পদাবলি : ০২



আড়াল
দিপংকর ইমন 

তোমায় খুব ভালোবাসি প্রিয়তমা। সংসারে খুব টানাপোড়েন ছিলো। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে গিয়েছে কতবার। তবুও ভালোবাসার কমতি ছিলো না কোন কালেই। আজ তুমি শরীরে ক্যান্সার পোষছো। আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছো। তবুও তোমায় খুব ভালোবাসি। বাসবো আজীবন।
তোমাকে ভালোবাসার জন্য সংসারে তোমার উপস্থিতিটা কি  খুব প্রয়োজন? লোকে ভুল বলে। চোখের আড়াল হলেই পৃথিবীর সবকিছুই মনের আড়াল হয়ে যায় না।


নিঃশ্বাসে ঘ্রাণ পাই 
মজনু মিয়া 

জানালার পাশে বসে আছি, মিষ্টি রোদ
এ ঘর থেকে ও ঘর যায়
ভেসে আসে ঘ্রাণ, প্রতিনিয়ত যে ঘ্রাণ পাই।
বাম পাশের বালিশে হাত পড়তেই
আলতো ছোঁয়ায় জড়ায় বুকে, সেই ঘ্রাণ
উষ্ণ ভালোবাসায় লেপটে থাকে অঙ্গে।
শ্বাস প্রশ্বাসে আমার ভেতরে যায় যে ঘ্রাণ;
আসলে তুমি, নিঃশ্বাসের সাথে মিশে আছ।


জলরঙে জীবনের আঁক
ফজলুর রহমান

এই দোআঁশ মাটি, পল্লবিত আকাশমনির ডাল;
আর বালুবেলার চাপাখিরা জানে না কোন চাঁদকে দেখে দেখে আমার চন্দ্রমুখী রাত কাটে।
টানা বারান্দায় যে রোদ দুপুরকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে ডেকে আানে;
সুগন্ধি মরিচ গাছের ওপর সে দুপুর আড়াআড়িভাবে বিছায় তার শরীর।
ঘুমভাঙা বিকেল আড়ষ্টতা মুছে কবিতার উপযোগী হয়ে ওঠে,
দুধের সরের মতোন ঘন কুয়াশা আর কোনো কোনো বেগানা শীতকাতুরে রাত;
জেনে থাকতে পারে আমার একলা জীবনে মালতী ফুলের গল্প।
জীবনের নিত্য হালচালে এসেছে কী মেঘবাড়ির চিঠি?
ভাঙা খাট গলে যে রূপকথা একদা নেমে এসেছিল;
হৈচৈ এর দুনিয়ায় তাকে আর হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে জাদুঘরে রাখা হয়নি।
এই হেঁশেলি মন, খুচরো পয়সা আর শাদা-কালো কাপড়ের দিন জানে না,
কতটা লালা ক্ষরে ক্ষরে ভেজে তেতো জীবনের পার।


আমি কেউ নই
জাহিদ হাসান 

আমি কেউ নই
কারো গল্পের বই,
বৃষ্টিস্নাত এক সন্ধ্যায়
আনমনে বসে বারান্দায়
দিগন্তের পানে চেয়ে
উদাস মনে রই।

আমি কেউ নই
কারো ছবির বই,
কোনো স্বপ্ন বালিকার
মনের তুলিতে আঁকা
সহ¯্র  ছবির মাঝে
কোনো ছবি নই।

আমি কেউ নই
কারো কবিতার বই,
কোনো ষোড়শী লেখিকার
শত তরুণ নিয়ে লেখা
শত কবিতার বইয়ে
শুধু আমি দূরে রই।


কামায়ন
বিশ্বজিৎ মণ্ডল

প্রতিদিন এভাবেই তোমার উন্মাদ কাঁচুলিতে মেনেছি স্বর্গ
আজ্ঞাবহ প্রতিপালকের বার্তা...

সুঠাম রাস্তা বেয়ে গড়িয়ে যেতে যেতে সেজে উঠি
                                                        প্রলুব্ধ ময়াল   
তোমাকে লিখে ফেলি আরো এক কামসূত্র...
কখনও লক্ষ্মী চোখে তোমার দিকে তাকিয়ে খুঁজিনি
                                           প্রান্তিক সেই স্টেশন
সদ্য ছেড়ে যাওয়া রিক্সাওয়ালার গালিগালাজ

ভুলে থাকতেই শিখেছি যাবতীয় উপদ্রব
মেঘ মল্লারের দিন আর শিউলি তলায় দাঁড়িয়ে
তোমাকে উচ্চারণ আঁকা প্রথম পাপ

আজ দ্যাখো, নেহাত ভদ্রলোক সেজে উঠেছি
শূন্য দশকের রমণীয় উপবনে...
জানতেই পারোনি, বুক পকেটে চুরির রাখা-
সেই সিফিলিস গল্পটা....


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট