হুমায়ূন আহমেদ’র উৎসর্গলিপি- সুখী ফয়সাল





নন্দিত নরকে
নন্দিত নরকবাসী মা-বাবা, ভাইবোনদের

বাসর
স্নিগ্ধা করিম
আমার উৎসর্গপত্রগুলি সে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে। আমি না-কি উৎসর্গপত্রে অনেক মজা করি। তার ধারণা কোন একদিন তাকে একটি বই আমি উৎসর্গ করব। সেখানে অনেক মজার কথা থাকবে।
বই উৎসর্গ করা হলো।


এই মেঘ, রৌদ্রছায়া
ছবি পাড়ায় আমার ছোট্ট একটা অফিস আছে। সেই অফিসে রোজ দুপুরবেলা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ উপস্থিত হয় এবং হাসিমুখে বলে, ভাত খেতে এসেছি। সে আসলে আসে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্যে। ইদানীং মাহফুজ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরবেলা তার হাসিমুখ দেখতে পাই না। মাহফুজ কি জানে, প্রতিদিন দুপুরে আমি মনে মনে তার জন্যে অপেক্ষা করি !


বহুব্রীহি
জনাব আবুল খায়ের
অভিনয় যাঁর প্রথম সত্তা
অভিনয় যাঁর দ্বিতীয় সত্তা



আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি
তার নাম রোমেল। আমি তাকে রহস্য করে ডাকি ক্রুস্ক, রাশিয়ান সাবমেরিন ক্রুস্ক, নাবিকদের নিয়ে সাগরে তলিয়ে যাওয়া ক্রুস্ক। রোমেলকে দেখলেই আমার কেন জানি তলিয় যাওয়া সাবমেরিনের কথা মনে হয়। সে পড়াশোনা করেছে রাশিয়া। রুপবতী এক রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেছে। মেয়েটি রায়িার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের পুতুলের মতো একটা ছেলে আছে। রোমেল তার রাশিয়ান পরিবার নিয়ে পাবনায় বাস করছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ তার মাস্টার্স ডিগ্রি আছে কিন্তু সে জীবন নির্বাহ করছে পত্রিকা বিক্রি করে। আখতারুজ্জামান রোমেল (ক্রুস্ক)


আসমানীরা তিন বোন
আমি একজনকে চিনি যিনি দাবি করেন তাঁর শরীরের পুরোটাই কলিজা। চামড়ার নিচে রক্ত মাংস কিছু নেই, শুধুই কলিজা। এ ধরনের দাবি করার জন্য সত্যি সত্যিই অনেক বড় কলিজা লাগে।
প্রণব ভট্ট।


বৃষ্টি ও মেঘমালা
মধ্যদুপুরে অতি দীর্ঘ মানুষের ছায়াও ছোট হয়ে যায়।
অধ্যাপক তৌফিকুর রহমানকে।
যাঁর ছায়া কখনো ছোট হয় না।


কোথাও কেউ নেই
কাজী হাসান হাবিব
হে বন্ধু, হে প্রিয়



এই আমি
গাজী শামছুর রহমান
যিনি নিজে চোখ বন্ধ করে থাকেন
কিন্তু আশেপাশের সবাইকে বাধ্য করেন
চোখ খোলা রাখতে

 
মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই
তিনি সব সময় হাসেন।
যতোবার তাঁকে দেখেছি, হাসিমুখ দেখেছি।
আমার জানতে ইচ্ছা করে জীবনে কঠিন দুঃসময়ে তিনি যখন কলম হাতে নিয়েছিলেন
তখনও কি তাঁর মুখে হাসি ছিলো?
সর্বজন প্রিয়
আমাদের রাবেয়া খাতুন


সকল কাঁটা ধন্য করে
কবি ফরহাদ মজহার
প্রিয়তেমেষু
কবি-মানুষ যে রাজনীতি নিয়ে জটিল জটিল রচনা লিখে
সবাইকে চমকে দিতে পারে- আমার ধারণা ছিলো না। 


রূপার পালঙ্ক
একবার একজন লেখক আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। আমাদের তিনকন্যা যে যেখানে ছিলো, লেখকের নাম শুনে উঠে চলে এলো। আমার মেজো মেয়ে বলল, এতো বড় লেখকের সামনে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তার না-কি পা ঝিমঝিম করছে। আমি তখন লেখককে দেখছিলাম না, মুগ্ধ হয়ে আমার তিনকন্যার উচ্ছ্বাস দেখছিলাম।
সেই লেখকের নাম- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়



হমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস
ভালবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন,
তবে কেন মিছে ভালোবাসা 
গুলতেকিনকে


তিন বিচিত্র
আমার একজন কার্ডিওলজিস্ট বন্ধু আছেন, তাঁর
কাছে যখনি যাই তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে
বলেন, “আপনার তো দিন শেষ।”
কোন ডাক্তারজে এত সহজে দিন শেষের কথা বলতে
আগে শুনিনি। আমি মুগ্ধ!
প্রফেসর বরেন চক্রবর্তী
ভালোমানুষেষু

দারুচিনি দ্বীপ
মা মনি নোভা আহমেদ
এই উপন্যাসের পান্ডুলিপির প্রথম পাঠিকা নবম শ্রেণীর বালিকা আমার বড় মেয়ে নোভা আহমেদ। সে বই শেষ করেই আমাকে বললো, আমার যখন একুশ বছর বয়স হবে তখন কি তুমি আমাকে এই বইয়ের নায়িকার মতো একা একা সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড যেতে দেবে? আমি বললাম- না।
সে কঠিন গলায় বলল, তাহলে তুমি এই বইয়ে মিথ্যা কথা কেন লিখলে? আমি তার অভিমানী চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে বাধ্য হলাম-আচ্ছা যাও তোমাকেও যেতে দেবো।


উড়ালপঙ্খী
আমার কিছু বন্ধুবান্ধব আছে
সপ্তাহে একবার যাদের মুখ না দেখলে মনে হয়
সপ্তাহটা ঠিকমতো পার হলো না। কিছু যেন বাদ পড়ে গেলো।
শফিক-উল-করিম


দিঘির জলে কার ছায়া গো
কন্যা লীলাবতীকে। এই উপন্যাসের নায়িকা লীলা। আমার মেয়ে লীলাবতীর নামে নাম। লীলাবতী কোনোদিন বড় হবে না। আমি কল্পনায় তাকে বড় করেছি। চেষ্টা করেছি ভালোবাসায় মাখামাখি একটি জীবন তাকে দিতে। মা লীলাবতী : নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।

লিলুয়া বাতাস
দীর্ঘদিন কেউ আমার পাশে থাকে না, একসময় দূরে সরে যায়।
হঠাৎ হঠাৎ এক আধজন পাওয়া যায় যারা ঝুলেই থাকে, যেমন অভিনেতা ফারুক।
লিলুয়া বাতাস বইটি তার জন্যে।
পরম করুণাময় তার হৃদয় লিলুয়া বাতাস বইয়ে দেবেন, এই আমার শুভ কামনা।
ফারুক আহমেদ
সুকনিষ্ঠেষু


সেদিন চৈত্রমাস
আমি লক্ষ্য করে দেখেছি অতি বুদ্ধিমান কেউ কখনো ভাল মানুষ হয় না। মারুফ তার ব্যতিক্রম। আচ্ছা তার সমস্যাটা কি?
মারুফুল ইসলাম
ভালমানুষেষু


তেঁতুল বনে জোছনা
অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ
কিছু মানুষ আছেন যাদের দেখামাত্র মন আনন্দে পূর্ণ হয়, কিন্তু তারা যখন কাছে থাকেন না তখন তাদের কথা তেমন মনে পড়ে না। হায়াৎ ভাই সেই দলের আমার দেখা নিখুঁত ভালো মানুষদের একজন।


আনন্দ বেদনার কাব্য
শামসুর রাহমান
শ্রদ্ধাষ্পদেষু
আমাকে দেখাও পথ ধ্যানী;
চোখ বন্ধ ক’রে অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে
এখন কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো?


কালো যাদুকর
জুয়েল আইচ
জাদুবিদ্যার এভারেস্টে যিনি উঠেছেন।
এভারেস্টজয়ীরা শৃঙ্গ বিজয়ের পর নেমে আসেন।
ইনি নামতে ভুলে গেছেন।


দেখা না-দেখা
নিষাদ হুমায়ূন, তুমি যখন বাবার লেখা এই ভ্রমণ কাহিনী পড়তে শুরু করবে তখন আমি হয়তোবা অন্য এক ভ্রমণে বের হয়েছি। অদ্ভুত সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাউকেই জানাতে পারব না। আফসোস!

তিথির নীল তোয়ালে
বিখ্যাত টেলিভিশন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা
আমার জানতে ইচ্ছে করে, একজন মানুষ এত ভাল অভিনয় কি ভাবে করেন? 


লীলাবতী
শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশ
কবি, আমি কখনো গদ্যকার হতে চাইনি।
আমি আপনার মতো একজন হতে চেয়েছি।
হায়, এত প্রতিভা আমাকে দেয়া হয়নি।

আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প
আমার তিন কন্যা বিপাশা, শীলা, নোভা।
এরা ভূত বিশ্বাস করে না, কিন্তু ভূতের ভয়ে অস্থির হয়ে থাকে। প্রায়ই দেখা যায় তিন কন্যা ঠাসাঠাসি করে এক বিছানায় ঘুমুচ্ছে, কারণ কেউ একজন ভয় পেয়েছে। 

পারুল ও তিনটি কুকুর
কাকলী প্রকাশনীর নাসির আহমেদ এবং  সময় প্রকাশনীর ফরিদ আহমেদ
এরা দু’জনেই জানে না এদের আমি কি পরিমাণ পছন্দ করি। একদিন হুট করে মরে যাবো, আমার ভালোবাসার কথা এরা জানবে না। তা তো হয় না। কাজেই এই উৎসর্গপত্র

রাক্ষস খোক্কস এবং ভোক্ষস
নিষাদের পাঁচ তলার চাচী  এবং  মোটু চাচুকে
(এই দু’জন মনে করেন নিষাদ
মানব সন্তান না, দেবশিশু।
মনে হয় এদের মাথায় কোন সমস্যা আছে।)
নুহাশ এবং আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ
গোলটা-চক্ষু, নুহাশ আব্বুটিং কে

চক্ষে আমার তৃষ্ণা
আমার হৃদয় নামক পাম্পিং মেশিনে কিছু সমস্যা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্যে মাঝে মাঝে আমাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে যেতে হয়। তখন এক প্রবাসী গল্পকার ছুটে আসেন। প্রাণপণ চেষ্টা করেন আমাকে কিছুটা স্বস্তি দিতে।
শহীদ হোসেন খোকন
স্বস্তিকারকেষু


রূপা
তিনি দূর দ্বীপবাসিনী
তাঁর পছন্দের জগত, স্টেইনবেকের রহস্যময় জগত।
আমার অল্প কিছু কাছের মানুষদের একজন।
সালেহা চৌধুরী

বৃষ্টি বিলাস
আমার তিন বৃষ্টি প্রেমিক কন্যা
বিপাশা আহমেদ, শীলা আহমেদ, নোভা আহমেদ


হিমু
আয়েশা মোমেন,
আপা, আপনি ভালবাসার যে কঠিন ঋণে আমাকে জড়িয়ে রেখেছেন, সেই ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। ঋণী হয়ে থাকতে ভাল লাগে না, কিন্তু কি আর করা!

আজ চিত্রার বিয়ে
নোভা আহমেদ, আরসাদ মাহমুদ চৌধুরী
যুগলেষু। আমার ছোট মা নোভা, হঠাৎ বড় হয়ে গেছে। কি আশ্চর্য সে এখন তরুণী বধূ। বিয়ের আসরে দেখি সে এক সময় মুগ্ধ হয়ে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোঁখে কি প্রগাঢ় মমতা। মাগো! তোমার চোঁখের এই মমতা চিরস্থায়ী হোক পরম করুনাময়ের কাছে এই আমার বিনীত প্রার্থনা।


রোদনভরা এ বসন্ত
হিমু নামের কেউ যদি থাকতো তাহলে কোনো এক জোছনার রাতে তাকে বলতাম- এই বইটি কেন আপনাকে উৎসর্গ করা হল বলুনতো? দেখি আপনার কেমন বুদ্ধি!


হিমুর আছে জল
একজন মানুষকে চেনা যায় যুদ্ধক্ষেত্র এবং ছবির আউটডোর শুটিং-এ। নিষাদের প্রিয় দাড়িওয়ালা মামাকে।
তারিক আনাম খাঁন।


বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল
উপন্যাস লেখার একটা পর্যায়ে উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে রক্ত-মাংসের মানুষ মনে হতে থাকে। তাদেরকে বই উৎসর্গ করা কি যুক্তিযুক্ত না?
‘বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল’ বইটির হেদায়েতের বড় ভাই বেলায়েতকে।

হিমুর মধ্যদুপুর
নওশাদ চৌধুরী, প্রিয়বরেষু
অসম্ভব প্র্যাকটিক্যাল একজন মানুষ। মাথায় ব্যবসা নিয়ে নানান পরিকল্পনা। তারপরেও তাঁরমধ্যে আমি হিমুর ছায়া দেখি এবং অবাক হই।





শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট