ভালোবাসাবাসির পদাবলি : ০১











পাথর ও পরবাসী বাতাসের ঘ্রাণ
রাবাত রেজা নূর

পাথরের গায়ে লিখে রাখি পরবাসী বাতাসের ঘ্রাণ।
কংক্রিট ভেবে গায়ে জমা শ্যাওলা খেতে আসে আসে শহুরে পুটির ঝাঁক।
শামুকের মত খোলস খুলি খুব সন্তর্পণে।

উপরে আকাশ নীল; দূর পরবাসে ঘর বেধেছে বঁধুয়া। একলা অচঞ্চল।
পরবাসী বাতাস রে!
পাথরের ঘ্রাণ নিয়ে যাও; বিলিয়ে দিও তার আঙিনা জুড়ে। কোমল ঘাসের ভেতর যেন সে বুঝতে না পারে।

উপরে চাঁদের আলোয় বুক ভেসে যায়; দূর পরবাসে বঁধুয়ার ঘর।
পরবাসী বাতাস রে
নিত্য যার জন্য পরাণ কাঁদে; বুঝেনা সে; এতোটা পাষাণ হৃদয়; নিদারুণ পর।

পাথরের বুকেও প্রেম থাকে ঝিনুকের পেটে মুক্তার মত। কোনো ডুবুরি নেয়না সে খোঁজ তাই সেই প্রেম বুঝে নাকো কেউ।

পরবাসী বাতাসের ঘ্রাণ তাকে বলে দিও
বঁধুয়া; ভালোবাসি রে।



অর্চিতা
রাহুল বসু

সকল সম্পর্ক চ্যুতিয়ে তোমার আদিমরুপ খুঁজিতে বাহিরেছি একা
অজ্ঞেয়, অবোধ-নাঃ তুমি ত করনি উপহাস
নিচ্ছিদ্র, অভেদ্য, দুরূহ
আলো আঁধারির প্রবৃত্তি
আজ তা প্রতিভাত।
ক্লেদাক্ত তোমার ক্ষেত্র
ক্রোড় কীটের ক্রঁদ
এক ফোঁটা শান্তি নেই কোথাও!

আমি হতাশার গাঙে গা ভাসিয়েছি
সেখানে শতাধিক মৎসকুমারীদের সংস্পর্শে- আমার আসঞ্জক, পঙ্কিল চুল
তাঁহারা নিয়ে গেছে তাঁহাদের কোটরে আমায়
হ্যাঁ আমি পেয়েছি সে সান্নিধ্যতা
শতকপাট হয়েছে বুজ্জ।
আমার সহবাস- হতাশা
অর্চিতা তুমি অধুনাবিস্মৃত।



শাড়ীর আঁচলে প্রেমের পতাকা
শাহিন আলম

তুমি কতো দূরে যাবে মেয়ে
কোন সীমানার ওপারে বাঁধবে ঘর
আমি প্রতিটি সীমান্তে দেবো পাহারা
আমার নির্ঘুম চোখ
তারকাটার প্রাচীর টপকিয়ে
তোমার মনের জানালায় দেবে উঁকি।

আমার কবিতারা তোমার পড়ার টেবিলে
বালিশের ভাঁজে চুলের খোঁপায়
আদর করে জড়িয়ে রাখা তোমার কাঁথায়
লিখে দেবে আমার নাম।

তুমি যতো দুরে যাবে মেয়ে
আমার ভালোবাসা বাতাস হয়ে
ছুঁয়ে দেবে তোমার ঠোঁট
তোমার শাড়ীর আঁচলে প্রেমের পতাকা দেবে উড়িয়ে।
তুমি যতো দুরে যাও
তোমার আকাশে উড়বে আমার স্বপ্নের পাখি।


আমাদের অমরাবতী হওয়া 
লাবন্য শাহিদা

আসলে ভালবেসে অমরাবতী হয়ে যায় আমরা!
তোমার চোখে এত অদেখা
আমি ক্রমশ অভিভূত ছিলাম।
এক লহমা আসমানি রঙ
আর ভালবাসা মিশানো হাতের স্পর্শ।

আচ্ছা, সেবার বুঝেছিলে?
যখন ‘কথোপকথন’ থেকে শুভঙ্কর আর নন্দিনীকে
টেনে আনছিলাম বাতিঘরের ওই কোণার দিকটাই
পরমুহূর্তে আড়চোখে তাকিয়ে দেখি,
তুমি ভেসে যাচ্ছো আমার কণ্টদেশে এক লোকমা তিলের গহবরে!

আমাদের উত্তপ্ত এ প্রেমের প্রহরে কোনো এক সকাল বেলার প্রাতঃরাশে,
পুরো শহরকে চরকির মত ঘুরিয়ে নিলাম
প্রথম প্রহরের আবেশে!

বরারব লেগেই থাকে খুনসুটি আর চোখের দারুন নিলিপ্ততা,
এক সমগ্র জীবন কেটে দেওয়ার পরে ও মানুষ হয়তো এত কথায় ভরে উঠে না
যতটা আমাদের চাহনি জুড়ে মেখে কয় কথা!

আমি সারাজীবন সেই সূর্যমুখীর লোভেই কিন্তু হাত ধরে রইব আজীবন তোমার,
যেমন করে অলিন্দে রেখে সূর্যমুখী এনেছিলে প্রথম দেখাতে।
কোনোদিন যদি ভুলে যাও তবে জোনাকি গুলো চোখ থেকে বের করে,
চুবিয়ে দেব তোমার ওই আজলা ভরে!

কারন, আমি পারিনি তোমার ভালবাসার নীড় পিশে
হতে প্রতিবেশি!
তাই আমরা ছায়া হয়ে ঘুরে বেড়ায়
যেখানে আমার হাতের মুঠোয় ব্যাপ্তি,
আমি ঘুরে যাব হাত ধরে ওই নিলয়ে
এ শহরের শেষ সীমানা অব্দি,
এক টুকরো,
অমরাবতী হওয়ার নেশায়!


পুরানো প্রেমিক
লুৎফর রহমান রবি

আমি তোমাকে আবার নতুন করে ভালবাসতে চাই।
ধীরে ধীরে নিঃশব্দে, আবার তোমার হৃদয়ের গহীণ কোনের যায়াগাটায় এসে বসতে চাই।
বলতে চাই, “ভালোবাসি”।

আমি তোমার আধখাওয়া আপেলে কামড় বসিয়ে জানান দিতে চাই, আমার ভালোবাসার গভীরতা।
তোমাকে আমি ভালবাসার পাহাড়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
ঐ ঝরনার মতো, আমার ভালোবাসা সর্বদা, তোমাকে ছোঁয়ে থাকবে, জড়িয়ে রাখবে তোমাকে বুকের মাঝে।
কলকল শব্দে তোমাকে গান শুনিয়ে যাব অহর্ণিশ।

আমি তোমাকে আবার আমার করতে চাই।
ভালবাসতে চাই, আগলে রাখতে চাই, মন খারাপ হলে তোমার কাঁধে মাথা রাখতে চাই
শক্ত করে আমার বুকে ঝাপটে ধরে রাখতে চাই, বলতে চাই,“ভালবাসি”।




ক্রসবা লেগে চোখ ফেরে
শরীফ সাথী

একই পথে আসা যাওয়া করি।
লোক শূন্য ফাঁকা ফিল্ড পেয়েও গোল করতে পারিনা।
তোমার দুচোখের রাঙা ঝাল চাহনি
ঠিক যেন ক্রসবারে লেগে চোখ ফিরে আসে
মন ছুঁতে পারেনা, বারবার প্রায়ই এমন হয়।
সব জঞ্জাল ক্যারি করেও গোল দিতে পারিনা।
স্বপ্নে দেখা আইটেমগুলো ধুলোয় মিশে যায়।
এই মন, এই চোখ গোল পোষ্টে রাখতে গিয়েও
দু’হাত বাড়ানো, ঠোঁটের মুচকি হাসি, মায়াবী চাহনি
না থাকায় ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে।










শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট