রোজার স্বাস্থ্যগত উপকার



রোজার স্বাস্থ্যগত উপকার
আহাদ আদনান

‘আর যদি রোজা রাখ, তবে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা অনুধাবন কর’। আল্লাহতায়ালা তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে যে ইবাদতটি আমাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন, সেটা কত যে বিশাল বরকতময় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর পাশাপাশি রোজা আমাদের জন্য যে উপকার নিয়ে আসে, সচেতন মুসলমান মাত্রেরই সেগুলো জেনে রাখা ভাল।
রোজার যাবতীয় উপকারগুলো মোটামোটি ৪ভাগে ভাগ করা যায়। শারীরিক, মানসিক, আবেগিয় এবং আধ্যাত্মিক।
১। শারীরিক উপকার চিন্তা করতে গেলে প্রথমে ভাবতে হয় পাকস্থলীর বিশ্রাম। পাকস্থলী, তথা সমগ্র পুষ্টিতন্ত্র আমাদের লাগামছাড়া পানাহারে ১১ টি মাস ব্যতিব্যস্ত থাকে। টানা ১ টি মাস সারা দিন পানাহারে বিরত থাকতে হয় বলে অঙ্গগুলো পায় বিশ্রাম। স্বাভাবিক অম্লতা বজায়, বিপাক ক্রিয়া সচল রাখতে পুরো বছরের জন্য প্রস্তুতি গ্রহনের মাস হচ্ছে এই রমাদান।
২। একটি নিয়মের মধ্যে থেকে যেহেতু আমরা পানাহার থেকে বিরত থাকি, এর ফলে দেহের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন পদার্থ এই রোজায় নিষ্ক্রিয় হয়ে বের হয়ে যায়। শরীর হয় পরিশুদ্ধ। তবে শর্ত হচ্ছে, ইফতার এবং সাহরিতেও সংযমের পরিচয় দিতে হবে। খেতে হবে ভাজা পোড়া মুক্ত, বিশুদ্ধ খাবার।
৩। জেনে অবাক হবেন, দেহের শক্তির ৬৫-৭০% খরচা হয়ে যায় খাদ্য পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায়। এই রোজাতে শক্তিগুলো বেঁচে যায়। এটা পরে কাজ করে দেহের বিভিন্ন কোষ, কলার ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্গঠনে। দেহের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ নিস্কাসনে।
৪। রোজায় শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। ক্ষতিকর চর্বি পুড়ে দেহ হয়ে ওঠে ঝরঝরে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর অসুখ, পরিপাক তন্ত্রের বিভিন্ন ব্যাধি থাকে নিয়ন্ত্রণে।
৫। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালার্জি, ব্রণ, অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা জনিত অসুখ, হাঁপানি, দীর্ঘ দিনের হাড় ও গিঁটের ব্যথা, বিভিন্ন জটিল চর্মরোগ (সোরিয়াসিস,একজিমা ), মাইগ্রেন এসব রোগ থেকে বেঁচে থাকতে রোজা অশেষ উপকার করে। (ৎবভ. ধষষধনড়ঁঃভধংঃরহম.পড়স)
৬। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, রোজাদারদের মানসিক একাগ্রতা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে মস্তিষ্কে এক ধরনের নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর বাড়িয়ে দেয়। যাতে মস্তিষ্কে কোষ বাড়ে, একইসাথে বাড়ে কর্মদক্ষতা।
৭। বেপরোয়া জীবনে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা যেমন বেড়েছে, তেমনি দেখা যায় ওজন কমাতে ‘ডায়েটে’র হিড়িক। ভুল ‘ডায়েট’ করে অনেকে স্বাস্থ্য নষ্টও করে ফেলে। একথা আজ সর্বজন স্বীকৃত, বৈজ্ঞানিকভাবে ওজন কমাতে রোজাই সর্বোৎকৃষ্ট উপায়।   
এই উপকার গুলো ছাড়াও রোজাদারের মন থাকে প্রশান্ত, ইবাদতে বাড়ে একাত্মতা। একজন সঠিক ভাবে রোজা রেখে আবেগকে রাখতে পারেন নিয়ন্ত্রিত। হয়ে উঠতে পারেন সত্যিকারের মুসলিম, আদর্শ মানুষ। আর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তো আমাদের কল্পনারই বাইরে। স্বয়ং আল্লাহ যখন রোজাদারের প্রতিদান হবেন, আর কি চাওয়ার থাকে।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট