পদাবলি



বাংলাদেশ
লতিফ জোয়ার্দার 

কোন এক হাড়কাঁপানো শীতের রাতে আমাকে আগুন ভেবে কাছে এলে তুমি
আর আমি তোমাকে ভাবলাম সু-দূর গ্রামের কোন এক যৌবনবতী সরিষাখেত
এভাবেই একদিন তোমার আদ্রতায় পা ভেজালাম আমি। আর তখনই এক
অদ্ভুত ম্যাজিক আমাদের গভীর উষ্ণতায় পোড়াতে থাকলো। আমরা তখন
মোহগ্রস্থ হতে হতে বুকের আগুনে একটা স্বপ্নে পোড়া মানচিত্র তৈরি করতে
থাকলাম।সেদিন থেকে একটা স্বাধীন ভূ-খ-ে হাজার বছরের স্বপ্ন বুনতে থাকলাম  
আর এভাবেই একদিন আমাদের সাদাকালো স্বপ্নগুলো রঙিন হলো। আর সেদিন
থেকে তুমি হলে, আমার প্রেম আমার ভালোবাসা আমার প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশ   



আমার আছে
নূরে জান্নাত

আমার আছে সবুজ কাফনে মোড়ানো
সুপ্ত এক মায়াবী শরীর,
যে শরীর বিস্তৃত সীমাহীন সবুজ রঙের
ভালবাসায় পরিপূর্ণ।
এই ভালবাসা চোখ দিয়ে দেখে
মন দিয়ে অনুভব করা যায়,
কিন্তু স্পর্শ করা যায় না।
আমার মায়াবী শরীরে আছে
লাল রঙের একটি মন।
যে মনে অবিরত বয়ে চলে..
ছলাৎ ছলাৎ যৌবনের স্বচ্ছ ¯্রােতধারা।
যেখানে চোখ রাখলেই দেখতে পাবে..
ঈাহাড়ের কান্না,সবুজের সমারোহ
নদীর হাতছানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ।
আমার আছে ৫২,আমার আছে ৭১,
আমার আছে ২১শে ফেব্রুয়ারী..
আমার আছে ৭ ও ২৬ শে মার্চ।
আমার আছে শোকে জর্জরিত ১৫ই আগস্ট।
আমার আছে খিলখিলিয়ে
হেসে ওঠা ১৭ই মার্চ।
আমার আছে লাহোর প্রস্তাব,
আমার আছে ছয় দফা।
আমার আছে ভয়ংকর সেই কালো রাত!
আমার আছে ৩০ লক্ষ শহীদ ও হাজারো বিরঙ্গনা।
আমার আছে সংগ্রাম,আমার আছে স্বাধীনতা।
আমার আছে নিজেস্ব একটি ভূ-খন্ড,
আমার আছে স্বার্বভৌমত্ব।
আমার আছে পাঁচটি অক্ষরের

হৃদয় কম্পিত একটি শব্দ।
যে শব্দটি শুনলে অনাহারী বৃদ্ধের
মুখখানা হাসিতে ভরে ওঠে।
যে শব্দটি শুনলে সকলে শিহরিত হয়ে ওঠে।
যে শব্দটি শুনলে আকাশ,বাতাস,মাটি
গোটা বিশ্ব শ্রদ্ধা ভরে দাঁড়িয়ে যায়।
যে শব্দটি আমাদের বাঁচতে শিখিয়েছে,
যে শব্দটি ১৬ কোটি বাঙালীর সুখ দুঃখের আশ্রয়।
যে শব্দটির নাম ‘প্রেম’
সেই শব্দটি ‘বাংলাদেশ’

মাটির রূপ
মোকসেদুল ইসলাম

অদ্ভুত এক পৃথিবীর নকশা এঁকেছি
মানুষেরর বদলে এখানে ঘুমিয়ে পড়ে পুতুল
রাত্রিকালীন সরাইখানায় আড্ডা জমে বেশ
কে খেলো পাখিমাংস সুস্বাদু হরিণ।

কিছু অভিশাপ পড়ে থাকে মরা নদীর বুকে
টেরাকোটায় আটকে থাকে মানুষের বিশ্বাস
যাদের জন্ম হয়েছিল মনখারাপের উপত্যকায়
তারা এখন শুনিয়ে যায় ক্ষুধার্ত দুপুরের গান।

রঙিন মোড়কে বেঁধে রেখেছি মাটির সংসার
প্রতি পদক্ষেপে বদলে যাচ্ছে বিজ্ঞাপন
মাটি খ্ড়ুলে শুধু পানি নয় ভেঙ্গে পড়ারও সম্ভাবনা থাকে।



আয়নাকুচি
অসীম মালিক

বিশ্বাসের আয়না ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে,
ছড়িয়ে পড়েছে গৃহস্থের উঠানে-
আয়নাকুচি চেতনা ছুঁয়ে আছে
                      গৃহস্থের ঘুনধরা কড়িকাঠ;
আজ বিশ্বাসকুচি টুকরো টুকরো মুহূর্ত
কখনও বা মুখ ভ্যাঙচায় ,
                       কখনও বা চোখ রাঙায় ;
আবার কখনও বা লজ্জায় জিভ কাটে-
চেষ্টা করি- আমার বিশ্বাসকুচি চেতনা,
একত্রিত করে সামনে এসে দাঁড়াই-

আশালতার হাতে সাজান ,
            আমার টুকরো টুকরো আয়নাজীবন;
আজ আলোক প্রত্যাশী সারা মুখে
অবিন্যস্ত দাগ কেটে যায়-
               নিজেকে বড় একা লাগে...
ভাঙা-ভালবাসার আয়নায়
              আজ নিজেকে বড় অসহায় লাগে !




জেগে ওঠো জাতির বিবেক
সিরাজ অনির্বাণ
(উৎসর্গ: ড. জাফর ইকবাল স্যার)

জাতির বিবেক আজ রক্তাক্ত, রক্তাক্ত আজ শুভ্র চেতনা; আমি লজ্জিত,
বেদনা কাতর সূর্যের দিকে চেয়ে বলো তুমি, তোমার বোধের উত্তাপ কতটুকু?
কতটুকু তুমি নিরাপদ দেশে মুক্ত ভাবনার পথে?
কতটুকু বিষ ছড়িয়ে রয়েছে তোমার চোখের পাশে?
অথচ, অথচ তুমি তা চেনো না, জানো না এখনো

শাণিত বিবেক মার খায় আজ লাল গালিচায়
তোমরা শায়িত হয়ে যাও তবু ঘাসের মতন
তৃণভোজী খেয়ে যায় তোমাদের সদ্য গজিয়ে ওঠা চেতনার চারা

মুক্তি কি নেই?
কোথাও কি নেই মুক্ত বিবেকবান মানুষের এতটুকু নির্ভার পথচলা?

কোথায় যাচ্ছো তুমি? ভেবে দেখো এই মুহূর্তে আজ এখন!
ঘুরে দাঁড়াবার এই তো সময়; মুক্ত বিবেক সব এক হও, সচেতন হও
চিনে লও সব শত্রুর কালো পদচিহ্ন ।

জাতির বিবেক তুমি জেগে ওঠো
জেগে ওঠো দূর আকাশের জ্বলে থাকা সূর্যের মতো করে
নষ্ট জগত থেকে পুড়ে যাক সব নষ্টের খড়কুটো
ফুলে ফুলে ভরে যাক এ দুনিয়া...

শুনেছি কষ্টের রঙ নীল
উষার মাহমুদ

আকাশের নীল ছায়ায় রঙ পাল্টায় জোছনা!
ইচ্ছেগুলো বাঁক হারায়; জোছনা দেখা ভুলে
আকাশের নীল সরাতে ব্যস্ত হয়ে উঠি;
কীভাবে স্থির  থাকি বলো? শুনেছি কষ্টের রঙ নীল !
আকাশ, বড্ড ভালোবাসি তোমায়...
তোমার নীল শাড়ির নীলাভ হাসিতে
ফুল পাখি প্রজাপতি মুগ্ধ হতে পারে;
শত জনমের কষ্ট লোকানো হাসিতে
সবুজ অরণ্য নীলাভ হয়ে যায় আমার!!
একাকার হয়ে যাওয়া নদী আর পুকুরের জল
আলাদা করার বৃথা প-শ্রম আমার।
যে আকাশে মন ভালো রাখার মন্ত্র পাই
সে আকাশে নীল রেখে কী করে পালিয়ে যাই বলো?



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট