বসন্তের পদাবলি



দরদ
মাহমুদ নোমান

হঠাৎ আগুন ধরে গেল
ওয়াবীলতার চাঙেÑ
পোড়া মাংসের রঙ,
ঝুরঝুরে শিরা উপশিরা নিয়ে
ঝুলে আছে মাতৃতুল্যা গাছে

কফি পান করতেই,
নাকে এলো এ পোড়া ঘ্রাণ
কালো চাঁমের আকুতি-মিনতি ।


ছোঁয়া
সজল কুমার টিকাদার

তোর ওই একটুখানি ছোঁয়া
হাঁটতে হাঁটতে আজ
                   হৃদয়ের কাছে।

যেমন, সাগর মহাসাগর ঘুরে
অবশেষে জাহাজ পৌঁছায়
চূড়ান্ত বন্দরে !



চুলগুলো এলামেলো করে দাও
অনন্ত পৃথ্বীরাজ

মুখটা গোমরা করে রেখেছো কেন
চোখের কাজল মুছে যাবে!
বর্ষার ধারায় তোমার মনে কী এতো ঢেউ
স্থির, আনত দৃষ্টি
তোমার জন্য ঢাকার রাস্তায় যানজট বাড়ায়

কদমফুল সব ফুটেছে কী!
তোমরা বুকে উত্তাল সমুদ্র
সেখানে জলপিপিরা খেলা করে
তুমিও খেলাও রাতের সমুদ্রে

তোমার নির্জন পথের প্রান্তে; দিগন্তে
কে যেন দাঁড়িয়ে থাকেÑ
চোখ খুলে চেয়ে দেখো দৃষ্টির সীমানায়Ñ
মেঘের গর্জন, অবাধ্য চুল, ওড়না নাই, ঘোমটাহীন
কেবল এক টুকরো আঁচল ঝুঁলছে
ঝুলে আছে নক্ষত্রের মতন কতগুলো উদ্বাস্ত কষ্ট

বর্ষার জলের ধারায় পুরাতন কষ্টেরা
কেন যে মাথাচারা দেয়!!


তুমিও কি হতে চাও বসন্তপ্রেমিক ?
নাফছি জাহান

চতুর্দিকে প্রকৃতি আজ নন্দিত অপূর্ব সাজে সজ্জিত,
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে মাতোয়ারা হয়ে
তুমিও কি হতে চাও বসন্তপ্রেমিক ?
আ¤্রমুকুলের মিষ্টি সুবাসে মোহ মোহ চারিদিক,
গৌধূলির লগ্নে মৌমাছির সনে পাল্লা দিয়ে
ফুলের সুবাসে মন ভরাবো দু’জনে,
শেষ বিকেলের স্বাদ নেবো এই ফাগুনে।

শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া দু’হাত বাড়িয়ে
অতি আদরে ডাকছে কাছে,
মলিনতা বিসর্জন দিয়ে-
একরাশ রক্তরাঙা আভা মেখেছে গায়ে।
বসন্তের কোকিল আপন মনে,
কুহু কুহু গাইছে গান সুমধুর সুরে।

সমন্ত প্রান্তর জুড়ে-
বসন্তের অপরূপ শোভা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এ মিষ্টি বসন্তেই-
প্রকৃতির প্রকৃত স্বাদ অন্বেষণ করবো বলে,
তোমায় নিয়ে অগ্রসরমান হবো-
অরণ্যশোভিত পর্বতমূলে, মিষ্টি সমীরণের রাজ্যে।

পাখি
আরিফুর রহমান

তোমার চিরনিদ্রার শোক-পাখি আমাকে জাগিয়ে রাখে!
রাত বেড়ে যায়, চিরকালীন তার গতিবেগ;
রাত শেষে আসে দিন নির্ঘুমতার কলসি কাঁখে
দর্শক হয়ে, দেখি মানুষের ক্ষয়িষ্ণু আয়ু ও আবেগ।

দেখি কাশবনে এখন পড়ে থাকে বেওয়ারিশ লাশ
কুকুর, শেয়াল, শকুন, শূকর একত্রে আহা!
তরতাজা নরমাংসে ঝাঁপিয়ে পড়ে, করে উল্লাস

‘ভরা যৈবনে বিধবা হইব এই ছিল কপালে লেহা’

এই বাক্যটিই লাঙল চালায় এই নিদাগ অন্তরে!
দুঃখ-হিম জমে বরফ কুচি হয়েছে সব সুখ-সুন্দর
তাই জেগে থাকার আর সাধ নেই এই বিশ্ব-বন্দরে,
তবুও কেন যে তোমার পাখি ডানা ঝাপটায় নিরন্তর!

দলছুট পাখিটা
আলমগীর কবির

দলছুট পাখিটা
উড়তে উড়তে একদিন পথ ভুলে গেলো।

বিবর্ণ দিনের ভাঁজে
তার জমানো ছিলো কিছু দুঃখের পালক।

দলছুট পাখিটা
একদিন স্বপ্নের রং বুকে নিয়েছিল মেখে
আকাশ জয়ের স্বপ্ন ছিল তার ডানায়।

কোনো এক ঝড়ের রাতে পাখিটা
হারিয়ে ফেলে তার সুরের বাঁশি।

দলছুট পাখিটা
এখনো বসে থাকে
প্রতীক্ষা মেঘের প্রহর তার কাটে না।

তবু
পাখিটা বসে থাকে
হারিয়ে যাওয়া পাখিটা ফেরার আশায়।

ফাগুনের দ্বিতীয় পক্ষ
স্বপন শর্মা

ভালোবাসা ফুঁপিয়ে কাঁদে ফাগুন এলে।
বন্ধ ঘরের খিল এঁটে দেই শক্ত হাতে
পাষাণ নামের হৃদয় মাঝে-
প্রেম নামক সেই নিখোঁজ বস্তুর সন্ধানে
ফাগুনের একপক্ষ শেষ হলো আজ।

শিমুল ফুলের রঙ দেখে নিজেকে সাজিয়ে নিই,
সঙ সাজার মতো করে।
নয়নতারা সোনালু ফুলে হলদে বাসন্তী
পথের ধারে থরে থরে সাজিয়ে রাখা
ফুলদানির সেই উপচে পড়া হলদে রঙে
নিজেকে সেথায় লুকিয়ে রাখি।
নিভৃত নির্জনে প্রেম খুঁজি ফাগুনের দ্বিতীয় পক্ষে
সেই অচলা প্রেমময় জীবন সাজাতে।


জল আয়না
সুজিত মান্না

দূর থেকে দেখে উপলব্ধি করি
Ñজলতলের ওপর কয়েকটা গাছ আর মেঘেরা
                              একে অপরকে সুযোগ পেলেই ছুঁয়ে দেয়

Ñএই জল-আয়নায় মুখ ঢেকে নেওয়া
    আসলে একটা মায়াবী স্বপ্নের মতো

এখানে মেঘেরা সহজেই গাছ পেরিয়ে বাড়িকেও নাড়িয়ে দেয়

উড়ে চলে যাওয়া ডানাদের বুকে ধানক্ষেত দুর্বল দেখে
হাসপাতাল ফেরত ফড়িংয়ের মতো
                           Ñজল-আয়নার পাশে গিয়ে বসি

ঢেউয়ের উপস্থিতিগুলো একে একে থেরাপির মতো আসে
কখনো মেঘ নামাই, কখনো গাছের পাতাদের দোলন;
কমবেশি যেভাবেই হোক আমার সুস্থ্যতা তুলে আনতে হবে

নক্ষত্র
মহাজিস মণ্ডল

বিকেলের শেষ রোদ্দুরের মতন
বিকেলের শেষ রঙের মতন
তুমিও ছড়িয়ে আছো আকাশে-আকাশে

সময়ের সীমারেখা বরাবর আমিও হেঁটে যাই
তোমার স্তব্ধতা ঘিরে থাকে ঝরা পাতার মতো চারপাশে

সমন্ত নদীর শব্দ তবুও আমি জড় করে রাখি বুকে
তোমার নিঃশব্দ সন্ধ্যার সমুদ্র পেরিয়ে
রাতের ডানায় ডানায় এঁকে দিতে
অনন্ত জোনাকির নক্ষত্র !

নদীটার বাঁক বদল হয়েছে
সুমন আহমেদ

চন্দ্রিমা,পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে নিত্য তোমার
আনাগোনা; তুমি তো সমস্ত পৃথিবীর রাখো খোঁজ...
বলনা আমার নদীটা কেমন আছে?
আজ কতদিন হয়ে গেলো দেখিনা আমার প্রিয় নদীটাকে।
শুনেছি আজকাল নদীটার বাঁক বদল হয়েছে,
দেহের পূর্ণতা সঞ্চয়ে বেলা অবেলায় সঙ্গমে লিপ্ত হয় রোজ।
যৌবন জোয়ারে সমস্ত অবয়বে সাঁতার কেটে যায় বুনোহাঁস,
আর রেখে যায় তার স্মৃতি চিহ্ন ঝরা পালক;
সেই পালক নিত্য টানা হেঁচড়া করে পুঁটির মিছিল।

এতদিন কোথায় ছিলেন
রবীন বসু

তিনটে জানালা পেরিয়ে চতুর্থ জানালায়
যে চাতুর্য খেলা করে
আপডেট কবিতা তাকে পাশ কাটায়Ñ
অসম্ভব স্মার্টনেস নিয়ে জিনস পরা মেয়েটা
খোলাচুলে তার গতিবেগ বাড়িয়ে দিল
কেননাÑ বনলতা, সুরঞ্জনা, সুচেতনা আর
আকাশলীনারা বসে আছে নন্দন চত্বরে,
একটু পরে কবিসম্মেলন শুরু হবেÑ
মাইক্রোফোন হাতে ঘোষিকা-কবি
যে কোন সময় তাদের যে-কাউকে ডেকে নিতে পারে;
আর এই ডাকার ফাঁকে যে অবকাশ
যে চলমান অস্থিরতা তাকে পাশে নিয়ে
এক অন্তর্জাল রহস্য মাখে মেয়েটি;
সরপুঁটির মত চিকন আর চন্দনফোঁটা নিয়ে
সে মঞ্চের কাছাকাছি যেতেই
এক বয়স্ক কবি অভ্যর্থনার হাত বাড়িয়ে দিল;
হাতের পাঁচ আঙুলে দীর্ঘ নখ
নখের ভিতরে জমে থাকা প্রাচীন ময়লাÑ
আর ময়লার ভিতরে উঁকি দিতেই
কে যেন বলে উঠলÑ এতদিন কোথায় ছিলেন ?

একটি বসন্তের অপেক্ষায়
জালাল জয়

তুমি এলে না হয় কাছে
তুমি দেখলে না হয়
কী  করে প্রানের স্পন্দন তুমিহীন
সুরহীন একলা ঘরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে বাঁচে
তুমি দেখলে না হয় জীবনের পথ...

তুমি দেখলে না হয় বসন্তের সকাল
দেখলে না ঝরাপাতায় মুগ্ধ বিকাল
তুমি দেখলে না হয় জীবনের শব্দ
যে শব্দের ¯্রােতে সমুদ্রের জোয়ার
ভাটার দিবারাতির খেলায় ভাসে চোখ
তুমি দেখলে না হয় এ চোখের কাজল
যে কাজলের মায়ায় তোমায় রাখি
দৃষ্টির নীলিমায়...

তুমি দেখেছো কী চেয়ে
এই চোখের তারায় কত স্বপ্ন কত গল্প
কত রাত কত দিন অপেক্ষায় ছিল
শুধু একটি বসন্তের...


ভালোবাসার সমীকরণ
বজলুর রশীদ

বিছিন্ন শীতকথন নয়,
ভালোবাসার শৈল্পিক ইচ্ছেগুলো
ডানা মেলে উড়ে যায়
তোমার খোঁপার ফোটা ফুলে।

সুবাসের অনুভবে রঙতুলিতে এঁকেছি
বসন্তের রূপ জিঘাংসা নয়;
এক একটি প্রহর হৃদয় গহীনে
ফাগুনের কচি সময়গুলো
গুনগুন সুর তুলিয়ে বাজে।

প্রস্ফুটিত গোলাপের সমীকরণ খুঁজি-
ভালোবাসার স্বর্গীয় সুখ।

এইতো বেশ ভালোই আছি
মাহদী হাসান

এইতোÑ বেশ ভালোই আছি
শীত পড়লে সোয়েটারে বুকটি লুকাই
তাল হারিয়ে গ্রীষ্মে ঘামি, রৌদ্রে শুকাই
হাসির সময় হাসি, কান্না এলে মুখ লুকিয়ে বাঁচি
এইতো- বেশ ভালোই আছি।

তুমি- কেমন আছো?
ছাদের ওপর পা এলিয়ে
খোঁপার বাঁধন খুলে দিয়ে
গুনগুনিয়ে গাওয়ার ছলে
আমার কথা, এখনো কী ভাবো! খবর দিও।

ট্র্যাডিশনের শিকল ভেঙে
দিগি¦বজয়ী বীরের মতো খেই হারিয়ে
ছুটেছিলাম লাগাম ছাড়া তীব্র রোদে, বর্ষা মাথায়
স্মৃতির পাতায় আঁকা আছে?

নাকী তাল হারিয়ে সব ভুলেছো! খবর দিও।

খবর নিও। ভর দুপুরের শাদা-কালো স্বপ্নগুলো
রঙিন করার এম্বিসনে যাচ্ছে ভালোই
কান্না হাসির জোয়ার ভাটায়, দিন চলে যায়
বীজের ফলে তৃপ্ত ঢেঁকুর - চলছে ভালোই
এইতোÑ বেশ ভালোই আছি।

মেডিটেশন চলছে ভালোইÑ
ধ্যানের ঘোরে শাদা কালো অতীত ছবি
পাহাড় ঘেরা নিকেতনের কামরা সবই
গারদ থেকে মুখ দেখানোর হালত শেষে
ঘরবন্দী ইতিহাসের সাক্ষী বেশে, চলছে ভালোই
এইতোÑ বেশ ভালোই আছি।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট