কদমফুল ও মৌমিতা

 



কদমফুল ও মৌমিতা 

শফিক নহোর 


ক.

মৌমিতার সঙ্গে আমার প্রথম অনলাইনের মাধ্যমে পরিচয়। তবে সঠিক মনে করতে পারছি না কবে পরিচয় হয়েছিল, তবে মনে আছে তখন ইয়াহু চ্যাটরুম ছিল। আমি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ক্লাস শেষ করে শংকর প্লাজায় সাইবার ক্যাফে বসে চ্যাট রুমে মেতে উঠতাম, মৌমিতার সঙ্গে। ইমেইল করলে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া পেতাম না। তবুও আমার ভাল লাগা থেকে প্রতিদিন ইমেইল করতাম, তাঁর প্রতি আমার একটা বিশ্বাস ছিল। অসাধারণ সুন্দরী ছিল মৌমিতা তার সাক্ষী ছিল ওর প্রোফাইল পিকচার। আমার মতো অনেক ছেলে ওর সঙ্গে চ্যাট করতো , আমি নিজেই দেখেছি, আমার বন্ধু রানা মৌমিতার সঙ্গে চ্যাট করত, তবে রানা শিওর হয়েই বলেছিল, 

-বন্ধু মাগী তো খুব খচ্চর রে, শালি তো ম্যাসেজ করলে রিপ¬াই করে না। আমি ঠোঁটের কিনারে হালকা হাসি এনে বিদায় নিলাম। চ্যাট রুমে প্রথম যেদিন আলাপ হলো, কত বিচ্ছিরি ধরণের কথাবার্তা বলতো লোকজন এর ভেতরে অনেকেই মেয়ে সেজে আসত, অনেক ছেলে ছিল , যারা মেয়ের বেস ধরে থাকতো। সেই সময়ের স্মৃতি গুলো সত্যি ভিন্ন রকম যা বলে কাউকে বোঝানো সম্ভব না। তবে মৌমিতা ছেলে না মেয়ে এ নিয়ে প্রথম দিকে আমার ভীষণ সন্দেহ হত , অনেক কথা যা একটা মেয়ে সহজে বলার কথা না, কিন্তু মৌমিতা তা সহজে বলতো। আমি ধরেই নিয়ে ছিলাম, সে ছেলে। কারণ একটা মেয়ে কখনো এমন কথা বার্তা বলতে পারে না। কিন্তু আমার বন্ধু রানার কথার সঙ্গে আমি সাত পাঁচ ভেবে অনেক কিছু মিলাতে চেষ্টা করি। আমার যোগফল শূন্য আমাকে ভীষণ ম্রিয়মাণ দেখাত, রানা বলতো, না দেখে কাউকে এভাবে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। ভালবাসা তো দূরের কথা। সে মেয়ে না ছেলে সেটাই তো আমরা বের করতে পারছি না। তবে রানা আমাকে জানিয়ে দিল বন্ধু আমি এর ভেতরে আর নেই।

সামনে পরীক্ষা সাইবার ক্যাফে এসে আর এভাবে সময় নষ্ট করতে পারবো না। তার সঙ্গে তো টাকাও যাচ্ছে। এটা একটা নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল, আমার কাছে। রানা এক প্রকার আড়ালে চলে গেল। 

সংযুক্তা শ্রী মানি সুমি ‘নামের হিন্দু অপরূপা বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী  আমাকে প্রথম দেখায় গোলাপ ফুল দিয়েছিল। 

বলেছিল,

-‘আমি তোমার বন্ধু হতে চাই ?

-সহপাঠী থেকে বন্ধু এ আর তেমন কঠিন কাজ না আমি পারবো, ধন্যবাদ আমাকে গোলাপ দিবার জন্য। এখানে গোলাপ দিলে সবাই তো ভাববে তোমার সঙ্গে আমার প্রেম। প্রেমের জন্য তোমাকে গোলাপ দেয়নি,

-রাজীব, আজ তোমার জন্ম দিন।

আমি অবাক হয়ে সংযুক্তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম খানিকক্ষণ।

রাজীব আজ তোমার সঙ্গে একটু ঘুরতে চাই ? তুমি নিয়ে যাবে, আমি শিশু বাচ্চার মতো খুব সহজে অবুঝ হয়ে যেতাম ; এর বিশেষ কারণ কি ছিল আমি জানি না। হুম যাবো, কোথায় নিয়ে যাবে আমায়। 

‘রবীন্দ্র সরোবর ‘সেখানে আজ প্রথম বর্ষার গান হবে। তুমি তো খুব রবীন্দ্র সংগীত শোনো, হ্যাঁ তা ঠিক। কখন যাবে, ক্লাস শেষ করে। 

আমি ক্লাস শেষ করে দাঁড়িয়ে আছি সংযুক্তার জন্য অবশেষে সে আসল, রিকসা নিয়ে চলে গেলাম, দু’জন রবীন্দ্র সরোবর। সুমিষ্ট কণ্ঠে ভেসে আসছে গান,

বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান,

আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।

‘মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে

এই যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান।

রবীন্দ্র সংগীতের ভেতরে একটা যাদু আছে না শুনলে কেউ বুঝতে পারবে না। সংযুক্তা, আমার দিকে তাকিয়ে রইল। দু’জন পাশাপাশি বসে শুনছি, হলুদ কাচা হাত দিয়ে সে আমার হাতের আঙুল স্পর্শ করবার চেষ্টা করল, আমি বুঝতে পারলাম। আমার কাঁধে মৃদু ভাবে মাথা নুয়ে পড়েছে, আমি আশেপাশের মানুষের চোখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। সবাই মুগ্ধ হয়ে গান শুনছে। আমি সংযুক্তাকে একটু নাড়া দিলাম। এখানে অনেক মানুষ, লোকে দেখলে খারাপ ভাববে। চাঁদ মুখটা দেখে মনে হতে লাগল শ্রাবণের মেঘ বুঝি এখনি আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে।


খ.

রাতে আর সেদিন কোন ভাবেই ঘুমাইতে পারলাম না, বই নিয়ে পড়তে বসলে বইয়ের পৃষ্ঠা জুড়ে রুপালী হাসি, মৌমিতা ভেসে ওঠে। আজ ক’দিন সাইবার ক্যাফে যাওয়া হয়না। মেঝ মামা ফোন করেছিল, বলেছেন, বিদেশ থেকে আসবার সময় আমার জন্য ল্যাপটপ নিয়ে আসবে। কনফিগারেশন যেন জানিয়ে একটা ই-মেইল করি, কোন মডেল পছন্দ থাকলে মডেল সহ একটা ছবি দিলে ভাল হয়। মনের ভেতরে একটা খুশি খুশি ভাব। এদিকে সংযুক্তা আমাকে ফোন দিয়েছে, সাইবার ক্যাফে থেকে তার কিছু নোট বইয়ের সহযোগিতা লাগবে। সে গুলো ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে দিতে হবে। ধুর বাল শালি একটা ছেবলা টাইপের মেয়ে মনে হচ্ছে এখন।

-কি রে পাগলা এখনো ঘুমাস নাই কেন?

দোস্ত বিড়ি খাবি, খেলে চল ছাঁদে যাই।

-দোস্ত তুই ঘুমাস নাই কেন ? আর বলিস না চটি পড়লাম।

-ধুর শালার ঘরের শালা, তোরা তো একটা খ্যাত, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িস ছফা আহমেদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাকির তালুকদার এদের বই পড়। শালা চলে গেছে চটিতে। তোর তো রুচিতে বাধার কথা।

-মামা প্রেমের জন্য কার বই পড়ব।

-শোন আমি একটি বই পড়েছি, জোস রে।

-মামা কার লেখা, ইমদাদুল হক মিলনের।

-তুই যা বিড়ি খেয়ে আয়। আমার কাছে আছে যে কোন সময় নিয়ে পড়িস যদি ভাল লাগে আরও দিবো।

-শালা ভালই তো চালাচ্ছিস রে, মালটা কিন্তু জোস, ডিপার্টমেন্টে কিন্তু আর নেই।

হিন্দু মানুষের প্রতি আমার একটু ভরসা কম। খাইছিস, টাইছিস নাকি না হলে কিন্তু পাখি উড়াল দিবো। তখন তোকে কবিতা লেখা ছাড়া কোন উপায় থাকবো না। 

-ধুর শালা কি যে বলিস, মেয়েটা ভাল। সে আমাকে বন্ধু হিসাবে খুব কাছের মানুষ মনে করে। তা ছাড়া আমাদের মধ্যে প্রেমের কোন কথা হয়নি কখনো, আমাকে ভালবাসলে তো বলতো। 

তবে সংযুক্তা কিছু একটা আমাকে বলতে চায়, সত্যিকার অর্থে ওর সঙ্গে প্রেম হবে বা, খারাপ মনোভাব নিয়ে কখনো মেলামেশা হয়নি। আমি সবসময় বলেছি, সে ভাল মেয়ে। 

-এক টান দিবি , শালা টাকার ভয়ে বিড়ি খাস না, সে আমি জানি। শালা তুই তো একটা ছোটলোক।

- হুম ছোটলোক, তুই বড়লোক এবার সেশন ফ্রি টা দিয়ে দিস মামা। হা হা হি হি তোর সঙ্গে সারারাত কথা বললেও শেষ হবে না। আমি ঘুমাবো রে দোস্ত , সকালে একটু সাইবার ক্যাফে যাবো।

- দোস্ত , মালটা কী সত্যিই মেয়ে , প্রেম জমে গেছে না কি?'

-পরে তো আর কিছু জানালি না। এখন তো নতুন একটা জুটেছে ...

-ধুর বাল বাদ দে। কাজের কথায় আসি। মামা বিদেশ থাকে তোকে বলেছিলাম না , মামা দেশে আসবে। একটা ল্যাপটপ নিয়ে আসতে বলেছি , ল্যাপটপের মডেল সহ একটা ছবি ইমেইল করতে বলেছেন, 

-দোস্ত কি খাওয়াবি।

-আগে ল্যাপটপটা দেশে আসতে দে। 

-আসলে কিন্তু খাওয়াতে হবে কথা দে প্রমিস !

- ঠিক আছে কথা দিলাম। 

-মামা তুই এতো ভাল ক্যান, মালটা ভাল আছে বিয়ে করে ফেল। শালা শুনেছি , হিন্দু মায়া বিয়ে করলে না-কি বেহেস্ত যাওয়া যায়। 

-কাল দেখে হলে তোর জন্য বলবো রানা তোকে পছন্দ করে , এবার খুশি। 

-হ'মামা খুব খুশি হয়েছি। 

-তোর কি মনে হয়, মেয়েটি তোর কাছে নিরাপদে থাকবে। তুই তো প্রথম দিনই খেয়ে দিবি শালা লুচ্চা। 

-মামা তুই কি আমারে হার্ড করে কখা বললি , তা বলবো কেন?'

- তুই আমার বন্ধু না। লুচ্চা হইলেও তো মানুষের কাছে বলতে পারছি না কারণ,

তুই আমার রুমমেট।

রানার সঙ্গে বকবক করে রাতে ঘুমাইতে দেরি হয়ে গেল। সকালে উঠতে কষ্ট হবে আজ। সকালে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ন’টা বাজে। দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে হলের ডাইনিং থেকে নাস্তা করে বের হলাম।


গ.

রিকসা থেকে নেমে ভাড়া পরিশোধ করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই বুঝতে পারলাম বিদ্যুৎ নেই। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম রানাকে কল করি, মোবাইল বের করবো ঠিক এ সময় আলো জ্বলে উঠলো। এ যেন হারানো সন্তান কে ফিরে পাওয়া।

দোকান খুলেছে , দোকানের ম্যানেজার কম্পিউটার গুলো পরিষ্কার করবার চেষ্টা করল, কিন্তু কাস্টমর বেশি থাকায় ২৫ টাকা দিয়ে ৩০ মিনিটের ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড নিতে হয়। একটা স্লিপ হাতে ধরিয়ে দিল। 

মামাকে ইমেইল করে করে দেখলাম , নতুন কে ইমেইল করেছে , মৌমিতার ইমেইল , সংযুক্ত ফাইল ডাউনলোড করে দেখে আমি তো প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলবার মতন। সেদিন যে মেয়ের গান শুনলাম, এ তো দেখছি সেই । যদিও সেদিন দূর থেকে তার গান শুনেছি প্রচন্ড ভিড় ছিল। কিন্তু ইয়াহু চ্যাটে তার ধরণ কোনভাবেই মিলাতে পারলাম না । আমার বুকের ভেতর কেমন ধড়ফড় করতে লাগল। দ্রুত কাজ সেরে আমি বের হবো ঠিক তখন সংযুক্তার ফোন।

বিশেষ কাজে বাড়ি যেতে হবে , বাড়ি থেকে ওর ফোন এসেছিল এমনটা আমাকে জানালো , তার পর থেকে সংযুক্তা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি। কিছুদিন যাবার পর আমি চেষ্টা করেছি যোগাযোগ করবার কিন্তু ওর ফোন সুইচ অফ। 

মৌমিতাকে ইমেইল করেছি , মোবাইল নাম্বার চেয়ে। পরের দিন আবার সাইবার ক্যাফে গিয়ে ইমেইল চেক করে দেখলাম। মৌমিতা মোবাইল নাম্বার দিয়েছে , অনেক গুলো শর্ত জুড়ে দিয়েছে তার সঙ্গে। 

মোবাইল নাম্বারটা ক'য়েক বার দেখে নিলাম যাতে মুখস্থ হয়ে যায়। ফোনে কোন ভাবেই সেভ করে রাখা যাবে না। হলের বন্ধু গুলোতো এককটা বাঁদর নাম্বার গায়েব হবে সঙ্গে মৌমিতা।

রাতে একটু একটু করে যখন কথা বলা শুরু হল। বিষয়টা রানা খুব খেয়াল করেছিল। রানা এমনিতেই আমার পিছনে লেগে থাকে। তাছাড়া বন্ধু হিসাবে সব রানাকে বলা হয়। তার আগেই বলে উঠল , 

-বন্ধু বলেছিলাম, না?

-কি বলেছিলি, বল শুনি?'

-পাখি যে উড়াল দিল, শালা আগেই বলেছিলাম , খেয়ে দে এখনকার মেয়েদের বিশ্বাস নাই। গেল তো তোর বুকে লাথি মেরে।

- কি বলছিস, কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

- মালু যে তোর সঙ্গে বেইমানী করছে , বুঝতে পারছিস।

- এতো ত্যানা প্যাচাস কেন ? সোজাসুজি বল। 

-সংযুক্তার বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে ইতালি থাকে। শোনলাম, প্রচুর টাকার মানুষ। এই কিচ্ছা কাহিনী বাড়ি থেকে শুনে আসলাম । তোরে তো একটা মিসকলও দেয় নাই , ম্যাসেজ ও দেয় নাই। আগে বলেছিলাম , মালুর জাত মামা। এখন বুঝেছিস!

-টুল টা টেনে নে একটু বস , হিন্দুরা তো মেয়েকে এতো দ্রুত বিয়ে দেয় না। ওদের বিয়ের একটা বিষয় থাকে অনেকদিন ধরে জানাশোনা হয়। হঠাৎ করে বিয়ে করল সংযুক্তা। পৃথিবীতে সত্যিই সবাই নিজেকে নিয়ে ভাবে। 

ভালই তো ডুবেছিস, মনে হয়। তা না ঠিক সে আমার খুব ভাল বন্ধু হয়ে ওঠে ছিল। একটু তো খারাপ লাগবেই স্বাভাবিক।

-তোকে বলা হয়নি , মৌমিতার সঙ্গে কথা হচ্ছে বেশ কিছুদিন। মেয়েটি দেখা করতে চেয়েছে ; তোর মোবাইলে তো ক্যামেরা আছে। যেদিন দেখা করতে যাবো ফোনটা দিস কিন্তু ? একটা ব্যাপার আছে না।

- তোর তো সব কাজেই একটা ব্যাপার থাকে। 

-শহরের মেয়ে দেখে শুনে চলিস , না হলে দেখবি তোরে বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে গেছে।

- আচ্ছা রানা তুই কি পজিটিভ চিন্তা করতে পারিস না। চিন্তা করবো কি ভাবে তুই নিজেই নিজের দিকে একটু চেয়ে দ্যাখ আমার কোন কথাটা বিফলে গেছে।

তিন বছর পর !

মৌমিতার সঙ্গে যেদিন আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, সেদিন বৃষ্টি ছিল শ্রাবণ মাস । খুব ভাল রবীন্দ্র সংগীত গাইত , 

আমার পরান যাহা চায়,

তুমি তাই, তুমি তাই গো।

তোমা ছাড়া আর এ জগতে

মোর, কেহ নাই কিছু নাই গো।

গল্পের ফাঁকে বলেছিল, টেলিভিশনে চেষ্টা করছে , কিন্তু লোক না থাকায় হচ্ছে না। আমি অবাক হয়ে শুনলাম। মৌমিতার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। লজ্জায় চোখে তুলে আমার দিকে তাকাতে পারছে না। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে এত রূপ দিয়ে তৈরি করেছে , মৌমিতার সঙ্গে দেখা না হলে এটা হয়তো আমার অজানা রয়ে যেত।

মৌমিতা প্রায় সময় আমার সঙ্গে কেমন শরীর ঘেঁসে দাঁড়াত যা আমার খুব অপছন্দ ছিল। সম্পর্কটা আমি যেমন চেয়েছিলাম , ঠিক তেমন হয়নি। তবে একটা সম্পর্ক হয়েছিল সৌজন্যতার খাতিরে তা বেশি দিন টিকে থাকেনি।

মৌমিতা আমাকে ভিন্ন ভাবে চাইত, এতো রূপবতী ভেতরে কেমন মাকাল ফলের মতো। তাঁর লোভ ছিল অনেক বেশি। আমি গ্রামের ছেলে বাবার তেমন টাকা পয়সা নেই, খরচ করবার মতো। যদিও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি খুব কষ্ট করে। মৌমিতার জন্মদিনে দামি উপহার না দেবার কারণে , আমার সঙ্গে প্রায়-দিন মোবাইলে ঝগড়া হত , আমি কোন ভাবেই বোঝাতে পারিনি। আমার নিজের ও কিছু দুর্বলতা ছিল। যা আমি প্রথমে মৌমিতার কাছে প্রকাশ করিনি। একটা সময় আমাদের ব্রেকআপ হয়। শেষ যেদিন মৌমিতার সঙ্গে দেখা হয় সেদিন অনেক গুলো কদমফুল দিয়েছিলাম। মৌমিতা খুব পছন্দ করত। পুরনো স্মৃতি গুলো এই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় কেমন নিজের ভেতরে নাড়া দিয়ে গেল। আমার আজ সত্যিই মনে হচ্ছে , ‘সংযুক্তা’ আমাকে সত্যিই ভালবাসতো ! আমি বোকা মানুষের মতন তা হয়তো আড়াল করেছি; আজ এই শ্রাবণের সন্ধ্যায় নিজের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে সংযুক্তার জন্য।  



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট