লাজ-লজ্জাহীন প্রেমিক; বেশরম প্রেমিক একটা !


 


লাজ-লজ্জাহীন প্রেমিক; বেশরম প্রেমিক একটা !

জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ


সেই কাকপাখির কথা ভেবে ভীষণ আক্ষেপ হয় আমার । কিন্তু এক সময় হিংসে হতো; গা জ্বলা হিংসে । তোমার জানালার পাশে যে পেয়ারা গাছটা ছিল ঠিক সেইখানটায় বসত কাকপাখি । খুব ভোরে তুমি উঠতে কাকে ডাকে । স্বভাবত’ই আমরা মানুষ ভোরে কাকের ডাক শুনলে বিরক্ত হই; ভেবে বসি- এই বুঝি আজ কোনো সর্বনাশ হবে । সত্যি কথা বলতে; কাকপাখি আর সর্বনাশের সাথে কোনো রকম সম্পর্ক আদৌ আছে কিনা; ছিল- জানতে পারিনি আজও । যাক সেকথা । তারপর তুমি; কাকপাখিটাকে মৃদু-মন্দ হাসিতে ফেটে পড়তে । তোমার সেই অন্যরকম ভালোলাগাটা আমার ভেতর তৈরি করত ধোঁয়াশা । বুঝতে পারিনা কিছু। এভাবে বেশকিছু সময় পার হলো । তুমি বদলাওনি তখনও । তবে আমার ভেতর বটবৃক্ষের মত এত্ত বড় একটা হিংসের জন্ম হলো । অবশ্য এর কোনো উৎস খুঁজে পাচ্ছিলাম না বললেই চলে । মাঝে মাঝে নিজেকে মিছেমিছি শান্ত¡না দিয়েছি এই ভেবে; আমি একটা প্রেমিক; বদ্ধ প্রেমিক, পাগল প্রেমিক । যদিও তুমি আমার প্রেমের কোনো মানে বুঝোনি কোনোদিন; চেষ্টা করোনি বোঝার । আমার নিজেরেও অতটা ইচ্ছে হয়নি বোঝানো তোমাকে । 

কাকপাখি আর তোমার অসম প্রেম দেখে দেখেই পার করলাম ক’টা দিন । আর ইচ্ছেও করল না তোমাদের ওসব দেখার । সিদ্ধান্ত নিলাম; তোমাকেও আর দেখবো না; দেখতে যাবো না তোমাদেরও। 

সপ্তাখানিক পর নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম । বুঝো তো; প্রেমিক বলে কথা । লাজলজ্জাহীন প্রেমিক; বেশরম প্রেমিক একটা। এই আক্ষেপের অধ্যায়টা শেষ হলে যা থাকে; তা কেবল’ই দুঃখ । আর এই দুঃখগুলো লেগে থাকে শরীরে; মননে...


শুধু দুঃখগুলো লেগে থাকে শরীরে


শুধু দুঃখগুলো লেগে থাকে শরীরে...

তোমাকে দেখবো; 

এই ভেবে কাটে দিন- অর্ধেক রাত; 

তোমাকে আর দেখা হয়না আমার ।


তোমার অভিমান; তোমার আড়াল-

আমার চোখে অশ্রুস্নাত শোক;

কি দারুণ উচ্ছ্বাসে; বেঁচে থাকি-

দেখবো বলে’ই কেমন 

ভালো থাকি; সুস্থ থাকি । তুমি-

তোমাকে নিয়ে’ই ব্যস্ত, ভীষণ ব্যস্ত।

আর ব্যস্ততায় ঢাকা পড়ে যাই আমি...

.

ধরে’ই নাও, তোমাকে একটু দেখতেই 

আমার যত বাড়াবাড়ি, হাঁটাহাটি-

আমার প্রতি তোমার কেমন অভিমান;

তোমার অভিমান বুকে তুলে ঘুম নামাই;

আর তোমাকে দেখে’ই শুরু আমার সকাল ।


প্রতিদিন অফিস বের হয়ে কালুচাচার দোকানে এককাপ চা না খেলে যেন আমার দিন উষ্ণতাহীন কেটে যায়। কালুচাচা মানুষটা খারাপ না; তার সাথে যতদিন হলো পরিচয়; তাতে বোঝা যায় মানুষটা প্রচুর গল্পবাজ; রশিক। আর আমি এমন একটা মানুষের সাক্ষাৎ পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি ভীষণ। কেননা; এই সময়ে এমন গল্পবাজ মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। মামাকে প্রশ্ন করলামÑ ‘চাচা; জীবনে কোন জিনিস প্রতি আপনার আক্ষেপ রয়ে গেছে এখন ? কালুচাচা লম্বা একটা দীর্ঘশ^াস ছাড়ল । তার দীর্ঘশ^াসের অর্থটা এমন দাড়াল যে; তার এই জীবনের পুরোটাই যেন আক্ষেপে ভরপুর।

-আমার আক্ষেপ যে কত কিছুর প্রতি; তা তো তুমাকে বইলা শেষ করতি পারব না। তারপরও তুমারে বলি খানিক; ‘ভালোবাসছিলাম আমি একজনকে; তারে নিয়া কক্সবাজার যাতি চাইছিলাম; একসাথে সমুদ্র দেখতি চাইছিলাম কিন্তু সেইটা আর কপালে হয় নাই; তারেও পাই নাই’; হায়রে ভালোবাসা; হায়রে সমুদ্র ।

কালুচাচা এমন নীল আক্ষেপের কথা বলে থেমে গেল । বুঝতে পারলাম; তার পুরোনো অধ্যায়টাকে স্মরণ করাটা আমার ছোট খাটো নয়; বড় ধরনের একটা অপরাপ করে ফেললাম । তবে বুঝতে পারলাম; প্রতিটি মানুষের আলাদা একটা গল্প থাকে; যা কেবল ভালোবাসা ঘিরে; কিংবা সমুদ্রকে ঘিরে। 


আড়শী অথবা সমুদ্রের গান


সমুদ্রের সাথে কথা হয়েছে আমার-

সমুদ্রের নামে বদনাম ছড়িয়েছ বাতাশে;

গাঙচিলও শুনেছে কালকথা; আমি দেখছি-

তুমি হেঁটে হেঁটে নষ্ট করছো সমুদ্রের শরীর ।


সমুদ্র চুপচাপ; তুমিও চুপচাপ-

বিরহে আমার ঠোট বাঁশি; দেখছি তোমাকে,

ঢেউয়ে রোদের হাঁটাহাঁটি; তুমি হাঁটছো-

তোমার হাঁটাহাঁটি শেষে সমুদ্র যাবে বাড়ি;

তারপর—  কিছু কবিতা তুলে রাখবো ছিঁকোয়; 

তুমি এসে ডুবিয়ে দিও জলে;

কেউ জানবে না; আমি শুধু তোমার জন্য হবো সমুদ্র ।


আমি সব সময়’ই একা মানুষ । আর একা মানুষের গল্প একটা বেশি থাকে; দুঃখবোধ একটু বেশি থাকে । কারণ পৃথিবীর নিবিষ্টে কত রঙের; কত ঢঙের মানুষ আছে; তার ধারাপাত খুঁেজ পাওয়া কঠিন । আমার আমিত্বের অর্থটা তো শুধু আমি’ই জানি; আমার আমিত্বের দুঃখবোধটা শুধু তো আমার’ই । এক আজলা জল দিয়ে হবে তার প্রতি কোনো দরদ হয় না কারো; এই অচল অভ্যেসের নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি । 


তুমি অথবা আমি বিষয়ক


তোমাকে বোঝার ইচ্ছে হলে— ছাড়ি দীর্ঘশ্বাস;

জানার ইচ্ছে হলে বন্ধ করি চোখ;

আর দেখার ইচ্ছে হলে পাগল হয় মন-

অথচ কেমন তুমি; ঢেকে রাখো মায়ামুখ সারাদিন !

জানা হয়না; বোঝা হয়না; দেখাও হয়না- 

আহ! দেখা হয়না তোমার মায়ামুখ !


তোমার চোখে এক’শ সমুদ্র- 

আমার চোখে কয়েকটা আকাশ;

এই চোখ ছুঁয়েছে তোমার চোখ; এই চোখ জুড়ে শুধু তুমি-

দেখি; শুধু দেখি... আমাকে বুঝতে চেয়ে

কুড়িয়ে ফেলেছো তিনটা বিকেল- হয়ত জানো না;

তোমার সুন্দর মেহেদী রাঙা হাতে জমা আমার সকাল;

আমি তো চাই; খুব চাই- তোমাকে দেখে দেখে

ভালো কাটুক প্রতিদিন; খুব ভালো কাটুক আমার দিন ।


আড়ালে থাকো— আড়ালে রাখো; আড়াল রাখো-

এদিকে আমার ভারি হয়ে যায় বেদনার পাপ !

জল খাই; জল খেতে যাই;  পাখি দেখি- তোমাকে দেখি;

পাখি আর তুমি এক- চোখ বোঝ না; বোঝো না মন;

আজকাল তোমাকে দেখে কবিতা বলি; কবিতা লিখি-

তুমি কেমন হয়ে যাচ্ছো আমার কবিতার প্রাণ ।


আশ্চর্য বিষয় বটে যে; আজকাল মানুষকে নিয়ে খুব বেশি ভাবতে শিখেছি; প্রয়োজনের জন্য যত ছোটাছোটি করি না কেন; কিংবা ভালো থাকার জন্য যত হাওয়া আবৃত্তি করি না; মানুষকে নিয়ে আমার ভাবনা চিরদিনের । এই মানুষের ভীড়ে আমার স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেছে; এই মানুষের ভীড়ে আমি ছোট হয়ে আছি; বড় হবো বলে। আমার ভালো থাকা; ভালো লাগা; কিংবা ভালোবাসা সব বিকিয়ে দেবো; শুধু আমি আমাকে নিয়ে একা থাকব; ভীষণ একা থাকব। কারো সংস্পর্শে যেতে চাইনা; আর আমিও চাই কেউ আমার সংস্পর্শে আসুক; সবাই ভালো থাকুক; খুব ভালো থাকুক । শুধু আমি আমার দুঃখবোধ নিয়ে বেঁচে থাকবো মৃত্যু পযর্ন্ত । 


স্থিরচিত্র


একদল সিগারেটের ধোঁয়ামিছিল; তুমি দিলে দৌড়-

আলোর বর্শিতে ছিড়ে গ্যালো বাতাশের গাল;

আমি আমাকে পুড়িয়ে নিলাম আগুনে আর তুমি

ফুঁ দিলে নিভিয়ে দিলে বিকেলের জীবন ।


আদর্শ ঈগল যতটা ছিড়ে খায় মেঘ— 

কিংবা মিঠাপুকুরে ডুবে মরে যত বৃদ্ধমাছ; দেখছি; 

ভীষণ দেখছি; তুমি পুতুলচোখে বেশ রাখো খোঁজ—

আর আমি দিনভর কবিতাহীন— স্বভাবের চরমপত্র ;

দ্যাখো একবার; উড়ে যেতে আটকে গেছি তোমাতে।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট