বৃষ্টিদিনের শব্দপাড়া : ০৩




বৃষ্টিবন্দনা
সাব্বির হোসেন

ক্লান্ত দেহটাকে সবুজ গালিচায় পেতে দিয়েছি
অপলক দৃষ্টিতে তপ্ত রৌদ্রে উদাস ঘুঘুর মতো,
আমি চেয়ে আছি মেঘপুঞ্জের আসমানে
খাঁ খাঁ করা মরিচিকায় হা করে জল খোঁজে কাক পক্ষী ও সবুজ পতঙ্গ।

চোখ খুলে দেখি হঠাৎ শীতল হাওয়ায় দোল খায় ডালে ডালে গুচ্ছ কাঠগোলাপ
ঝুম বৃষ্টিতে স্বপ্ন দেখি গাঁয়ের মেঠো পথে দাঁড়িয়ে ধরে আছি কোন এক রমনীর হাত,
কালো মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়ে দেখি সূর্যের তেজহীন রেখা
বর্ষণসিক্ত ভেজা শরীরে একবার বলে উঠুক রমনী; আমাকে ছেড়োনাকো একা।

বলি চেয়ে দেখো আজ; নিস্ফলা মাঠ হাসছে নতুন যৌবনে
কচি বালকেরা মাতিয়েছে শূন্য উদ্যান কাচা মাটির ঘ্রাণে,
আহা! একি শীতল পরশ বর্ষা ধৌত দিনে বাংলার খালে বিলে
নগ্ন পায়ে চলো দুপা এগোই তোমার নূপুরের তালে তালে।

রমনী; তুমি ছেড়ে দাও তোমার অন্ধকার শিল্পের খোঁপা
জলসিক্ত চুলে আমি গুজে দেবো আমার কাঠগোলাপের থোকা,
উড়ে আসে ভীনদেশী পাখি আর লজ্জা ভেঙ্গেছে শাপলা সালুক
এই বাদল দিনে রমনী তোমার সবটুকু চাওয়া পাওয়া শুুধুই আমার হোক।


এক পশলা বৃষ্টি দিও
সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

তুমি এমন একটা আকাশ দিতে পারবে কি আমায়?
যে আকাশে মেঘ থাকলেও চাঁদ তারা ঢাকা থাকবে না।
তুমি এমন কিছু বাতাস দিতে পারবে কি আমায়?
যে বাতাসে ধূলো উড়লেও বৈশাখী ঝড় বয়ে যাবে না।
তুমি এমন একটি সাগর দিতে পারবে কি আমায়?
যে সাগরে ভয়ংকর ঢেউ থাকবে কিন্তু আমি ডুবে যাব না।
তুমি এমন একটি ভালোবাসা দিতে পারবে কি আমায়?
যে ভালবাসায় বিরহ থাকবে কিন্তু তুমি হারিয়ে যাবে না।
নয়তো এক পশলা বৃষ্টি দিতে পারো কি আমায়?
যে বৃষ্টিতে আমি কাঁদবো কিন্তু কেউ তা দেখবে না।


জানালার কাঁচে রেখে এসেছি 
মোস্তফা হায়দার 

সে দিন জলের কাপড় খোলে
আকাশের চাদরে রেখেছি দু’জনের হাত
ঘনমেঘের ঘনঘটায় বকেরা দিশেহারা
বাতাসের গায় ওড়ে চলেছে বিশ্বাসহীনতা!

সন্ধার পূর্বেই এক ঝাঁক বোকার দল এসে
আঁড়ি পেতে শাড়িতে দিয়েছে টান
চশমার ফ্রেম ভেঙ্গে লুটিয়ে পরে জলের পাদুকায়
সন্ধ্যার লাইটের কথা মনেই ছিল না সেদিন।

বিশ্বাস আর মৌনতার মিছিলে
সে দিন হেরে গেছে বুকপকেটের ভালোবাসা
ঈশ্বরে কাবু হওয়া চেতনার বারান্দায় দেখি
ভুল মানুষের ভুলের ইশারা!

হারিয়ে গেছি সে দিন জলের সোহাগে
বাসের জানালার কাঁচে রেখে এসেছি
লুকিয়ে ইশারা করা এক বিস্ময়ের নাম
আজো মনে পড়ে জলে গতর খোলার দৃশ্য!

আর এসো না! হয়ত হবে না চোখাচোখি
দৃশ্যের মায়ায় পড়ে লিখে যাবো শেষটুকু
কখনো মনে পড়লেই মোরাকাবায় পাবে
মনে রেখো ধ্যান আর মননেই জলের ক্বদর


বৃষ্টিবিহীন আষাঢ়ের দুপুরে
মাহমুদ নোমান 

হলুদের পাতা কুঁটছে কেউ
বটকীর ঠুঁটে,
বরুণো দাপিয়ে বেরুচ্ছে
জলীয় ধোঁয়া-
জিওল মাছের ঝোল
মাটির চুলায় বুদ্বুদে,
বড্ড মেজাজি সুবাতাসে
দুলে ওঠছে বাগানবাড়ির শায়ের
কাফী রাগে-
নয়া জলপাই রঙের পাতায়
খামচি দেওয়া রোদ,
বাড়িয়ে দিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ
নাকফুলে চকমকে হেসে
চিনচিন ব্যথায় খোঁজে,
কারো বাড়িয়ে দেওয়া
অমন কাতর হাত...

তুমি সেই ধূমায়িত মেঘ
বাবুল চৌধুরী

ধূমায়িত মেঘ যাকে বলে, জীবনের যাঁতাকলে
তাকে কোথাও দেখিনি।
করোটির ভেতর থাকে সজল মেঘেরা দলেবলে
মেঘ পরবাসী তা জানি।
টাপুর-টুপুর শুনবো ইচ্ছে হলে, কতো ছলেবলে
তোমাকে দেই  হাতছানি।
তুমিই খরা তুমিই মেঘ, যাই তোমার কলরোলে-
তুমি দরোজা খোলনি।
উন্মাদ মেঘ হয়ে সেদিন আকাশ ছাড়িয়ে গেলে
ছাই হয়েছিলে নিজের অনলে।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট