বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০২




বৃষ্টি এবং অন্যান্য
রেবেকা ইসলাম

তুমুল উত্তেজনার বৃষ্টিতে
মাঝে মাঝে তুমি ঘরটাকে পাহাড় বানিয়ে ফেলো,
তারপর চূড়োয় উঠে যাও নিশ্চিন্তে
আকাশ ছুঁয়ে দেখ একলাই,
আমি তখন চলে যাই সমান্তরালে
কাল্পনিক অপেক্ষার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে,
ভাঁটফুলের সাথী হয়ে
নীল কন্টিকারি ফুলের কাঁটায় আহত হয়ে
ছাতিমতলায় শুয়ে বলি
গ্রাস করো, গ্রাস করো আমাকে,
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি
সার সার স্মৃতির চতুর্কোণ পা-ুলিপি,
নদীতীরের পলিমাটির মতো নমনীয়
ভাঁজকরা সুখ- দুঃখের এলিজি,
যা ছিল দুজনার একান্ত,
তারপর ফিকে হয়ে আসে কস্তুরির ঘ্রাণ,
ভেসে আসা শুদ্ধ কল্যাণ রাগের সুরের সাথে
মহাশূন্যের গর্ভে বিলীন হয় মূহুর্তগুলো,
ঘন হয়ে আসে প্রকৃতির ঘুমঘুম ছবি
পাখির দল ঘরে ফিরে যাবে বলে।


কাগজের নৌকা
ইয়াসিন আরাফাত

কালো মেঘ উড়ে এসে শিরশিরি বাতাসে,
আলো নিয়ে উড়ে গেল গাঢ় নীল আকাশে।
নিজ নিজ নীড়ে বসে পাখি ছানা  ডাকছে,
আউশের ক্ষেতে উঠে সোনা ব্যাঙ হাঁকছে।

ভ্রমরেরা ছুটে আসে আঁকা বাঁকা ছন্দে,
বেলি, চাঁপা, জুঁই, কেয়া, কামিনীর গন্ধে।
ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পানি তালপাতা পিছলে,
আয় খোকা ঘর ছেড়ে তার সাথে ভিজলে।

উঠানের কূল ঘেঁষে বুক ভরা আশাতে,
পিঁপড়েরা বসে আছে যেতে হবে বাসাতে।
কাগজের নৌকাটা নিয়ে আয় জলদি,
ছোট ছোট প্রাণীগুলো খেয়াঘাটে বন্দি।


জলপুকুর
সিহাব

মেঘদুপুরে আকাশ কালো, রাত্তিরেতে বৃষ্টি এলো,
কোন সকালে আসবে তুমি! ঝুম বর্ষায় ভিজিয়ে দেব।
স্মৃতিমাখা কদমের ডালে একজোড়া শালিক বসে ছিল,
একটা বাতাস মবে হলো আবার যেন বৃষ্টি এসেছে,
আবার কোথায় উড়ে গেল সেই শালিকের জোড়া,
আজ মেঘ হয় বৃষ্টি জলপুকুরে জমে ব্যাঙের খেলা,
কোন সকালের আলসেমিতে ভাঙ্গল ছেলেবেলা,
ভাবতে ভাবতে আধার হলো বৃষ্টি এলো নেমে,
হাত বাড়িয়ে ভেজাবো ভেবে বৃষ্টি গেছে থেমে,
হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুতে বড্ড মায়া হয়,
কবে ভিজাবো একযুগল হাত, একরাশ হাসি।

জলের তৃষ্ণা
আবুল বাশার শেখ

এতো জল তবুও তো তৃষ্ণা মিটেনা
হাহাকার এই জল নিয়ে।
ক্রুদ্ধ আকাশ ফেলছে সব জল
ক্ষুধিত মাটি ভোগ করে
যৌবনহারা খাল, বিল, হাওড়, বাওড়, নদী কিংবা
উত্তাল সাগরও গ্রহণ করে আকাশের ফেলে দেয়া জল।
বলতে পারো এতো জলেও তৃষ্ণা মিটেনা কেন!
অজ্ঞতা চৌদিকে দাপিয়ে বেড়ায় সবক্ষনে
পশুত্ব জেগেছে এখানে ওখানে সবখানে।
শিঁকড় ভুলা গাছ দিনে দিনে সবুজের শত্রু
যান্ত্রিক সভ্যতার পদাঘাতে হচ্ছে মস্তিষ্ক বিকৃত,
জলের তৃষ্ণা হাওয়ার বুকে হাহাকার করে
প্রকৃতির পরতে পরতে জলের তৃষ্ণা।







কাটে অবসাদ
শাহানারা ঝরনা 

মনকথা নিয়ে ছোটে মায়াবতী মেঘ
দেখে মন ভরে তবু বাড়ে উদ্বেগ
বৃষ্টিরা ছোঁয়া দেয় বালিকার গায়
বুনো বুনো সুখগুলো দূরে ভেসে যায়।

কেউ কেউ মোনালিসা প্রেমে দেয় ডুব
কারো বাড়ে ব্যাকুলতা কারো জ্বালা খুব
ভিনদেশি পথিকের চোখ ভরা জল
অসময়ে বনপাখি করে কোলাহল
মানবিক হয়ে কেউ করে দুখী ভাব
কারো ব্যথা দেখে হাসে বাবু বিবিসাব
শাদা নীল কষ্টেরা বোনে মিহিতাঁত
মিনতির জলে ভেজে পাললিক রাত।

মাঝে মাঝে বেড়ে যায় নাগরিক ঋণ
ঋতুমেয়ে কাছে আনে জলে ভেজা দিন
বালিকার দিনগুলো আশা নিরাশার
মৌসুমি সুরে হেসে দোলে বারবার
বরষার জলধারা ডাকে আয়-আয়
শুচিতার মনবাঁশি বাজে নিরালায়
নূপুরেতে বাঁধা পড়ে জলছবি দিন
দেখে বুঝে কেউ হয় উদাসে মলিন।

বালিকার চোখে ভাসে কার কালো চোখ?
সে কি বলে, ‘এই মেয়ে-তোর ভাল হোক?
হয়তো-বা, কিংবা সে থাকে নীরবেই
অভিমানী হয়ে ভাবে তাঁর কেউ নেই!
 নিয়ে হাসি, সুখ, দুখ, জয়-পরাজয়
বালিকারা এভাবেই চিরসুখী হয়
মুঠোতেই ধরে রাখে সূর্য ও চাঁদ
বৃষ্টির জলে কাটে সব অবসাদ।



অতৃপ্ত ঝড়ের সকাল
ফারুক মোহাম্মদ ওমর 

বৃষ্টি এলেই আমি ব্যস্ত হই
তোমার ভালোবাসায়
অথচ তুমি প্রতারণায় গিলে খাও
আমার ঔরসজাত প্রজন্ম ।

সেদিন দুপুরে তোমার মুখে বৃষ্টির জলছাপ দেখে
বললাম ওগো পুত্রবতী,
এসো আলিঙ্গন করি আসমানী প্রেমে
যদি ত্রিশ বছর সময় দাও
তোমায় দেব নতুন প্রজন্ম এইসব ফুলের বাগান ।
তুমি মুখ ফিরিয়ে জিতে যাও
আমি হেরে যাই দেখি অতৃপ্ত ঝড়ের সকাল।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট