পদাবলি : ০২



চুপ
আকিব শিকদার

চুপ করে রও চুপ-
এখন আমি জ্বলছি ভীষণ
অগ্নিগিরির চূড়ায় যেমন ভয়াল অগ্নিকূপ।

চুপ করে রও চুপ-
আমার দহন দিচ্ছে পোড়ে
মিথ্যে কুহক, কুশ্রী শ্বাপদ, আবর্জনার স্তূপ।

চুপ করে রও চুপ-
আমার হাতের স্পর্শ পেলে
কটুগন্ধী ঘুঁটে পোড়ে হয় গন্ধমধুর ধূপ।



তোমাকে দূরে রাখব
মোহাম্মদ আবদূর রহমান

তোমার বুকের উপর সারাক্ষন খেলা করি
ভুলে যায় নিজের কর্তব্য
তুমি আমাকে কাছে পেয়ে
বাড়িয়ে দাও
তোমার লাল পাপড়ির মত ঠোঁট
অনায়াসে চুম্বন করতে থাকি
তুমি নিজেকে ধর্ষিত হতে ভালোবাস
আসলে তুমি তো ভাবনা
তোমার নিজের কথা
ক্ষতি চাও আমার
আমি বুঝিনি কোনদিন।

তোমার অভিনিত নাটক
কেড়ে নিয়েছ আমার অবুজ হৃদয়
স্ত্রী ছেলে মেয়ে ছেড়ে
তোমাকেই জড়িয়ে থাকি
সব সময় তোমাকে খাওয়ার খায়িয়ে রাখি।
বৃষ্টির সময় খাবারের অভাবে
তুমি না খেয়ে চোখ বুজে ঘুমিয়ে থাকলে
বুকের ভেতর সৃষ্টি হয় অদ্ভুত শিহরন
বারবার অপেক্ষা করি তোমার খাবারের
খাবার পেলে
খাবার খায়িয়ে
তোমাকে আবার জড়িয়ে থাকি
এখন তো তোমার খাবারের ব্যাংক কিনে ফেলেছি।

আর কত দিন পরে বুজব তোমাকে
ভাবি একথা
তোমাকে ছাড়া তো ভালোই ছিলাম
সবার সাথে সম্পর্ক ছিল
সবার সাথে গল্প করে কেটে যেত সময়
তুমি জাতিকে করেছ রুগ্ন
ছিঁড়ে ফেলেছ অনেক বন্ধন।

জানি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে পারবনা
তবে তোমাকে আর ভালোবাসিনা
তোমাকে আসতে আসতে দূরে রাখব
আমার থেকে
অনেক অনেক সময় ।


মনের অভিলাষ 
মিনহাজ উদ্দীন শরীফ

ইচ্ছা করে হাওয়ায় দোলে তেপান্তরে যেতে;
পাখি মতো উড়ে বেড়াই পাকা ধানের ক্ষেতে।
ইচ্ছা করে মায়ের হাতে দুধ কলা ভাত খেতে;
যাই ফিরে যাই শৈশবের-ই রঙিন পালের নায়ে;
ইচ্ছা করে তিমির রাতে- যেতে চাঁদের গাঁয়ে।
হেমন্তের ঐ ভেজা ঘাসে- হাঁটতে খালি পায়ে।

ইচ্ছা করে বইয়ের বাড়ি, বাঁধি আমার বাসা;
সূর্যের সাথে খেলি বসে, এক টেবিলে পাশা।
ইচ্ছা করে জোনাক হয়ে বন-বাদাড়ে জ্বলি;
বাবা মায়ের স্বপ্নের পথে দিবানিশি চলি।
ইচ্ছা করে প্রজাপতির রঙে মেতে উঠি;
শিশির ভেজা গোলাপ হয়ে ভোর সকালে ফুটি।

ইচ্ছা করে দেশের ছবি লাল সবুজে আঁকি; 
মাতৃভূমির কপালের টিপ হয়ে, চিরকাল থাকি।
ইচ্ছা করে নদীর বুকে শাপলা বেশে ফুটতে;
দেশের জন্য যুদ্ধে আবার বীরের নামে ছুটতে।
ইচ্ছা করে ‘নজরুল’ রূপে দ্রোহের বাণী বলতে;
হাতে হাতটা রেখে সবাই একই সাথে চলতে।

ইচ্ছা করে কবির মতো ছন্দ ছড়া বলি;
কোমল মতি শিশির মতো হই বাগানের কলি।
ইচ্ছা করে ‘শেখ মুজিবের’ প্রতিচ্ছবি হতে;
দীপ্ত পায়ে টগবগিয়ে চড়তে ঘোড়ার রথে।


গৃহবন্দি খাবো কি?
শরিফুল ইসলাম

পৃথিবীটা আজ মৃত্যুপুরী-
চারিদিকে শুধু নিদারুণ লাশের মিছিল!
উজ্জ্বল প্রোজ্জ্বল লাশেদের খুব ভিড়ে-
কুৎসিত কদাকার লাশেরা আছে ঘিরে
মৃত্যুর স্বাদ নিবে তাদেরই অখিল!

পৃথিবীটা আজ বধ্যভূমি-
কফিন বিহীন লাশ গুলো আছে আলুথালু!
তবুও নেই শেয়ালে লাশ খাবে- সেই ভয়,
কুৎসিত মানুষ গুলো আজ, তারা শুধু কয়-
আমরা গৃহবন্দি খাবো কি রোধ আছে চালু?



গোধূলি
অনিন্দিতা মিত্র  

গোধূলি বেলার শেষ কমলা রঙের রোদ্দুর এসে দাঁড়িয়েছিল তোমার বারান্দায়। একটা ছাই রঙা কাক ঠোঁট ঘষছিল আরো একটা কাকের ঠোঁটে। জিয়ল গাছের পাতা নাচছিল তার মতো করে, দুঃখগুলো সুখের সীমানা পেরিয়ে হয়ে উঠেছিল উত্তাল বসন্তদিনের ¯্রােত। তোমার আঙুলে লেগেছিল আমার স্মৃতির ভার, লুকিয়ে লুকিয়ে অঝোরে কেঁদেছিলাম সেদিন, পাশে ছিল না কেউ, তাই সমস্ত ব্যথা উজাড় করে ঢেলে দিতে চেয়েছিলাম আকাশকে।শোকের রঙ আছে, নিজস্ব রঙ। শোকের নিস্তব্ধ ঢেউ আলো জ্বালায় মনের গোপন ঘরে। মৃত্যু মাঝে মাঝে বিলি কাটতে চায় চুলে, প্রশ্ন করি না তাকে।  জীবন তো মেলাতে পারলো না, হয়তো মৃত্যু মিলিয়ে দেবে তোমাকে আমাকে। 


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট