ট্রাই-এঙ্গেল লাভ =জিরো

 



ট্রাই-এঙ্গেল লাভ =জিরো

জুয়েল মাহমুদ


বসে বসে কবিতা লিখছি আমি। আব্বু বাজার থেকে এসে বলল তোকে হোম কেয়ার সেন্টারে কোচিং করানোর জন্য চাচ্ছে।

তুই কি বলিস? আমি বললাম, নিসঙ্গ জীবনে আমি চাহি যারে সে আমাকে দিল ফাঁকি, ওগো প্রিয়তমা আজও আমি তোমাকে ডাকি।

আব্বু বলল মাথা গেছে। তুই পাগল হয়ে যাবি। দুপুরের ভাত খেলাম। যখন বিকেল হলো জমিনের আইল মেপে সে কাঙ্ক্ষিত সেন্টারে গিয়ে দেখা করলাম।

ভাবছি আহা! কত স্টুডেন্ট হবে কি জানি। খুব একটা ভাব নিয়ে গেলাম। সেন্টারে গিয়ে দেখি কোন স্টুডেন্ট নাই। কাল থেকে দুজন আসবে তারপর আস্তে আস্তে স্টুডেন্ট বাড়বে।আহা! এত ভাব ধরে গেলাম কি হইল? যাইহোক, কিছুদিন পর অমি নামে একটা ছেলে আসলো। ওরা চারজন। সাইন্সে পড়ে। আমাকে সাইন্সের সব বিষয় পড়াতে হবে। আমি প্রস্তুত।

মনের আকাশে যখন রং লেগেছে, রংধনুর রং সেখানে অবহেলিত। পরের দিন অমি তিনজন মেয়ে ও একজন ছেলে নিয়ে আসলো। পরিচয় পর্ব আব্দুল্লাহ, আয়েশা আক্তার, বেনে বৌ, ও তার বান্ধবী। 

বড় একটা লেকচার দিয়ে পাঠ শুরু করলাম।

আমি জানতাম অমির সাথে এখানে যে কোন একজনের রিলেশন আছে। কার সাথে? আয়েশা নাকি তার বান্ধবীর সাথ । যাক আস্তে আস্তে জানব। কিন্তু জানার আগ্রহটা বাড়লো অন্য একদিন যেদিন খোলা চুলের মিষ্টি খোঁপায় বেলীফুলের বেনীর মত সুন্দর সবুজকালারের জামা পরে আসা প্রিয়তমাকে দেখে।

তখন দুটি চরণ লিখেছিলাম

“তোমারই খোঁপায় দিব গুজে ফুল

প্রিয়তমা তোমার মাথায় রেশমি কালো চুল।

ভালো বেসেছি তোমায় ওগো প্রিয়তমা।

কিন্তু আমি ব্যার্থ প্রিয়তমার মন জয়ে। 

তা আজও উদঘাটন করতে পারিনি। হয়ত ট্রাই-এঙ্গেল লাভই হবে। অমি কে নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। তাই হলো। প্রচুর বৃষ্টি। আমি বসে আছি ক্লাসে। ওরা আসছে। তাদের দুজন আসলেও অমি আর আরেকজন মেয়ে আসে নাই। খোঁজ নিয়ে জানলাম তারা আসতেছে। জানালা দিয়ে দেখি, এক ছাতায় দুজন। রোমান্টিক একটা গল্পের নায়ক নায়িকা আমার চক্ষে ভেসে উঠল। এই যেন প্রেম মানেনা কোন বাঁধা মুভির সিন। বৃষ্টি হচ্ছে, চারদিকে রোমান্টিক পরিবেশ একজন আরেকজনের হাত ধরে বলছে, জানো তুমিই আমার স্বপ্নের সেই মানুষ। তোমাকে ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয়। তুমি যখন আমার সামনে আসো আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সুখগুলো আমার। কথা দাও আমাদকে ছেড়ে যাবেনা।

হঠাৎ বৃষ্টি থেমে গেল, আমি ভাবছি হয়ত আকাশ তাদের এমন ভালোবাসা দেখে কান্না থামিয়ে দিল। আমি কথাগুলো ভাবতে থাকি। তারা দুজন আসলো। আমি বুজালাম তোমরা যা করোনা কেন, পড়া লেখা আসল। এভাবেই চলছে তাদের প্রেম। আমি তাদের নাম দিয়েছি বেঙ্গমা-বেঙ্গমী। অশ্বথু গাছের ছায়ায় যেন দুটো ভালোবাসার জুটি। আমার খুব হিংসে হত। আমার প্রিয়তমা আমাকে বুজলনা। অনুপমাকে একদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে প্রপোজ করছিলাম সে না করে দিলো। তখন এই হৃদয়ে বিরহের দোল খায়। ছন্দগুলোও তাল হারিয়ে আমাকে সবার কাছে অপরাধী করে দেয়। যাইহোক অমি ও মেয়েটির ভালোবাসা এতই বেশি যে মেয়েটি যখন আমার কাছে পড়ার জন্য অন্য জায়গায় যাইত অমি তাকে ভালোবাসার কসম দিলেই মেয়েটি প্রেমের জন্য বিসর্জন দেয়। মাঝেমধ্যে অমি আমার কাছে আসত। আমি তাকে কবিতা শুনাইতাম। সে এগুলো নোট করত। এই যেন নতুন কবির প্রেমের গল্প। আস্তে আস্তে তাদের প্রেম গভীর হয় আর আমার কাছ থেকে তারা অনেক দুরে চলে যায়। তাদের দিনগুলো ছিল চিরসবুজ স্মরনীয়। একটা নৈসর্গিক  সৌন্দর্যের কাহিনী। আচ্ছা তুমি কি আমায় সত্যি ভালোবাসো?

অমি:- হ্যাঁ। কেন একথা বললে? 

আমার না তোমাকে হারাতে চাই না। আমি তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই। 

অমি:- কেন, বিশ্বাস হয় না? দাড়াও।

বন্ধুদের ডাকি।

এই তোরা শুন। ও আর আমি এখন বিয়ে করব তোরা দুজন সাক্ষী। 

বান্ধবী:- কিভাবে? 

অমি:- আমরা এখন কালমা পড়ব, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে কবুল বলব তোরা সাক্ষী। 

তাদের গল্পটা যেন রাজ্যহীন রাজ্যের প্রেমকাহিনী। আমার বলতে ইচ্ছে করে “তোমার জন্য আমার হৃদয়ে পঁচন ধরেছে, তোমার ছোঁয়ায় আমি উল্বেসিত। তাদের মাঝে অনেক চিঠি আদান প্রদান হত। যা দিস্তায় বাঁধায় করার মত। একদিন তার খালাতো ভাইয়ের কাছে ধরা পড়ে গেল। শত বাঁধা দিও আলাদা করতে পারল না। হয়ত তাদের মনে ছিল পৃথিবীর সব একদিকে আর আমরা একদিকে। সাত সাগর পাড়ি দিব তবুও তোমাকে নিয়েই যাব। আমার মাঝে তাদের দূরত্ব বাড়লেও দূরত্ব কমেনি তাদের প্রেমে। যেন পোড়ামন মুভির দৃশ্য। 

হ্যালো, কী করো?

অমি:- পড়ি। তুমি? 

আমিও পড়ি

অমি:- খাইছো?

না, ইচ্ছে করে না। তোমাকে দেখতে খুব মন চাই। স্কুল বন্ধ। ভালো লাগেনা কিছু। 

এভাবেই তাদের রাত কাটতো। 

হঠাৎ তাদের গল্পে ভিলেনের আগমন ঘটে। ভিলেন রুপে পরিচালক আমাকেই প্রমোট করেন। এটাই ভাগ্যের পরিহাস। শত্রুহিসেবে আমার আবির্ভাব আমি মেনে নিতেই পারছিনা। মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। অমি পাগল হয়ে গেল। কারণ যাকে নিয়ে তার স্বপ্ন, বিসর্জন, আত্মত্যাগ নিঃস্বার্থ স্নেহময়ী সে আজ দূরে সরে যাচ্ছে। অথচ গল্পের ভিলেন শুরুর পার্টে থাকলেও মূল ভিলেন মেয়ের ভাই। 

তবুও আমি রয়ে গেলাম ভিলেনের কাঠগড়ায়। ভালোবাসা উজাড় করতে চেয়েছি পেয়েছি কারাদন্ড। আমিও চলে আসি এলাকা ছেড়ে। এদিকে আমার ভারত যাওয়ার কাগজপত্র রেডি হলে আমি চলে আসি ভারতের কলকাতা মোহনবাগান। আসার আগে আমি ছিলাম অসহায়। আমাকে মারার হুমকি প্রকাশ্যে দিলে কবি এখানেই নিরব। আমি ব্যর্থ বুঝাতে। 

হঠাৎ একদিন শুনি অমি মেয়েটিকে নিয়ে পালালো। সে তাকে নিয়ে মেয়ের আত্মীয়র বাড়িতে উঠে কিন্তু সেখানেই তাদের প্রেমের সমাধি হয়। এ যেন “প্রিয়া রে” মুভির সে দৃশ্য। শতশত আঘাত সইতে হলো। তবুও আশায় ছিল মেয়েটি তাকে বলবে, তার কাছে আবার এসে বলবে “আমি তোমাকেই ভালোবাসি”

যখন মেয়েকে ঘরে মেয়ের বড় ভাই আটকে রাখে তখন ছেলেটির হৃদয়ের অনুভূতি বুজার মত কেউই ছিলনা। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে আল্লাহর কাছে শুধু বলতো ওগো প্রভু আমি শুধু তাকেই চাই। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটতে থাকে আর ভিতরটা চিৎকার করতে থাকে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে জোরে চিৎকার করে কাঁদে আর বলে ‘হে স্বার্থপর আমি তোকেই ভালোবাসি। আমি তোকেই ভালোবাসি আমি তোকেই ভালোবাসি। হয়ত এই প্রতিধ্বনি ফিরে এসে তার কানেই বাজতো তার সুরেই কিন্তু উত্তর আসতনা তার প্রিয়তমার। 

স্বপ্ন বুনতে থাকা গল্পের প্রেমিকের স্বপ্ন সত্যি হলো, মেয়েটি বউ সেজেছে খুব সুন্দরভাবে। সে ভাবতে থাকে এইতো আমার প্রিয়তমা। কিন্তু তার বউ সাজাটা ছেলেটির জন্য খুঁশির ছিলনা। কেননা স্বার্থপর মেয়েটি তার জন্য বউ সাজেনি সেজেছে অন্যজনের জন্য। ছেলেটির হৃদয়ে তখন পোড়াগন্ধ শুরু হয়। ঘটে একটি ট্রাই-এঙ্গেল লাভ এর কাহিনি। মেয়েটির প্রাপ্তি হলেও ছেলেটির জন্য একুয়েল জিরো।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট