একুশের পদাবলি



বাঙালি
লুৎফুন নাহার লোপা

সমুদ্রের জল মিশে যায় আরেক সমুদ্রে
আমি দূর থেকে শালিকের ওড়াওড়ি দেখি,
কোন ভাষায় কথা বলে তারা - পরস্পর,
সচ্ছ কাচের মত ভোর নেমে আসে গাঁয়ে
পথে সুপারিগাছগুলো চলে আমার সাথে, 
আমি তাদের বাঙালি ভেবে ‘ভালোবাসি’ বলি।


বায়ান্নর শিশু
মিসির হাছনাইন

রক্তিম আকাশে মৃদু নগ্ন সূর্য ডোবার পর,
পশ্চিমের কোল থেকে যে সন্ধ্যা আসে,
কাক চোখ কালো সেই সন্ধ্যার মগ্ন ঘোর,
তারপর হঠাৎ পৃথিবীর বুকে নেমে আসে বহুদর্শী ভোর।

নাপাক পৃথিবীর অসুস্থ সংস্কৃতি,
প্রাচীন অন্ধ বিশ্বাসে বাড়ন্ত সমাজ,
দেখছে বারবার প্রতিচ্ছবি। মরচে
পরা ঘুমন্ত স্মৃতি এখনও শকুনের দলে।

চর্চিত মায়াজালে নেংটা মানুষ
যাদের দখলে ভীনদেশী গান!
তাদের শীতল রক্তে কি নেই?
সেই দিনের জন্ম নেওয়া শিশু।

আহতিমাখা হতভাগ্য জমিনে
কাল্য বা দৈনিক নেমে আসে মহামান্য       
বায়ান্নর শিশু। মানুষ, তিনি দেখে নিয়েছেন!
হয়তো, তিনি আজ পৌঢ়।

একুশের কাব্যিক স্মারক
বজলুর রশীদ

কল্পের ছবি গুন গুন করে বসন্তের কৃষ্ণচূড়ায়,
কচি পাতার শব্দ শোনে ফাগুন ঝরা রোদ
রচনা করে বেয়ারা রঙতুলি।

আকাশে রূপালি মেঘের ভেলায় বসে
কাঙ্খিত ইচ্ছেগুলো শতাব্দীর রূপ
এঁকে যায় একুশের কাব্যিক স্মারকে।

রক্তদানে- কেনা বর্ণমালা
অক্ষরিত হোক হৃদয়ের ক্যানভাসে।


সবুজ আবছায়া
সাদ সাইফ

দক্ষিণ বাতায়নে নীলচোখা মন,
সবুজ মিতালির অন্দর ভাসে ঢেউ খেলানো সাজে।
অবাক চাহনিতে জড়তা কেটে যায়; নীলসমুদ্রের নীলাভ জলে।
লিলুয়া বাতাসের ফিরফির ছন্দ, ঢুকে পড়ে অবাক দরজা দিয়ে।
রোমকুপ পেয়ে যায় মৃদু আস্তাকুঁড়।

জীর্ণতা ভুলে অবারিত চাদরে বসে পড়ি।
বুঁদ হয়ে রই চাদোয়া শামিয়ানাতে।
তখন অবুঝ তালা লাগে সবুজ ছিটকিনিতে, থেমে যায় ক্লান্তির ছাদ।
রঙিন পৃথিবী রঙের আচ্ছাদনে আঁশটে হয়ে যায় সবকিছু,
তখন খুঁজি এক টুকরো সবুজ আবছায়া।


পর্যবেক্ষণ
শোয়াইব শাহরিয়ার

আমার ঘুম আসে না। ঘুম চলে যায় উবে। মন পুড়ে যায় বিষণœতায় ডুবে। ব্যথার
শহর জাগেÑ বুকের ভেতর তপ্ত বালুচর। ব্যথায় ডুবে থাকি। কেউ আসে না বাঁচাতে।
কেউ দেখে না কাঁদতে। তবুও কাঁদি। তবুও আমি ডুবে আছি জলে।

তবুও আমি জলের ভেতর সাঁতরে বেড়াই ‘একুশ’ আয়ু।


নিকোটিন
মীর সাহাবুদ্দীন

পাখি গুলো উড়ে যায়, উড়ে যায় শশ্য ছেড়ে
ব্যাঙ, সাপ, কোকিল ময়নারা নিকোটিন ছাড়ে
মাছরাঙা ও কাঠঠোঁকরা গর্ত খুড়ে দেহ
অবশেষ যত মধু জমা পড়ে
চেটে পুটে খেয়ে নেই ।



একুশের দলিল
নূরনবী সোহাগ

অজস্র একুশের মাঝে একজন একুশ রাজসাক্ষী হয়ে থেকে যায়- ফেব্রুয়ারীর শরীরে।
সে একুশ শোকসভা ডাকে; তিনিই বক্তা। বাংলার রণাঙ্গনে তিনি কতটা রক্তের সাক্ষী হয়েছেন- সেটাই বলবেন। সভায় দূর-দূরান্ত থেকে মিনার আসে, সৌধ আসে- এমনকি আসে শহীদের যেকোনো স্মৃতি। একুশ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন- ‘তোমরা যাদের স্মরণে গর্ভ ভরেছ ফুলে; তারা একদিন শ্লোগানরত ছিল এই রাজপথে। এখন ভাষার মাঝে ডুব মেরে আছে। কেন! অক্ষরের শরীরে টের পাওনা তাদের অস্তিত্ব ?’



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট