পদাবলি : ০২



আমি যাযাবর
মির্জা মুহাম্মদ নূরুন্নবী নূর

সামনে ধূসর বালুচর, খাঁখাঁ রোদের উত্তাপ
পারি দিতে হবে আদিগন্ত ধুলোময় জীবন
পাশে আপনজন বলতে কেউ নাই
দুটো হাত শুন্য আমার, পা চলে না সামনে
এগুতে হবে তবুও, বিজয় আনতে হবে
একাকী আমি, তুমি আমরা দুজন
পাশে নাই কেউ তোমার, আমার আমাদের
তুমিও ভুলে গেলে অতীত
বর্তমান আমার জন্য আশির্বাদ নয়, সুখকর নয়
অশান্তির দাবানল দাউদাউ করে জ্বলছে
আগুন জ্বলছে কলিজায়, হৃদয়ের গহীনে
মরুভূমির ক্লান্ত পথিক আমি
অবিশ্রান্ত হাঁটছি, আরও কত হাঁটতে হবে জানিনা
স্বপ্নপূরণের অভিলাষ নিরুদ্দেশের যাত্রী
কখন সকাল হয়, দুপুর কাটে, আবার রাত্রি নামে
জীবনের চাওয়াগুলো এতো নিষ্ঠুর কেন
স্বপ্নপূরণের বাতিঘর এতো দূরে কেন
আলো ছুঁইছুঁই তারাদের দেখি
শশীকে দেখি
চুপচাপ পিনপতন নীরবতার আবাসে বন্দি আমি
আমাকে শুধুই কাঁদতে শেখায়, কাঁদাতে ভালোবাসে
তবুও ভালোবাসি তাকে, দোয়া করি কল্যাণের জন্য
নিরুদ্দেশের যাত্রী আমি, আমি যাযাবর!


স্নায়ুবিক চিন্তার বিকিরণ 
আহমেদ ইউসুফ 

আকাশের অভিমুখে সকরুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
প্রজাপতির বারো হাজার চোখ
নিউরন বিগলিত স্নায়ুবিক চিন্তার বিকিরণ হচ্ছে
দেশ-বিদেশের প্রতিটি ঘরে দ্বন্দ্ব সমাসে সমাসে
অভাব আর অভিযোগের আবডালে
যেন এ সাজানো সংসার
আসুক মহামারী আসুক ঝড়
তবু না হোক বেদনার কারাগার।

সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি হোক
হৃদপিণ্ডের অলিন্দে অলিন্দে
কার্ডিয়াক পেশির ছন্দে ছন্দে অপার আনন্দে।

করোনা নিছক কোন মহামারী নয়
এ যেন বিধির এক অগ্নিপরীক্ষা
যা প্রতি নিয়ত অতিক্রম করে আমরা সম্মুখে যাই
ভয় নয় ভয়, করবো জয়; নিশ্চয়
যদি নেই সময়ের দীক্ষা
তবে এ করোনার বিরুদ্ধে জেগেছে
যে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ; তা দিয়েছে বুক থেকে বুকে ঠাঁই।



যা দেখছি জানালায়
সোলায়মান হোসেন তুষার

চৈত্র দুপুর,
অদূরে বাজে পুলিশের সাইরেন।
দু’একটা খামখেয়ালি তরুণ এই যা ছিল,
থেমে আছে সাঁই-সাঁই ছুঁটে চলা অতিকায় ট্রেন।
থমথমে মহাব্যস্ত রেলস্টেশন!

যা ছিলো দু’একটা ডানপিটে যুবক,
মুখে মুখোশ পরিহিত যারা।
তাছাড়া কয়েকটি অভুক্ত কুকুর,
তারে বসা শীর্ণ কাকের ঝাক,
সবকিছু মুহূর্তে পলাতক!

সাইরেন বাজিয়ে ছুঁটে চলে মুখোশ পরিহিত,
পুলিশের যান।
ছোঁটে চাল-ডাল বোঝাই মিনি ট্রাকভর্তি,
ত্রাণ অনুদান।
ছুঁটছে স্তব্ধ শহরের মহাসড়ক ধরে...

বাহিরে যেতে আজ মানা,
যেতে মানা রাতদিন চুপচুপে ঘামে চুপসে থাকা কাপড় গায়ে,
ছুঁটে চলা রিকশাচালক মামাদের।
যেতে মানা পোষাক কারখানার কর্মীদের,
যেতে মানা পার্কের বেঞ্চে চেপে গল্পে মাতা জুগল জুটির;
যেতে মানা ছাত্র-শ্রমিক, আমলা-মালিক সকলের। 
বাহির যেতে মানা আমাদের, যেতে মানা মানুষের!

বাহিরে অপেক্ষায় অচেনা ঘাতক,
যেতে চায় ছড়িয়ে শরীর থেকে শরীরে।
এক অতিক্ষুদ্র ভাইরাস, ‘নভেল করোনা’
চারদিকে ছেঁয়ে আছে লাশের মিছিলে!

ঘরে থাকতেই হবে, এটাই একমাত্র অস্ত্র;
ঢাল-তলোয়ার বলতেও এই যা!
দু’হাজার বিশ; একুশ শতকের অভিশাপ
বিশ্বগ্রাম স্তব্ধ করে আটকে দিয়েছে,
চারদেয়ালে!

দু’হাজার বিশ; একুশ শতকের অভিশাপ
দেখাচ্ছে কতটা ঠনকো আমাদের বন্ধন,
লাশ রাস্তায় ফেলে রাখছে পরিবার।
দেখাচ্ছে কতটা অসহায় মানুষ,
মানুষের কৃতিম পৃথিবী!

শিখেছি, শিখছি আমরাও-
‘জীবনের চেয়ে নয় কিছু দামি!’


তোমাকেই মনে পড়ছে
আরমান জিহাদ

নিস্তব্ধ নিরব আকাশ চারিদিকে
স্ব স্ব আওয়াজে বাতাস বইছে
আমি জানালার পাশে বসে দেখছি
কাঁচের জানালা ভেদ করে যেন
আমার হৃদয়ে আঁচড় লাগছে দক্ষিণা বাতাসের।
চায়ের কাপে চা নিয়ে বসে আছি
পাশে কেউ নেই শুধু স্বপ্নের তুমি ছাড়া।
শরীরে শীত শীত ভাব আসছে আর ভাবছি
যদি তুমি পাশে থাকতে,
শাড়ীর আঁচল দিয়ে শরীর মুড়িয়ে নিতাম।
বইয়ের পাতায় নজর যেন আটকাতে পারছিই না
কেবল বাহিরে চলে যাচ্ছে আর শুধু তোমাকেই খুঁজছে।
তুমি কি ঘুমের ঘোরে আমার এই ভালোবাসা অনুভব করছো?
আমি নিমিষেই হারিয়ে যাচ্ছি তোমার সুরে
তুমি ডাকছো তোমার শিউরে
আমি আবেগে আপ্লূত তুমি আমারই পাশে তবুও বহুদূরে তোমার বাস।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট