পুতুল বউ

 


পুতুল বউ

দিপংকর দাশ


রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছুটে যেতাম তেঁতুল গাছের তলায়। মগডালে চড়ে তেঁতুল পেরে পকেট ভর্তি করে বসতাম পুকুর পাড়ে। আগে থেকেই পকেটে কাঁচামরিচ আর লবণ ভরে রেখেছিলাম। এবার তেঁতুলের সাথে এগুলো মিশিয়ে খেতাম। অত্যন্ত ঝাল। জিভে জ্বালাপোড়া করতো। তবুও এর স্বাদ বলার মত নয়। রিংকু আর সুমন দুটোই ঝগড়াটে। কথায় কথায় ঝগড়া করত। কখনো রিংকু সুমনের তেঁতুল কেড়ে নিত আবার কখনো সুমন রিংকুরটা কাড়ত। ঝগড়া থামাতে বেগ পেতে হত আমায়। যেভাবেই হোক থামাতাম। খাওয়া শেষ। মায়ের ডাকডাকি। বাড়ি ফিরে আসতাম। ওরাও নিজেদের বাড়ি চলে যেত।


খাওয়া দাওয়া শেষে স্কুলে যাওয়ার সময় আবার একসাথে তিনজন। নানান গল্প আর কোথায় কি আছে চুরি করার পরিকল্পনা করতে করতে স্কুলে গমন। স্কুল থেকে ফিরে মায়ের সাথে খাওয়া। খাওয়ার পর কি আর মায়ের কথা কানে আসে? ছুটে গেলাম নদীর পাড়ে। রহিমুদ্দিনের ডিঙিতে চেপে তিনজন গেলাম পদ্ম বিলে। কুড়িয়ে নিলাম অনেক পদ্ম। আসার সময় আবার ঐ দুই শয়তানের ঝগড়া। এক সময় রিংকু ধাক্কা মারে সুমনকে। সুমন পানিতে পড়ে যায়। টেনে তোলার দায়িত্ব তো আমারই। তুললাম টেনে নৌকায়। কোনো রকম তীরে আসলাম। পদ্ম দিয়ে মালা তৈরী করলাম।


এদিকে সিঁথি, ডলি, কেয়া আর সঞ্চিতা মিলে তৈরী করে পাতার ঘর। ওদের কাছে মালা নিয়ে হাজির হই আমরা। এক নতুন ধরণের খেলা আবিষ্কার করেছে সিঁথি। খেলার নাম পুতুল-বউ। বউ সাজবে সিঁথি আর বর কে হবে তাই নিয়ে চলছে যুদ্ধ। কিন্তু সিঁথি যাকে বলবে সেইতো হবে বর। সবার মুখ বন্ধ করে সিঁথি আমাকেই বর হিসেবে বেছে নিলো। আহ! পরম তৃপ্তি পেয়েছি আমি। খুশিতে আকাশে চিল হয়ে উড়তে ইচ্ছে করছে আমার। সিঁথি একটি শাড়ি পড়ে মাথায় পাতার তৈরী মুকুট পড়েছে। দেখতে পরীর চেয়েও সুন্দরী মনে হয়েছে ওকে। মন জুড়িয়ে গেলো।


রিংকু আর সুমন মিলে আমাকেও বর সাজাচ্ছে। পাঞ্জাবী পড়লাম। মাথায় ফুল আর পাতার তৈরী মুকুট। দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে আমাকে, রিংকু বলল। আমরা পাতার তেরী ঘরে (কনের বাড়িতে) পৌঁছে গেলাম। ওরাও তৈরী। বিয়ে শুরু। বিয়ে পড়াচ্ছে সুমন। তারপর কত্ত মজা হলো। পুতুল বউ খেলাটা আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় খেলার মধ্যে একটি। কেননা এই খেলার মাঝেই আমি সিঁথিকে বউ হিসেবে পেয়েছিলাম।


আজ আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষে। সিঁথিও। আমি বৃন্দাবন সরকারি কলেজে আর সিঁথি মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে। মনে পড়ে মাঝে মাঝে। কিন্তু কথা হয় না সাত বছর ধরে। হয়তো কাউকে পেয়ে গেছে মনের মতো। আমাকে ভুলে গেছে। কিন্তু আমি ওকে ভুলতে পারি নি। ভুলবও না। যখন চাকরি পাবো ওকে বিয়ে করবো সবার অনুমতি সাপেক্ষে। জীবনের প্রথম যাকে পুতুল বউ হিসেবে পেয়েছি আজীবন পেতে চাই ওকে, আজীবন।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট