পদাবলি : ০১

 



ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের উচ্ছাস

রওশন রুবী


ওগো মাতৃভূমি তুমিই বল-

যুদ্ধ কি বদলাতে পারে না শত্রুর স্বভাব?

যুদ্ধ কি করতে পারে না শত্রুকে মানবিক?

ক্ষুদিরাম আমাদের ভাই

শিল্পবিপ্লবে আমরাই পেয়েছি জয়,

যুগে যুগে নিজ অধিকারে 

আমরাই ফেলেছি সামনে পা, 

পেতেছি বুক, আমরা জেনেছি- 

দেশের চেয়ে পরিবার বড় নয়,

দেশ বাঁচলে বাঁচবো আমরা, 

দেশই আমাদের মা,

তাইতো সেই পঁচিশে মার্চ থেকে 

এই আবুল হোসেন আর সব যোদ্ধাগণ থামিনি, 

বিসর্জন দেইনি স্বভূম তোমার জন্য টান

এই ভূখ-ে চাঁনতারার পতাকা নেই 

চারিদিকে উঠছে জয়ধ্বনি, 

এইযে আমার পাশে চোখহীন হাতহীন 

খণ্ড- বিখণ্ড যোদ্ধা, এইযে বয়ে যাওয়া রক্তের নদী শোন 

ছাপ্পন্ন হাজার বর্গমাইলের উচ্ছাস-

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল...


আজও সেই উচ্ছাস বাঙালির হৃদয়ে অমলিন অবিনশ^র।



জন্ম

বঙ্গ রাখাল


রাত বারটার দিকেÑহাত ঘড়িটা কথা বলে

জীবন ভর্তিÑ জীবন ভাঙ্গনের রহস্য

স্মৃতিতে আত্মহত্যার এক ওষুধের নাম

আগেকার কথারা বেশি দূর যায়

হেঁটে চলে বোন পাশাপাশিÑআবছা অন্ধকার পথ

প্রাচীন জাহাজেও লেখা থাকেÑ জীবনচক্রের প্রবঞ্চণার অভিজ্ঞতা। প্রাত্যহিক জীবনে যারা বিপ্লব চাইÑতাদের এই বিপ্লব নামের অন্তরগাড়িতে চলে অবৈধ সংলাপ...


আম্মার অগ্রন্থিত জীবনে আছেÑবাবা নামের জ্বরের উত্তাপ

যে উত্তাপে পোড়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম...ঠিকানা মনে নেই...

বেশ্যালয় ছিল গ্রাম হতে দূরে...জন্মের পর এটুকুই জানি।



মূলমন্ত্র

নীহার মোশারফ


বীজতলা ফুরফুরে মেজাজে আছে

ঘুমভাঙা পাখিরা ডানা মেলে উড়ে গেলে আকাশে

পাশের ঘরের দিলারা মূলমন্ত্র পাঠে 

     নান্দনিক ছন্দ খোঁজে

শীতার্তরা বস্ত্র চায়, ক্ষুধার্তরা খাদ্য

                কার ঘরে রকমারি বাহারি আহার?

পত্রিকা খুললেই পণ্যের দামে বাড়াবাড়ি খুব

পিঁয়াজ আলোচ্য বিষয়

        গলা ধাক্কায় মফিজল

                     অশ্রুতে বেদনার এপিঠ-ওপিঠ

শিশুরা কী এতসব বোঝে?

বাজার থেকে লাল-সবুজের নিশান কিনে

       রেখে দেয় যতনে

সর্ষের খেতে পতাকা হাতে দৌড়োয় ওরা

আহা কী আনন্দ তাতে

               আমার স্বাধীনতা ওদের সঙ্গে হাঁটে

ফড়িংয়ের পাখায়, পাখির গানে, 

সকালের মিষ্টি রোদেÑ বিজয়ের হাসি

        কার হাসি লুকোয় তখন অতল আঁধারে?



অলৌকিক ঘ্রাণ

দেলোয়ার হোসাইন


পড়তে পড়তে উঠতে শিখেছি, উঠতে গিয়ে কাঁদতে শিখেছি

কাঁদতে গিয়ে দাঁড়াতে শিখেছি, দাঁড়াতে গিয়ে হাসতে শিখেছি

হাসতে গিয়ে হাঁটতে শিখেছি, হাঁটতে গিয়ে দৌড়াতে শিখেছি

দৌড়াতে গিয়ে আর থামিনি, আজও দৌঁড়ের ওপর আছি...


পিছনে খাঁখাঁ করে ধুলো মাখা উঠোন, কাদা মাখা মাঠ

ভরা যৌবনের নদী, নিম গাছের মগডাল, স্মৃতির বিদ্যাপিঠ

সবুজ মানচিত্র, মোহিনীর মুখ, স্বপ্নের বাইসাইকেল, স্বর্গের শৈশব...


সূর্য এখন মাথার উপর, তপ্ত দুপুর, ঘামের গন্ধ, রাজ্যের তাড়া

বোধের পায়চারি, বুকের ধুকধুকানি, পিছুটান, মায়ার বাঁধন আর

কাক্সিক্ষত একটা আকাশ- যেখানে প্রাণ খুলে নিঃশ^াস নেওয়া যায়...


ক্লান্ত সময়, পড়ন্ত বিকেল, সন্ধ্যার ঘনঘটা, রাতের ফরিয়াদ

অলৌকিক ঘ্রাণ আর সাদা কাফনে মোড়ানো কবরের যাত্রী...


তয় কি মানিক আমার পতাকা হইয়্যা গেল

রফিকুল নাজিম 


সেই ঘুটঘুইট্টা আন্ধার রাইতে মানিক আমার ফিরা আইছিল্

তার লোহার লাহান হাতে আছিল বন্দুক, কোমড়ে বুলেট,

তার চোখমুখে আছিল গনগনে আগুন!

কয়েক মুহূর্ত আমারে জড়াইয়া ধইরা 

চোয়ালডারে শক্ত কইরা কানে কানে কইলো,

‘মাগো, তর লাইগ্যা একটা পতাকা কিনতাম যাইতাছি। 

কতাডা কইয়াঐ পাগলডা আত্কা আন্ধারে মিলাইয়া গেল...


একদিন যুদ্ধ শেষ অইলো

পদ্মা মেঘনা যমুনার রক্ত ভাইস্যা গেল দক্ষিণে; সাগরে।

দেশে একটা নয়া পতাকা আইলো

পত্পত্ কইরা আকাশে ওড়লো 

শুধু আমার মানিক আর আইলো না।

এহন রোজ রাইতে দরজার পাশে খাড়াইয়া থাহি

মনে কয়- এই বুঝি আমার যাদুধন আইলো

ঠকঠক ঠকঠক কইরা দরজায় বুঝি টোক্কা দিলো

এর লাইগ্যা সারা রাইত আমি দরজায় কান পাইত্তা থাহি।


দেশে লাল সবুজের পতাকা আইলো

ক্ষেতের সোনার ধান গোলায় উঠলো

নদীর রূপালী মাছ ভাতের পাতে হাসতাছে

পোড়া ভিটায় নতুন নতুন ঘর উঠতাছে

গৃহস্থালিতে সুখগুলো ছুঁয়াছুঁয়ি খেলতাছে

সবই অইলো- সবই আইলো,

খালি আমার যাদু মানিক আর আইলো না। 

তয় কি মানিক আমার লাল সবুজের পতাকা হইয়া গেল?



অতঃপর অন্ধকার

সাকিব জামাল


‘নো ট্রাস্ট’ এর এই যুগে, আমি বিশ্বাস রেখেছিলাম

তোমার ভালোবাসায়, প্রতিক্রিয়াজ্ঞান ভুলে!

জ্বলেছিল মোমবাতি মনপাগলা ঘরে।

ধুপধুনোর ঘ্রাণ ছিল শ্বাস-প্রশ্বাসে। 

অথচ তুমি কামনার ডানা মেলেছো

নিরীহ পাখি শিকারে!

ছক মোতাবেক রাজকাহন শিখেছো বেশ।

রপ্ত করেছো ইনোভেটিভ অর্থনীতির রকমফের।

এলার্জিক ইফেক্টে, এখন

দম বন্ধ আমার। ঘোর অন্ধকার। বিব্রতকর ক্লেশ!



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট