মৌটুসির মাটির ঘোড়া



মৌটুসির মাটির ঘোড়া
ইয়াকুব শাহরিয়ার 

মঙ্গলিকে নিয়ে সারাদিন কামৌটুসির। মঙ্গলি মৌটুসির মেদি কুকুরীর নাম। মৌটুসির যা বয়স তার থেকে চার বছরের ছোট মঙ্গলি। দুজনের গলায় গলায় ভাব। মৌটুসি ক্লাস ফোরে পড়ে। তার একটাই ইচ্ছা সে বড় হয়ে ইশকুল মাস্টারনী হবে। ছাত্রদের ধমকাবে, ইচ্ছা মতো ক্লাসে ঢুকবে বেরোবে। সবাইকে মিথ্যা বলতে বারণ করবে। তবে মঙ্গলিকে অবশ্যই পাশে থাকতে হবে। মঙ্গলিকে ছেড়ে আজ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা করেনি মৌটুসি। মৌটুসির আরেকটা প্রিয় জিনিসও আছে। একটা মাটির ঘোড়া। গেলো বছর তার মা হারিয়ে যাওয়ার আগে মেলা থেকে ঘোড়াটি কিনে দিয়েছিলেন। মৌটুসির মা হারিয়ে যান নি। মেলা থেকে ফিরে রাতে যে ঘুমিয়েছিলেন-আর ঘুম ভাঙেনি। বিলেত ফেরত রকিব উদ্দিন আর বিয়েও করেননি, বিদেশও যাননি। একমাত্র মেয়েকে নিয়েই আছেন। তবে মৌটুসি জানে তার মা হারিয়েছেন। ফিরে আসবেন।

মঙ্গলি ব্রেড খেতে খুব পছন্দ করে। অনেকদিন ধরে ব্রেড খায় নি সে। বাজার থেকে মাঝে মাঝে দোকানির ব্রেড চুরি করে নিয়ে আসতো বলে গলায় ভাড়ি জিঞ্জির পড়েছে তার। তার প্রতি অনেক মায়া হয় মৌটুসির। মনে মনে ভাবে স্কুলের নাম করে দোকানে গিয়ে মিথ্যা বলে হলেও মঙ্গলিকে ব্রেড খাওয়াবে সে।

আজ স্কুলে গিয়ে তারাতারি বাড়ি ফিরেছে মৌটুসি। মঙ্গলি তাকে দেখে দৌঁড়ে এগিয়ে এসে হাপিয় হাপিয়ে লেজ নারাচ্ছে। মৌটুসি ব্যাগ থেকে দশ টাকা দামের একটা ব্রেড বের করে মঙ্গলিকে একটুরো দিলো। মঙ্গলির প্রিয় ব্রেড, অথচ খাচ্ছে না দেখে বাজে ধরণের মন খারাপ হয় মৌটুসির। খারাপ মন নিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখে মাটির ঘোড়াটি ভেঙে খান খান! চোখ কপালে উঠে যায় মৌটুসির। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে সে। মাকে হারিয়ে কান্নার মতো অবস্থা! ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। মঙ্গলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে করুণ চোখে মৌটুসিকে দেখছে। একবার মঙ্গলির উপর চোখ পড়ে মৌটুসির। দেখে তারও চোখ ভিজছে।

হঠাৎ কান্না থেমে গেলো তার। ভাবছে কি দরকার ছিলো মিথ্যা কথা বলার? বাবার কথা বলে কেনই বা ব্রেডটা আনতে গেলাম। আমার দোষেই তো এমন হয়েছে। যদি মিথ্যা না বলতাম, তাহলে তো মায়ের দেওয়া ঘোড়াটা ভাঙতো না। মিথ্যা বললে এমন ক্ষতি হয়, মা একবার বলেছিলেন। তাই তো এমন হয়েছে। এমন ভাবতে ভাবতে কিছুটা কষ্ট হাল্কা হতে লাগলো মৌটুসির। তখন বাবা রকিব উদ্দিনের উচ্চ গলায় ডাক শুনে ফিরে তাকায় সে। বাবা বলেন- তোমার মা আবার একটা ঘোড়া পাঠিয়েছে। হুবহু ঘোড়া দেখে আনন্দ আর ধরে না যেনো। সারা বাড়ি জুড়ে দৌঁড়ে দৌঁড়ে আনন্দ উদযাপন করছে মৌটুসি। সাথে মঙ্গলিও। মৌটুসি মনে মনে শপথ করে আর কখনই মিথ্যা বলবে না সে। আর মায়ের প্রতি ভালবাসা বেড়ে যায় মৌটুসির।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট