পদবলি



দিনান্তের ব্যবসায়ী হিসেব
ইলিয়াস বাবর

ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে থাকে বাঁধ-
বিশ্বাসের নিগূঢ় দালানে ঢুকে শত্রুসেনা
মিথ্যের দোহাই দিতে দিতে
একদিন টুপ করে, আষাঢ়ে গল্প বুনবেনা!

তা রবীবাবু বলুন, আমার নয়
প্রতিদিনের চাহিদায় থাকে অপূর্ণ সবক-
ক্রমাগত আশ্বাসের বিফলে
সোনালী দিনে কিনে রাখি হাবিয়া-দোযখ!



অতঃপর
রেবেকা ইসলাম

যখন দিন চলে গেল রাতের পিছু পিছু
আলো নিষ্প্রাণ হল আঁধারে
ঠিক তখনই হাতে হাত ধরে
নেমে এল রূপজ্বলা তারাদের দল
এ পাড়ার ও পাড়ার, এ গলির ও গলির
ঝিম ধরে থাকা জড়াক্লিষ্ট সব ছাদে,
হিজিবিজি অন্ধকার ঘরে,
নারীর আঁচলের ঢিলেঢালা খুঁটিতে
অসুখী আবজাব নগরে।

তারপর আনন্দের শঙ্খজলে ভাসল ওরা,
ওরা কয়জনা যৌবনপূজারী
দুরন্ত চোখে যাদের স্বপ্নধরার জাল
কণ্ঠে ঘুড়িওড়া বিকেল
অতঃপর,ঠোঁটের কোণে ফেরারি সুখ নিয়ে
এক সাগর নিদ্রাকে চৃর্ণ বিচূর্ণ করে
জেগে রইল ওরা অনন্তকাল।


                                                   
দাকা-যম
বঙ্গ রাখাল
(উৎসর্গঃ তেভাগা আন্দোলনের সাঁওতাল যোদ্ধা দীনেশ মুর্মকে)

এই যে আসুন, দেখে যান ধানক্ষেত। ধানক্ষেত
যৌবনা হচ্ছে, দুধের গোলায় জমছে দুধ। ধান
থেকে জš§ নিচ্ছে অজস্রচারাগাছ। মাটি ভেদ
করে গান গাইতে গাইতে জš§ নিচ্ছে যত সব
পাতারি ধানের নীলহলুদ পাতাগাছ।

গান হয় শরীরে, মনে, হৃদয়গভীরে।
বৃক্ষপত্রে কথা হয়, নদী মিতালী খোঁজে
বীজের অঙ্কুরে।
কৃষক দাকায় তৃপ্তি খোঁজে অলসদুুপুরে হেলেপড়া রৌদ্রে।
যমের যোনী বেয়ে বের  হয়ে আসে সোনালীবাদামীভোর।
দাকাযম পেয়ে উল্লাসে সাজে কাগজের স্বেতকুকুর
গান হচ্ছে, কোথায় গান?
চোখে-মুখে একটা বিষণœসুখ
আমি অবাক
কোথাও ঝামেলা করোনা।
শহুরে মানুষ কি পারে গান শুনতে?
এ চাষাঢ়ে গান আমরা শুনি যারা গ্রামে থাকি...



ঘনীভূত শূন্যতা
বজলুর রশীদ

যুবতী চাঁদের গায়ে অমৃত ফুলের স্বাদ;
অসভ্য লালসার বেহায়া প্রজাপতির দল-
চুমু খায় বিশ্বাসের রাজত্বে।

প্রত্যাশার স্বপ্নযুগল নয়ন অবিশ্বাসের পরিসরে
পাড়ি দিয়েছি আরণ্যিক সময়;
আলোকবর্ষ থেকে অনেক দূরে
অমাবস্যার দরজায় দাঁড়িয়ে।

স্বার্থপরতার প্যাঁচে
ভোরের সিতানে অপেক্ষার পরতে পরতে
হতাশায় কেটেছে কতদিন, কতমাস,
এভাবে বছরের পর বছর।

অতঃপর অসময়ে গোধূলির রঙ মেখে
জোছনানিশি খেলা যদি খেলতে চাও
তাহলে শৈশব উল্লাস ফিরিয়ে দাও?

অতৃপ্ত বাসনায় ডুব সাগরে সাঁতার কেটে
জন্মেছে ভালোবাসার শেষকৃত্য ।
নিস্তদ্ধতার নিরিখে নিরাপদ জোছনা-তারা
কিংবা ভোরের প্রত্যুষে
চাই না  কসমেটিকস সময়ের ফেলে আসা দিনগুলো;
তোমাকে ফিরে দিলাম নষ্টজলের কাদা সাঁতারে।
আর আমায় নিঃশব্দ নিরালায়
ঢেলে যাও আরণ্যিক সময়ে;
বিপদ ঘনীভূত শূণ্যতার গ্রাস।



রাস্তাকে আঁকড়ে ধরেছি
সুজিত মান্না

ছায়াহীন দাঁড়িয়ে থেকে সবকিছু অচেনা লাগে
দেওয়ালগুলো বলে ওঠেÑ
যেভাবে জোনাকি ডেকে প্রেমের গল্প সাজাই
একদিন ¯্রােতে ভেসে আমি কৃত্রিম হয়ে যাবো

এভাবে বারবার এমন দেওয়াল গড়ে উঠতে দেখেছি
আমি কি দিনদিন কৃত্রিম হয়ে উঠছি ?

আমার অপেক্ষার কষ্ট একটু বেশিই’ লেখা আছে
উল্টেপাল্টে সেখানেও আশ্রয় নেয়
                                                কিছু মাকড়শার গল্প ।

আমিই সেই দূরে থেকে যাওয়া জোনাকি
রোজ পশুদেরদের জলাশয়-পরিচিতি দিই
অথচ তাদের আপন ছায়ায় উঠি না...

আমি আসলে এমনই একটা মেঘ
যাকে দেখলে শুকনো জলাশয়ও বিদ্রুপ করে ওঠে
দূর্বা ঘাস ফিরেও তাকায় না...

অফিস বেলার সকাল দুপুর, গঙ্গার বিকেল
কিংবা প্লাবনভূমির রাত্রি ধরে,
                                       আমি হেঁটে চলি তবু...
মুখ তুলে , আমার শূন্যতা দেওয়াল ছুঁয়ে নিয়েছে

হারানোর সত্যিই কি কিছু আছে ?


প্রেম
নূর নিহাল

মুখে জমানো এক দলা থু থু আমার অহংকার
চারপাশ উলঙ্গ- উদাম শরীরকেও মনে হয় শ্রেষ্ঠ পোশাক
ভাতের আগুনে পুড়ে যাওয়া কুঁচকানো মানচিত্র
দু’বেলা দুঃখ- মাংসল হাসি
রোমালে ঢেকে মুখ- আহা! আত্মার অসুখে পুড়ি

তাবৎ ফুল নরম আগুনের জাত
সমুদ্র যেমন মাটির আপন বোন
ওসব গর্দভ গৃহস্থ আমাদের নতমুখ
দূরবীনে পুড়ে যাচ্ছে দূর্বাঘাসের চোখ,
পাপই প্রেম- আঘাতই আগুনের শ্বাস
অসময়ে বেজে যাই ঘৃণার তালুতে
জাতের মুখোশে থু থু ছিটাই...


কাটেনা আঁধার, দিন কেটে যায়
মাহবুবা নাছরিন শিশির

ভেতরে-বাইরে দুর্যোগ খুব পরিত্রাণের নেই উপায়
চলতে চলতে থেমে যায় গতি বেড়ি দিলো কে দু’পায়!
আষাঢ়ে বৃষ্টি,  শ্রাবণে বৃষ্টি, শরতে বৃষ্টি, নাই নিস্তার,
কার্তিকে ফের ভয় সংকেত কী করে হবো এই পথ পার!
ঘনিয়ে আসে কালো মেঘমালা আমার পথের কিনারায়
অঝর ধারায় ঝরে পড়ে জল অদৃশ্য কারোর ইশারায়।
ধোঁয়াশা জলে দ্বিধা জাগে মনে ডুবে যায় যেন কোন শঙ্কায়
ডুবে যাই জলে, ডুবে যাই ধীরে, ডুবে যাই ভীত মন-গঙ্গায়।

জীবনের পথে ঘোর মুসিবতে হাত-পা অচল আমি নিরুপায়
দিকভুলো হয়ে থমকে দাঁড়াই রঙহীন এই ম্লান-তমসায়।
ঠোঁট নড়ে কার, কোন দাদীমার সুদূরের বাণী নিকটে গড়ায়
‘কালা মেঘে নালা পানি, ধলা মেঘে গলা পানি’ শ্লোকে-ছড়ায়।
বদলে যাচ্ছে ঋতু পরিক্রমা বিপদের ঘোর ঘনঘটায়
কাটেনা আঁধার দিন কেটে যায় এক-দুই-তিন-চার ঘনায়।
মাঠ-ঘাট-ডোবা মুখরিত আজ ঝিল্লিমুখর সন্ধ্যা নামায়,
দশ দিকে দশ প্রহরণ আর ইসরাফিলের শিঙা বাজায়।

কেয়ামত কবে আসবে জানিনা এ তুফান-ঝড় স্মরণ করায়
আমাকে তবুও থাকতেই হবে একটি ভোরের অপেক্ষায়।
মেঘ কেটে গিয়ে ভরবে সেদিন সোনালি রোদের রূপালি আভায়,
এই ঘোর রাতে খোয়াব দেখেছি, তাই’তো আমায় আবার ভাবায়।
 

জলচিত্র
পরান জহির

জলছায়ায় আরো একবার
এঁকে দাও জলচিত্র,
পাঠ করো জললিপি স্বর।

সুগঠিত পল্ললে উত্তীর্ণ হোক
মৃৎ কারুকার্য,
দিগন্ত রেখা নিয়ে বাঁচুক পাঁজর।

পাতারেখার ভাজে ভাজে
বর্ণিল হও,
মৃত্যুর মৃত্যুকে ছিঁড়ে।

জয় করে নাও পৃথিবীর
মাটি ও আকাশ,
সৌকর্য ফিরুক পাখিদের নীড়ে।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট