পদাবলি : ০১

 



শিরোনামহীন

মাজরুল  ইসলাম

[কবি আসাদ চৌধুরী স্মরণে]


কোনদিক থেকে একটা দমকা হাওয়া এসে

সটান আমার কানে কানে বলে গেল

আপনি দিকশূণ্যপুরের দিকে পা বাড়িয়েছেন।


এই খবর শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।


এখন প্রতিটি মূহুর্ত কাটে চোখের জলে

কিন্তু আপনার শাশ্বত পঙতিমালা

অশ্রু মুছায় কিংবা অনুরণিত হওয়ায়


কত-ই না

প্রশান্তি এনে দেয়।



বাজি

দেলোয়ার হোসাইন


লোকটা পাগল।

নিজের সাথে হাসাহাসি আর

মাতামাতির তুমুল বিরোধ নিয়ে 

সারা দেশ চষে বেড়ায়...


সব্জির মাচাং, দোকান ঘরের বারান্দা 

অথবা নিজস্ব নির্ভরতায় যেখানে খুশি

সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে, লম্বা ঘুম...


জেগে ওঠে কুড়িয়ে পাওয়া সিগারেটে 

আয়েশ করে টান, হাসাহাসি, মাতামাতি...


লোকটা পাগল

লোকটা ঘুমিয়ে

লম্বা ঘুম...


আমরা একজন আরেকজন নিজেদের 

পাগল হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার বাজী ধরেছি...


লোকটা মরে গেলে আমি নিজেকে

লোকটা বেঁচে গেলে আমি নিজেকে

‘পাগল হিসেবে ঘোষণা দেবো’


লোকটা মরে গেলে

লোকটা বেঁচে থাকলে

আমাদের কয়েকজন নিজেদের

পাগল হিসেবে ঘোষণা দিতেই হবে...


লোকটা পাগল

লোকটা মরে গেছে

লোকটা বেঁচে আছে...!


সহচর

আহাদ আদনান


তোর দেশে নিবি? 

পাসপোর্ট আছে? 

তাও বুঝি লাগে পাখিদের?  

একটাই তো আকাশ,

উড়ে গেলেই হয় তো,

এখান থেকে ওখানে, 

সবুজ যেখানে শেষ হয়,

পাথরে পাথরে রাজপথ, 

অয়োময় দেশ তোর। 

তুই পাখি হলি কবে,

আমি ভেবেছিলাম তটিনী,

বাঁধ দিয়ে গতিপথ পালটে দেওয়া

কলকল জলধারা। 

কিংবা সবুজ 

ঘন অরণ্য, গহীন স্যাতস্যাতে, 

জড়াজড়ি করে বেড়ে ওঠা

বিষে ভরা খয়েরী ছত্রাক। 

অথবা নির্ঝর, 

আজও অবাক স্বপ্নভঙ্গে

হুড়মুড় কাছে টানা। 

তোকে কিন্তু কখনোই 

এতসব আবোলতাবোল 

ভাবাভাবি অবকাশ 

হয়নি আমার।

শুধু বেসে বেসে চেয়ে থাকা 

শুধু চেয়ে চেয়ে শ্বাস ফেলা 

শুধু শ্বাসে শ্বাসে অনুভব 

শুধু অনুভবে কাছে টানা 

শুধু কাছে টেনে ভালো বাসা।

তোর দেশে নিবি বল,

আকাশটাই সীমানা, 

একদিন ছুট দিয়ে দিগন্তে উড়াল,

তোর জন্য এই জন্মে 

সেজেছি অ্যালবাট্রস,

মেঘের মত শীতল পারিজাত।

আমি আকাশে তীর তাক করে 

বসে আছি চিরকাল 

আর যাই হস

পাখি হতে যাসনে সুহৃদ, 

সেন্সরে জমা চলতি কোনো 

সিনেমার হোর্ডিং নইরে

বন্যপাখি সংরক্ষণের আশ্বাস নিয়ে 

বসে থাকিনি কোনোদিন। 

আসব তবুও।

আসতেই হবে? আত্মহনন? 

তোর বিষাক্ত কণ্টকে ফালিফালি হব

এতেই সার্থক আমার খেচরকাল।



হড়াই নদীর বাঁকে 

সোহেল রানা 


মাছরাঙা মন।


ফিঙের বহতা পাখায় 

তার কুচকুচে শরীর ও জ্বলজ্বলে চোখে 

এক দূরন্ত কিশোর। ঘুঘু-ডাকা-দুপুর। 

নরম বিকেল-

শারদ-সুন্দর কাশফুলের আকাশ!

ডানা মেলেছে শাদা-শাদা বকের পাল!

কানাকুয়া কুপ কুপ করে উঁচু থেকে নিচু স্বরে

ডেকে ডেকে সঙ্গিনিকে খোঁজে।


ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি-সারি

আর গাঁও-গেরামের পল্লিগীতি, মুখর-


পাখিডাকা সকাল-

জুঁই-শাপলা-টগর-বেলির অপরিম্লান মুগ্ধতা-

ছুটে যাই, উড়ে যাই বারবার, বারবার--


হড়াই নদীর বাঁকে।



নিভৃতে আঁধার 

আশ্রাফ বাবু


সব চোঁখে চড়াই-উতরাই পথে

ফিরে ফিরে বিষাদ চোরা¯্রােতে,

ঘোরে বুঁদ হয়ে থাকে অন্ধকার 

আঁকা স্বপ্ন হৃদপিন্ডে ভাঙচুর।


জীবনের জটিল প্রাণবন্ত প্রেরণা

প্রয়োজন প্রাণশক্তির রেখাটানা,

কালো ঘর থেকে দূরের বনভূমি 

আছো উপভোগ্য বিষাদ তুমি।


মন আর মনের বিড়ম্বনা বাড়ায়

দূরত্ব বাড়ে; অস্তিত্বের গুরুত্ব খাতায়, 

মেঘ ছায়ার সবভাষা শব্দে ফোঁটে

উড়াল আকাশে অবিচল আধখানা ঠোঁটে। 


সব চোঁখে ভুলদেখা শিউলিতলা মনে

অযাচিত কথার মূল্য ভেঁজা দৃষ্টিগানে,

অঝোর ধারায় পরিপাটি চাঁদের কাছে

কুড়িয়ে ছলাকলা যা বুকে জমে আছে।




সাদা আবিরের কুয়াশা

স্বপন গায়েন


জোনাকির কোলাহল ফসলের মাঠ থেকে ভেসে আসে

ঠান্ডা হাওয়ার সাথে মিশে যায় রংচটা শরীর

অগ্রহায়ণের প্রহর শেষের মায়াবী রাত 

চরাচরে ছড়িয়ে পড়ছে সাদা আবিরের কুয়াশা।


মেঠো পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে অচিন দিগন্তে

জোছনার আলো ক্ষয়ে ক্ষয়ে তৈরি হয় আঁধার বলয়

রঙচটা শরীরের ক্ষত কেউ দেখতে পায় না

অমানিশার মধ্যেও খুঁজে বেড়ায় আলোর রথ।


শীত বাড়ছে, শীর্ণ জীর্ণ রোগগ্রস্ত উপত্যকা

ধ্বস নামবে যে কোনো সময়-

তবুও বাঁচতে ইচ্ছে করে সব কাঁপন উপেক্ষা করে

অগ্রহায়ণের আলো চিরকাল ছুঁয়ে থাকুক হৃদয়ের বালুচরে।



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট