বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৬




এসিডিক   বৃষ্টি
সাব্বির শাওন

আমাদের শহরে আজও বৃষ্টি নামে
ভাতের পাতিলের তলার মতো পুড়ে প্রথম আসমান।

পরপর দু’দিন যোহরের ওয়াক্তে তোমার বার্তা এল-
বৃষ্টির ফোঁটায় বিদ্ধ হচ্ছে কক্স-বাজারের জমিন, আর আমার হৃদযন্ত্র
বিজলির তাপে পুড়ে গেছে এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক।
তাকিয়ে দেখি...
রাজউক জোনাল অফিসের বন্ধ সিঁড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে দু’টি মানুষের ছায়া
ছেলে ছায়াটা মেয়ে ছায়ার গালে চুমু খায়-
রোদের তাপে লবন জমে আমার ঠোঁটে।
এই প্রথম আজ অনুভব করলাম বৃষ্টিতে সালফার থাকে
রাজউক জোনাল অফিসে যেতে উদ্দত হলে পুড়ে গেল দু’টি চুল!
আমাদের শহরের নিখোঁজ ছাতাটা তোমার কাছে
মনে আছে আমরা কাছাকাছি থাকলেই বৃষ্টি নামত!



বন্যা 
শরীফ সাথী

উতলা নদীর ঢেউ, বেবাগা বৃষ্টির ছন্দ
আনন্দ ঢলে বিভোর। পাগলের মত উন্মাদ,
ভেঙে বাঁধ ক্ষেতের ফসল খেতে মরিয়া।
জলে জল সমতল করে
ক্ষমতার অপব্যবহারে ঘরবাড়ি চুবিয়ে
নিরীহ সহজ সরল মানুষকে বানভাসি করতে ব্যস্ত।
আমি গরীব আমি অসহায়!
বন্যা বন্যারে তুই থাম
আমি আর পারি না।





মেঘের শাড়ি পরনে
মজনু মিয়া 

অপরুপা মেঘ কন্যা তার পরণে মেঘ শাড়ি
হিমেল হাওয়ায় দোলে দোলে যাচ্ছে ফিরে বাড়ি।
উল্টা সূর্য্যের ঝিলিক লেগে রং ধনু রং সাজে
কভু ঝরে কভু পড়ে নানান রুপের মাঝে।

আয় ছুটে আয় আমার বাড়ি ভাঙ্গা ঘরে থাকি
সূর্য্যালো ঠিকরে পড়ে আর মেঘেরা দেয় ফাঁকি।
লাগছে ভালোই তোমার বাহার চুমু দিয়ে যাও মুখ
দুচোখ ভরে দেখি তোমায় শান্তি পাক তৃষ্ণার বুক।

আসো যদি আমার বাড়ি দেবো ভালোবাসা
মেঘকন্যা গো দিয়ও না কষ্ট  পূরাও মন আশা।



মনের জানালা
সোমা মুৎসুদ্দী

তোমার বাড়ি নীল আকাশে,
তোমার বাড়ি মেঘে।
তোমার বাড়ি আমার মনে,
আমার সব আবেগে।
তুমি আমার স্বপ্ন মধুর,
স্বপ্নেরি হাত ছানি।
তুমি আমার দোল-দোলানো,
ছোট্ট হৃদয় খানি।
যেখানেই থাকি তোমার কথা,
শুধুই আমি ভাবি।
তোমার জন্য মনের জানালা,
প্রতিদিনই খোলা রাখব।

উপাখ্যান
সিত্তুল মুনা সিদ্দিকা

ভুবন বিচ্ছিন্ন এক নিঃসঙ্গ কপোতের মতো
উড়ে উড়ে দেখেছি কত নদী আর
সমতলের আবারিত সবুজ।
শ্যাম ঘন সব বনরাজি আর
কতো সুবিশাল পাহাড়,
শব্দ করে ছুটতে দেখেছি কতো
উপলময় ঝর্নার খেয়ালী পথ চলা,
কতো নদী গিরিপথ ধরে বয়ে যায় ভরা বর্ষায়,
অব্যক্ত কতো অশ্রু ঝরতে
দেখেছি ফোঁটায় ফোঁটায়।
অপন আবহে অল্প অল্প করে পাঠ করেছি
সজল চোখে কতো হৃদয়ভাঙার গল্প!
উম্মাদের মতো সাময়িক দ্রোহের আছে
বিচিত্র কতো উপাখ্যান!
আনত নয়নে গড়তে দেখেছি কিছু সুখের নীড়,
জীবনের এই বোধে অসীম বিচিত্রতায়
স্তব্দ হয়ে তাই চেয়ে থাকা।
সৃজনকর্মে হারিয়ে যেতে দেখেছি
কতো প্রসেনিয়াম মন!
তখনো একা ছিলাম, শুধু অন্ধ অনুগামী হয়ে;
জাগতিক নিয়মের এই গতিপথ ধরে
একাকী পরিভ্রমন করে গেলাম ।
কতো সহস্র ফেনায়িত ধবল সামূদ্রিক ঢেউ
বিলীন হয় শুষ্ক বেলাভূমিতে!
এভাবেই ঘটে চলে কতো
বর্ণাঢ্য জীবনের বর্ণহীন চিরপ্রস্থান!


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট