দুই কূল

    অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ
 


দুই কূল

সাদ্দাম মোহাম্মদ



ওরা সবাই শান্তি চায়, শান্তি কামনা করে। ওদেরকে বোঝাতেই পারি না যে শান্তি চাওয়ার কিছু না পাওয়ার কিছুও না। শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়, প্রতিষ্ঠার কাজ। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ওদের ভূমিকা শূন্যের কোঠায় হলেও শান্তি প্রাপ্তির অভিপ্রায় ওদের আকাশ ছোঁয়া। এটাকে নির্লজ্জ অভিপ্রায় বলতেও লজ্জা হয়।

সবার কাছে নিজেকে ছোট করার তো কোনো মানেই হয় না! যারতার কাছে নিজেকে ছোট করতে নেই; ছোট তো তার কাছেই হওয়া উচিৎ, যার কাছে ছোট হয়েও বড় হওয়া যায়।

পরিশুদ্ধতার শিখরে কেবল তারাই পৌঁছায়, সমালোচনাকে যারা গ্রহণ করতে জানে।

সময় কাউকে জেতায় না, আবার ঠকায়ও না; শুধু প্রাপ্তিটুকুন বুঝিয়ে দেয়।

এই সমাজে আমি অপ্রতিষ্ঠিত বলে, আমার সত্য কথাও প্রতিষ্ঠিত হয় না ততটা; যতটা হয় প্রতিষ্ঠিত লোকগুলো মিথ্যা বললে সেই মিথ্যা।

 

রোজ কাকডাকা ভোরে বিড়বিড় করে এমন সব নীতিবাক্য আওড়াতে আওড়াতে রিকশা নিয়ে উপার্জনের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যায় অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন কাশেম মিয়া। অবশ্য কাশেম মিয়া বলে আজকাল কেউ আর তাকে ডাকে না। ডাকতো তার মা! এ বিষয়টি ভেবে প্রায়ই সে ডুব দেয় ব্যথার জলে। ব্যথিত হন দারুণরকম। দীনহীন অবস্থা সমাজে শুধু মানুষের আত্ম-সম্মান বা মানুষকেই ছোট করে ক্ষ্যান্ত হয় না, সুন্দর নামগুলোকেও অসুন্দর করে দেয় কখনো কখনো। কাশেম মিয়ার মতে, দরিদ্র ব্যক্তিদের নাম সুন্দর হওয়া খুব সম্ভবত বেমানান, বেখাপ্পা। তার মায়ের পক্ষ থেকে দেওয়া উপহার এই কাশেম মিয়া নামটাকেও খাটো করা হয়েছে, ব্যঙ্গ করা হয়েছে। সবাই এখন তাকে চেনে, জানে এবং ডাকে কাইশ্যা নামে।

 

অন্ধকারের ঘনত্ব একটু একটু করে হ্রাস পাচ্ছে, বাড়ছে পাখির কোলাহল, কমছে নীরবতা। কোথাও কোথাও থেকে বাতাসে ভেসে আসছে আজানের পবিত্র ধ্বনি। নামাজের দিকে, কল্যাণের দিকে আহ্বানরত মুয়াজ্জিন। নিত্যদিনের মতো দোকান খুলে প্রথম খদ্দের কাশেম মিয়ার জন্য প্রতিক্ষা করছেন চায়ের দোকানি সুশীল। শুরু করেছেন প্রাত্যহিক জীবনের আয়োজন। ছক করা জীবন তার। নিত্যদিনের সবকিছুই তিনি করে থাকেন নিয়ম মাফিক। মানসিকতার দিক থেকে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন প্রকৃতির মানুষ। এমন পরিচ্ছন্ন রকমের মানুষ সবকালে, সব সমাজে থাকে হাতে গোনা ক’জন। দু’চারটে কালো এবং দু’চারটে সাদা, এই হচ্ছে চুল এবং গোঁফের ধরন। গায়ের বর্ণ উজ্জ্বল। না নিজে কারো সাথে কখনো কোনো বিষয়ে ঝামেলায় জড়ায়, আর না তার সাথে জড়াতে দেয় কাউকে। এক বাক্যে বলা চলে, বল থাকা সত্ত্বেও সয়ে যাওয়া মানুষ! এমন মানুষ আজকের পৃথিবীতে মেলে ঢের কম।

 

প্রতিদিন কোন কাষ্টমার কখন আসবেন, কি খাবেন, কি বলবেন এসব বিষয়ে তার সব জানা। চায়ের কাপে প্রথমে বা একবার দেওয়া দুধ চিনিতে সন্তুষ্ট নন, এক চুমুক মুখে নিয়ে পুনরায় একটু দুধ চিনি দিয়ে নেড়ে দিতে বলেন এমন কাষ্টমার এলাকায় বিদ্যমান কতজন তাও তার জানার বাহিরে নয়। বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে বাকিতে কার্য হাসিল করবেন কে কে সেটার একটি তালিকাও আছে তার কাছে।

 

রোজকার প্রথম কাষ্টমার কাশেম মিয়া দোকান ঘেঁষে রিকশাটা রেখে দোকানি সুশীল এর উদ্দেশ্যে বললেন ‘চা দেন ভাইজান’। কিছুকিছু মানুষের কথা বলার ধরনটা বা বচন ভঙ্গিটা বেশ হৃদয়গ্রাহী, শ্রুতি মধুরও বটে! এরা যখন কথা বলেন, তখন তাদের কথা যত শোনা হয়,  আরো বেশি শোনার অভিপ্রায় জাগে। অবশ্য এমন মানুষের সন্ধ্যান পাওয়া আজকাল দুষ্কর।

খুব মিষ্টি করে কথা বলে দুই শ্রেণির মানুষ। এক শ্রেণি মিষ্টভাষী, অন্য শ্রেণি প্রতারক। কাশেম মিয়া মিষ্টভাষীদেরই একজন! সুশীল চা বানাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে আজ কাশেম মিয়া তাকে কি কথা শোনায়। চা খেতে এসে সারাদিন অনেক মানুষই তার দোকানে বসে অনেক কথা বলেন, গল্প করেন। কিন্তু সুশীল সারাদিনের সব কাষ্টমারের তুলনায় অনেকটা বেশিই গুরুত্ব দেন কাশেম মিয়ার কথাগুলো শোনায়। অপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের কথা সত্য, গুরুত্বপূর্ণ, এবং মূল্যবান হলেও তা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের কর্ণ কুহরে খুব করে পৌঁছায় না!

 

সুশীল এই দিকটা থেকে বেশ ব্যতিক্রম। এত ভোরে কাষ্টমার কম হওয়ায় কাশেম মিয়ার গুরুত্ব পেতে এবং সুশীলের দিতে সমস্যা হয় না কারোরই। কাশেম মিয়া রিকশা চালক হলেও তার সৃজনশীল মেধা আছে, সূক্ষè চিন্তাশক্তি আছে, নিঃñিদ্র বিচার বিশ্লেষণের সক্ষমতা তার প্রবল। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র নিয়ে আছে তার অগাধ মোহ, অনুরাগ, দায় এবং ভাবনা।

নিত্যদিন চা খেতে এসে তিনি এমন সব জ্ঞানগর্ভ কথা বা নীতিবাক্য বলেন যা শুনে সুশীল রীতিমতো নড়েচড়ে বসেন বা হিমসিম খান। অবশ্য মুগ্ধও যে হন তা একেবারেই মিথ্যে নয়। নতুন কিছুর প্রতি মানুষের আকর্ষিত হওয়ার বা দুর্বল হওয়ার পুরাবৃত্ত অনেক শক্তিশালী এবং পুরোনো। কোনো কিছু অনুকূলে আসা বা হাতে পাওয়া মাত্রই ধীরেধীরে তার গুরুত্ব শূন্যের কোঠায় নামতে থাকে, আর আগ্রহ বাড়তে থাকে নতুনের প্রতি। সুশীলকেও কাশেম মিয়ার নিত্যনতুন কথা, বাস্তবতা নিংড়ানো বাণী, আত্ম-সংশোধনমূলক এবং আত্ম-উন্নয়নমূলক কথা খুব টানে, আকর্ষণ করে, ভাবায়।

 

সুশীল কাশেম মিয়ার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে তার দিকে অগাধ আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছেন তিনি কি বলবেন তা শ্রবণের অভিপ্রায়ে। কাশেম মিয়া হাতে কাপ নিয়ে হেলান দিয়ে বসে চায়ের কাপে একটি চুমুক দিয়ে সুশীলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ আমাদের দেশে একটি কথার শ্রুতি আছে যে, ছেলে হোক মেয়ে হোক দু’টি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়। এই কথা কেউ মানুক বা না মানুক! আমার কথা হচ্ছে একজন পুরুষের এক ফোটা দেহের নির্যাস থেকেও সন্তান জন্ম হওয়া খুব সম্ভবত অসম্ভব নয়। কিন্তু এই নির্যাসের তেমনটা আর ব্যবহার হচ্ছে কৈ! একজন পুরুষ তার সমস্ত দাম্পত্য জীবনে দুই বা একটি সন্তান নিলে এই সন্তান নেওয়া ব্যতীত তার নির্যাসের সবটুকুই নষ্ট হচ্ছে বা ব্যবহারহীন স্খলিত হচ্ছে। হিসেব করলে দেখা যায়, একজন পুরুষের দেহের নির্যাসের শতকরা প্রায় নব্বই ভাগই কোনো কাজে আসে না”।

 

কাশেম মিয়া কিছু বলবেন, এজন্য তার মুখের দিকে হাজার বছরের প্রতিক্ষা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন সুশীল। একবার কাউকে ভালো লাগলে, তার সবকিছুই ভালো লাগতে থাকে। এমনকি সে একটি কথা বলবে, আর তা শোনার জন্য হাজার বছর প্রতিক্ষায় থাকাও আনন্দের হয়ে ওঠে। কাশেম মিয়া উপরোক্ত কথাটি বলে চায়ের কাপে পুনরায় চুমুক দিতে ব্যস্ত হলেন। সুশীল কাশেম মিয়ার কথা শুনে মাথাটা উপরে নিচে ঝাকিয়ে হ্যাঁ বোধক সায় দিলেন। তিনি আজকাল ভালো মন্দ সব মানুষের সব কথাতেই সায় দেন, কিন্তু রায় দেন না। তার বোধ এই যে, রায় প্রদানের তুলনায় সায় প্রদানে ঝামেলা কম। তিনি কোনো ঝামেলার আগে পিছে থাকতে নারাজ, তাই এমনটা করে থাকেন।

 

    অলঙ্করণ : জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ


কাশেম মিয়া চা শেষ করার লক্ষ্যে চায়ের কাপে চুমুকের পর চুমুক দিতে ব্যস্ত। অন্যদিকে সুশীল কাশেম মিয়ার কথাটা নিয়ে ভাবছেন, খুব ভাবছেন! ভাবের তরঙ্গে আত্ম ডুবিয়ে কাশেম মিয়ার কথার অর্থ, গুঢ়ার্থ, সারাংশ এবং সারমর্ম রপ্ত  করার চেষ্টা করছেন। জীবনে অনেক কিছু নিয়েই ভেবেছেন। কখনো কোনো বিষয়ে ভেবেছেন বাধ্য হয়ে,আবার কখনো কোনো বিষয়ে ভেবেছেন স্বেচ্ছায়। অথচ নিজে পুরুষ হয়েও পুরুষের নির্যাস নিয়ে তার কখনো ভাবা হয়নি। হাতের কাছে ভাবার মতো এমন অনেক বিষয়ই থাকে, যা নিয়ে মানুষ কখনো ভাবে না, মানুষের ভাবনা কাজ করে না। মানুষ কাছের বিষয়ের চেয়ে দূরের বিষয়ে এবং সাবলীল বিষয়ের চেয়ে শক্ত বিষয়ে ভাবতে তুলনামূলক বেশি আগ্রহী।

 

কাশেম মিয়া চা শেষ করে দ্রুত টাকা দিয়ে রওনা হলেন বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। বৃহস্পতিবার, তাই ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, দিনমজুর এবং শিক্ষার্থী সব শ্রেণি পেশার মানুষকে ঘিরেই আজ থাকবে ব্যস্ততা। সুশীল আজ তার দোকান উন্মুক্ত রাখবেন আধবেলা। আগামীকাল শুক্রবার, দিনের পুরোটাই থাকবে তার দোকান বন্ধ। আজ দীর্ঘদিনব্যাপী তার দোকান বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে আধবেলা, আর শুক্রবার বেলার পুরোটা। এই বন্ধ থাকার এবং বন্ধ রাখার পেছনে রয়েছে স্বল্প দৈর্ঘের এক ইতিবৃত্ত। যা সুশীলের জীবনে লাগিয়ে দিয়েছে বিবর্তন এবং পরিবর্তন উভয়ের ছোঁয়া। কিছুকিছু দিক থেকে সুশীল এখন অনেক বিবর্তিত, আবার কতিপয় দিক থেকে সে পূর্বাপেক্ষা অনেকটাই পরিবর্তিত। জীবনে কিছুকিছু ঘটনা ঘটে পুরো জীবনের মোড়টাই ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য। তা স্বর্গের দিকেও হতে পারে, বা পারে নরকের দিকেও হতে।

 

স্বাভাবিকত দৈর্ঘের দিক থেকে প্রচ- দীর্ঘ এবং প্রস্থে বেশ সরু দেহ নিয়ে বহমান একটা নদী। অত্যন্ত শান্তরকম এর বয়ে চলা, মুগ্ধকর এর মোহনা, প্রাণ জুড়ানো এর আর্দ্র বাতাস। সবাই একে ডাকে সাধুর নদী বলে। বিছানো বুকটা নদীর ছোট হলেও এই ছোট বুকেই ধারণ করে আছে এক প্রকা- ইতিহাস। কোনোকালে কোনো এক সাধুর সাধনার জোরে প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো মৃতপ্রায় এই নদীটি। সেই থেকে এই নদীর নামকরণ হয় সাধুর নদী।

 

নদীর দুই কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দুটি গ্রাম। চোখ পড়তেই মন বলে, কোনো আঁকিয়ে হয়তো আন্তরিকতার প্রাচুর্য নিয়ে সবুজ তুলি দিয়ে এঁকেছেন গ্রামদুটো। গ্রামের যেখানেই চোখ পড়ে, চোখ ফিরিয়ে আনা দায়! প্রজ্ঞা এবং সুশীল, দুই গ্রামের বাসিন্দা দু’জন।

 

প্রায় বেশকিছু বছর পূর্বে দুই পরিবারের অভিপ্রায়ে দুইকূলের দুটি সত্তাকে এককূলে আনার ব্যবস্থা হয়। সুশীল এবং প্রজ্ঞার হয় বিবাহ বন্ধনের আয়োজন। বিয়ের পর সরল প্রকৃতির সুশীল বিয়ে করে বউ পেয়েছেন নাকি স্বর্গ পেয়েছেন তা তার উল্লাস দেখে আচ করা ছিলো শক্তকাজ। বিবাহ বন্ধনটা এমন একটি বন্ধন, যে বন্ধনের মাধ্যমে একজন মানুষ তার নিজেকে হারান অন্য একজন মানুষের মাঝে এবং অন্য একজন মানুষকে আবিষ্কার করেন নিজের মাঝে। এক-আধটু আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে অজানা অচেনা বা স্বল্প চেনা জানা একটি মানুষকে জড়িয়ে নিতে হয় জীবনের সাথে, সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার সাথে।

 

সুশীলের খুব ইচ্ছে ছিলো, তার জীবন অভিধানে ‘তুমি’ শব্দটি যুক্ত হোক, তার এমন একটা মানুষ হোক যে করবে তার অপাদমস্তক দখলদারিত্ব। তার মতে, প্রতিটি মানুষেরই এমন একজন কাছের মানুষ থাকা চাই, যার কাছে হাসি কান্না ভালো মন্দ সবটাই প্রকাশ করা যায় অসঙ্কোচ, দ্বিধাহীন। এমন একটা মানুষ যার নেই, সে মস্ত বড় অভবী। সে ভাবতো, যদি কেউ একজন তুমি সম্বোধন করে কথা বলে, অন্ত্যত এইটুকুন পাওয়ার আনন্দেও হাজার বছর বেঁচে থাকা যায়।

 

কিন্তু এমনটা আর হয়ে উঠলো না! অবশ্য না হয়ে ওঠার পেছনে সুশীলের অণুমাত্র ব্যর্থতা নেই, পুরোটাই তার অদৃষ্টের নারাজী। মানুষ তার অদৃষ্ট সম্পর্কে আজন্ম অজ্ঞান। অনেক কিছুর সাথে পেরে উঠলেও মানুষ পেরে উঠতে পারে না তার অদৃষ্টের সাথে। মাথা পেতে নিতে হয় অদৃষ্টের সব শাসন। বিয়ের আয়োজন তাকে মানুষের একটি খোসামাত্রই দিয়েছিলো। তার প্রত্যাশিত মানুষটি দেয়নি! দেহ এবং মনের সমন্বয়ে গঠিত যে সত্তা, সেই সত্তার সাক্ষাৎ বা দর্শন সে পায়নি। কারণ, খাচার বাহিরে মন থাকলে, খাচার ভেতরে প্রাণ রাখা দায়!

 

দুপুর হবার পূর্বেই চলে আসলেন কাশেম মিয়া। মনটা আজ তার কেমন কেমন যেনো করছে। কখনো কখনো এমন অবস্থা হয় মানব মনের যা ব্যাখ্যা করার মতো না। মনের নিয়ন্ত্রণ হারালে মানুষ দেহের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে না। গামছায় মুখ মুছতে মুছতে কাশেম মিয়া সুশীলের দিকে চেয়ে বললেন, ‘কখনো আশার মৃত্যু, কখনো চলার মৃত্যু, কখনো বলার মৃত্যু, কখনো মৃত্যু স্বপ্নের। মানুষ আসলে মৃত্যুর মাঝেই বেঁচে থাকে। এক জীবনে মানুষ অসংখ্যবার মরে, কিন্তু সমাধিত হয় একবার’। সুশীল কাশেম মিয়ার কথায় সায় দিয়ে চা বানাতে শুরু করলেন।

 

বিয়ের প্রথম তিথি প্রতিটি নারী পুরুষের জন্য সমানভাবে গুরুত্বের, প্রাপ্তির এবং প্রত্যাশার। এ রাতটি ঘিরে প্রতিটি মানব মানবীর ভেতরে বাসা বেঁধে থাকে অগণিত এবং সীমাহীন জল্পনা কল্পনা। সঞ্চিত থাকে অপরিমেয় আবেগ। সুশীলও এই দলের মানুষগুলোর বাইরের কেউ ছিলো না। তারও ছিলো ঢেঢ়!

 

বাড়িতে নতুন বউ বা নবাগত সদস্যকে অনেকে বরণ করে নিয়েছে অনেকভাবেই, বাকি শুধু সুশীল। সুশীল আবেগের প্রাচুর্য, মুখে হাসি এবং হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করতেই তার চোখে পড়ে নতুন বউয়ের মলিন মুখম-ল। যেখানে আলোর ছড়াছড়ি থাকার কথা সেখানে আঁধারের দখলদারিত্ব। সুশীল হাসিমুখে প্রজ্ঞার সম্মুখে গিয়ে ফুলগুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে বললেন ‘নতুন জীবনে স¦াগতম’। প্রজ্ঞার দৃষ্টি নি¤œমুখী, তখনও সুশীলের চোখেমুখে লেপ্টে আছে সহজ সরল হাসি। অব্যক্ত অনিহার সাথে প্রজ্ঞা শুভেচ্ছা গ্রহণ করলেন। প্রজ্ঞার অব্যক্ত অনিহা কিছুটা স্পর্শ করে গেলো সুশীলের চোখ। কিন্তু চোখকে তিনি সেই অনিহা, সেই অনাগ্রহ, সেই অন্যমনস্কতা দেখতে বারণ করলেন।

 

তারপর দীর্ঘক্ষণ সুশীল একাই অনেক কিছু বললেন। এক-আধটু গানও গাইলেন। কিন্তু প্রজ্ঞার সাড়া নেই! সুশীলের ইচ্ছে ছিলো তার ফুলসজ্জা রাতটিতে বিশেষ বিশেষ কিছু করবেন। তার অভিপ্রায় ছিলো এমন একটি বিশেষ রাতে ঘরকে সোডিয়াম লাইটের কৃত্রিম আলোয় আলোকিত না করে মোমবাতির অকৃত্রিম আলোয় দ্যুতিময় করবেন। সমগ্র রাতব্যপী পুরো ঘর জুড়ে থাকবে আধো আলো আধো অন্ধকারের এক অপূর্ব মিশ্রণ। রকমারি পুষ্পত্যাগী সুরভী আগলে রাখবে ঘরখানা এবং ঘরের মানুষ দুটোকে। থাকবে বাংলা ইংরেজি গানের বিরাট সংগ্রহ। থাকবে নানা কথা, আরো নানা কিছু। কিন্তু এমনটা হয়ে ওঠেনি। তার সব ইচ্ছের গুড়ে পরেছে বালি।

 

মনোভাব ব্যক্ত করতে মানুষ কথা বলে। ভাষা হচ্ছে মনোভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। এক সময় মনোভাব ব্যক্ত করতে মানুষ ইশারা দিতো, বা উদ্ভট শব্দ করতো। কথা বলার জন্য প্রয়োজন শব্দ, বর্ণ বা রঙ। পৃথিবীতে প্রায় আড়াই হাজার ভাষা আছে। এবং প্রত্যেক ভাষারই শব্দ বর্ণ এবং ব্যাকরণ হয়তো আছে, থাকার কথা। কিন্তু এমন একটি ভাষা আছে যা মনোভাব প্রকাশ করতে সক্ষম, খুব সূক্ষè করেই প্রকাশ করতে সক্ষম। কিন্তু সে ভাষার লিখিত কোনো শব্দ বর্ণ এবং ব্যাকরণ নেই। আর সেই ভাষা হচ্ছে চোখের ভাষা। এই ভাষা শব্দহীন, বর্ণহীন, ব্যাকরণহীন প্রকাশ করে যায় মনোভাব। এই ভাষা অত্যন্ত সাবলীল, আবার ঢের দুরুহ!

 

সুশীল প্রজ্ঞার চোখে চোখ রেখে পাঠ করলেন তার অব্যক্ত মনোভাব। বুঝলেন তার চোখের ভাষা। নিজেকে নিবৃত করলেন পড়ে বিরক্তির বাক্য। অধিকার, প্রেম, সম্পর্ক এগুলো হচ্ছে একেবারে নবীন অঙ্কুরের মতো; অঙ্কুরকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন কোমলতা, এর সাথে তাড়ন পীড়ন একেবারেই চলে না। কিছুক্ষণ স্থির থেকে এক পৃথিবীর হতাশা নিয়ে মৃদু কন্ঠে প্রজ্ঞার উদ্দেশ্যে সুশীল বললেন, ‘ভালো হোক বা হোক মন্দ, প্রায় সব কিছুই ইতিহাস ধারণ করে তার গর্ভে। এখনকার এই সময়টি, আজকের এই রাতটি, ইতিহাস তার ভালোর তালিকায় ধারণ করবেন নাকি করবেন মন্দের তালিকায় লিপিবদ্ধ তা জানা নেই। চাইলে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন’।

 

তারপর! অতঃপর রাতের আঁধার কেটে ভোর হয়, নতুন সূর্য ছড়ায় দ্যুতি। পাখপাখালির কলরবে সমাপ্তির ঘন্টা বাজে তাদের ফুলসজ্জা তিথির।


বায়ান্নদিন পর


সুশীলের চা বানানো শেষ। সে কাশেম মিয়ার হাতে চা তুলে দিচ্ছে আর বলছে, ‘ভাই, এই পৃথিবী নিয়ে আপনার অভিমত কি’?। সুশীল সাধারণত কাউকে প্রশ্ন খুব একটা করেন না। মাঝেমাঝে করেন, তাও শুধু কাশেম মিয়াকে। এ পৃথিবীর আর কারো কাছেই তার কোনো প্রশ্ন নেই, জানতে চাওয়া নেই, অনুযোগ বা অভিযোগ নেই। তাদের দুজনের বয়সের দিক থেকে বেশ অমিল হলেও মতের দিক থেকে দুজনের বেশ খাপ খায়। মতের মিলই একপর্যয়ে মনের মিলে রূপ নেয়।

 

কাশেম মিয়া হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিলেন। চায়ের কাপে ছোটছোট চুমুক দিচ্ছেন। তার মুখম-লে জমাট বাঁধলো ভাবনার মেঘ। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় নেওয়া বা ভেবে দেওয়া জ্ঞানীদের বৈশিষ্ট্য। কাশেম মিয়া চায়ের কাপটা টেবিলে রাখলেন, তারপর বললেন। ‘জানেন ভাই, কিছুকিছু বিষয়ে যতই জানতে চাই, যতই জানি, ততই অজ্ঞতা জাগে। অনেক জেনেও একটা না জানার হাহাকার থেকেই যায়। জীবন এবং পৃথিবী, এই দু’টো নিয়ে ভেবে কোনো কূলে উঠতে পারিনি আজও। মাঝামাঝিই থেকে গেছি। এরা বোধ হয় কাউকে কূলে উঠতে দেয় না।

তবে আমার মতে পৃথিবী হচ্ছে স্বর্গ এবং নরক দু’টোই। দুই প্রকৃতির মানুষ পৃথিবীকে দুই রকম করে পায়। পৃথিবীর নারকীয় অনলে দগ্ধ হন এবং নারকীয় চিত্রগুলো দেখতে পান ভালো মানুষেরা, শুদ্ধ মানুষেরা। আর এই পৃথিবীটাকে স্বর্গের মতো করে পায় এবং উপভোগ করে মন্দ মানুষেরা, অশুদ্ধ মানুষেরা’। বলতে বলতে বিদায় নিলেন কাশেম মিয়া। সুশীল ডুবে গেলেন কাশেম মিয়ার কথার গূঢ়ার্থ খোঁজার ভাবনায়।

 

কোনো সম্পর্কের ধরনই চিরকাল এক থাকে না; হয়তো হালকা হয়, নয়তো হয় গাঢ়। হয়ই হয়। সম্পর্কের অবস্থার এই প্রতিনিয়ত পরিবর্তন একটি অলিখিত প্রথা। অলিখিত হলেও বেশ শক্তিশালী বটে! নতুন বিয়ে করা সুশীল একমাস বাইশদিনের অন্যমনস্কতা থেকে নিজেকে উত্তরিত করে মানসিকতাটা একটু ঝরঝরে করলেন। এতগুলোদিন একসাথে এক ঘরে থেকেও কথা হয়নি করো সাথে কারোর। হয়নি এক আধটু চোখাচোখিও। পাশে থেকেও কাছে থাকা হয়নি কেউ কারোর। মনের সাথে মনের নৈকট্য থাকলে, দেহের সাথে দেহের দূরত্ব থাকলেও সে সম্পর্ক থাকে বসন্তের পত্রপল্লবের মতো প্রাণবন্ত, প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাসের মতো সজীব, শস্যভরা মাঠের মতো চোখ শীতলকরা। আর মন থেকে মনের দূরত্ব থাকলে, দেহের খুব কাছে দেহ থাকলেও সে বন্ধন, সে সম্পর্ক হয় প্রাণহীন, রুক্ষ, উত্তপ্ত মরুভূমির মতো চোখ ঝলসে দেয়া। এই ক’দিনে এই কথাগুলো খুব ভালো বোধে এসেছে সুশীলের।

 

মেয়ে মানুষের জীবনটা কেমন যেনো! অবাক করার মতো বলা চলে। জন্মদাতা বাবা, গর্ভেধাত্রী মা, প্রাণপ্রিয় ভাই বোন স্বজন সব ছেড়ে চলে আসতে হয় একজন স্বল্প জানা বা একেবারেই না জানা মানুষের কাছে। স্বেচ্ছায় ছেড়ে এসে জন্মের বাঁধন, গড়তে হয় আরেক নতুন বন্ধন। এই বোধটা যে পুরুষের মাঝে জাগে বা থাকে, সে পুরুষের পক্ষে স্ত্রীর প্রতি যতœবান হওয়া ঢের সহজ হয়ে আসে।

নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়তো কষ্ট হচ্ছে। যারা কাছে আসতে সময় নেয়, তারা দূরে যেতেও সময় নেয়। আর যারা খুব সহজেই কাছে আসে, তারা খুব সহজেই দূরে চলে যায়। পরিবার পরিজন ছেড়ে চলে আসা মানুষটার এক আধটু অস্বস্তি লাগতেই পারে! একটু বিষাদ জাগতেই পারে! যারা ‘জান’ বলতে সময় নেয় না; তারা ‘যান’ বলতেও সময় নেয় না। প্রজ্ঞা হয়তো একটু বিলম্বেই শোনাবেন ভালবাসার স্বর্গীয় বাণী। পান করাবেন অনুরাগের সুধা। এসব ভেবে ভেবেই এই ক’দিন খুব একটা গায়ে পড়ে কথা বলতে এবং কাছে ঘেঁষে চলতে চায়নি সুশীল। যদিও গত হয়েছে বায়ান্নটি দিন।

 

যে আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলে, তার আর হারানোর মতো মূল্যবান কিছু থাকে না। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে, থাকে, যারা আত্মসম্মানের ঢের যতœ নেয়; যেমনটা নেয় দেহ এবং প্রাণের। প্রাণ হারানোর মতোই আত্মসম্মান হারানো সম্পর্কে তারা থাকে বেশ সচেতন। সুশীল এই প্রকৃতির মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম।

 

এই ক’দিন দূরেদূরে থাকলেও আজ গায়ে পরেই কথা বলবো। বলবোই তো, আমার বিয়ে করা বৌ বটে! সব নীরবতার অবসান ঘটাবো আজ। এই মনস্থির করে বাড়ি রওনা হলেন সুশীল। বেশ কিছুদিন এক ঘরে থেকে একটু হলেও মোহ এবং অনুরাগ জন্মেছে। হয়তো সেটা এক পাক্ষিক। মোহ এবং অনুরাগের পরিমাণ কোনো কালে কোনো সম্পর্কেই দ্বি-পাক্ষিক বা দুইজনের সমান ছিলো না, থাকে না। কারো একটু বেশি থাকে, আবার কারো থাকে একটু কম।

 

এতদিন নাম ধরে ডাকেননি, দরজায় কড়া নেড়েছিলেন শুধু। আজ মোহ এবং ভালবাসার নিকট পরাজিত হয়ে দরজা খোলার জন্য সুশীল বাইরে থেকে নাম ধরে ডাকলেন ‘প্রজ্ঞা’ ‘প্রজ্ঞাআআ’ ‘প্রজ্ঞাআআআ’। মানুষ জীবনে সবচেয়ে বেশি পরাজিত হন মোহ এবং ভালোবাসার নিকট। বেশ ক’বার ডাকলেও সাড়া নেই প্রজ্ঞার। খানিকটা ভাঁজ পরলো সুশীলের কপালে। দরজায় আলতো করে ধাক্কা দিতেই কপাট দু’টো দুদিকে হলো সহজে। ঘরে প্রবেশ করেই অবাক হন সুশীল। প্রজ্ঞার ছায়াও নেই ঘরটায়। ঘরে বাহিরে কোথাও খুঁজে না পেয়ে পুনরায় ঘরে এসে খাটের উপরে হতাশ হয়ে বসতেই তার চোখ যায় টেবিলে। চৈত্রের হয়রান কুকুরের মতো হাপাচ্ছে সে।

 

টেবিলে কালো চিরুনির নিচে দেখা যাচ্ছে একটি সাদা কাগজ। এমন স্থানে এমন সাদা কাগজ কেমন করে এলো তাই ভাবছেন সুশীল। জানালা ভেদ করে আসছে দক্ষিণা বাতাস, স্পর্শ করছে তার শরীর। ছোটাছুটির পর ঘর্মাক্ত দেহ নিয়ে খাটে বসতেই দেহটা প্রায় ভারসাম্য হারিয়ে শক্তিহীন হয়ে এসেছে। বাতাসে কাগজের কোণাগুলো উল্টে-পাল্টে নড়ছে অবিরাম। সৃষ্টি করছে গভীর রহস্য। যে রহস্যের উৎঘাটন না করলেই নয়। আগ্রহ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কাগজটি হাতে নিলেন সুশীল। তাতে লেখা,


‘‘শব্দ বর্ণের উপর ভর দিয়ে মানুষকে মনোভাব ব্যক্ত করতে হয়। ভেতরটাকে বাহির করতে হয়, অশরীরীকে করে তুলতে হয় শরীরী। কিন্তু মনের ভাব বা সুপ্ত কথা যখন জমে গাঢ় থেকে প্রগাঢ় হয়ে ওঠে, তখন সেই ভাবকে, সেই কথাকে কোনো শব্দ বর্ণ ধারণ করতে পারে নাকি আদৌ জানা নেই। ভেতরের ভারটা পুরোপুরি বহন করতে পারে এমন শব্দ বর্ণের উদ্ভব আজও ঘটেছে নাকি তাও অজানা।

 

শব্দ বর্ণ নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের যে ভাবনা, সে ভাবনালব্ধ ধারনা থেকে বলছি। মানুষের মনোভাবের প্রাথমিক যে স্তর, অভিধানের শব্দগুলো সেই প্রাথমিক স্তরটাকেই ধারণ করতে পারে, এর বেশি পারে না। এই কাগজের শব্দগুলোও আমার মনোভাবের প্রাথমিক স্তরকে অতিক্রম করে ধারণ করতে পারেনি গাঢ় ভাবটাকে। প্রকাশ ঘটাতে পারেনি সেই সব কথাগুলোর, যেগুলোর ব্যক্ত করাটা ছিলো এই সময়ের উপযুক্ত চাওয়া।

 

মানুষ এবং মহামানুষ, এই দু’টোর মধ্যে ব্যবধান গড়ে দেয় যে জিনিসটি, তা হচ্ছে চরিত্র। চরিত্রের উপর ভর দিয়ে মানুষ অমানুষে পরিণত হয়, আবার চরিত্রের সিড়ি বেয়েই মানুষ পৌঁছে যায় মহা মানুষের স্তরে। কোনো মহা মানবের সাক্ষাৎ পাওয়ার যে ইচ্ছে আমার লালিত ছিলো দীর্ঘকাল ধরে, সে ইচ্ছে বা অভিপ্রায় কতটুকু পূর্ণ হলো তা জানি না; তবে বিন্দুমাত্র অপূর্ণতা নেই এটা জানি এবং জানবো আগামীর সবকাল ধরে।

 

এই চিঠি যখন আপনি হাতে পাবেন, তখন আমি আপনার থেকে অনেক দূরে। অবশ্য কাছে ছিলাম কখনো তাও নয়! দেহের পাশে থাকাই তো আর কাছে থাকা নয়, মনের কাছে থাকাই মূলত কাছে থাকা। দেহের পাশে থাকাই যদি কাছে থাকা হতো, তাহলে কোনো মানুষেরই মৌনতা বোধ জাগতো না কখনো, একলা একলা লাগতো না কখনো। আশেপাশে অনেকে থাকা সত্ত্বেও আমাদের একলা একলা লাগে তখনই, যখন মনের কাছে থাকে না কেউ!

 

এই কূলে দেহ থাকলেও ঐ কূলে পড়ে ছিলো আমার মন। মনকে এই কূলে বাঁধার চেষ্টা করেছিলাম খুব, কিন্তু বায়ান্ন দিনেও কাজ হয়নি! না হবারই কথা। মনের বিরুদ্ধে চলা শক্তকাজ। মনের বিরুদ্ধে চলতে সক্ষম এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে বড্ড কম। যারা বলে, মানুষ মনের নিয়ন্ত্রক, মন মানুষের নিয়ন্ত্রক না। তাদের মনটাও তাদের নিয়ন্ত্রণ হারায় কখনো কখনো! জান্তে বা অজান্তে। যে বলে হারায় না, তাকে হয়তো মিথ্যুক বলা যায়!

 

প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই এমন একজন মানুষের আগমন ঘটে, যে মানুষটা স্বল্প সময়ের জন্য জীবনে আসলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য দাগ রেখে যায়। সেই দাগ যায় না মুছে ফেলা কখনো। আপনার জীবনে আমি এমন মানুষ হয়ে না থাকলেও আমার জীবনে আপনি তেমন মানুষ হয়েই থাকবেন।

আমাকে ক্ষমা করবেন, আপনার ক্ষমাই আমার সুখের যোগান দেবে। নিঃশর্ত ক্ষমা.. .”


অতঃপর গত হয়েছে কতদিন তা সংখ্যায় ঢের। বৃহস্পতিবার আধবেলা, এবং শুক্রবার দিনের পুরোটাই এখন বন্ধ থাকে সুশীলের দোকান। তার আশেপাশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া শক্ত কাজ যে এই খবরটা সম্পর্কে অবগত নয়। সুশীল এখন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এবং শুক্রবার সকাল থেকে ঘুরে বেড়ান গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, খুঁজে বেড়ান বিয়ে বাড়ি। বিয়ে বাড়ির খোঁজ পাওয়া মাত্রই ছুটে যান সুশীল, এবং পাত্র পাত্রীর অভিভাবকদের বলেন,

“ওদের দুজনার দু’টি মন যদি দুই কূলে থাকে,

তাহলে জোর করে দুজনার দু’টি দেহ এক কূলে আনা ঠিক নয়”.. .




শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট