারছি না। বিড়বিড় বলতে লাগলাম, না এমনটা হতে পারে না। হতে পারে না। আমি ভুল দেখছি। নীলা আমার সাথে এমনটা করতে পারে না। শরীরের এমন কাঁপুনী ও বিড়বিড়ানিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় শাওনের। আমু, এ্যাই আমু! বলে ডাকতে লাগলো শাওন। শাওন আমার রুমমেট। একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে সে। তার ডাকে আমি থতমত খেয়ে চোখখোলি। সব কিছু চিমচাম। আবচা আলো রুমের মধ্যে। আমার মুখের উপর শাওনের চ্যাপ্টা মুখ। হাত দিয়ে ঠেলে তাকে সরালাম। উঠে বসার পর বুঝতে পারলাম যে, স্বপ্ন দেখেছি।

ঘুম ঘুম চোখে ফোন হাতে নেই। ম্যাসেঞ্জারে কতকিছু লিখে নীলার অনেকটা ম্যাসেজ। বিশটার বেশি কলও দিয়েছিলো। ড্যাটা অফ করে ফোন সাইলেন্ট মুডে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন নক করতে যাবো তখন দেখি আমি ব্লক্ড। ফোনেও কন্টিউ বিজি...


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট