পদাবলি : ০১

 


সন্ন্যাস
অলক চন্দ্র দাশ

বুকের পাহাড়ের শ্যাওলা ভরা গাঢ়ো জলের নদী
চোখের মধ্যে তুলবো না প্রতিজ্ঞা ভাঙা অবদি।
চেষ্টার কলস ডুবিয়ে যাও ত্রিকালের দোহাই দিতে দিতে
বিষন্নতা উবু হবে না তবু হাতের আঙুল এক করে।

আমি ক্ষ্যাপা, রাত্রির অস্ফালনে সেদ্ধ হওয়া শূন্যতা
তুমি তোমরা পূর্ণতা ; আমি মুদ্রাস্ফীতি
নোটের শরীরে হনুমানের মতো বুক খোলে রেখেছি
দেখো! ছোঁয়!  গুণো হাঁড়ের সংখ্যা! ক্যালসিয়াম! জীবাণুবাহী নালী-
গণ সার্কাসে ঠাঙিয়ে দিতে পারো!
প্রজন্মরা মধুসূদনের  চতুর্দশপদী কবিতার মতো
দু’ভাগ করে নেবে অথবা মন যত চায় তত ভাগে!
তারপরও আমি ভেক্সিন নেবো না, প্রোটেকশনে ঢাকবো না দৈর্ঘ্য প্রস্থ
চাল খাবো না, ডাল খাবো না, তৈল ছোঁবো না
লবণে মুখ দেবো না, দেবো না, দেবো না না না।

রাষ্ট্রীয় সঞ্চয় বাবু!  স্যার! ওস্তাদ! কর্তা! হুজুর
আজগুবি না। দৈব না। মন্ত্র যজ্ঞের ফল না।

হাত বাড়ানোটা এই মূহুর্তে অধিকার!
খতিয়ানের ঘরে সংখ্যাগুলোর সঙ্গে থাকা বিয়াদবি না সাব
আপনি হিসেব রক্ষক মাত্র, দানবীর না।
গণসংখ্যা স্বতন্ত্র; নাকি গ্রীণ রুমে সাজিয়ে রাখা আর্টিস্ট ওরা ?
যে আগে দেখলে রহস্য থাকবে না!
স্ক্রিপ্ট রাইটার, ডিরেক্টর, কোরিওগ্রাফার আপনারা ?  
রাজার বুকে সমাধিস্থ মঙ্গলা তীরকে উবু করে দাও
যোদ্ধার বুক রক্ত জবার সম্পদ।


নিয়তি
শেখ একেএম জাকরিয়া

ঘটকের ঝুলি থেকে
হেঁটে আসা প্রস্তাবটি বিষিয়ে তুলল জীবন
আঁতুড়ঘর ডিঙোতেই হবে ঋতুমতি যুবতীর
আকাশ-বাতাস-নদী সবারই একই ইচ্ছে
নীতি সরোবরের পঙ্ক্তিগুলো তুমি নামক কলসে ডুবিয়ে রাখতে হবে

অকাব্যের পিচহীন রাস্তায় অনিচ্ছাকৃত বাজাতে হবে গীতিকাব্যের মাউথ অরগান
অসমাপ্ত কাব্যে দাঁড়ি কমার ম্যাকবেথ
অহেতুক উড়িয়ে দিতে হবে প্রবাসী হাওয়ায়
সাথে আয়ুর আর্কেস্ট্রা
শব্দতলার প্রেমময় শব্দ

অন্য কোনও সমাধান নেই
শুধু টান পড়বে দুরন্ত হৃদয়ে।



কবরনীতি
কাজী রুপাই 


কবরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে। ভালো লাগে কবরের শীতল ঘ্রাণ। প্রায়শ’ই দাঁড়িয়ে থাকি। আমার মধ্যে অজস্র রাজহাঁস হাঁটতে থাকে। আমি তাদের অনুসরণ করি। যেমন আমার পূর্বপুরুষরা হেঁটেছিলো বংশ-পরম্পরায়।

একশো বছর বয়সী এক রেইনট্রির নিচে দাঁড়িয়ে আছি। তার ছায়া আমাকে শূণ্য থেকে অলীক শূন্যতায় ভাসায়। আমি অপরাজিত শক্তির মতো অনুভব করি নিস্তব্ধতা। আমার বুকের বাম পাশে একটুকরো  মাটি চেপে তাকিয়ে থাকি আরশে।

আমি ভীষণ চিৎকারে আব্বাকে ডাকি। ‘আর কতো ঘুমাবেন! এবার জাগোন! আম্মাকেও জাগিয়ে তুলুন । দুনিয়ারী আর ভালো লাগে না। নিজেকে কবরের মতো অসহায়  লাগে। মনে হয় প্রতিটি কবর যেনো আমার নিখুঁত প্রতিচ্ছবি?

এমনি ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি। রেইনট্রির পদতলে। আমার ভিতরে গজিয়ে উঠে একটি  দৃপ্তময় জাহাজ। তার মাস্তুল জুড়ে প্রত্যাবর্তনের স্ফীতি । এক করব থেকে আরেক কবরে ঝাপায় আমার আত্মা; যেনো ঘাসফড়িংয়ের দৃপ্ত  ছায়া।

পূর্ব পুরুষদের করবনীতি মেনেই এতোদুর আসা আমি জানি মৃত্যুর কোন আলাদা সংজ্ঞা নেই।
প্রতিটি কবর তার নিজস্ব ঘ্রাণে হিরন্ময়। এইসব ঘ্রাণ একদিন মিশে যাবে- আগুনের ভিতর; মাটি ভিতর ;নদী যাবে সমুদ্রে ;বাতাস মিশবে  বায়ুতে।

অতঃপর পুনরুত্থানে হবো একাকার। ঘ্রাণে ঘ্রাণে ঘ্রাণময় হবে আমার কবিতার উত্তরসূরীদের পথ।



ভালোবাসা যতটা শব্দে হয়
মোস্তফা কামাল

আমাকে খুঁজো তুমি প্রমত্ত হাহাকারে
আমাকে খুজো তুমি গোধূলির রৌদ্দুরে।
আমি মিশে থাকি শিশির ভেজা দূর্বাদলে
আমি মিশে থাকি স্রোতস্বীনী নদীর জলে।
আমি মিশে থাকি উদাসী বাউলের অবিন্যস্ত চুলের ভাঁজে
আমি থাকি যুবতী চাঁদের আলোয় মনোলোভা জোসনা সাজে।
উদ্ভ্রান্ত সময় আমাকে খোঁজে অবিরত
আমি থাকি সময়ের যোগ্য শিরোনামের মত
প্রীতির পরাগ ছড়ায় যত অনুরাগ
আমি এক প্রান্তিক পূজারীর বিরাগ।
আমি সদা উপকথার চরিত্র পরি গায়
পানশালাতে কে যেন আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়।
ক্ষুধার্ত বিকেলের সঙ্গম থেকে যেমন
বসন্ত বেরোয় আমি থাকি বিরহী বাতাসের অসম প্রেম পূর্ণতায়
যদি কখনো হারিয়ে যাই-
এলোকেশ মেঘডম্বর স্মৃতির ভারে
খুঁজে নিও বন্ধু আমায়;
যতটা শব্দে ভালোবাসা হয় ততটা শব্দের বাহুডোর।
 


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট