কোন আলো লাগল চোখে...



কোন আলো লাগল চোখে... 
আহাদ আদনান

ভালোই তো ছিলাম। নিজের মত করে সাজানো পৃথিবী । তাতে সারাটা দিন উথালপাতাল  সাঁতার। অবশ্য দিন রাতের ব্যাপারটাই ছিল না। মন্দ ছিলাম না। খাওয়ার চিন্তা নেই, ঘুমের চিন্তা নেই, কোন দুঃখ নেই (সমান্তরালে কোন সুখও নেই)। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, ক্লান্তি শব্দগুলোই ছিলনা অভিধানে। কোন অভিধানই ছিলনা হয়ত।
আমার দৃষ্টি শক্তিও ছিলনা সেই দিনগুলোতে। চোখ দুটো ছিল বুঁজে। তার নিচেই যে নাসিকা, তার কাজও ছিল অজানা। বুকটার ধুকধুকানি ছিল অবশ্য। সেই বন্ধ চোখ দিয়েই অনুভব করতাম আমার আকাশ। আমার ছোট্ট পৃথিবীতে ছোট্ট একটা আকাশ। শুধু আমারই আকাশ। সেই প্রিয় আকাশটার রং আমি কখনো দেখিনি। তাতে মেঘ জমে কিনা, আঁধার করে রাত জাঁকিয়ে বসে কিনা, সেই রাতের আকাশে মিটিমিটি তারারা জ্বলে কিনা, আমি কিছুই জানিনা। তবু সেই আমার সব।
আমার পৃথিবীটাতে পুরো চার ভাগই পানি। সেই পানি ছিল একেবারেই নিন্তরঙ্গ। কখনো সেই শান্ত পানিতে খেলতে খেলতে ইচ্ছে মত পা ছুড়তাম। আর সাথে সাথে খুব কাছের কোনস্থান থেকে অনেক যন্ত্রণা মেশানো ‘উহ!’ শব্দ ভেসে আসত। কে করত সেই হৃদয় চেরা ‘উহ’ ? আমার এত সুন্দর পৃথিবীটাকে এত যতেœ কেইবা আগলে রেখেছিল। আজ অবশ্য সব জানি। ‘যে আমাকে চিরকাল ভালবেসেছে, অথচ যার মুখ আমি কোনদিন দেখিনি...’
সেই পৃথিবীটা একসময় মনে হল ছোট হয়ে আসছে। আমিও বড় হচ্ছি, আবার পানিও কমে আসছে। অমৃতে অরুচি বলে একটা কথা আছে। আমারও কি নতুন কোন ভুবনে যেতে ইচ্ছে করেনি? কে যেন কানে ‘স্বপনপারের ডাক’ দিয়ে গেল। হঠাৎ একদিন খুব কষ্ট শুরু হল। পৃথিবীটার বাইরে খুব হৈচৈ হচ্ছিল। কারা যেন ছুরি কাঁচি নিয়ে আমার প্রিয় আকাশটাকে বিদীর্ণ করে দিল। গলগল করে পানিগুলো বেড়িয়ে গেল। সেই স্বপনপারের লোকেরা আমাকে টেনে বের করল। আমি চিৎকার করে উঠলাম। আমার বুকটা শ্বাস নেওয়া শুরু করল। অসহ্য সুন্দর আলোয় আমি তাকাতে পারছিলাম না। এরপর পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলাম আমার ‘স্বপনপুর’। আমার প্রথম দেখা নতুন ভুবন।

সেই প্রথম দেখা ‘স্বপনপুর’ আজ আমার নির্মম বাস্তবতায় মোড়া দৈনন্দিন পৃথিবী।

মাতুয়াইল, ঢাকা।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট