প্রচ্ছদগল্প : চশমার পা



চশমার পা
ইব্রাহীম রাসেল

চশমার দুই পায়ের এক পা কে ভেঙেছে এই নিয়ে মেছের মধ্যে হুলস্থুল কা-। মিজান মামা তার খাটে বালিশের পাশে চশমাটা খুলে রেখে গোসলে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে চশমার এই হাল দেখে চিৎকারে পুরো মেছ মাথায় তুললেন। রুমের সবাইকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। বাড়িওয়ালার কাছে নালিশ জানাবেন-কেন এই ধরনের অভদ্র ব্যাচেলরদের তিনি রুম ভাড়া দিয়েছেন? মিজান মামা চেঁচামেচি করেই যাচ্ছেন। রুমের সাবাই স্বাভাবিক যে যার কাজ করছে। তার কথায় কারো কোনো ফিলিংস নেই দেখে তিনি আরো ক্ষেপে গেলেন। চেয়ারের হাতলে ঝুলিয়ে রাখা শার্টটা একটানে তুলে গায়ে ঢুকাতে ঢুকাতে বাড়িওয়ালাকে নালিশ জানাতে ঘটঘট করে বেরিয়ে গেলেন।

খন্দকার বাড়ির মেছের সবচেয়ে সিনিয়র মেম্বর মিজান মামা। মধ্যবয়স্ক। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে আছেন। লোকটার সারা অঙ্গজুড়ে সীমাহীন ব্যস্ততা। কাজে অকাজে তার ব্যস্ততার শেষ নেই। এতো ব্যস্ততা যে বিয়ে করার সময়টুকুও বের করতে পারেন নি। এই নিয়ে রুমবাসীরা প্রায়ই হাসি-ঠাট্টা করে। যদিও মিজান মামার অগোচরে। কারণ তার সামনে করলে চিৎকার করে মেছ বাড়ি মাথায় তুলবেন সেটা সবার জানা।

তিনবার কলবেল চাপার পর মুখে ব্রাশ নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে দরজা খুললেন বাড়িওয়ালা। মিজান মামাকে দেখে বললেন-কী ব্যাপার মিজান সাহেব, এতো সকাল-সকাল! মিজান মামার মাথাতো হট হয়ে আছে। তিনি চড়া কণ্ঠেই বললেন-কী ধরনের ছেলেপেলের কাছে রুম ভাড়া দেন? আপনার টাকার কী খুবই অভাব। বাদ-বিচার নাই, যতসব অভদ্র পোলাপানরে রুম ভাড়া দিয়া রাখছেন?

মিজান মামা যতটাই চড়া, বাড়িওয়ালা ততটাই কোমল সুরে টেনে টেনে বললেন-মিজান সাহেব, আগে তো বলবেন ঘটনাটা কী ঘটেছে? মিজান মামা চশমার ভাঙা পা দেখিয়ে বললেন- দেখুন, সকাল সকাল কী অঘটন ঘটিয়েছে। বাড়িওয়ালা বাসার ভিতর মুখ বাড়িয়ে তার ছোট ছেলেকে ডাকলেন। ছোট ছেলে দেয়াল ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে মিজান মামার সামনে এসে দাঁড়াল। তার পায়ে ব্যান্ডজ। বাড়িওয়ালা বললেন-এক সপ্তাহ আগে দুই ভাই খেলতে খেলতে বড়টার ধাক্কায় পরে গিয়ে এই অবস্থা।এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, কই আপনি কী কিছু টের পেয়েছেন? হইহুল্লোড়? চেঁচামেচি? আপনি এসেছেন একটা চশমার পা নিয়ে নালিশ জানাতে! আপনি তো সবচেয়ে সিনিয়র মেম্বর। আপনাকে তো সবার রেসপেক্ট করার কথা। কেন করছে না বুঝতে পারছেন কিছু?

যতটা উত্তেজিত হয়ে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন মিজান মামা তার তিনগুণ শীতল হয়ে রুমে ফিরলেন। রুমবাসীকে উদ্দেশ্য করে বললেন-তোমরা হয়তো কেউ ইচ্ছে করে চশমার পা ভাঙোনি। আমি আসলে দুঃখিত এমন আচরণের জন্য। রুমবাসী তো বিস্ময়ে হা... একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। ফিসফিস করে বলছে-কী ব্যাপার! মামার হঠাৎ এই পরিবর্তন!
পরেরদিন রাতে মিজান মামা অফিস থেকে ফিরে নিজের খাটে বালিশের পাশে অবিকল তার চশমার মতো একটা নতুন চশমা দেখে অবাক। রুমবাসীকে দেখিয়ে বললেন-এটা কার? রুমবাসী সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলল-মামা এটা আপনার। সবাই মিলে আপনার জন্য এই সামান্য উপহার। মিজান মামা আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। গড়গড় করে বলতে লাগলেন-না, না, কি দরকার ছিল? তোমরা আমার ছোটো ভাই, ভুল করে চশমার একটা পা না হয় ভেঙেই ফেলেছ। কেন আবার তোমরা কিনতে গেলে। তোমরা আর কয় টাকাই ইনকাম করো। এসব না করলেও পারতে ইত্যাদি ইত্যাদি......


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট