ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশন : ক্রাইটেরিয়ন : পর্ব ০৬







ক্রাইটেরিয়ন
সৌর শাইন

[গত সংখ্যার পর]
 আমি নীলাকে ভালবাসি। প্রচ- ভালবাসি। নীলাও আমাকে ভালবাসে জানি। কতটুকু ভালবাসে সে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাই না। তবু সর্বদাই এক অজানা আশঙ্কা আমার ললাট রেখা কুঁচকে বিপ্রতীপ কোন আঁকার চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে। নীলা রোজ আমার কাছে আসে বটে। ওর আসা-যাওয়ার মধ্যে প্রথমদিকে ছিল বাস্তবিক ভালবাসা। আজকাল সে ভালবাসার সূচক রেখা প্রামাণিক লেখচিত্রে নিম্নমুখী। নীলা সে বন্য রাতের মতো একটিবারও আমাকে কাছে টানতে চায়নি। পরম শূন্যতার আশঙ্কায় আমিও ওর কাছে ভালবাসার তেষ্টা নিয়ে অগ্রসর হইনি। কদিন ধরে আমাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্কটি কেমন গৌণ! মুখ্য হয়ে ওঠেছে গাণিতিক সমীকরণ। এ এক অদ্ভুত বাধা! শাজান মিয়ার কাছ থেকে পাওয়া ছোট্ট নোটবুকটি এখনো পড়া হয়নি। কারণ, মানসিক প্রস্তুতি নেই। নোটবুকের কথা নীলাকেও জানাতে পারিনি। তবে ওকে নোটবুক ও গতরাতে পাওয়া ডায়েরিটির কথা জানানো উচিত।
সকালের চকচকে রোদ পুবের আকাশ দখল করে আছে। এখনো মিজান মিয়ার দেখা নেই। চা চড়িয়ে ভাবলাম, আজ নীলা এলে ওর ইচ্ছেটা পূরণ করব। পরম শীতল শূন্যতাকে উষ্ণতায় বিলীন করে দেবো। ঐ রাতে ওকে খুব কষ্ট দিয়েছি, অথচ সে একটিবারও তা মুখ খুলে বলেনি।
চা পান শেষে বাড়ির বাইরে হেঁটে বেড়াচ্ছি। অপেক্ষায় আছি কখন নীলা আসবে। কটা বাজে? হাতঘড়িতে সময় দেখতে গিয়ে থমকে গেলাম। অযুত হাতঘড়িটা সে রাতে ভেঙে অচল করে দিয়েছে। মুঠোফোনে দেখলাম, সকাল ন’টা পঞ্চাশ বাজে।
নীলাকে কল দিলাম। ওপাশ থেকে নীলা বলে ওঠল, সোম গুড মর্নিং।
গুড মর্নিং। কোথায় তুমি? কখন আসবে?
গেস্ট হাউজে আছি। আজ আমি ব্যস্ত আছি সোম।
কী বলছ? একটা ইন্টারেস্টিং নিউজ আছে। আমি আরেকটি...। বাক্যটা শেষ করতে পারিনি।
শোনো সোম, আমার কিছু ফ্রেন্ড এসেছে, ওদেরকে সময় দিতে হবে তাই....
তাহলে এখনি আমি তোমার গেস্টহাউজে আসছি।
না, সোম। তার প্রয়োজন নেই। আজ আমি একটু বেরুবো।
নীলার নিরাসক্ত কথা শুনে আমার মুড পাল্টে গেল। কল কেটে দিলাম।
দুর্বা ভেজা পথ ধরে হাঁটছি। এ শিশির বিন্দুগুলো যেন হেমন্তকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে এসেছি। দাদাজানের খাটের পাটাতনে গোপন বক্সে পাওয়া ডায়েরিটার কথা নীলাকে বলতে চাচ্ছিলাম। বলতে পারলাম না। জানি না, কী কারণে ও আমাকে অগ্রাহ্য করছে। কারা এমন গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু? যাদের জন্য নীলা আমাকে দূরে ঠেলে দিলো। নীলা আমাকে সত্যিই ভালবাসে?
ছিঁটেফোঁটা সন্দেহ আমার মনে জড়ো হতে চায়। আমি ঠাঁই দিতে চাই না। তবু মনের ভেতর কিছু প্রশ্ন বুদ্বুদের মতো জাগতে থাকে। এলোমেলো দিগি¦দিক ভাবনা হৈ হৈ স্বরে মাথার ভেতর মিছিল করছে। নীলা কি আবার আমাকে দুঃখ দিতে এসেছে? ও কি প্রতিশোধ নিতে চায়? শশী হত্যার প্রতিশোধ। আমিই তো শশীর খুনি। আমার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।
নীলা কি সেই শাস্তির বন্দোবস্ত করছে? শিশুকন্যা হত্যার শাস্তি পিতার মৃত্যুদ-! ও নিশ্চয়ই আমাকে হত্যার জন্য লোক জোগাড়ে ব্যস্ত। নীলা আজ কি তবে ঐ লোকদের সাথেই সময় দেবে? ওরাই কি ওর গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু? আজ কি কিলারদের সাথে একটি ড্রিল হবে? লাখ টাকার ড্রিল! টাকার দর কষাকষি শেষে করা হবে সোম মজুমদারকে খুনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা। কখন কোথায় খুন করা হবে আমাকে?
আচ্ছা, নীলা তো ইচ্ছে করলে নিজেই আমাকে খুন করতে পারে। তবু ও দেরি করছে কেন? সে বন্য রাতে আমাকে হত্যার একটা সুযোগ এসেছিল নীলার হাতে। সঙ্গমের ফাঁদে ফেলে যমের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া। পরম শূন্য তাপমাত্রা! আঃ কি ভয়ঙ্কর!





এই যে আঙ্কেল, ওই দিকে কোথায় যাচ্ছেন? ওদিকে যাওয়া নিষেধ।
কে? কে আমাকে বাঁধা দিচ্ছে? প্রশ্নদুটো কণ্ঠনালীতেই রয়ে গেল। আচমকা বোধশক্তি ফিরে পেলাম। একটা কিশোর ছেলে দাঁড়িয়ে। ওর মাথায় একটি ঝুড়ি। কাঁচা ঘাসে ভরা।
ওই দিকে যাবেন না। বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আছে। গত পরশু একটা পাগলা হাতি বনের ওই দিকে পালিয়েছে। কখন কাকে মেরে ফেলে কে জানে? ওই যে নোটিশ দেখুন।
ছেলেটি ঠিকই বলেছে। বোর্ডের নোটিশে তাই লেখা আছে। হাতিটাকে ধরার জন্য চেষ্টা চলছে। নোটিশ বোর্ডটা পড়া শেষে মনে হলো এ এক অদ্ভুত বাধা, যেখানে মৃত্যুর নকশা আঁকা! চোখ দুটো বুজে ফেললাম।
আঃ কি ভয়ঙ্কর কা-!
হ্যাঁ, আঙ্কেল। পাগলা হাতিটা খুব ভয়ঙ্কর! সাফারি পার্ক থেকে ওটা পালিয়ে এত দূর চলে এসেছে। ওটার খবর পত্রিকাতেও ছেপেছে। দুটো মাইক্রোবাস থেঁতলে দিয়েছে। হাতিটার পায়ের তলায় চাপা পড়ে রোডে এক ভিক্ষুক মারা গেছে।
তুমি কী করে জানলে?
জানব না কেন? আমাদের টঙ দোকানে রোজ পত্রিকা রাখে। পাঁচ টাকা দামের পত্রিকা। সেখানেই পড়লাম।
ও আচ্ছা। বেশ তো! তোমার নাম কি বাবা?
কিশোরটি হেসে বলল, মাহিদ।
নিষ্পাপ মুখ। সামান্য মোটা ও ভাঙা কণ্ঠস্বর!
তোমার বাসা কোথায়?
আমাদের বাড়ি নয়নপুর। এখান থেকে দু’কিলোমিটার পথ।
ও, আচ্ছা। এখানে বুঝি ঘাস কাটতে এসেছ?
হ্যাঁ আঙ্কেল। আমাদের একটা গরুর খামার আছে। উনিশটা গরু। রোজ ঘাস কাটতে হয়। বাড়িতে একটা রাখাল ছিল, ও ছুটি নিয়েছে। তাই আমাকেই....।
তাই তোমাকেই কাজটা করতে হচ্ছে।
হু। তাই।
পড়াশোনা করছো? কোন ক্লাসে?
নয়নপুর মডেল হাই স্কুলে পড়ি। ক্লাসে নাইনে। সায়েন্সে। আমাদের হায়ার ম্যাথ টীচারটা খুব পচা। অঙ্ক না পারলে খুব মারে।
ও। তুমি নিয়মিত মার খাও, নাকি অঙ্ক পারো?
আমি অঙ্ক ভাল পারি, উচ্চতর গণিতটা প্রথমদিকে কঠিন লেগেছিল, এখন সহজ লাগছে।
সহজ হলে তো ভালোই। তোমাকে থ্যাংকস। আমাকে সতর্ক করার জন্য।
মাহিদ হাসছে।
এখন যাই। বেলা হয়ে গেছে। আজ সকালে এমনিতেই প্রাইভেট পড়া মিস দিয়েছি। গা বাঁচানোর জন্য ঘাস কাটতে এলাম। এখানে দেরি হলে আম্মা খুব বকবে।
ঠিক আছে। যাও।
মাহিদ চলে যাচ্ছে। আমিও পা বাড়ালাম। এক জোড়া ঝুঁটি শালিক মাঠের ও প্রান্ত থেকে উড়ে এল। কয়েকটা কাক কোনো মৃত প্রাণির দেহাংশ নিয়ে টানাটানি করছে। মাহিদ শালবনের ওপাশটাতে প্রায় মিলিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ চিৎকার করে ডেকে ওঠলাম।
মাহিদ....
ছেলেটা দাঁড়িয়ে গেল।
চিৎকার করে সাড়া দিলো।
জ্বি আঙ্কেল।
তুমি আমার বাসায় এসো। গল্প করব।
আপনার বাসা তো চিনি না।
রিয়ন সাহেবের বাড়ি চেনো?
হ্যাঁ, এ বাড়ি তো সবাই চেনে।
আমি ওখানেই থাকি, এসো।
আসব।
মাহিদ শাল বনের গাছগাছালির ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল।




জানি না কী অজানা মোহে বনের ভেতর হেঁটে বেড়াচ্ছি। চারপাশে অচেনা পাখিদের স্বর। সামনের বড় শিমুল গাছের নিচে অসংখ্য শিমুল চারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। মনুষ্য অস্তিত্ব টের পেয়ে একটা সজারু দৌড়ে গর্তে ঢুকল। মাটির গর্তটা শিমুল গাছটার গোড়ায়। কৌতূহলবশত গর্তটার কাছে এগিয়ে গেলাম । কয়েকটা তাজা কাঁটা পড়ে আছে গর্তের পাশে। কাঁটাগুলোর গোড়ার দিকটা হালকা সাদা। মনে হচ্ছে আজই কাঁটাগুলো কোনো সজারুর দেহ থেকে খসে পড়ল। দুটো কাঁটা হাতে তুলে নিলাম। অগ্রভাগটা সূঁচাল। এ কাঁটা নিঃসন্দেহে ঘাতক কাঁটা। ছোটবেলা সজারুর কাঁটা নিয়ে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা গল্প পড়েছিলাম। ব্যোমকেশ বক্সীর গোয়েন্দা গল্প। সে গল্পে ঘাতক সজারুর কাঁটা মানুষের বুকে হৃদপি- বরাবর বিঁধিয়ে খুন করত। ঠিক এভাবে নীলা ইচ্ছে করলেই আমাকে হত্যা করতে পারে। ভালবাসার ছলনায় আমার কাছে এসে কাঁটাটা বিঁধিয়ে দিতে পারবে।
একটা ঘটনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। কদিন আগেও এ কাঁটার আঘাতে আমার নগ্ন পা ক্ষত-বিক্ষত হবার কথা ছিল। অথচ বেঁচে গেলাম। সে রাতে আমাকে বাঁচিয়েছে নীলা।
কেন বাঁচিয়েছে? প্রশ্নটা করলে হয়তো উত্তরটা পেতাম।
তবে কি নীলা আমাকে ভালবাসে? ভাল না বাসলে আমাকে বাঁচাবে কেন? সে রাতে তো আমি বিষাক্ত কাঁটার আঘাতে পঙ্গুত্ব বরণ করার কথা ছিল। এ মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি থাকতাম। আর এদিকে অযুত দাদাজানের ডায়েরিগুলোকে নিয়ে শুরু করত স্বাধীন খেলা। গাণিতিক সমীকরণগুলোকে কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে দিত। যেভাবে ক্ষত হতে পারত আমার পা।
নীলা আমাকে ভালবাসে বলেই, বাঁচিয়েছিল। অকারণে ওকে সন্দেহের ভাবনায় নিষ্পেষিত করেছি। এভাবে ভাবাটা মোটেও ঠিক হয়নি। মানসিক দুশ্চিন্তাই আমাকে এ বিপথে ঠেলে দিয়েছে। শশীকে তো আমি খুন করিনি। কোনো পিতা কি পারে তার শিশুকন্যাকে খুন করতে? শশীর মৃত্যু আমার ও নীলার জীবনে একটি বড় ট্র্যাজেডি। নীলা এই দুর্ঘটনার স্মৃতিকে মুছে নতুন করে বাঁচতে চায়। আমি অবশ্যই ওকে বাঁচিয়ে তুলব।
অবচেতন মনের ভাবনা ও হাঁটার গতিকে রোধ করতে পারিনি। কখন যে গভীর বনে পৌঁছে গেছি বলতেই পারিনি। এখনই ফিরে যাওয়া উচিত, নয়তো পাগলা হাতির মুখোমুখি হতে হবে। আমার মৃত্যু নীলার জীবনে নতুন করে হাহাকার সৃষ্টি করবে। দ্রুত পা ফেলে বাড়ির পথ ধরলাম। রিয়ন সাহেবের বাড়ি, যে বাড়ির গোলকধাঁধায় আজ আমি বন্দি! জানি না কবে শহরে ফিরে যাব। নাকি ফিরে যেতে পারব না।

রাতে মিজান মিয়া এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে দিলো। ক্লান্ত চোখে ঘুম আসি আসি করছে। না খেয়েই উপর তলায় ওঠে গেলাম। বিছানায় পিঠ লাগতেই দু’চোখ বোজে এলো। একটা স্বপ্নের উঁকি ঝুঁকি টের পেলাম।
নীলা হাসছে। ওর কোলে শশী।
নীলা বলে ওঠল, কদিন পরেই আমরা লঞ্চে চড়ে বরিশালে বেড়াতে যাব। তাই না মা মণি! হুম আব্বুর ফুফুর বাড়ি বেড়াতে যাব। সোমের ফুফু শশীর কি হবে? দাদুমণি....তাই না শশী?
শশী হাসছে। ওর হাসিতে পুরো ঘর উজ্জ্বল! হাসির সে উজ্জ্বলতা ক্রমেই বাড়তে লাগল। আমার দু’চোখে ধাঁধা জড়ো হচ্ছে। কিছুতেই চোখের পাতা মেলতে পারছি না। শশী আরো উচ্চস্বরে হাসছে, সে শব্দে আমার মাথা ধরে ওঠল।
অসহ্য যন্ত্রণা! কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না। পুরো পৃথিবী ঘুরছে! কেউ আমার মাথার উপর অনবরত আঘাত করছে।
আমি চিৎকার করে বলে ওঠলাম, নীলা শশীকে থামাও। প্লিজ, ওকে থামাও।
নীলা আমার ফ্যাকাশে মুখের দিকে তাকিয়ে ছুটে এল।
সোম, তোমার কী হয়েছে? এমন করছ কেন?
নীলা আমার কাছে আসতেই আমি ওর গায়ের উপর আছড়ে পড়লাম। ধাক্কা সামলাতে না পেরে নীলা দেয়াল ঘেঁষে লুটিয়ে পড়ল। মাথায় আঘাত পেয়ে ওর কণ্ঠ থেকে আর্তনাদ বেরিয়ে এল, ওহ্...! সোম এসব কি হচ্ছে? তোমার কি হয়েছে? এভাবে ছটফট করছ কেন?
আমার মতো নীলাও মেঝেতে পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। আমাদের দুরাবস্থা দেখে শশী আরো বিশ্রীভাবে হেসে ওঠল। ওর হাসিতে আমার মাথা ধরা ভয়ানকভাবে বেড়ে গেল।
আমি রেগে বললাম, নীলা..শশীকে থামাও। ওকে হাসতে মানা করো। নয়তো ওকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবো।





কথাটা বলতেই শশী হাসি থামিয়ে কাঁদতে লাগল। ও বলে ওঠল, বাবা, তুমিই আমার খুনি!
নীলা ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, সোম তুমি শশীকে মেরে ফেলতে চাইছো? ছি! সোম!
শশীর কান্নার শব্দে মুহূর্তে আমার মাথা ধরা থেমে গেল। কিন্তু পৃথিবী ঘোরা থামেনি। আমার পৃথিবীটা আরো বহুগুণ বেগে ঘুরছে! থর থর কাঁপছে চারপাশ!
আমি শশীর দিকে তাকিয়ে আছি। ওর অশ্রুসিক্ত মুখ দেখে আমার ভেতরটা হু হু করছে। এগিয়ে গেলাম শশীকে কোলে নিতে। নীলা বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকাল। তারপর বাজের মতো ছোঁ মেরে শশীকে তুলে নিয়ে ছুটল। আর বলে ওঠল, সোম, ভূমিকম্প হচ্ছে। জলদি নিচে নামো।
আমার পৃথিবী ভেঙে পড়ল আমার উপর। মাথায় প্রচ- আঘাত পেলাম। বিধ্বস্ত চারপাশ! পুরো বিল্ডিংটা ভেঙে তছনছ! অথচ আমি বেঁচে আছি। নীলা কোথায়? শশী কোথায়?
নীলা চিৎকার করে ওঠল।
সোম, শশী নেই।
নীলার কোলে শশীর রক্তাক্ত দেহখানি! ছোট্ট ঠোঁটজোড়া আচমকা নড়ে ওঠল।
বাবা, তুমিই আমার খুনি!
না, না...আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
আঃ...!

মিঃ সোম! কী হলো তোমার?
হ্যাঁ, কী হলো আমার?
আরেকটু হলে তো তুমি বিছানা থেকে পড়ে যাচ্ছিলে।
আমি পড়ে যাচ্ছিলাম, তাতে তোমার কী? কেন আমাকে বাঁচাতে গেলে?
রেগে যেও না। শান্ত হও।
কেন শান্ত হব? এই কে তুমি? কী চাও এখানে? নীলা,শশী কোথায়?
আমি অযুত বলছি। মিঃ সোম তুমি মানসিকভাবে অসুস্থ!
পুরোপুরি সজাগ হতেই আমার ঘোর কেটে গেল। স্বপ্নটা আমাকে সাংঘাতিক ক্লান্ত বানিয়ে ফেলেছিল। অযুত আমাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। করিডোরে গিয়ে চোখ-মুখ ধুয়ে নিলাম। ঘরে ফিরে দেখলাম উৎসব দাঁড়িয়ে। আজও অযুত উৎসবের অবয়ব নিয়েছে।
হেসে বললাম, অযুত সবকিছু ঠিক আছে?
হ্যাঁ, মিঃ সোম। তুমি মনে হয়, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। দুশ্চিন্তা পৃথিবীবাসীর ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্নের অন্যতম কারণ!
হুম। তা বুঝলাম। তোমার ডায়েরি পড়া কতদূর এগিয়েছে?
এখন একাত্তর সালের ডায়েরিটা পড়ব।
ঠিক আছে তবে। মনে মনে বললাম, ঊনসত্তর নম্বর ডায়েরিতে “ক্রাইটেরিয়ন ফর্মূলা”। হাতে সময় অল্প! ওকে যেভাবেই হোক তার আগেই থামাতে হবে। [চলবে...]

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট