হাওয়াই মিঠাই


হাওয়াই মিঠাই

তামীম আল আদনান


অরু। ষোড়শী মেয়ে। ওড়নার কোণায় ঝুলে আছে দুরন্তপনা। স্বপ্নের অসংখ্য অলিগলিতে হাঁটতে হাঁটতে অরু ভাবে ‘কিছুদিন বাদে আমার বিয়ে’! ভাবতেই লজ্জায় গলে যায়। অরু কল্পনায় একটা সংসার সাজায়। একটা ছিমছাম বাড়ি। বাড়ির দেয়ালে পরিচ্ছন্নতার ছাপ। পুতুলের মতো একটা মেয়ে ঘরময় হেঁটে বেড়াবে। অপরিচিত শশুর বাড়ির সবাই যদি চলে যায় তখন দিনশেষে স্বামী এসে বলবে মন খারাপ কেন? আমি আছি না তোমার পাশে! অরু তখন বালিকার মতো স্বামীর বুকে মাথা গুজবে। মনে মনে বলবে আমার ভরসার একমাত্র ছাদ।

এই রঙিন স্বপ্ন দেখা মেয়েটার বিয়ে হয়েছে আজ একযুগ হয়েছে। এতোদিনেও মেয়েটার নিজের কোনো সংসার হয়নি। ভরসার ছাদ ভাবা স্বামী কখনো বলেনি আজকে কি তোমার মন খারাপ (?) স্বপ্নের রঙিন শশুর বাড়িকে মনে হয় “পৃথিবীর সব চেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা”।


তপু দস্যি ছেলে। যার রঙিন ঘুড়িতে ভর করে নামে সন্ধ্যা-রাত। বড় হতে হতে তপু স্বপ্ন দেখে নিজের ভবিষ্যতের; বন্ধুদের বুক উঁচিয়ে বলে? “আমার ব্যাবসা বাবার ব্যাবসার চেয়েও বড় হবে। দেশের বাহিরেও আমার ব্যাবসার প্রজেক্ট থাকবে...” ঘনঘন রিকশার টুংটাং আওয়াজে বাস্তবে ফিরে আসে তপু। রিকশাওয়ালা ঝাঁঝালো গলায় বলে “ওই মিয়া বাসার থেইক্কা কি কিছু খাইয়া বাইর হননি! এক ঘন্টা ধইরা বেল বাজাইতোছি কানে যায় না?” রিকশাওয়ালার ভাবখানা এমন যে, এই শহরের সর্বশেষ জমিদার উনি।

তপু কপালের ঘাম মুছে স্বপ্নের রঙিন ফানুস উড়ানো শৈশবে আরো একবার ফিরে যেতে চায়, কিন্তু পারে না। চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে চালশূন্য হাঁড়ি, আবদার পূরণ না করায় গাল ফোলানো ছেলের শুকনো চেহারা, পাওনাদারদের অকথ্য ভাষা। তপু দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে; রঙিন স্বপ্নগুলো অদৃশ্য হয়ে যায় রঙচটা বাস্তবতার কাছে।  যেমন বাতাসে মিইয়ে যায় রঙিন ‘হাওয়াই মিঠাই’।


উৎসর্গ অরু এবং তপু কে। যারা মরে যাবার আগে স্বপ্নের মতন একটা দিন বাঁচতে চায়।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট