পদাবলি



হলুদ খাম 
মোঃ আবদুল্লাহ আল রাফি কায়সার 

ভালো নেই, কথাটা যাকে তাকে বলা যায় না!
শুধু তাকে বলা যায়,যাকে মন থেকে ভালোবাসা যায়!

হয়তে সে বিন্দু পরিমাণ কষ্ট টুকুও বুঝে না!
কি আজব দুনিয়ায় আমরা বসবাস করি..।

ভাবতেও খারাপ লাগে যে,
কিছু কিছু সময় মন এত বেশি খারাপ হয় যে,
ভালো নেই কথাটা বলতে মন চাইলেও মুখ ফুটে
বলা হয়ে উঠে না।
কারন তাদের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয় না.
তাদের গুরুত্ব না দেওয়াতে কতটুকু কষ্ট হয়
কেউ বুঝেও না! 

কিন্তু...
৩২ টা দাঁত বের করে হাসির ছলে কাঁদে
তবু কাউকে বুঝতে দেয় না।
নিরবে একা একা বসে
দু’চোখের অশ্রু বের করে ফেলে সবটুকু। 

অথচ” আমরা সবার সামনে গিয়ে অট্ট হাসি দেই
কি আজব তাই না?

সবাই আমাদের মতো বোকা মানুষ গুলোর একটুও খোঁজ রাখে না,
আমরা কতটা সুখে দিবস রজনী পার করি।



জন্মান্তর 
সুমন টিংকু

এখনও কিছু ধুলোখেলা বাকী রয়ে গেল।
কাঠগোলাপের পাতায় এখনও কিছু বিস্ময়,
রোদের বৃষ্টিতে এখনও কিছু অনাঘ্রাত আভা,
কাঠবিড়ালীর লেজের মায়ায় এখনও কিছু যতেœ রাখা ওম।
বাদল মাখা এখনও কিছু কৃষ্ণ রাঙ্গা বিকেল
ভরা নদে এখনও কিছু বৈঠা হাতে মাঝি
দূর গাঁয়ের হাঁটা পথে এখনও কিছু পথিকের ছায়া
বাঁশ বাগানে এখনও কিছু কাজলা দিদির শোলক।
শিউলি উঠোনে এখনও কিছু শিশিরের গন্ধ,
কাশের বনে এখনও কিছু শরতের কাল
দুপুরের মাঠে এখনও কিছু অগ্রহায়ণ গান
নদীর পাড়ে এখনও কিছু কুড়িয়ে পাওয়া ঢেউ

শীতের সকালে এখনও কিছু রোদ পোহানো মাঠ,
রাঁধাচূড়ায় এখনও কিছু কৃষ্ণ বাঁশির সুর
তালের ছায়ায় এখনও কিছু বাবুই পাখির বাসা
তোতা পুকুরে এখনও কিছু কলস কাঁখে বউ
ছাদের উপর এখনও কিছু আমসত্ত্বের মায়া
পাঁচিল ঘেঁষে এখনও কিছু ঝুলে থাকা কুল
শর্ষে ক্ষেতে এখনও কিছু উড়ে যাওয়া বক
চড়–ইভাতির এখনও কিছু ধোঁয়া ওঠা ভাত
বেতের বনে এখনও কিছু সন্ধ্যে নামা রঙ
সাঁকোর কাছে এখনও কিছু নৌকা অপেক্ষাতে
পাহাড়ী পাড়ায় এখনও কিছু মাটির মায়া ডাকে
বরফ ছোঁয়া এখনও কিছু রাত্রি জেগে থাকে
সূর্য ডোবার পিঠ বরাবর এখনও কিছু নবজাত ভোর
দেখা বাকী রয়ে গেল,
বাকী রয়ে যায়।
কে বলে জীবন ফুরায়?
প্রতিটি ভোরেই নবজন্মে সে জন্মান্তরের কাহিনী রচে।


বাংলাদেশ 
রাতিক হাসান রাজীব 

যেখানে পাখির ডাকে ভোর হয়
কৃষ্ণচূড়ার রঙে রাঙায় ফাগুন,
সে যে আমার দেশ - বাংলাদেশ।

এখানে ধানের ক্ষেতে শালিকের আনাগোনা
যদি মিলে ঘাসফড়িং, খেয়ে নিবে তাঁরা।
এখানে সবুজের বুকে
রোদের নিত্যকার হাসি।
এখানে কুয়াশার চাদর,
আকাশ থাকে নীল।
এখানে জন্মেছে জসীমউদ্দিন,
দুর্ভিক্ষের চিত্র আঁকা জয়নুল আবেদীন।

এখানে শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা
নদীর ধারে কাশফুলের মেলা।
এখানে দাদিমার গল্প শুনে খুকির আসে ঘুম,
রাতের আকাশে চাঁদ দেয় জোৎস্না।


নিষ্প্রাণ ভায়োলিন
নুসরাত জুবেরী

নিরংশু হয়ে গেছে পৃথিবীর নিরঙ্কুশ দিন-
এমনো দিন আমি দেখিনি কোনোদিন
দূরে; বহুদূরে মানুষ, যানবাহন, রাস্তার কুকুর
মরিচিকার মতো চোখে ধরা দেয় কিঞ্চিৎ।
শুকনো হয়ে ঝুলে থাকে পাখা ঝাপটানো বাদুর,
বৈদ্যুতিক খুঁটির তারগুলোও আজ কেমন খালি খালি লাগে!
শহুরে কাকেদের আনাগোনা কমে যাচ্ছে ক্রমশই।
চালের আড়তে বসে হিসাবের খাতা ছেড়ে,
অসহায় শোকে পাথর বৈকুন্ঠ; চাল গুনছে সময় ফুরোতে।
আজানের পর মুয়াজ্জিনের কম্পিত কন্ঠে ঘোষণা
তোমরা এসো না, মসজিদে এসো না।
পরম মমতায় জড়ানো মাতৃকোলের মূঢ় শিশুটিও
মহামারী আঁচ করে কেঁদে উঠছে বারবার।

পৃথিবীতে এখন কোনো জাদু নেই,
চায়ের কাপে ধোয়ার মত উড়ে যাচ্ছে সব জাদুমন্ত্র।
শুধু স্থায়ী হচ্ছে সাড়ি সাড়ি কফিনের মাঝে শীতল লাশ
এই যে! পাশাপাশি দু’টো কফিনে শুয়ে আছে এক দম্পতি
তার পাশে দু’টো কফিনে ঘুমিয়ে পড়েছে জমজ শিশু
আর এই কফিনে!
এই কফিনে চোখ বুঝেছে আমার কবিতার সেই সবুজ মেয়েটি
আরো কফিন সাজানো হচ্ছে,
অপলক চোখে শুধু নিঃশব্দ তাকিয়ে দেখছে যীশু।

নিরংশু হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর নিরঙ্কুশ দিন,
এমনো দিন আমি দেখিনি কোনোদিন
সামাজিক দূরত্ব নাকি বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়
ক্ষমতা, ভূষণ, লাবণ্য, অর্থ সবই আজ নিরূপায়
তালাবদ্ধ  জীবনে পৃথিবী প্রায় অকেজো, ছন্দ হারাচ্ছে সুর
হে ¯্রষ্ঠা, সৃষ্টির এই মহামারী আর দীর্ঘ হবে কতদূর?
ফিরিয়ে দাও না পৃথিবীর যত ললিত নিরঙ্কুস দিন,
হে ¯্রষ্ঠা, আমি ক্লান্ত!
আমার দুয়ারে দৈনিক বাজে নি®প্রাণ ভায়োলিন।

                                     

দুরন্ত শৈশব
জাকির হোসেন কামাল

স্মৃতির পাতা হাতড়ে বেড়াই বন্ধুরা কই সব,
কোথায় গেল সেদিনগুলো দুরন্ত শৈশব।

ক্রমেই এখন ভাংছে দেখি ছোট্ট গাঙের পাড়,
ছোট্ট বেলায় ছুটে যেতাম বাড়ন্ত দুদ্দাড়।

জলের মাঝে লাফিয়ে পড়া জল-সাতারুর দল,
জলের মাঝে দেখেছিলাম জলের কোলাহল।

গাঙটা কে যে আর দেখিনা কোথায় গাঙের ঢেউ,
স্মৃতির ঢেউয়ে উথালপাতাল খোঁজ রাখেনা কেউ।

খোঁজ রাখেনা যাচ্ছে কেমন নষ্টে কষ্টে দিন,
পড়শিরা যে কার পরশে এমন উদাসীন।

এক চিলতে আকাশ এখন কোথায় উদার মাঠ,
বিশাল মাঠে আগে নিতাম ভালবাসার পাঠ।

এখন এসব স্মৃতিকথা কথার কলরব,
আজও আমি বৃথাই খুঁজি দুরন্ত শৈশব।


প্রেম গদ্য
রোমানুর রোমান

তোমাকে যতই দেখছি ততই প্রেমে পড়ছি,
হয়তো সরাসরি বলা হবে না এ কথা।
তাই লিখে রাখলাম একটি কবিতা নামক গদ্য।
যাতে মনের কথা জমতে জমতে বমি হয়ে না যায়।

তোমাকে দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি, বার বার প্রেমে পড়ছি।
আচ্ছা, এতো পড়লে আমার হৃদযন্ত্র ভেঙ্গে যাবে নাতো!
উপর থেকে পড়লে যেমন হাত- পা ভেঙ্গে যায়
তেমনি মনটাও কী ভেঙ্গে যাবে!
যাক, তাও কিছু করার নেই।
সবকিছু ভেঙ্গেচুরে গেলেও তোমার প্রেমে পড়তেই হবে।
শুধু হবে না মনের কথা বলা।


শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট