বর্ষা এসেছে তুমি খবর পাও মা !





বর্ষা এসেছে তুমি খবর পাও মা!         
রোকেয়া রিক্তা           

মা, আজ আবার বর্ষা এসেছে। ঝমঝম করে সময়ে অসময়ে বৃষ্টি নামে। ঘন কালো মেঘে সমস্ত আকাশ ছেয়ে যায়। মেঘের গর্জন তো নয়, যেন দৈত্যর গলা ছেড়ে হাঁক। কান তালা পড়ে যায়। আমার খুব ভয় করে মা!একা একা থাকতে পারিনা মোটেও। আকাশে যখন কালো মেঘে ছেয়ে যায়; ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে, তখন তোমাকে খুব মিস করি মা। তোমার নীল শাড়িটা বুকের মধ্যে শক্ত করে ধরে থাকি। তোমাকে যেমন জড়িয়ে ধরতাম, তেমনি দু’হাতে শক্ত করে আঁকড়ে পড়ে থাকি তুমি তুমি গন্ধমাখা শাড়িটা। তবুও ভয়ে কাঁপতে থাকি। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজের সাথে সাথে লাফিয়ে উঠি প্রতিবার। চোখদুটো বন্ধ করে থাকি তবুও বিজলির ঝিলিকের সাথে যেন ঝলসে যায় চোখ দুটো।

আগের দিনগুলোতে তো তোমার বুকের মধ্যে মুখ গুজে পড়ে থাকতাম। তুমি কেমন আরো শক্ত করে চেপে ধরতে মেঘ গর্জে ওঠার আগে আগে। আজকে জানো প্রতিবার আমি লাফিয়ে উঠি একলা ঘরে। তুমি খবর পাও মা বৃষ্টি নামলে? ঝমঝম শব্দ শুনতে পাও? মেঘের আকাশ ফাটানো গর্জন, বিদ্যুতের চোখ ঝলসানো চমক পাও মা? জানো মা, আজো আমি বৃষ্টির সাথে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। বৃষ্টির ওপারে কারা কাঁঁদে অমন করে খুব দেখতে ইচ্ছে করে! খুব কষ্ট হয় আমার। বৃষ্টির সময়টুকু তোমাকে ছাড়া আমার মোটেও চলে না গো মা!
আগে তো তুমি কানের কাছে মুখ রেখে কত কত গল্প বলতে, না আসতো কান্নার আওয়াজ, না আসতো মেঘের গর্জন। দিব্যি ঘুমিয়ে পড়তাম। তুমি বুঝতে পারো মা, বৃষ্টি নামলে? তখন কি তোমার কষ্ট হয় আমার জন্য ? আমার মতো তোমারও কি কান্না পায়? দেখছো তো  মা, আমি দিব্যি দিন কাটিয়ে দিচ্ছি তোমাকে ছাড়া! শুধু মেঘের গর্জনের বেলা তোমার শক্ত হাতের বেড়ির মধ্যে একবার ঢুকতে ইচ্ছে করে। কখন যে অজান্তে কেঁদে ফেলি তোমাকে ডেকে ডেকে। তুমি রাগ করো নাতো মা! কি কবরো বল, বর্ষাকাল টা যে মোটেও কাটে না তোমাকে ছাড়া।

জানো কাল কি হয়েছিল?  বৃষ্টি তো নামল আকাশ ভেঙে। ঝমঝম ঝমঝম করে! তোমার শাড়িটায় মুখ লুকিয়ে  পড়ে আছি। বৃষ্টির ওপার থেকে সেই ভেসে আসছে চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ। আর বসে থাকতে পারলাম না। কে কাঁদে অমন করে আজ দেখবোই। বারবার মনে হচ্ছে আকাশ থেকে দৈত্য নেমে সবাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আর সবাই বাঁচার তাগিদে প্রাণপনে চিৎকার করছে। তুমিও যেন আছো ওদের সাথে।
ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। তালসারি ছাড়িয়ে সোজা বড়ো রাস্তা। নাহ কেউ নেই। তবে কি সবাইকে ধরে নিয়ে গেল দৈত্য! কোথাও কেউ নেই। চারপাশে শুধু রুপালী বৃষ্টি আর বৃষ্টি। তোমার বাড়িটা ও দেখা যাচ্ছে না। রাস্তা থেকে তো মাত্র সামান্যই দুরে থাকো তুমি। বৃষ্টির ওপারে পড়ে গেলে কেন তবে? আরো দৌড় দিলাম। শুধু কান্না আর বৃষ্টি চারপাশে।
হঠাৎ করে বৃষ্টি ধরে এলো। চারপাশটা কেমন ঝকঝকে থকথকে। ধোয়া পাতার সবুজের সে কি চমক! আমি পাকা পুলের মাথা অব্দি পৌছে গেছি। কোথাও কোন জনপ্রাণী নেই। তোমায় বলবো কি মা, সত্যিই কোন জনপ্রাণীর সাড়া নেই কোথাও! সত্যিই যেন দৈত্যটা সব কিছুু সাবাড় করছে বৃষ্টির আড়ালে বসে! না কি আমি অজানা কোন দেশে এসে পড়েছি পথ ভুলে! পেছনে ফেলে যাওয়া রাস্তা ধরে আবারও দৌড়।বাবলা তলার ধারে আসতেই তোমার বাড়িটা চোখে পড়ল। বুনো লতার সাদা সাদা ফুল পড়ে আছে সবুজ ঘাসের উপর। ভেঙেপড়া দেওয়ালের উপর দিয়ে কিযে সুন্দর দেখতে লাগছিল তোমার ঘর। তুমি ওখানেই থাকো মা?

তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। হঠাৎ দুটো বাইক আমাকে ক্রস করে ছুটে গেল। বৃষ্টিতে কোথাও আটকে ছিল বোধ হয়। কয়েকটা ভ্যানগাড়ি ও যেতে দেখলাম। হাসি পেল আমার, মনে হলো এইবুঝি দৈত্য ওদের ছেড়ে দিয়েছে। যে যার কাজে যাচ্ছে এবার। বৃষ্টিতে যে ভিজেভিজে একাকার হলাম, তুমি রাগ করোনি তো মা! সরি বলেছি কিন্তু। কি করবো বলো, বর্ষার সন্ধ্যেটা বড্ডো তোমায় মনে করিয়ে দেয় রোজ রোজ! তুমি তুমি গগন্ধমাখা শাড়িটাও আর আমার কান্না আটকে রাখতে পারে না যে তখন!


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট