পদাবলি-৫১ তম সংখ্যা




ডোম সিরিজ ১১
গিরিশ গৈরিক

মরণের জলে সূর্য ডুবে গেলে
সেই সূর্যকে মনে হয় ক্যারামবোর্ডের লালগুটি
কিংবা সূর্যের অপেক্ষায় ডেকে ডেকে রক্ত করা লাল মোরগের ঝুঁটি।

ক্যারামবোর্ডের লালগুটি ভেবে সূর্যকে-কে খেলে মহাবিশ্ব ক্যারামে
আমি তারে দেখিবার চাই-নাকি আমি সেই
যারে আমি দেখিবার জিজ্ঞাসনে ব্রত-অথবা সে নেই।

একদিন আমি-সূর্য ও লালগুটি পাশাপাশি রেখে
কবিতায় খেললাম অবিরাম।
সেইদিন থেকে সূর্য ও লালগুটি এক হয়ে ডুবলো তোমার হৃদয়ে
আমি বললাম : মানবী-কী যেন তোমার নাম!

এভাবে আমি পেলাম জলের স্বভাব
তোমাদের চোখে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা জল থেকে।
অথচ তোমার চোখে আজ জলের অভাব
তাই মৃতদেহ সম্মুখে রেখে প্রশ্ন করি-আমি কে?





কমলাফলের ওম
শারদুল সজল 

হাওয়াশূন্য জল থেকে উড়ে যাওয়া
চিকন রেখা
আজও র্নিঘুম,
গড়ায়
ধূলিকণা কাঁদায়
ভারসাম্যহীন ক্যাম্পফায়ার

ও মধুরা শীত, ওহ রিরংসানাগর
ফিরে এসো
এই
অর্ধরাত্রির উল্লাস
অলিখিত জোছনাপাঠ
মনবিকুলি রোদ্দুর
সংকলিত বাতাসের চড়–ইহাসি
রাস্তা মুড়ানো
স্বপ্নোদিত পৃথিবী

ফিরে এসো
চুয়ে নামো
কোঁকড়ানো চুলে
বুকের সুরঙ্গে
এবার ভর্তুকি আগুন দিব




ফিরে এসো এই শেকড়ের সন্ধানে
রেবেকা ইসলাম

দেশমাতৃকার কোমল পেলব সোঁদামাটি ঘ্রাণ পেতে
ভূমিপুত্র তুমি ফিরে এসো এই শেকড়ের সন্ধানে
শুনবে কুটিরে দুঃখিনি মায়ের থরথরে কাঁপা হাসি
ছোট গাঁওখানি খুশিতে মাতবে বাউলিয়া সুর গানে।
প্রকৃতির বুকে মিহি বাতাসের রিনি রিনি অনুনাদ
আকাশের কোলে ভেসে যায় সাদা তুলো মেঘেদের জোট
পথের কিনারে পলকা তুলোট শ্বেত কাশফুল ঢেউ
হিজল বনের আড়ালে আড়ালে ধনেশ পাখির ঠোঁট।
তোমার দু’চোখে ঝিলিক তারাতে খুশির দমকা দিতে
মনের নীরব নদীতে জাগাতে অতিকায় উঁচু ঢল
ঘরে ঘরে হবে কত আয়োজন অগণন লৌকিকতা
মাতিয়া উঠবে কাজের পাগল নারী পুরুষের দল।
দিন চলে যাবে স্মৃতি থেকে যাবে রয়ে যাবে সুখক্ষণ
আবার তোমার অপেক্ষায় রবে কত মুখ কত জন।




দেহভিটা
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান

কথকের দাঁতে তোমার হাসিগুলো গেঁথে আছে স্থির
যত্নবান উইপোকাও শুনেনি সেইসব রাতের শীৎকার
যারা নুয়ে পড়েন অজস্র চেরীফুলের স্বপ্ন নিয়ে
অথবা রোদ হতে চাইতেন যেসব প্রেমিকযুগল
তাদের মৃত্যুতে জ্যোৎস্নারা আসেনি; কেবল
শীতল উন্মাদের মতো বৃষ্টির ট্রেনে
ভেসে এলো মুমূর্ষু গ্রাম, আততায়ীর রক্ত!

তখনো আলোর ফুৎকারে রাত হয়নি
দেহভিটায় আঁতকে উঠেনি হাবিয়ার কষ্টেরা...
তখনো আকাশ চিরে মাঝিরা জাগেনি

কেবল তুমিই প্রথম জেনেছিলে-
দিনেরা বেঁচে নেই। খুন হয়েছে নিঃশ্বাসগুলি...




ভোর
রাকিবুল রকি

খইয়ের মতো ফুটছে আলো অন্ধকারের ফাঁকে
চলার পথে থমকে দাঁড়াই, দেখছি আমি কাকে?
সে কি আমার হারিয়ে যাওয়া চিরচেনা কেউ
নইলে কেন বুকের মাঝে উথলে উঠে ঢেউ
সাত সাগরের! অন্ধকারে জানি না তো সে কে?
কেন আসে চেনা গন্ধ হঠাৎ তাকে দেখে।
সে কে? কে সে?
গভীর ভালোবেসে

সে কি ছিল কাছে আমার
নিয়েছিল ব্যথার ভার
কোনোদিন? রঙিন প্রজাপতির মতো মরে গেছে
সে-দিন শীতের কুয়াশায়,
আজ, হ্যাঁ, আজ তাই
ফেলে আসা দিন মনে হয় তাকে
অর্বুদ সময় পাড় হয়েও আর পাবো না যাকে।




একঘর সুন্দর দুঃখ
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম

ব্যথা পেলে আকাশে হাসি বন্ধক রেখে দাও
বাতাসের সাথে মেঘ এসে ভেসে
বিদৎ অবিরত হাসাবেই,
জল এসে ধুয়ে দেবে সমস্ত জঞ্জাল।

তুমিও আমার কাছে দুঃখ বিকিয়ে দিয়ে পরে
এক বাগান হাসি খুশি নিয়ে যেতে পারো।
আমি একঘর সুন্দর দুঃখের সংসারী হবো।



________________________

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট