পদাবলি : ০৩



প্রেমিকার প্রতি
মিসির হাছনাইন 

ক্ষুধার্ত বিকেলের পেট থেকে
যে কিশোরী বসন্ত বেরোয়-
একটা গাছ খুব নীরবে কেঁদে উঠে
আকাশে জবাফুল নাচে
ঈশ্বরকে আপন মনে হয়
চোখের ভিতরে একশ তেইশটা নদী নিয়ে,
গান গাই উড়ে আসা বৃষ্টির
নিজকে খুঁজতে থাকি তোমার ভেতর;
তুমি সন্ধ্যাতারার মতো ঘুমিয়ে যাও
ঘাসের ভেতর;
মাঝরাতে রাখালের বাঁশি হয়ে
শিশির, তোমার সাথে সঙ্গম করি
নিজকে গাছের ফুল মনে হয়
মনে রেখো, বেঁচে আছি তোমার ভেতর।



অবিশ্বাসের কয়েদখানা
এনাম রাজু

বিশ্বাস হারিয়ে মানুষ পরিণত লাশে...

ক্রমেই অবিশ্বাসীর দখলদার হচ্ছি
গতোকাল প্রেমিকার ঠোঁট দেখে কেঁপেছে হৃদয়
দূরত্বে আছি যতোটুকু থাকা যায়।

পাশের রুমে শুইয়ে কাঁশি দিচ্ছে মা
তার পাশে শুইয়ে পোষা বিড়াল
আমি নেই আমার যাওয়া নিষেধ!

আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারি না,
হাতকে বিশ্বাস করতে পারি না
বন্ধ দরজার হাতলটাকে অবিশ্বাস করে
দু কদম এগিয়ে বাইরের আলো দেখি না
নিরুপায় হয়ে পড়ে থাকি বিছানায়,
বিছানাকে সরিয়ে দেই অবিশ্বাসের দোলনায়।

আমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারি না
তাই ছুঁইয়ে দেখি না আমার হৃদয়
যেনো অবিশ্বাসে ধোঁকায় বন্দী হয়ে
লাথি মেরেছি ঈশ্বরের কলিজায়!

হায় এতো মহাপাপ! আমি বিশ্বাস করি না আজ
 যাবতীয় বস্তুর প্রাচূর্য বৈভব, করুণা, প্রণয়।



তোকে আমি ভুলবোনা কোনোদিন
শম্পা মনিমা

আপ্রাণ উষ্ণতা মুড়ে হাসিতে তুই ফিরে আসছিস
সফেন বালি থেকে, বেলোয়ারি দিন

ঘাম মোছা শহরের শহীদ মিনারে ঠোঁটের কোণে ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠুনকো হয়ে ওঠা হাইফেনের মিঠে সময় তর্জনীতে জলন্ত স্পর্শ কাছাকাছি আসতে চায়, সর্বহারার স্বাদটা ধুলোবালির দাম দিয়ে কিনলাম। ধুসর আত্মীয়তা জড়ানো মাফলারে রয়েছে শেষবেলার শীত। ফিকে হচ্ছে উঠোন, জেটিঘাট, একলা পথ, মাঠের কান্না, বরফের কুচির মতো বিষাদ থরে থরে সাজানো অস্তিত্ব সন্ধ্যের মরশুমী প্রনয়। বসন্তের আজান উদাসী লগ্নে কানে আসে, জলের ছায়া আরো গভীর হয় অভিমান করে,  আমি খুঁজি বিচ্ছেদের আড়াল অমিতাক্ষর ছন্দে, মায়াছোঁয়া ধূপের গন্ধে, পাতা ঝরার ভালোবাসার ঋতুতে।
মুহূর্তের সোমলতাহীন চাঁদে বিরোধিতা খুলে বিজনে মেলে হাত, নেই সেখানে কান্না চোখ মোছার নক্ষত্রের হাত।

এই বেলায় থেমে থাক, এতটুকু থেমে থাক যাযাবরের মধুমাস।



নদীজাত
সাদিক তাজিন

আমার আঁকা নদীগুলো শুধু বাঁকা’ই হয়না বরং জিলাপির প্যাঁচে ভাঙে ভুমি ও নদীর জ্যামিতি। দুর্যোগ ছাড়াই কিছুদূর ঘুরেফিরে পাল্টায় গতিপথ। তবুও কোন ভাঙন নয়, খরস্রোত নয় যেন সে ম্যাগনেটাইট মোড়কে সুরক্ষিত পাকস্থলী। বৈরাগীর ভারত থেকে বুকের বাংলাদেশে ঢুকে ঠিকই কিন্তু চিরন্তন সমুদ্রে আর পৌছায় না। অথবা কে জানে এই নদীগুলোর মৌলিক ভাব; সমুদ্রস্বভাব বলে কিছু নাই।


অবসর যাপিত জীবন
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ

উঠোন আর ঘর
শুয়ে বসে কাটে সারাদিন।

কত দিন হলো...
ফুলের টবগুলোর মাটি
চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে অপলক চেয়ে আছে। একটু জলের আশায়।

চোখ পড়ে অবসরে...
মৃদ পায়ে হাটি জল হাতে। গোলাপ কামিনী গন্ধরাজ বাগান বিলাসী গোড়ায়।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট