এই সংখ্যায় পদাবলী
লিখেছেন-
আকাশ মামুন, ফারহানা সুমি, লুৎফুন নাহার লোপা, জোবায়ের মিলন, মিসির
হাছনাইন, বিটুল দেব, নাবিল তুরাব, আকিব শিকদার, মিশির হাবিব, আহমাদ মেহেদী এবং
উষার মাহমুদ।
_________________________
শীতকাল
ফারহানা
সুমি
আপনার সঙ্গে ধান ক্ষেতে হাঁটবার কথা ছিল শীতকালে।
ক্যালেন্ডারে ঝরে পড়া শুরু করেছে কোয়াশা,
তারিখ ভিজেছে দু’ এক হল।
এখানে শীতকাল শুধু ক্যালেন্ডারেই নেমে আসে, কোথায় যেন মেলেনা কোয়াশা, ভেজা ঘাস... ঘাস বলেও কিচ্ছুটি নেই শহরের শরীরে। শুধু কাগজ শুয়ে থাকে বাসার চারপাশ ঘাসেদের মত সবুজ
বিহীন।
রানু আপনাদের ঘাসের পৃথিবীতে যাবো একদিন, এবার না হলেও
অন্য কোনো শীতের সকালে
ধানক্ষেতে হেঁটে দূরের
গ্রামের ডাকনাম দিবো শীতকাল,
যেহেতু কাছের কোয়াশা থেকে চোখ ভেজাতে জানে দূরের কোয়াশা ঘোর, কাছেরা হয় জলের নূপুর।
রানু আপনার পায়ে জলের
নূপুর
যদি লেগে যায় কি নাম
দিবো তার
শীতকাল...
পাপ
অপু সরকার
ভালোবেসে বিছানায় গেলে
পাপ হবে!
তোমার হবে যা, তাও কী আমার?
কোনো এক সূর্য্য খুনের পরে
বুকের ভেতরে লেগে থাকা তামাটে অন্ধকার
আমি ভাবি তুমি কার
আমি কার
আমাদের পাপগুলো
কীভাবে কেন শুধু আমার?
এভাবে দিন গেলে
নিঃসঙ্গ হতে আর কতো দেরী?
সঙ্গী কী কখনো ছিলে আমার
জলের প্রথম ভাগে পাপ ধুতে যেয়ে
হে প্রতিবিম্ব সঙ্গি প্রশ্ন আমার
শোক
লুৎফুন নাহার লোপা
আজকাল কেঁদে ফেলি সহজেই
চোখের ভেতর অনিন্দ মৃত্যুর মতো
জেগে থাকে সাধারণ মানুষের শোক।
এমনকি যারা আমাকে শিখিয়েছিল
একাকিত্বের অনিশ্চিত পথের প্রার্থনা
তাদের জন্যেও উপোস কাটে বেলা।
বাস্তব কিংবা গণমাধ্যমের দিকে
কেবলই হাসিমুখ খুঁজে ফিরি যেন,
শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধদের চোখ-
কাশফুল থেকে গোলাপের প্রতিচ্ছবি
আমাকে জানায় প্রেমের পঙ্ক্তিমালা,
এক শান্তিময় পৃথিবীর স্বপ্নে
আমি বিচ্ছিন্ন হই বারবার,
অথচ আমার এই নিশ্চুপ আবেগ
পৃথিবীর দূর্বলতা মাত্র।
জুগুপ্সা
ঊষার মাহমুদ
বিকেলের
ডাকপিয়ন শান্ত রোদের খামে
তোমার অবহেলা
বিলিয়ে যায় আমার উঠোনে
লতাপাতার
ফাঁকাধরে আসা আলোর উপহাসে
জুগুপ্সার
গভীরতা টেরপাই।
পথের দূরত্বে
বোবাকাঁন্না বেড়ে যায়,
পথের নির্মম
বাঁক ক্রমশেই কেড়ে নিচ্ছে
তোমাকে ডাকার অধিকার;
অবাধ্য ইচ্ছেগুলো
ভুলে যাচ্ছে নীড়ে ফেরা।
যে চোখে
তোমাকে দেখেছি সে চোখে অন্যকাউকে
দেখতে পাইনা;
নিঃশ্বাস
বলো আর বিশ্বাস বলো দু’টোই তুমি;
রাতের ঘুম
কতটা পরাজিত তোমার কাছে
তা শুধু
আমি জানি ।
খেলোয়ার
মিশির হাবিব
আপনি যে তার কাছে যেতে চান
তাকে চেনেন, যার রূপে পুড়েছিলো পাহাড়।
সবল শরীরে কী এক দুঃসহ উন্মাদনা
কেমন কৌশলে ছোটায় হাওয়া জল মাটি আর
আগুনে তৈরি পুতুলের পিছনে।
ব্যস্ত রাখে সে অতৃপ্তি আর আকাক্সক্ষার অপাড় সাগরে
যেন তারে খোঁজে পাওয়া দায় ভীষণ
সুচেনা যে সরুপথে এসেছি আলোর স্পর্শে
সেই পথে ঢুকে কতজনের কলঙ্ক রটে
কাহারের খেলা বুঝি না তাই তারে খুঁজি না আর।
নড়বড়ে অভিমান
আকিব শিকদার
হাসিতে তার
মিষ্টতা বড়ো, পিঁপড়েরা চেটে খাবে
কথার খোঁচায়
এমনই জোর, যমদূতও মরে যাবে
এমন পুরুষ
সাতজনমে দেখিনি তো আগে
তবু তাকে
কেন যে আমার এত্তো ভালো লাগে!!
চার দেয়ালে
বন্দি আছি বেঁদের বাক্সে সাপ।
পুতুল নাচের
পুতুল- নাকি বাজিকরের বানর...!
তার ইশারায়
নাচি কেবল একের পর এক ধাপ।
আমার তো
নেই অভিমান করে ঠোঁট ফোলানোর বয়স
সম্পর্কের
ভাঙা সাঁকোটাকে মিলেমিশে তাই গড়ি
এক ফুৎকারে
উড়ানো যায় যে সংসারের ভীত
সে সংসারের
নড়বড়ে খুঁটি শক্ত হাতে ধরি।
সত্য হোক স্বপ্নের নীড়
শহিদ রাসেল
সারাক্ষণ দেহের সাথেই ছিলাম
কিন্তু এখনো মনের দেখা পেলাম না
প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেও কোনো সদুত্তর নেই
জানি না হারানো আবীর আবার কবে
আলো দিবে অনির্বাণ।
তার কথা না বলা উষ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়েছিলাম
তার তর্জনীতে দেখেছিলাম জয়নুলের জাদুর তুলি
তার পায়ের ছাপে আঁকা থাকতো এগিয়ে যাওয়ার মানচিত্র
তার ফেলে যাওয়া চকলেটের উচ্ছিষ্ট খোলসে
লেপ্টে থাকতো শিশুর মুখের সুঘ্রাণ
বোধশক্তি ছিলো বলেই তো বালিকা বুকে নিয়েছিলো
কিন্তু তাতে শুধু মাংসের গন্ধ,
কল্পিত সেই সুখের অনুভূতি অনুপস্থিত।
চোখের গভীর চাহনীতে অনেক পথ চলার জ্বালানী ছিলো
কিন্তু হায়, জয়ের রেখা ছুঁতে এখনো অনেক পথ বাকি।
তুমি উঠো, বাস্তব হয়ে ঝলসে দাও
আমার লিখা কবিতার পান্ডুলিপি
আমি তোমার রূপে সেই জোহরাকে দেখতে চাই
প্রয়োজনে আমি বিজয়ী ইব্রাহীম কার্দি হবো
কথা দিলাম।
জ্বরের জোয়ার
বিটুল দেব
জ্বরের জোয়ার
আসে সন্ধ্যা রাতে শরীরে
স্পর্শে
পুড়ে নার্সের নরোম করতল ।
কপালে হাত
! দুশ্চিন্তায় রাত
আর অনাহারে
হরিণীচোখ ।
ভাটার পড়লে
টান
স্বেদনের
লোনাজল মুছে নেয় যতে-
ভোরের আলোয়
নিভৃতে যায়
গোধূলিতে
আবার ফিরে নীড়ে
ব্যথা বাড়ে
, তুলতুলে হাতের আদরও বাড়ে
জ্বরের জোয়ারে
আরো বাড়ে ভালোবাসা ...ভালোবাসো...!
এসব
দিনে
মিসির হাছনাইন
এসব দিনে মনে হয়-
আমার কি যেন হারিয়ে গেছে!
আমি ভালো থাকতে পারি না!
কে যেন বৃদ্ধ বুকে বেঁধে দিয়েছে
পাহাড় সমান একটা পাথর-কষ্টে কষ্টে
কতগুলো দিন চলে যায়...আমাকে নিয়ে;
আমি তাকিয়ে দেখি আকাশের রঙ
আর কি যেন খুঁজতে থাকি...
আমাকে নাকি তোমাকে?
এসব দিনে তোমাকে খুব মনে পড়ে,
কেন জানি তোমাকে ভুলতে পারি নাহ!
আর তুমি জেনেশুনে কষ্ট দাও, কেন?
এসব দিনে মন খারাপে আমি ভালো থাকি না!
কেন যেন বারবার মনে হয়-
আমার কি যেন হারিয়ে গেছে!
আমার কি যেন হারিয়ে গেছে...
সময়
আকাশ মামুন
দক্ষিণ দুয়ার
খোলে বেরিয়ে গেছে নবাবী সময়
তারই পথ
চেয়ে সোনাগাছির আলতা রানী ওরফে স্বপ্না খানম
আয়নাও ইদানিং
পক্ষপাতিত্ব জানে বেশুমার
সিথির সিদুর
আর প্রসাধনের পুরো স্তর ছাপিয়ে
বলিরেখাই
দেখায়। উদয়াচলে যে মাঝির গানের ভাষা ছিল
শীৎকার,
অস্তাচলে সে গায় হরিবল হরিবল ।
সময় বড় নিষ্ঠুর,
শেষ রাতে জলসা ফুরিয়ে গেলে সব ভুলে
ফুড়–ত করে
উড়ে গিয়ে হাত দেয় সতীনের শ্রোণী সন্ধিতে।
নীল
উড়না
আহমদ মেহেদী
আমি আজও ঐখানে হেমন্তের
বিকেলে
সুযোগ পেলেই ছুটে যাই,
যেখানে পড়ে আছে ঝরা
শিউলি ফুলেরা বৃথা’ই,
আমি কারনে - অকারণে ও আকাশের দেয়ালে
তোমার বুকের নীল উড়না
দিয়ে জোর করে লিখে দেই -
বিশ্বাসের ভুলে তুমি সুখের দেশের
ইট-পাথরের এই শহরে...
ভালবাসার দখলে হৃদয়-রাণীর
রাজা একটাই।
_______________________________________