বিজয়ের পদাবলি : ০১





 দেশ
কাদের চৌধুরী

এ কেমন দেশ, যেখানে রুগ্ন নদীর স্তনে মায়ের কবরে
ফনী মনসার মত ভেদ করে উঠছে বহুতল শহর।
এ কেমন দেশ, মূর্খ মোল্লা ধূর্ত পুরোহিত
অস্পৃশ্য আমলা, ছিচকে রাজনীতিক, সরকারী সাহিত্যিক
তৃতীয় শ্রেণীর অধ্যাপক, বেকার সাংবাদিক
দিনে দুপুরে গড়ছে অনৈতিকতার নহর।

হারামখোর পিতার অনুমতি নিয়েই।
এ কেমন দেশ, জন্মের আগেই নিস্পাপী মৃত্যুর মহড়া
এ কেমন দেশ, বাপের হাতে মেয়ে ধর্ষিতা
ছেলের হাতে বৌ’য়ের হাতে বৃদ্ধা মা লাঞ্ছিতা
রাষ্ট্রের অগ্নিচোখে একাত্তরের নাগরিকরা দিশেহারা।

এ কেমন দেশ, যেখানে মুক্তবুদ্ধির প্রাণীরা বিকলাঙ্গ বা বোকা
হিটলারের নিঃশ্বাসে যুক্তির ঝর্না স্তব্ধ
বিবেকের তৃণভূমি যেন বধ্যভূমি,
বিশ কোটি মানুষ যেন ঝিঁঝিঁপোকা।

এ কেমন দেশ, যেখানে আকাশ আজ পরাধীন
মানুষ হাঁস মোরগ গাছ মাছ মৌমাছি সবাই পরাধীন
ম্যানুয়ালি বা ডিজিটালি।
নদী শুষিত
হাওড় হজম
বায়ু বিকৃত
পাহাড় পেটে
তা দেখে,
এমন বাঘ নেই, হুঙ্কার দেবে: ‘এবারের সংগ্রাম...’
কোন বেত্তমিজ কবিও নেই, লিখবে: ‘এখন যৌবন যার ...’
কিংবা,  ‘সুখ দে হারামজাদা ...’ ।

মনোযোগ দিয়ে দেখুন -
মনুষ্যত্ব নিখোঁজ বা খুন।
উপর থাকে নীচে।
সুখ কোথায় আছে?
উন্নয়নের কাছে? 

গাঁও-গেরাম শহর-বন্দর মাঠ-ঘাট নদী পাহাড়
এ সবই এখন এক জাতীয় কারাগার ।
গন-দাসত্বের চিৎকার যেন দেশাত্মায় নিমজ্জিত আদর্শ।
এ দেশে ব্যবসায়ীক ধর্মশালা এখন ধর্ষণশালা
শিশুর শেষ নিঃশ্বাস, মেধাবী তরুনের রক্তাক্ত কান্না
ধর্ষিতার চিৎকার বধিরের কাছে বিপ্লবী প্রার্থনা
ঈশ্বরপিতা উৎখাতের প্রার্থনা
সমাজপিতা উৎখাতের প্রার্থনা
কে শুনবে যার তার প্রার্থনা ?
এ দেশে, জগৎপিতার কোষে কোষে অসভ্য চেতনা ।
একাত্তরের ধ্বংসাবশেষে ।


বিজয় তোরণ
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা

হে
অগ্রহায়ণ,
করেছি বরণ
শিশির ভেজায় চরণ
ডিসেম্বরের বিজয় তোরণ
লাল সবুজে বাঁচি দীপ্ত চেতনায়।
টুপ্টাপ্ শেফালী ঝরে এই নিরালায়
খেঁজুরের রসের গন্ধ পাই পূবের জানালায়
কুয়াশায় সোনালী রোদ উঁকি দেয় অবলীলায়!
আমারা বাঁধা পড়েছি আমৃত্যু দায়ে, প্রজন্মের ঋণে;
লক্ষ শহীদের রক্তে উষ্ণতায় নিয়েছি এ স্বদেশকে  চিনে
ভাসাই এবার আশার ঘুড়ি এমনি এক স্বপ্নময়  দিনে
লালিত স্বপ্ন সুখের আবেশ ছড়ায় মনের গহীনে
তাই বাঁচি দেশপ্রেমের আনন্দ অশ্রু জলে,
বিজয়ের আলেখ্য ঐ জনতার ঢলে!
অস্তিত্ত্বের চিহ্ন রয় এই ধরাতলে
সবাই পায়ে পায়ে চলে।
এদেশের  স্বরূপ,
কি অপরূপ
রে!



দুর্গম পথের যাত্রী
পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী

কাকে নিয়ে স্তুতি-গান, কার আজ শুনি জয়ধ্বনি
উপাস্য দেবতা কে সে, কার ধ্যান করছে ধরণী
কার কাছে নত বিশ্ব, মহাবিশ্ব, অজানা প্রকৃতি
এত গর্ব অর্জিছে কে, পেয়েছে কে দুর্জয় স্বীকৃতি
দিগি¦জয় কে  করেছে-এ যুগ চায় আজ কাকে?
দুর্গম পথের যাত্রী বলি তাকে।

এক এক করে চালাচ্ছে কে, দুঃসাহসী  মহাভিযান
কে সে আজ উড়ে চলছে, সৃষ্টি করে মহাকাশযান
নতুন নতুন পথ করে ছুটতেছে কে, কিছু অন্বেষণে
এভারেস্টে যাচ্ছে কে সে, যাচ্ছে কে সে সাগর লঙ্ঘনে
আঘাত হানছে বুকে বার বার রহস্যকে কে?
দুর্গম পথের যাত্রী বলি তাকে।

ভয়হীন বীর কে সে, কার কাছে মৃত্যু কৌতূহল
জরা,ব্যধি জয় করে, চিকিৎসায় কে আজ সফল
জীবন পশরা নিয়ে, কে সে এলো পৃথিবীর মাঝে
বসুন্ধরা কে সাজাচ্ছে নতুন এবং আধুনিক সাজে
বিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক কলে, দুর্লভ সুলভ করছে কে?
দুর্গম পথের যাত্রী বলি তাকে।

ঝোপঝাড় কেটেছে কে, মেরেছে কে কুসংস্কারে কূপ
জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে কে দিতেছে পৃথিবীরে প্রাত্যহিক রূপ।
মানে না কে শাস্ত্রগ্রন্থ, মানে না কে সামাজিক প্রথা
দুর্দম, দুর্বার বেশে ছুটে চলছে কে সে যথাতথা
অজানাকে জানতে ও অদেখাকে দেখতে যাচ্ছে কে?
দুর্গম পথের যাত্রী বলি তাকে।

স্বর্গের বাগান থেকে কে এনেছে পারিজাত ফুল
জীবনের প্রয়োজনে কার কাছে ধরিত্রী আকুল।
গ্রহ হতে গ্রহান্তরে পাড়ি দিচ্ছে কে সে রোজ রোজ
নতুন নতুন প্রযুক্তিতে কে করছে অমৃতের খোঁজ
দুর্গম পথ সুগম করে অসাধ্যকে সাধন করছে কে?
দুর্গম পথের যাত্রী বলি তাকে।


সভ্যতার মুখোশ
ওহাব মণ্ডল

জিপার খুলে দাঁড়িয়ে মুতে দেয় সভ্যতা।
পতিতার ঠোঁটে সুখ খোঁজে কামুক সমাজ।

তারা সজ্জিত রাত শেষ হয়ে আসে।
স্টেশনের পাগলি গুলোর পোঁয়তি হওয়ার গল্প সমূহ
থেকে যায় অরচিত।

সোডিয়াম বাতির আলোয় ভিজে যাওয়া
পোড়ামাটির রঙ্গমহলে
দৈনিক চলে সভ্যতার সঙ্গম।
কর্পূরের শোকে পৃথিবী শক্ত পাথরে পরিণত হয়েছে।

আমি আদিম!!
দরবার আতরের খুশবোতেই সীমাবদ্ধ
 আমার রোজ জীবন।
     




সোনালী বিজয়
খায়রুল আলম রাজু

কবিতা বা গল্প নয়,
সু-দীর্ঘ উপন্যাস তুমি!
তুমি হৃদয়ের নীল রঙ, আকাশের নীলিমা;
তুমি জ্যোৎস্না মাখা রাত্রি, চাঁদের প্রেয়সী তুমি!
তুমি শীতের সকাল, ভোরের পাখি;
ঘন কুয়াশার চাদরে এক চিলতে হাসি তুমি ।

সোনালী সূর্যোদয়ে তুমি নীলাভ আকাশ:
দিগন্ত মাঠে ‘সবুজ শাড়িতে তুমি কচি ঘাস;
তুমি সুখের বালুচর, সুখের কোষাগার!
তুমি মা, তুমি বাবা, তুমি ভাই, তুমি বোন,
তুমি আমার ‘সোনালী ইতিহাস’;

তুমি রক্ত-আগুন, বুলেট-বোমা,
আর্তনাদ পেরিয়ো, তুমি বিজয়!
‘তুমি আমার লক্ষ ভাইয়ের লাল বৃত্ত’!
সবুজ শাড়ির ঠিক মাঝখানে রক্তের পূর্ণ চাঁদ!
তুমি আমার গর্জে উঠা সোনালি সকাল,
তুমি আমার পতাকা, তুমি আমার সোনালী বিজয়!



স্বাধীনতা
শিরিন আফরোজ

স্বাধীনতা তোমায় পেতে
কতো-কতো-মা যে সন্তান হারা হয়েছিলো!
কতো-কতো-সন্তান মাকে বলে গিয়েছিলো
মা বিদায় দাও, স্বাধীনতা অর্জন করে তবেই ফিরবো,
ফিরেছে কয়জন, ফিরে নাইও কতোজন?
ছেলের শোকে বৃদ্ধ রহিমা চাচী আজো গুমড়ে গুমড়ে কাঁদে,
শফিক চাচা বয়সের ভাড়ে নইয়ে পড়েও সংসার চালাতে দ্বারে দ্বারে কাজ খুঁজে।

স্বাধীনতা তোমায় পেতে
কতো-কতো- নারী হারিয়েছে তাদের ইজ্জত,
হায়েনার লালসার শিকার হয়ে হারিয়েছে প্রাণ, হারিয়েছে মানসম্মান ।
স্বাধীনতা তোমায় পেতে
ঝড়েছিল কতো শতো তাজা প্রাণ,
সে সব প্রাণের বিনিময়ে আসলো স্বাধীনতা,
রক্ষা হলো দেশের মান।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট